বর্তমান বিশ্বে “ক্যান্সার” একটি অতি পরিচিত শব্দ। দৈনন্দিন জীবনের সাথে একপ্রকার মিশে গিয়েছে ভীতিকর এ শব্দটি। এর পেছনে আমাদের জীবনযাপনের ধরন ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা অনেকটা দায়ী। ক্যান্সার মূলত বেশ কয়েক রকম রোগের একটি সাধারণ নাম যা শরীরের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং দেহে দ্রুততার সাথে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় প্রতিদিনই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার নতুন কেস রেকর্ড হয় সারা বিশ্ব জুড়ে। অনেকের ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থতা অর্জন সম্ভব হলেও মৃত্যুর সংখ্যাও কম নয়।
বেশ কয়েকটি ক্যান্সারেই মৃত্যু ঝুঁকি থাকলেও কিছু ধরন আছে যার কারণে প্রতিবছর সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগীর মৃত্যু হয়। World Health Organization (WHO) ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর একটি প্রতিবেদনে ক্যান্সারে মৃত্যুর সংখ্যার ক্রমানুসারে একটি তালিকা প্রকাশ করে। তালিকা অনুযায়ী বিশ্বে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মারা যাওয়া বেশি সংখ্যক রোগীরই ছিল ফুসফুসের ক্যান্সার (১.৭৬ মিলিয়ন মৃত্যু)। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কোলন তথা বৃহদন্ত্রের ক্যান্সার (৮৬২০০০ মৃত্যু) এবং তৃতীয় অবস্থানে পাকস্থলীর ক্যান্সার (৭৮৩০০০ মৃত্যু)।
সাধারণত এ তিন ধরনের ক্যান্সারে মৃত্যু হয়েছে অধিকাংশ ক্যান্সার রোগীর। অথচ আমাদের সচেতনতা এবং জীবনযাত্রার স্বাস্থ্যকর কিছু অভ্যাস এ মৃত্যু ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করতে পারে।
ফুসফুসের ক্যান্সার বর্তমান সময়েও ক্যান্সারে মৃত্যুর ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে। সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ে কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। কোষে ছড়িয়ে পড়ার পরেই লক্ষণ প্রকাশিত হতে দেখা যায়।
ইদানীং মানুষের মাঝে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি পূর্বাপেক্ষা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। অধিকাংশ মানুষ প্রাথমিক অবস্থায় কোন লক্ষণ প্রকাশিত হতে দেখে না। ক্যান্সার কোষের আকার ও অবস্থানের তারতম্য অনুযায়ী লক্ষণের প্রকাশেও ভিন্নতা থাকতে পারে।
চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী যাদের কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার স্বাভাবিক ঝুঁকি রয়েছে তাদের পরীক্ষা করানো উচিত। পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়স হলে কোলন ক্যান্সারের উপস্থিতি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া উচিত। প্রচুর পরিমাণে ফলমূল, শাকসবজি এবং শস্য জাতীয় খাবার খেতে হবে। অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা। অন্তত পক্ষে পরিমিত পরিমাণে পান করা।
দিনে অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তোলা।
ধারণা করা হয় অ্যাসপিরিন বা এ জাতীয় অন্যান্য ঔষধ কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। তবে এ ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি কিংবা কতটুকু অ্যাসপিরিন গ্রহণ করলে ঝুঁকি হ্রাস পাবে সে ব্যাপারেও নিশ্চিত হওয়া যায় নি।
সাধারণত প্রাথমিক অবস্থায় কোন লক্ষণ প্রকাশ হতে দেখা যায় না। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর কোন নির্দিষ্ট লক্ষণ দেখা যায় না। তবে যেসকল লক্ষণকে পাকস্থলীর ক্যান্সারের লক্ষণ বলে চিহ্নিত করা হয়, সেসকল লক্ষণ অন্য কোন রোগকেও প্রকাশ করতে পারে। আলসার কিংবা পাকস্থলীতে কোন সংক্রমণজনিত সমস্যার ক্ষেত্রেও এ ধরনের লক্ষণ দেখা যায়।
ক্লান্তি অথবা অবসাদ।
রক্তবমি হওয়া কিংবা মলের সাথে রক্ত যাওয়া।
অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস ইত্যাদি লক্ষণ অনেক সময় পাকস্থলীর ক্যান্সার কোষের ছড়িয়ে পড়াকে প্রকাশ করে।
আমরা সবাই জানি যে প্রতিরোধ প্রতিকার অপেক্ষা প্রয়োজনীয়। ক্যান্সারের মত মরণঘাতী রোগ থেকেও বেশ খানিকটা নিরাপদে থাকা যায় কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস নিশ্চিত করলে পারলে।
যেকোনো শারীরিক অসুস্থতায় যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি। এতে করে অনেক রোগ গুরুতর অবস্থা ধারণ করার আগেই চিকিৎসা সেবা নেয়া যায়।
বিশেষ করে ক্যান্সার কোষ ছড়িয়ে পড়ার আগে রোগ নির্ণয় করতে পারলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আমাদের সচেতনতাই পারে কিছুটা হলেও ক্যান্সারে মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে।
ছবিঃ সংগৃহীত
মন্তব্য লিখুন