জামাল নজরুল ইসলাম নামের শুরুটাই যেন বাংলার মহিমা দিয়ে। বিজ্ঞান এর কল্পলীলায় এক উজ্জ্বল নক্ষত্র জামাল নজরুল। তার কল্পকাহিনী যে একবার অবলোকন করেছেন, ভালবেসে ফেলেছেন সে-ই। জ্যোর্তিবিজ্ঞানে তার গবেষণা ছিল চমকপ্রদ যা সকল বিজ্ঞানী দের চক্ষুকে অবোলোকন করেছিল। ভাবতে শিখিয়েছিল নতুন এক জগৎকে, সৃষ্টি করেছিল নতুন অধ্যায়ের সূচনা। তাইতো তার জ্ঞানের কদর করেছিলেন স্টিফেন হকিং সহ নোবেল বিজয়ী অনেক প্রতিভাবান বিজ্ঞানীরা।
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
বিজ্ঞানের এই রুপকারের জন্ম হয়েছিল যশোর বিভাগের ঝিনাইদহ জেলায় ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯ সালে। তার বাবা ছিল সেই সময়কার ব্রিটিশ আমলের সাব জাজ। সেই সুবাদে তার শৈশবও ছিল মাইগ্রেটিব ও দুরন্তপনায় পরিপূর্ণ। তার পড়ালেখার হাতে খড়ি হয় কলকাতায় সেখানে চতুর্থ শ্রেণী র্পযন্ত অধ্যায়ন করেন। তারপর চলে আসেন চট্টগ্রামে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে।
পৃথিবীর বুকে অসাধারণ প্রতিভাধর ব্যাক্তিদের প্রতিভার আলো ছড়ায় সুপ্তিকাল থেকেই। তাইতো তার প্রতিভা নজরকারে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের। তিনি নজরুল এর অসাধারণ প্রতিভা দেখে দুই শ্রেনী প্রমোশন দিয়ে র্ভতি করান ৬ষ্ঠ শ্রেনিতে। ওই স্কুলে তিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অতিবাহিত করেন। যেহেতু তার শৈশব ছিল আকাশ ছোয়া প্রতিভায় পরিপূর্ণ, তাই তিনি অষ্টম শ্রেণির পর পারি জমান পাকিস্তানে।
পাকিস্তানের লরেন্স কলেজ থেকে কলেজ লেভেল শেষ করে অত্যন্ত সফলতার সাথে। তারপর আবার পারি জমায় কলকাতায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সেন্ট জোভির্য়াস কলেজ থেকে সম্পন্ন করে বিএসসি অর্নাস। তারপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ১৯৫৭ সালে পারি জমায় সপ্নের ক্যামব্রিজে। তার সুপ্ত প্রতিভার আলো ছড়ায় ক্যামব্রিজের আদলে।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিএনট্রি কলেজে এপ্লাইড ম্যাথমেটিকস ট্রাইপস এ র্কোস করার সুবাদে ১৯৫৭ সালে তার ক্যামব্রিজে সূচনা ঘটে। তিনি তিন বছরের কোর্র্স শেষ করেছিল দুই বছরেই। ১৯৫৯ সালে তিনি এপ্লাইড ম্যাথিমেটিকস ও থিওরিটিক্যাল ফিজিক্সের এর উপর ক্যামব্রিজ থেকে অর্নাস সম্পন্ন করে।
অসাধারণ মেধার থাকায় মাত্র বিশ বছর বয়সে দুই বার অর্নাস করেছিলেন। ১৯৬০ সালে মাস্টার্স করেন ম্যাথমেটিক্যাল ট্রাইপস এর উপর। জামাল নজরুল ইসলাম তার পি এইচ ডি সম্পন্ন করেন এপ্লাইড ম্যাথিমেট্রিকস ও থিওরিটিক্যাল ফিজিক্সের উপর ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিএনট্রি কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে।
১৯৬৭-৭১ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনিস্টিউট অব থিওরিটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনোমি এর ফেলো নির্বাচিত হন। ১৯৮২ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি এস সি ডিগ্রিতে ভূষিত হন। নিজের জ্ঞানের আলোর দ্যুতির শিখা দিয়ে আলোকিত করেন ক্যামব্রিজকে।
নজরুল এর শিক্ষা জীবন ছিল স্বর্ন যুগের কল্পনার স্বর্নমুকুটে আবৃত সফলতার নক্ষত্রের মতোই। তার বিচারন ক্ষেত্র ছিল এপ্লাইড ম্যাথিমেট্রিকস, থিওরিটিক্যাল ফিজিক্স, কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরি, কসমলোজি ও অ্যাস্ট্রোনোমি শাখায়। তিনি কাজ করেছেন আইন্সটাইন এর জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি নিয়েও।
