বিমানযাত্রা আমাদের প্রায় সবার কাছেই খুব প্রিয়। অনেকের ইতিমধ্যে এই অভিজ্ঞতা আছে, আর অনেকের কাছে তো এটি স্বপ্নের মতো। তবে পৃথিবীতে এমন কিছু বিপজ্জনক বিমানবন্দর রয়েছে যেগুলোর নাম শুনলেই অনেকে বিমানযাত্রা বাতিল করে দেন। এগুলো এতো বিপজ্জনক মূলত এদের রানওয়ের আকার, আকৃ্তি ও অবস্থানের জন্য। আজ আমরা এমনই কিছু বিপজ্জনক বিমানবন্দর বা রানওয়ে সম্পর্কে জানব-
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
সাবা দ্বীপের জুয়ানচো ই ইরাউসকুইন বিমানবন্দর বিশ্বের সবথেকে ছোট এবং বিপজ্জনক বিমানবন্দর হিসেবে পরিচিত। রানওয়ের দৈর্ঘ্য মাত্র ৪০০ মিটার। এটি মূলত একটি সাগর ঘেরা ছোট্ট দ্বীপে অবস্থিত। ছোট্ট রানওয়ে পাড় হলেই সামনে পরে সমুদ্র। টেকঅফ করতে গিয়ে পাইলটের একটু ভুল হলেই বিমান গিয়ে পড়তে পারে গভীর নীল সমুদ্রের পানিতে। এছাড়াও রানওয়েতে উঠতে হলে আগে পেরিয়ে আসতে হয় এক ভয়ঙ্কর পাহাড়ি ভূখন্ড, সেখানেও ঘটতে পারে সমূহ বিপদ।
বিশ্বের সবথেকে শীতল স্থান গুলোর একটিতে অবস্থিত আইসল্যান্ডের এই বিমানবন্দর। এটিও বিপজ্জনক বিমানবন্দর এর মধ্যে অন্যতম একটি। বরফ জমা হিম শীতল এই পরিবেশে বিমান অবতরন করা খুবই কঠিন। এখানে প্রায় সময়ই তুষারপাত হয়, ফলে সমতল রানওয়ে পাওয়া কঠিন কাজ। তাই এখানে জমাট বাধা কঠিন বরফের ওপরেই বিমান অবতরণ করানো হয়। এখানে বিমান উড্ডয়ন এবং অবতরণ করাটা খুবই কঠিন কাজ। প্রতিটি বিমানের ওজন খুব যথাযথ ভাবে এখানে মেনে চলতে হয়। বিমানের ওজন বেশি হয়ে গেলে বরফের রানওয়ে ভেঙ্গে পড়তে পারে। ফলে ঘটে যেতে পারে ভয়ংকর দুর্ঘটনা।
স্কটল্যান্ডের বাররা দ্বীপে অবস্থিত এই বিমানবন্দর। এর মুল চ্যালেঞ্জ হলো, এখানে বিমান ল্যান্ডিং করতে হয় সমুদ্র সৈকতের ওপর। ফলে সৈ্কতে বেড়াতে আসা ভ্রমণকারীদের বেশ আতঙ্কে থাকতে হয়। বিমানের প্রচন্ড বাতাস ও শব্দে ভ্রমণকারীদের ওইস্থান থেকে দ্রুত সরে আসতে হয়। আবার, শুধু ভাটার সময়ই এখানে বিমান অবতরন করা যায়, তাই অনেক হিসাব নিকাশ করে এখানে বিমান চালাতে হয়। খুব কাছ থেকে বিমান যাওয়ার কারনে অনেকের কাছেই এটি আতংকের স্থান। তবে অনেকে আবার খুব কাছে বিমান অবতরণ দেখার জন্যেও এখানে এসে থাকেন।
বিপজ্জনক বিমানবন্দর এর কথা বলতে গেলে চার্চেভেল এয়ারপোর্টের কথা চলে আসে। এটি মূলত একটি স্কি এরিয়া। এটিতে বিমান উড্ডয়ন, অবতরণ দুটোই খুব কঠিন কাজ। একই সময় দুইটি বিমান এখানে চলাচল করতে পারে না। এখানে রানওয়ে মাত্র ৫২৫ মিটার। এছাড়া, ঘণ কুয়াশা, ভারী মেঘ ও চারিদিকে আল্পস পর্বতমালা এখানে বিমান চলাচলে বিশেষ বাধা সৃষ্টি করে।
আরও পড়ুনঃ
নেপালের এই বিমান বন্দরটির অবস্থান পাহারের চূড়ায়। এরচারপাশেও রয়েছে উচু উচু আরো অনেক পর্বত। এর রানওয়ের একপ্রান্তে রয়েছে পাহারের উন্মুক্ত ঢাল। আবার, রানওয়েও খুব বড় নয় মাত্র ১৭২৯ ফুট। সুতরাং সঠিক সময়ে উড়ান দিতে না পারলে সোজা গিয়ে পড়তে হবে পাহাড়ের ৬০০ ফুট গভীর খাদে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই এখানে বিমান টেকঅফের সময় যাত্রীরা বেশ আতংকের মধ্যে দিয়েই যান। যারা এভারেস্ট জয়ের মিশনে যান তাদের সাধারণত এই এয়ারপোর্ট ব্যবহার করতে হয়। এই এয়ারপোর্টের নাম বর্তমানে তেনজিং-হিলারী এয়ারপোর্ট।
