মানুষ হিসেবে আপনার যেমন জ্ঞান অর্জন করা জরুরী। ধর্মীয় দৃষ্টিতে তা অর্জন করা ফরজ। কিন্তু এমন কোনো জ্ঞান নয় যা আপনাকে পথভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যায়। মানবজাতি কীভাবে সৃষ্টি হলো?এ নিয়ে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব ঠিক এমনই একটি পাঠ। বিবর্তন হওয়া কল্পিত নয়, তবে বিবর্তনের নামে ভুলভাল তত্ত্ব দিয়ে মানুষের জন্ম ও উৎসকে বিতর্কিত করা নাস্তিক বা সেকুলারিজম প্রচার করার অন্যতম একটি প্রক্রিয়া। আসুন জেনে আসার চেষ্টা করি মানবজাতি কীভাবে সৃষ্টি হলো? এ প্রসঙ্গে ডারউইনের বিবর্তনবাদ ও ইসলামের কথা!
মানুষের উৎপত্তি নিয়ে বিজ্ঞানীদের যেন চিন্তার কোনো শেষ নেই। তবে গবেষণা করা তো মন্দ কিছু নয়। কিন্তু বিজ্ঞানী যদি এমন হয় যারা সকল কিছুর উৎসকে অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার বলে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে থাকে, তাহলে তাদের এ বিজ্ঞানচর্চা বা গবেষণা মানবজাতির জন্য অকল্যান ছাড়া আর কিছু বয়ে আনবে না। তাদের এমন গবেষণার মূল থিওরি হলো ধর্ম বা স্রষ্টা এসব বলতে কিছু নেই। সবকিছুর ব্যাখ্যা হলো দর্শন ও মানব কল্পিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব। যাকে বলা যেতে পারে বিজ্ঞানের কল্পকাহিনী বাস্তবায়নের অপচেষ্টা।
শুধু মাত্র সাম্প্রতিক সময় নয়। বহু বছর ধরে মানবজাতি সৃষ্টি হওয়ার সাথে বিবর্তন তত্ত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় পাঠ্যবইতে পড়ানো হচ্ছিল। তাদের মূলকথা হলো মানুষের আদি জাতি ছিল বানর, গরিলা বা শিম্পাঞ্জি। প্রকৃতির সাথে টিকে থাকার লড়াইয়ে বিবর্তনের ধারায় তারা তাদের বড় বড় লোম, নখ, দাত ও লেজ হারিয়ে মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ হয়েছিল। এভাবেই আজ মানবজাতির সৃষ্টি।
সাম্প্রতিক সময়ে ২০২৩ নতুন বছরে পাঠ্যপুস্তকে এই ডারউইনের বিবর্তনবাদ যতটা আলোচিত হয়েছে, এতোটা তা আলোচিত পূর্বে কখনো হয়নি। কেননা নতুন বইয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের মানুষ শিম্পাঞ্জির জাত থেকে সৃষ্টি হয়েছে এর ব্যাপক আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের বুঝানো হচ্ছে তাদের আদি পিতা বা জাতি ছিল এ সকল বন্যপশুরা। ধীরে ধীরে তারা টিকে থাকার লড়াইয়ে সভ্য হয়েছে ও বিবর্তনের ধারায় আজকের মানুষ হয়েছে।
আমাদের দেশের তথা কথিত শিক্ষা প্রণেতা ও বিজ্ঞানীরাও বিশ্বাস করেন তাদের আদি পিতা বা জাতি ছিল এই সকল বন্যপশুরা। আর তাই আমার বিশ্বাস হওয়া শুরু করেছে এই সকল শিম্পাঞ্জি গবেষক বা বিজ্ঞানীরা হয়তো বন্য পশুদের মাধ্যমেই পৃথিবীতে এসেছিল। তাই তারা তাদের আবির্ভাবের বৈধতা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আগামীর ভবিষ্যৎ কিশোর-কিশোরী শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে মানবজাতির কীভাবে সৃষ্টি হলো? এর উত্তর তুলে ধরা হলো শিম্পাঞ্জি থেকে অর্থাৎ বিবর্তনের মাধ্যমে। নাউজুবিল্লাহ!