তিনি বিজ্ঞানকে দেখেছেন নতুন আলোক চক্ষুতে খুজতে চেষ্টা করেছেন আসল সন্দিহান রহস্যকে। জ্যোর্তিবিজ্ঞানে তার গবেষণা ছিল চমকপ্রদ যা সকল বিজ্ঞানীদের চক্ষুকে অবলোকন করেছিল। ভাবতে শিখিয়েছিল নতুন এক জগৎকে, সৃষ্টি করেছিল নতুন অধ্যায়ের সূচনা। তার ৫০ টি রির্সাস পাবলিকেশন, ৯ টি বই ও অনেক আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক র্জনালে যা কাজে লাগে উচ্চমানের গবেষণায়।
বর্তমান সময়ের জ্যোর্তিবিজ্ঞানের আলোচিত ধ্রুুব তারার নাম স্টিফেন হকিং। মজার বিষয় হলো এই প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ছিল জামাল নজরুল ইসলামের সবচেয়ে ভালো বন্ধু, রুমমেট ও ভালো পরামর্শক। ১৯৮৩ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস থেকে প্রকাশিত “The ultimate fait of universe ” সারা ফেলেছিল ব্যাপকতার সাথে যা ওই সময়ে সৃষ্টি করেছিল নতুন সূচনার, বিজ্ঞানীদের দেখিয়েছিল নতুন পথ।
স্টিফেন হকিংয়ের বহুল আলোচিত বই “A brief history of time” প্রকাশিত হয়েছিল তার পাঁচ বছর পরে ১৯৮৮ সালে। জামার নজরুল ইসলাম এর ব্যাপকতার পরিসর ও সুযোগ সুবিধা থাকতো যদি স্টিফেন হকিংয়ের মতো, হয়তোবা তিনিও হতেন তার মতো গ্রোহানু।
নজরুলের চরিত্রের উপর ভিত্তি করে নির্মিত স্টিফেন হকিংয়ের বিস্ময়কর “থিওরি অব এভরিথিং” থ্রিলারটি পৃথিবীতে নজর কারে ব্যাপক মানুষের। অর্জন করে অনেক পরিচিতি। স্টিফেন হকিংয়ের মতো উজ্জ্বল নক্ষত্র যদি অনুধাবন করেন তার বিকশিত প্রতিভার কল্পচিত্রকে তাহলে বুঝতেই পারেন তার জ্ঞানের পরিসর ছিল কতটা সমৃদ্ধ ও দীপ্তময়।
জামাল নজরুল ইসলাম তার জ্ঞানের আলোর দ্যুতি বিকশিত করার সুযোগ ও পরিবেশ পেয়েছিলেন সুদুর লন্ডনে। সেখানেও তিনি ছিলেন লন্ডন কিংস কলেজ, সিটি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন এর অধ্যাপক, পেয়েছিল ক্যমব্রিজ এর অধ্যাপক হওয়ার সুযোগও। পরিপূর্ণ জীবন জ্ঞান বিকাশ এর সুযোগ ও মর্যাদা এবং লাখ সোয়ালাখ টাকা বেতনের চাকরি।
লন্ডনে মর্যাদার স্বর্নমুকুট ও ক্যামব্রিজের অধ্যাপক হবার সুযোগ যেন মাতৃভূমির ভালোবাসার কাছে হয়েছিল তুচ্ছহীন। ভেবেছিলেন দেশের মানুষের কথা। নিজের জ্ঞানের আলোর দীপ্তমান প্রদীপের আলো ছড়িয়ে দিতে হবে নিজ দেশেও। তাই সকল ধরনের মোহ ও পিছুটান ফেলে চলে আসেন নিজ মাতৃভূমিতে। জ্ঞানের বিকাশ ছড়িয়ে আলোকিত করতে বাংলাদেশের তরুন নক্ষত্র গুলোকে।
প্রতিভাবান ব্যাক্তিদের চেতনার বিকাশ যেন একটু আলাদাই হয় তাইত ক্যামব্রিজের সেই জাদুর রাজ্যকে মূল্যহীন ভেবে চলে আসেন মাতৃভূমিতে। যোগদান করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথমেট্রিকস ডিপার্টমেন্টে ১৯৮৪ সালে। তৎকালীন সময়ে ২-৩ হাজার টাকা বেতনের চাকরিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা বলা হলে তিনি বলেন আমি চট্টগ্রামেই থাকবো।
আরও পড়ুরঃ সত্যেন্দ্রনাথ বসু -গল্পে গল্পে বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জীবন কল্প
