বর্তমান সময়ে বিভিন্ন বয়সের মানুষ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অবসাদ -এ ভুগছে। যা কারো কারো ক্ষেত্রে ক্ষণস্থায়ী হলেও অনেকের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী একটি সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। ‘ডিপ্রেশন’ শব্দটির সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। আপাতদৃষ্টিতে একে কেবল মানসিক ক্ষতির কারণ মনে করা হলেও অনেক সময় এর থেকে শারীরিক নানা অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে। ক্রনিক ডিপ্রেশন অর্থাৎ দীর্ঘদিন যাবত কেউ মানসিক অবসাদ -এ ভুগলে তা তার শারীরিক অসুস্থতারও কারণ হতে পারে!
বেশকিছু মানসিক কিংবা শারীরিক অসুবিধা থেকে দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অবসাদের সৃষ্টি হতে পারে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ হতে পারে –
শারীরিক কিংবা মানসিকভাবে হয়রানির স্বীকার হওয়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা পরবর্তী সময়েও মনের উপর প্রভাব বিস্তার করে রাখতে পারে। দীর্ঘদিন যাবত সেই মানসিক চাপ একসময় শারীরিক বিভিন্ন অসুস্থতার সূচনা করে।
কিছু ঔষধ অনেকদিন ব্যবহার করা থেকেও দীর্ঘমেয়াদী মানসিক অবসাদ দেখা দিতে পারে। এধরনের কয়েকটি ঔষধ হল – Isotretinoin, Interferon-alpha, Corticosteroids.
পারিবারিক অশান্তি বা আপনজনের সাথে দ্বন্দ্ব থেকে দীর্ঘদিনের মানসিক অবসাদ সৃষ্টি হতে পারে।
প্রিয়জনের মৃত্যুতে মানসিক অবসাদ দেখা দিতে পারে।
অনেক সময় জিনগত কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
জীবনের কোন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা কিংবা আতঙ্কিত হওয়া অনেক ক্ষেত্রে এ সমস্যার কারণ হতে পারে।
এক্ষেত্রে ভালো খারাপ দুধরনের ব্যাপার থেকেই অবসাদ আসার সম্ভাবনা থাকে।
দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকার ফলেও মানসিক অবসাদ সৃষ্টি হতে পারে।
মাদকদ্রব্য ব্যবহারের ফলে দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অবসাদ সৃষ্টি হতে পারে।
ওজন বৃদ্ধি কিংবা হ্রাসঃ দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অবসাদ মানুষের খাদ্যাভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন আনে। এতে করে অনেকের ওজন অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায় আবার অনেকের ক্ষেত্রে কমেও যায়। ওজন অত্যধিক বেড়ে গেলে Obesity তে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ডায়াবেটিস হওয়ারও সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
দীর্ঘদিন যাবত মানসিক অবসাদে ভোগা বিভিন্ন হৃদরোগের কারণ হতে পারে। ২০১৫ সালের একটি রিসার্চে দেখা যায়, প্রতি ৫ জনে ১জন হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন।
শরীরকে সুস্থ সবল ও রোগমুক্ত রাখতে প্রয়োজন শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অবসাদ এই ইমিউন সিস্টেমে আমূল পরিবর্তন আনতে পারে। এতে করে একজন সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা কি কেন লক্ষণ ও প্রতিকার
দীর্ঘ সময়ের জন্য শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে মানসিক অবসাদের কারণে।
ঘুমে ব্যাঘাত ঘটা খুব সাধারণ একটি সমস্যা মানসিক অবসাদে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে। দীর্ঘদিন যাবত মানসিক অবসাদে ভোগা ইনসমনিয়ার সৃষ্টি করে।
পাকস্থলীর বিভিন্ন সমস্যাজনিত রোগ দেখা দিতে পারে। যেমন বমি, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি। এছাড়াও হজমে গোলযোগ শুরু হতে পারে। ২০১৬ সালের এক রিসার্চ অনুযায়ী ধারণা করা হয় – হয়তো মানসিক অবসাদের কারণে আমাদের মস্তিষ্ক সঠিক সাড়া প্রদানে অনেক ক্ষেত্রে সক্ষম হয়না। এতে করে মস্তিষ্ক হাইপোথ্যালামাস, পিটুইটারি গ্রন্থি ও অ্যাডরেনাল গ্রন্থিতে উপযুক্ত সাড়া প্রদান করতে ব্যর্থ হয় যা পাকস্থলী ও হজমে সমস্যা তৈরি করে।
সবচেয়ে ভয়াবহ ও বহুল আলোচিত যে সমস্যা মানসিক অবসাদের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় তা হল আত্মঘাতী মনোভাব তৈরি হওয়া৷ জীবননাশের আকাঙ্খার পাশাপাশি অনেকেই নিজের ক্ষতি করা যেমন শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে ফেলা বা পুড়িয়ে ফেলার মনোভাব পোষণ করতে পারে।
আমাদের স্বাভাবিক ধারণা মতে মানসিক অবসাদ কেবল ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে জড়িত। কিন্তু এই মানসিক অবসাদ যখন দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায় তখন তা আর মানসিক ব্যাপারেই সীমাবদ্ধ থাকেনা। এর থেকে নানান শারীরিক অসুস্থতারও সৃষ্টি হতে পারে। এসকল সমস্যাকে বাড়তে দিলে তা মানুষের শরীরের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে।
আমাদের তরুণ প্রজন্ম মানসিক অবসাদে সবচেয়ে বেশি ভুগছে। আর আমরা সবাই জানি যেকোন দেশের ভবিষ্যত তার তরুণ প্রজন্মের হাতে। তাদেরকে মানসিক ও শারীরিক উভয় দিক থেকে সুস্থ রাখা দেশের উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
জনপ্রিয় ব্লগার ও লেখক মার্ক ম্যানসন তার একটি ব্লগে জানিয়েছেন মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার কিছু উপায়। তিনি কয়েকটি বইয়ের নাম জানান যা একজন ব্যক্তিকে তার নিজের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সাহায্য করতে পারে। তিনি তরুণ প্রজন্মকে এই বইগুলো পড়তে উৎসাহিত করেছেন –
তথ্যসূত্রঃ
মন্তব্য লিখুন