এ নিয়ে ইসলামী দৃষ্টি কোন থেকে আমরা আলোচনা তুলে ধরার আগে আপনাদের জানিয়ে রাখি যে, পৃথিবীতে সেকুলার বা নাস্তিক গবেষক ও বিজ্ঞানীদের দল ছাড়া মানুষের উৎপত্তির এমন কাল্পনিক বৈজ্ঞানিক থিওরি কোনো বিজ্ঞানীরা গ্রহন করেনি। বরং তারা এই সকল তত্ত্বকে অতি নিন্মমানের থিওরি বলে উল্লেখ করেছেন। আজকের পৃথিবীর প্রায় সকল উন্নত দেশ থেকে বিবর্তনের এই শিক্ষা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বেশি দূরে যেতে হবে না। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও নিষিদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া চলমান। পত্র-পত্রিকার সংবাদ ও অনলাইনে এ নিয়ে বহু আর্টিকেল রয়েছে। জাস্ট আপনি একটু সার্চ করুন পেয়ে যাবেন।
মূল কথা, হলো আজকের পৃথিবীতে এখনও এসকল প্রানীরা রয়েছে। বন-জঙ্গলে তারা প্রতি নিয়ত লড়াই করে বেঁচে থাকে । কিন্তু কখনোই তাদের বিবর্তন হয়ে নতুন কোনো প্রানী হতে দেখা যায়নি। এমন কি কোনো শিম্পাঞ্জির বা বানরের কোষ বা ডিএনএ গবেষণা করেও মানুষের মত নতুন কোনো প্রানী সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। তাই বলা যায়, মানুষের উৎপত্তি নিয়ে বিবর্তনবাদ তাদের এক প্রকার সাইন্স ফিকশন গবেষণা।
যদিও আমরা শুধু বলছি, মানবজাতি কীভাবে সৃষ্টি হলো? এ প্রশ্নে মানুষকে ধর্ম ও সৃষ্টিকর্তা থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য বন্যপ্রাণী থেকে মানুষ সৃষ্টির হওয়ার যে বিবর্তনবাদ থিওরি উল্লেখ করা হয়েছে তা বিজ্ঞানের জন্যও লজ্জা ও চরম বিষাদময়। আর ইসলাম ধর্মীয় দৃষ্টিতে মারাত্মক বিধ্বংসী আকিদা।
তবে বিবর্তন হওয়াকে সরাসরি ভুল বলা যায় না। কেননা যেমন ধরুন গবেষণার মাধ্যমে বিবর্তন গঠিয়ে উন্নয়ন হাইব্রিড জাত বা বড় আকৃতির অথবা অধিক ফসল উৎপাদন করা। এ ছাড়াও আমরা জানি মানুষ আদি পিতা আদম থেকে মানুষের আকার হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু কখনোই অঙ্গ-প্রতঙ্গ ভিন্ন আকৃতি লাভ করেনি।
সাম্প্রতিক পাঠ্যবইয়ের উল্লেখ করা কল্পিত ডারউইনের এ থিওরির প্রতিবাদ জানিয়ে প্রখ্যাত ইসলাম স্কলার শাইখ ড. মিজানুর রহমান আজহারি তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে লিখেন-
“৬ষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সমাজ বিজ্ঞান বইয়ে মানব জাতির ক্রমবিকাশ বোঝাতে এমন কিছু ছবি জুড়ে দেওয়া হয়েছে যা সুকৌশলে শিক্ষার্থীদের মনে চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্বের মতো ঈমান বিধ্বংসী মতবাদের বীজ বপন করবে। নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকেও যা বিদ্যমান। জেনে রাখা দরকার— বিবর্তন প্রমাণিত কিন্তু ‘চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব’ প্রমাণিত নয়। সহিহ বুখারীর বর্ণনামতে— প্রথম নবি ও আদি পুরুষ আদম (আ.) ৬০ গজ লম্বাকৃতির ছিলেন। ধীরে ধীরে মানুষের আকৃতি ছোট হতে হতে মানুষ তার বর্তমান আকৃতি লাভ করেছে। এটা মানব জাতির বিবর্তন। কিন্তু তথাকথিত ‘বিবর্তনবাদ তত্ত্ব’ মানুষের মন-মস্তিষ্ক প্রসূত একটি ধারণা, যা কুরআনের সৃষ্টিদর্শনের সাথে সাংঘর্ষিক। বানর বা শিম্পাঞ্জি জাতীয় অন্য কোন প্রজাতি থেকে মানুষ এসেছে— এই মতবাদ সর্বৈব অসত্য। বিজ্ঞান যতো অগ্রসর হবে বিবর্তনবাদের ধারণা ততো অ*কার্যকর হয়ে পড়বে, ইনশাআল্লাহ।”
পবিত্র কুরআনুল হাকীমে মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালা বলেন-
