️”দ্য বাটারফ্লাই ইফেক্ট” নামটি অনেকের কাছে অচেনা মনে হতে পারে। কিন্তু এই ইফেক্টটি আমাদের সবার সাথেই জড়িত। কিভাবে জড়িত! সেই কথাই বলবো আজকের লেখায়। তবে তার আগে চলুন একটি গল্প শুনে আসি।
জনাব আসাদ একজন ছবি আঁকার শিক্ষক। বিকেল তিনটায় তার ক্লাস নেবার কথা। তিনটা বাজার কিছু পূর্বে তার কাছে ফোন আসে। ফোনে তার স্ত্রী জানায় যে, তাদের মেয়ে ফল কাটতে গিয়ে হাত কেটে ফেলেছে।
এখন প্রচুর পরিমাণে রক্তপাত হচ্ছে। একথা শুনে জনাব আসাদ তাড়াহুড়ো করে বাড়ি ফিরে গেলেন। এদিকে তার ছাত্ররা এসে তাকে না পেয়ে ফিরে গেলো।
এই ছাত্রদের একজন ছিলো তপু। এক ঘন্টা আগে ছুটি পেয়ে তপু বাড়ি ফিরে এসে বায়না করলো ঘুরতে যাবে। তপুর বাবা-মা ঠিক করলো তারা সিনেমা দেখতে যাবে। তাই তারা তাদের গাড়ীতে করে বেরিয়ে গেল। কিন্তু সিনেমা হলে গিয়ে তারা টিকিট পেলো না। ঠিক করলো তারা রেস্তোরাঁয় খেতে যাবে। সেখান থেকে খেয়ে ফেরার পথে তাদের গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়।
সেজন্য তপুর বাবা, তপু ও তার মা’কে গাড়ি ভাড়া করে বাসায় পাঠিয়ে দিলেন। তারা বাসায় ফিরতেই খবর পেল যে তপুর বাবা গাড়ি ঠিক করে ফেরার সময় অ্যাক্সিডেন্ট করেছেন। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাই তারা আবার হাসপাতালে ছুটলেন।
এখন একটু ভেবে দেখুন তো, যদি আসাদ সাহেবের মেয়ে ফল কাটতে গিয়ে হাত কেটে না ফেলতো, তাহলে আসাদ সাহেবকে দ্রুত বাসায় ফিরতে হতো না। ফলে যথাসময়ে তপুর ছুটি হতো। বাসায় ফিরে তপু ঘুরতে যাবার বায়না করতো না। তারা বাইরেও যেতে না ফলে তপুর বাবার অ্যাক্সিডেন্টও হতো না। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে সামান্য ফল কাটা থেকে তপুর বাবার অ্যাক্সিডেন্ট পর্যন্ত ঘটনার পরিবর্তন হয়ে গেলো। শুধু তাই নয়, তপুর বাবার অ্যাক্সিডেন্টের জন্য যে সকল মানুষ ব্যস্ত হলো তাদের সবার ঘটনাচক্রে বিশাল একটা বিশৃঙ্খলা চলে এলো। একে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে বিশৃঙ্খলা তত্ত্ব বা কেওয়াস থিওরি ।
উপরের ঘটনাগুলো কাল্পনিক কিন্তু একথা একশত ভাগ সত্য যে, পৃথিবীর সব মানুষ একে অপরের কাজ দ্বারা কোনোনা কোনোভাবে প্রভাবিত হয়। আর এখানেই আসে “বাটারফ্লাই ইফেক্টে” এর কথা।
বাটারফ্লাই ইফেক্টের কথা প্রথম উপস্থাপন করেন গনিত ও আবহাওয়াবিদ এডওয়ার্ড লরেঞ্জ।
তিনি সবার সামনে প্রশ্ন রেখেছিলেন যে, যদি ব্রাজিলে একটি প্রজাপতি ডানা ঝাপটায় তাহলে তার ডানা ঝাপটানোর সুবাদে আমেরিকার টেক্সাসে একটি টর্নেডো হতে পারে কিনা? তার এ প্রশ্নে তখন অনেকেই হেসেছিল।
কিন্তু পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেন যে এটা সম্ভব। তারা দেখান যেকোনো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কাজ কোনো ঘটনার শেষ পরিনতিকে উল্লেখযোগ্য ভাবে পরিবর্তন করতে পারে।
এডওয়ার্ড লরেঞ্জ এটিই বোঝাতে চেয়েছিলেন তার বক্তব্যে। তিনি গানিতিক ভাবে দেখান যে, পৃথিবীর কোনো একটি তরঙ্গকে সামান্য পরিবর্তন করলে তা পৃথিবীর অন্য সকল তরঙ্গকে উল্লেখযোগ্য ভাবে পরিবর্তন করে। পরবর্তীতে এই ঘটনাকে বাটারফ্লাই ইফেক্ট বা থিওরি অব কেওস নামকরণ করা হয়।
এবার বলি এই ইফেক্টের নাম বাটারফ্লাই ইফেক্ট কেন করা হয়েছে। একদিন এডওয়ার্ড লরেঞ্জ তার আবহাওয়া বিষয়ক গানিতিক হিসাবে করছিলেন। তিনি কাজের সুবিধার জন্য দশমিকের পর ছয় সংখ্যার পরিবর্তে তিন সংখ্যা নিয়ে কাজ করছিলেন। কিন্তু তিনি লক্ষ করলেন যে, দশমিকের পর ছয় সংখ্যা নিয়ে প্রাপ্ত ফলাফল আর দশমিকের পরে তিন সংখ্যা নিয়ে প্রাপ্ত ফলাফলের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।
