মস্তিষ্ক মানবদেহের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান অঙ্গ, যা করোটির অভ্যন্তরে সুরক্ষিত থাকে এবং দেহের সামগ্রিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। যার কারনে আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধির উপর পর্যাপ্ত গুরুত্ব দিতে হবে।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মস্তিষ্কের আয়তন প্রায় ১৫০০ ঘন সেন্টিমিটার, যার গড় ওজন ১.৩৬ কেজি এবং এতে প্রায় ১০ বিলিয়ন নিউরণ বা স্নায়ুকোষ থাকে।
মস্তিষ্ক পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উদ্দীপনা গ্রহণ,তা সমন্বয় ও প্রক্রিয়াকরণ করে উপযুক্ত অঙ্গকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে সাড়াদানে সাহায্য করে।
স্বাভাবিকভাবে মস্তিষ্ক বিপুল ক্ষমতার অধিকারী হলেও উন্নত প্রযুক্তি মস্তিষ্কের কাজ কমিয়ে দিয়েছে । তাই স্বাভাবিকভাবেই মস্তিষ্কের সেলগুলো কর্মক্ষমতা হারিয়ে দিন দিন অচল হয়ে পড়ছে।
এর ফলশ্রুতিতে দেখা যায় স্মৃতিশক্তি হ্রাস, চিন্তা করার ক্ষমতা লোপ, সৃজনশীলতার অভাব সহ নানা সমস্যা। তাই এই সমস্যার সমাধান করে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ খুব জরুরী।
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
প্রতিদিনের কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করা যেমন- বাম হাতের ঘরড় ডান হাতে নেয়া, ফোন পূর্বে যে পকেটে নেয়া হতো তা থেকে অন্য পকেটে নেয়া, ডান হাত দিয়ে ব্রাশ করার অভ্যাস থাকলে বাম হাত দিয়ে করা ইত্যাদি যেসব কাজে তেমন অসুবিধা নেই তা করা যেতে পারে।
যার উদ্দেশ্য কাজে মনোযোগ ও একাগ্রতা বৃদ্ধি। এর ফলে ব্রেন সেলগুলো একটিভ হয় এবং নতুন অভ্যাস মানিয়ে নিতে কাজ করে।
একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের দৈনিক ৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। ঘুম মানুষের শরীর ও মনকে সতেজ করে। ঘুমের সময় প্রতিদিনের জানা নতুন তথ্যগুলো মস্তিষ্কে ষ্টোর হয়।
যারা কম ঘুমায় তাদের মস্তিষ্ক সে কাজ সঠিকভাবে করতে পারে না, ফলে তারা অনেককিছু ভুলে যায়। যারা দৈনিক ৭-৮ ঘন্টা ঘুমায় তারা অন্য কম ঘুমানো মাুষের চেয়ে বেশি তথ্য মনে রাখতে ও চিন্তা করতে পারে।
মানব মস্তিষ্ককে মোবাইল বা কম্পিউটারের মেমোরির সাথে তুলনা করা যায়। মোবাইল বা পিসি যেমন একসাথে অনেকগুলো কাজ করলে হ্যাং হয়ে যায়, তেমনি মানুষ একসাথে অনেকগুলো চিন্তা বা কাজ করলে মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টি হয়।
এতে মাথা ব্যথা,মাইগ্রেন,হাই প্রেসার এমনকি হার্ট এটাকের মতো সমস্যা হতে পারে।তাই মাল্টি টাস্কিং পরিহার করে চলা আবশ্যক।
ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড, তৈলাক্ত খাদ্য ইত্যাদি মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা হ্রাস করে। তাই ওসব পরিহার করে সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ভিটামিন আমাদের কোন শক্তি প্রদান করে না
একটানা বেশি সময় না খেয়ে থাকা উচিত না। অন্তত ৩ ঘন্টা পরপর কিছু না কিছু খেয়ে নেয়া ভালো।বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে,ডার্ক চকলেট মস্তিষ্কের জন্য বেশ উপকারী।
কোন কাজ করা বা পড়ার সময় তা নিয়ে চিন্তা করার পাশাপাশি কল্পনায় তার ছবি আঁকতে হবে। এভাবে কল্পনা করে কাজ করলে মস্তিষ্ক বেশি চিন্তা করার সক্ষমতা অর্জন করে এবং সেলগুলো আরো কর্নক্ষম হয়।
অবসর সময়ে মোবাইল বা কম্পিউটারে ব্রেইন গেমস খেললে মস্তিষ্কের চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্ক সতেজ হয়। এক্ষেত্রে পাজেল মিলানো,সুডোকু এসব নিয়েও ভাবা যায়। যা বু্দ্ধি বাড়াতেও যথেষ্ট সহায়ক।
ব্যায়াম বা শরীরচর্চার ফলে মস্তিষ্ক অনেকটা স্ট্রেস মুক্ত হয় যার ফলে মস্তিষ্ক থেকে সমগ্র দেহে রক্তনালীগুলোতে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। তাই মস্তিষ্ক ভালো রাখতে নিয়মিত নির্দিষ্ট কিছু সময় নিয়মমাফিক ব্যায়াম করা দরকার।
মস্তিষ্ক সচল,সতেজ ও কর্মক্ষম রাখতে অ্যালকোহল সেবন বা ধূমপান করা, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া, সকালে কিছু না খাওয়া, রাতে বেশি দেরি করে ঘুমানো, বেশি কথা বলা ইত্যাদি বদাভ্যাস পরিহার করা আবশ্যক।
উক্ত বিষয়গুলো মেনে চললে আশা করা যায় আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা আরও বেশি বৃদ্ধি পাবে এবং দৈনন্দিন কাজ গুলোকে আরও সুচারু রূপে সম্পাদন করতে সহায়তা করবে।
মন্তব্য লিখুন