বিশ্বের সবথেকে বেশি বিপজ্জনক বিমানবন্দরগুলির মধ্যে ভুটানের পারো বিমান বন্দর রয়েছে একদম প্রথম সারিতে। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় দেড় মাইল উচ্চতায় অবস্থিত এই বিমানবন্দরের চারপাশে রয়েছে প্রায় ১৮০০০ ফুট উচ্চতার সব পাহাড়চূড়া। অপরদিকে, এর রানওয়ে ৬৫০০ ফুট লম্বা। এই পাহাড়ী অঞ্চলে এত উঁচুতে এই সংক্ষিপ্ত রানওয়েতে বিমান অবতরণ অনেক কঠিন কাজ। যার কারনে খুব কম পাইলটই এখানে বিমান চালনার সুযোগ পান।
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরের এই বিমানবন্দর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৩৩৮ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। ১৯৫৫ সাল থেকে এটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটির ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে কুখ্যাতির মূল কারন অনেকগুলো ভয়ংকর দুর্ঘটনা, যার কারনে আজ পর্যন্ত অনেক বিমানযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে ঐ স্থানে। এত দুর্ঘটনার রেকর্ড খুব কম সংখ্যক বন্দরেরই রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১২ই মার্চ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ইউওএস বাংলা এয়ার লাইনস। এই দুর্ঘটনায় পাইলট, কো-পাইলটসহ প্রায় ৫১ জন যাত্রী নিহত হন। এখানে মূল প্রতিবন্ধকতা সমূহের মধ্যে প্রধান হলো একটি বিশাল পাহাড় যা এই বন্দর থেকে মাত্র ৯ মাইল দূরেই অবস্থিত। একারনেই এর রানওয়েতে বিমান অবতরণ করা বেশ কঠিন কাজ। তাছাড়া, এই স্থানের চারপাশ ঘিরেই রয়েছে অনেক পর্বত শ্রেণী, যার কারনে এখানে বিমান ল্যান্ডিং করা এতটা ঝুঁকিপূর্ণ।
বিমানবন্দরের মাঝেই রেললাইন! অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ, জিব্রালটার এয়ারপোর্টের মধ্যেই রয়েছে রেলরোড ক্রসিং, সাথে ভারী গাড়ি চলাচলের রাস্তাও রয়েছে এখানে। তাই যখন এখানে বিমান অবতরন করার সময় হয় তখন এখানে অন্যান্য যান চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষের জন্য এটি বেশ কঠিন একটি কাজ। সাথে পাইলট ও যাত্রীদের কাছেও এই বিমানবন্দর বেশ অস্বস্তিকর বটে।
১৯৪৪ সালে নেদারল্যান্ডের সম্রাজ্ঞী জুলিয়ানা এই বিমানবন্দরে প্রথম ল্যান্ড করেন এবং পরবর্তীতে তার নামানুসারেই এ স্থানের নাম হয় প্রিন্সেস জুলিয়ানা এয়ারপোর্ট। এই বিমানবন্দরের ল্যান্ডিং স্ট্রিপ খুবই ছোট, প্রায় ২১৮০ মিটার মাত্র। পূর্ব ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের সেন্ট মার্টিনে অবস্থিত এই বিমানবন্দরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৪২ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে। এই বিমান বন্দর আসলে যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন এবং অবতরণের জন্যে তৈরি হয়েছিল। যুদ্ধবিমান গুলোর আকার এবং ওজন কম ছিল বিধায় ছোট রানওয়েতেই কাজ হতো। তবে পরবর্তীতে যাত্রীবাহী বিমান চলাচল শুরু হয়। ভয়ানক সংকীর্ণ রানওয়ে হওয়ার কারনেই যাত্রীবাহী বিমান চলাচল এখানে এতো বিপদজনক।
পৃথিবীর অনেক স্থানেই বিমানবন্দর রয়েছে, তবে এই বিমানবন্দরগুলো তার ভয়ংকর পরিবেশ ও বিপজ্জনক রানওয়ের কারনেই মানুষের কাছে বিশেষভাবে পরিচিত। ইতোপূর্বে সব স্থানে দুর্ঘটনার বহু নজির থাকলেও এডভেঞ্চার প্রিয় মানুষের কাছে এসব বিমানবন্দর অন্যতম প্রিয় স্থান।
মন্তব্য লিখুন