শীত, গ্রীষ্ম বা বর্ষা যে ঋতুর কথাই বলেন না কেন, আমাদের ত্বক এর অবস্থা একেক আবহাওয়াতে একেক রকম থাকে। গ্রীষ্ম বা বর্ষাকালে আমাদের ত্বক স্বাভাবিক থাকলেও, সমস্যা হয় শীতকালে। শীতে ত্বকের শুষ্কতা প্রকট আকার ধারণ করে। এর প্রভাব পড়ে আমাদের ঠোঁটে, হাত-পায়ে, মুখমন্ডলে সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে। শীতকালে মাথায় খুশকি হওয়ার কারণও মাথার ত্বকের শুষ্কতা। বছরের অন্য সময়ে ত্বকের যত্নে আমরা তেমন একটা গুরুত্ব দেই না। কিন্ত শীতে ত্বকের শুষ্কতার কারনে, এ সময়ে ত্বকের যত্ন নেয়া বিশেষ অর্থ বহন করে। শীতে ত্বকের যত্ন নিয়ে জানার আগে আমরা ত্বক সম্পর্কে জেনে নেই-
ত্বক হচ্ছে মেরুদন্ড আছে এমন প্রাণীদের বহিরাবরণ, যা একটি নরম স্তর। যা শরীরের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অংঙ্গসমুহকে বাইরের পরিবেশ থেকে প্রাথমিকভাবে রক্ষা করে থাকে। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ত্বকের উপরে চুল বা লোম থাকে। যদি আমাদের চামড়া বা ত্বকে সমগ্র শরীর থেকে আলাদা করা হয় তবে এর সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ২০ বর্গফুট। মানব দেহের সবচেয়ে বড় অংগ হচ্ছে ত্বক।
ত্বকের প্রধান স্তর তিনটি: এপিডার্মিস স্তর; ডার্মিস স্তর; হাইপোডার্মিস স্তর।
মানব দেহের সবচেয়ে বাইরের অংশ হচ্ছে এই স্তর। যা শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করে থাকে। একই সাথে বাইরের বিভিন্ন বিরূপ পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে। দেহের পানির ভারসাম্য নিয়ন্ত্রন করে।
তিন স্তর এর মধ্যে ত্বক এর দ্বিতীয় স্তর এটা। এই স্তর আমাদের শরীরের তাপ ও চাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এখানেই নিউরন থাকে। স্তরটির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ডার্মিস স্তর কোলাজেন কলা দিয়ে গঠিত।
কোলাজেন এর ধারণা: কোলাজেন কে বলা চলে, মানবদেহে তৈরি প্রাকৃতিক প্রোটিন। ইহা, মানুষের শরীরে সংযোগ কারি টিস্যু এর মধ্যে সমন্বয় সাধন করে থাকে। কোলাজেনে থাকা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য রাসায়নিক উপাদানের মধ্যে এমিনো এসিডের প্রোটিন রয়েছে। যা প্রধানত অক্সিজেন, কার্বন এবং নাইট্রোজেনে সমন্বয়ে গঠিত। কোলাজেন শরীরে সৌন্দর্য রক্ষা করে। একই সাথে শক্তির যোগান দেয়।
ত্বকের এই স্তর শেষ স্তর। এই স্তরে প্রচুর পরিমানে চর্বি জমা থাকে। যখন একান্তই খাবারের অভাব দেখা যায়, তখন এই চর্বি গলে খাদ্যের যোগান দেয় এবং শরীর শক্তি পায়।
শীতকালে বায়ুমন্ডলে আদ্রতা থাকে খুবই কম। জলীয় বাষ্প এর পরিমাণ কমে যায়। ফলে আবহাওয়া শুষ্ক থাকে। বাতাসে জলীয় বাষ্প ধারণ করার একটা নির্দিষ্ট সীমা থাকে, একে বাতাসের সম্পৃক্ত অবস্থা বলে। এখন, বাতাস চারপাশের পরিবেশ থেকে ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত জলীয় বাষ্প গ্রহণ করে, যতক্ষণ না পর্যন্ত বাতাস তার সম্পৃক্ত অবস্থায় পৌছায়।
আমরা যেহেতু পরিবেশের অংশ। তাই, পরিবেশ এর অন্যান্য উপাদানের মতোই, শীতকালে আমাদের শরীর থেকেও জলীয় বাষ্প ধারণ করতে থাকে বাতাস। ফলে, আমাদের দেহের ত্বকের আদ্রতা কমে যায়। শীতে ত্বকের শুষ্কতার প্রধান কারণ হিসেবে একেই বিবেচনা করা হয়।
ফলে, শীতকালে আমাদের ত্বক হয়ে ওঠে রুক্ষ। দেহের কোমলতা দূর হয়ে যায়, তাই সমগ্র শরীর থাকে শুষ্ক। হাত -পা ফেটে যায়। অনেকেরই চামড়ার একটি স্তর উঠে যায়। ঠোঁটও ফেটে যায়।
শীতে ত্বকের শুষ্কতা এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে ঠোঁট ফাটা। মানুষের শরীরের অন্যতম সবচেয়ে পাতলা ত্বকের স্তর থাকে ঠোঁটে। মাঝে মধ্যে একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। আমাদের দেহের নাক এবং ঠোঁটের অবস্থান খুবই কাছাকাছি। যখন আমরা শ্বাস গ্রহণ করি, তখন অক্সিজেন গ্রহনের সাথে সাথে ঠোঁট থেকে জলীয় বাষ্প গ্রহণ করি। যার কারনে ঠোঁট ফেটে যায়।
আমাদের শরীর-স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য ত্বকের যত্ন এর কোন বিকল্প নেই। এমনিতেই শীতে ত্বকের শুষ্কতার জন্য আমাদের শরীরে এর প্রভাব খুবই স্পষ্ট। আর তাই, শীতে ত্বকের যত্ন নেয়ার জন্য আমাদের বিশেষ ভাবে কিছু কাজ করা জরুরী।
১) যেহেতু শীতকালে শরীরের আদ্রতা কমে যায়, তাই প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
২) নিয়মিত গোসল সাবান ব্যবহার করা কমিয়ে দিন,কেননা ত্বক আরও অনেক রুক্ষ হয়ে যেতে পারে।
৩) গোসলের পরে অলিভ অয়েল বা জলপাই এর তেল ব্যবহার করতে পারেন।
৪) গোসলে বেশি গরম পানি ব্যবহার করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
৫) প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল মূল খান।
৬) বাইরে বের হওয়ার আগে সানস্ক্রিন মালিশ বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন।
৭) দিনে যতবার প্রয়োজন লশন ব্যবহার করতে পারেন।
৮) বাদাম তেল ব্যবহার করতে পারেন।
৯) ঠোঁটে লিপজেল ব্যবহার করুন।
১০) হাত-পা এবং একই সাথে চুলেরও যত্ন নিন।
ঋতু বৈচিত্রের আমাদের এই বাংলাদেশে সময়ের পরিক্রমায় বছরে শীতকাল আসবেই। শীতে ত্বকের শুষ্কতাও পরিলক্ষিত হওয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। তাই শীতে ত্বকের যত্ন নেওয়া এবং অতিরিক্ত সতর্কতা গ্রহণ করা আমাদের সকলের অবশ্য কর্তব্য।
চিত্র:সংগ্রহীত
তথ্য সূত্র : এনটিভিবিডি, প্রথম আলো ও অনলাইন ব্লোগ।
মন্তব্য লিখুন