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইন্টিফিক অনুষদের সিন্ডিকেট সদস্য ও ছিলেন তিনি। নিজের জ্ঞানের প্রদীপ্ত শিখায় আচ্ছাদিত করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে। খুজেছে তরুন নক্ষত্রগুলোকে আলো দেবার প্রেরনা দিতে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়ে তিনি নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন জ্যোর্তিবিজ্ঞান ও থিওরিটিক্যাল ফিজিক্সের উপর গবেষণা প্রতিষ্ঠান। যা ছিল মানসম্পন্ন এবং এই প্রতিষ্ঠান থেকে পি এইচ ডি করে অনেক ফেলো।
তিনি ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক নিযুক্ত হন। নিজের জ্ঞানের অংশবিশেষকে ছড়িয়ে ছিলেন দেশের মাটিতে সকল স্বার্থ উপেক্ষা করে। তার বিচরন ছিল বাংলা সাহিত্য বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত “ব্লাকহোল” সারা ফেলেছিল বাঙালীর পাঠকপ্রিয় হৃদয়ে।
জামাল নজরুল ইসলাম নির্বাচিত হয়েছিলেন অনেক স্বনামধন্য ও নামকরা সাইন্টিফিক অনুষদের ফেলো। ১৯৮৫ সালে পেয়েছিলেন র্থাড ওর্য়াড একাডেমি অব সাইন্স এর ফেলোশিপ। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলোসোফিক্যাল সোসাইটি এর স্টাফ মেম্বারশিপের খেতাব। পেয়েছেন রয়েল অ্যাস্ট্রোনোমি সোসাইটি, বাংলাদেশ একাডেমি অব সাইন্স ও ইসলামিক একাডেমি অব সাইন্স এর ফেলোশিপ।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস থেকে প্রকাশিত দ্য আলটিমেট ফেথ অব ইউনির্ভাস বইটি ছিল তারই, যা নজর কারে সকল বিজ্ঞানী মহলে। তাছাড়াও “ রোট্যাটিং ফিল্ড ও জেনারেল রিলেটিভিটি, এন ইনট্রডাক্শন টু ম্যাথিমেটিক্যাল কসমোলজি” এই বই গুলোর দীপ্তিমান শিখা আলো জ্বালাবে পৃথিবীর বুকে ও অজানা রহস্য উদ্ভাবনে কাজ করবে নিরত্নন।
জামাল নজরুল ভূষিত হয়েছেন নানা পুরস্কার ও সম্মাননায়। ১৯৮৫ সালে পেয়েছেন বাংলাদেশ একাডেমি অব সাইন্স থেকে গোল্ড মেডেল। মেডেল লেকচারার হয়েছেন একাডেমিয়া ন্যাশনালাইজ ডিলে সাইন্জ থেকে। এই দীপ্ত মান ধ্রুবতারা পেয়েছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি থেকে বাংলাদেশ ন্যাশনাল এওর্য়াড। একুশে পদক সহ রাজ্জাক সামশুনের জীবনাচারনে পান পদার্থবিজ্ঞান এওর্য়াড।
তিনি বাংলার রত্ন তাইতো এই রত্নের প্রসংশায় পঞ্চমূখ হয়েছেন নোবেলজয়ী ওয়েনর্বাগ, জেমস র্মালি, ব্রায়ান জোসেফসন। নোবেল প্রাপ্ত আব্দুস সালাম বলেন বিশ্বে আমার পর যদি কেউ নোবেল পাওয়ার যোগ্য হয় তবে তা জামাল নজরুল ইসলাম।
বিশ্বের সকল সন্মান ও মর্যাদার ভিড়েও দেশের প্রতি সবারই যে কর্তব্য বা দায়িত্বশীল থাকা উচিত তার প্রতিকৃতি নজরুল। বাংলাদেশর মতো দেশে এসে পাননি সেভাবে কোনো গবেষণার পরিবেশ শুধু ভেবেছেন নিজের দেশকে নিয়েই। জামান নজরুল এর যায়গায় যদি আমরা থাকতাম হয়তোবা ভাবতাম নিজেকে নিয়েই।
জামাল নজরুল এমন এক কল্পচিত্রের নাম যার কল্পকাহিনী অবলোকন করলে ভালোবেসে ফেলে সবাই। বাংলা দেশের প্রেক্ষাপটে তেমন পরিচয় না মিললেও তার গবেষণার রুপকথা ও চিন্তাধারার ব্যাপকতা প্রেরনা যোগাবে যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞান পরিসরে। তার বিভিন্ন ধরনের কনফারেন্স, সেমিনার প্রভাবিত করেছে বাঙালির বিজ্ঞান ভিত্তিক চেতনা ধারায়।
এই রুপকথার নায়কের জীবনের পরিশেষ ঘটে চট্টগ্রাম শহরে ৬ই র্মাচ ২০১৩ সালে। জামাল নজরুল এর মতো রুপকথার প্রতীকেরা রয়ে যাবে নিঃস্বার্থে সন্ধ্যা তারা হিসাবে। আর বাঙালির বিজ্ঞান চেতনাকে বিশ্বাস করতে শিখাবে দেশের জন্য কিছু নিতে এসেছি যা দেশকেই আলোকিত করবে ও রেখে যাবে দেশপ্রেমর সম্ভাসনের তরিকা।
মন্তব্য লিখুন