প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন যে হয়তো তার হিসেবে ভুল হয়েছে। কারণ তিনি তার হিসেবে যে পরিবর্তনটুকু করেছিলেন তা খুবই ক্ষুদ্র এবং প্রায় শূণ্যের কাছাকাছি। এত ক্ষুদ্র পরিবর্তনের জন্য হিসেবে এত বড় পার্থক্য তিনি আশা করেননি। তাই তিনি ভিন্ন ভিন্ন মান নিয়ে এই পরীক্ষা করে দেখেন। কিন্তু প্রতিবার একই ফলাফল পেলেন।
এরপর তিনি তার এই গৃহীত মানগুলো গ্রাফ পেপারে বসিয়ে দেখলেন যে সেটি একটি প্রজাপতির আকার ধারণ করে। তাই তিনি এই ইফেক্টের নাম দেন বাটারফ্লাই ইফেক্ট।অর্থাৎ ছোট কোনো কারণের বৃহদাকার প্রভাবকে বলে বাটারফ্লাই ইফেক্ট।
এখন এই বাটারফ্লাই ইফেক্টের আরো একটি গল্প বলি যা হয়তো আপনাকে এই ইফেক্টের সাথে বাস্তবতার যোগসূত্র বুঝতে সাহায্য করবে।
১৯০৬ সালের কথা। তৎকালীন ভিয়েনা শহরের বাস করতো এক গরীব যুবক চিত্রশিল্পী। অন্যের ছবি একেই সে তার জীবিকা নির্বাহ করতো।
একদিন এক ধনী ইহুদী যুবতী স্টিফানি আইজ্যাক এর ছবি আঁকতে গিয়ে তার প্রেমে পড়ে যায় যুবকটি। যুবকটি তার প্রিয় পোষা কুকুরটির মাধ্যমে ঐ যুবতীকে চিঠি পাঠাতো। বিষয়টি যুবতী স্টিফানি আইজ্যাকের পরিবারের সবাই জেনে যায়। কিন্তু যুবকটি দরিদ্র হওয়ায় তাকে মেনে নিতে রাজি হয় না স্টিফানির পরিবার। তাই তারা একদিন যুবকের কুকুরটিকে হত্যা করে গেটের বাইরে ফেলে রাখে।
সন্ধ্যা হয়ে গেলেও কুকুরটি ফিরে না আসায় তার খোঁজে বের হয় যুবকটি। শেষে দেখে কুকুরটি তার প্রেমিকার বাড়ির সামনে মৃত অবস্থায় পরে আছে। এটি দেখে সে খুব কষ্ট পায় এবং সেখান থেকে চলে আসে।
এরপর সে মনের দুঃখে শহর ছেড়ে চলে আসে এবং সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। ১৯১৮ সালে এক ব্রিটিশ সেনা তাকে পিটিয়ে জখম করে শুধু তাই নয় তাকে হত্যার ও আদেশ ছিলো। কিন্তু সেই ব্রিটিশ সেনা সেদিন তাকে হত্যা না করে ছেড়ে দেয়।
অনেকই হয়তো বুঝতে পেরেছেন কার কথা বলছি। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন যুবকটি হলো অ্যাডলফ হিটলার। পরবর্তীতে যে কিনা
জার্মানির কুখ্যাত শাসক ও একনায়কতন্ত্রের নেতা হয়। এবং তার জন্যই ১৯৩৯ সালে পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্যদিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।
যে যুদ্ধে আনুমানিক ৬৩ লাখ ইহুদী মানুষ হত্যা করা হয়। যা পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম বড় গণহত্যা। ধারণা করা হয় ব্যাক্তিগত জীবনে ঐ ইহুদী পরিবার দ্বারা প্রত্যাখানই তার এই ইহুদী বিদ্বেষের মূল কারণ।
এবার ভেবে দেখুন যদি ঐ ইহুদী পরিবার তাকে মেনে নিতো তাহলে হয়তো সে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতো না। আর সেনাবাহিনীতে যোগ না দিলে সে এই যুদ্ধে যুক্ত হতো না।আবার যদি ঐ ব্রিটিশ সেনা সেদিন তাকে হত্যা করতো তাহলেও হয়তো এই প্রাণক্ষয়ী যুদ্ধ হতো না।
ঠিক একইভাবে আমাদের খুব ছোট একটি সিদ্ধান্ত আমাদের সম্পুর্ণ ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করে দিতে পারে। শুধু আমাদের নয় বরং হয়তো পৃথিবীর অনেকের জীবনে এটি প্রভাব ফেলতে পারে। অর্থাৎ একটা ছোট পরিবর্তন কত বড় একটি প্রভাব ফেলতে পারে সমাজ অথবা পরিবেশের উপর। এটিই হলো “বাটারফ্লাই ইফেক্ট“।
তথ্য সহায়তাঃ ইউটিউব
Complex carbs. fertility drugs clomid