“আপনার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদের বললেন, আমি পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুদ্ধ ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্ট একটি মানব জাতির পত্তন করব। অতঃপর যখন তাকে ঠিকঠাক করে নেব এবং তাতে আমার রূহ থেকে ফুঁক দেব, তখন তোমরা তার সামনে সিজদায় পড়ে যেও। তখন ফেরেশতারা সবাই মিলে সিজদা করল। কিন্তু ইবলীস সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হ’তে অস্বীকার করল। আল্লাহ বললেন, হে ইবলীস, তোমার কী হ’ল যে, তুমি সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হ’তে স্বীকৃত হ’লে না? ইবলীস বলল, আমি এমন নই যে, একজন মানবকে সিজদা করব, যাকে আপনি পচাকর্দম থেকে তৈরী ঠনঠনে বিশুষ্ক মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বললেন, তবে তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও, তুমি বিতাড়িত।” (হিজর ২৮-৩৪)
মানবজাতি কীভাবে সৃষ্টি হলো? এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের জানিয়ে আরও বলেন-
“হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন কর যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের দুজন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দেন; আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর যাঁর নামে তোমরা একে অপরের কাছে নিজ নিজ হক্ দাবী কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারেও। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক।” (সূরা নিসা:০১)
অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন-
“হে মানব মন্ডলী আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হও। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সেই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।” (সূরা হুজুরাত: ১৩)
“তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অনন্তর একটি হচ্ছে তোমাদের স্থায়ী ঠিকানা ও একটি হচ্ছে স্বল্প মেয়াদী ঠিকানা। নিশ্চয়ই আমি প্রমাণাদি বর্ণনা করে দিয়েছি বিস্তারিতভাবে তাদের জন্যে, যারা চিন্তা করে।” (সূরা অন‘আম: ৯৮)
মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ বলেন-
“আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্র বিন্দু থেকে এভাবে যে, তাকে পরীক্ষা করব। অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন।” (সূরা আদ-দাহার: ০২)
“হে লোক সকল আমি তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেছি, এরপর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে, এরপর পূর্ণাকৃতি বিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতি বিশিষ্ট গোশতপিন্ড থেকে তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে।” ( সূরা হজ্জ: ০৫)
প্রিয় পাঠক, পবিত্র কুরআনুল হাকীমে মানবজাতি কীভাবে সৃষ্টি হলো? এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা সংখ্যক আয়াত নাজিল করে মানবজাতিকে তা বিস্তারিত জানিয়েছেন। আমরা প্রবন্ধের সংকীর্ণতায় তা উল্লেখ করছি না। সেসকল আয়াত ও তাফসীর অধ্যায়ন করলে আপনি এ বিষয় একদম বিস্তারিত জেনে যাবেন, ইনশাআল্লাহ।
মানবজাতি কীভাবে সৃষ্টি হলো? এ প্রসঙ্গে ইসলামের কথা আমরা জানার চেষ্টা করলাম। তাই একজন মুসলিম হিসেবে আপনাকে অবশ্যই আল্লাহর বাণীর উপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। যেখানে মানুষের সৃষ্টি সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা ইসলামে রয়েছে, সেখানে ডারউইনের বিভ্রান্তিকর কল্পিত থিওরিতে বিশ্বাস করলে একজন ব্যক্তি সরাসরি কাফির হয়ে যাবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
আর আমাদের দেশের শিক্ষা ও পাঠ্যপুস্তক প্রণেতাদের নিকট অনুরোধ রইলো কল্পিত তত্ত্ব দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠ করিয়ে ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে তাদের পথভ্রষ্ট করাবেন না। এ বিষয়ে শুধু মাত্র পবিত্র ইসলাম ধর্ম নয় বরং অন্য ধর্মগুলোতেও মানবজাতি কীভাবে সৃষ্টি হলো? এর ব্যাখ্যায় কোনো পশুদের কথা উল্লেখ নেই। তাই অন্যধর্মও কখনো ডারউইনের কল্পিত এ বিবর্তনবাদ তত্ত্বকে সাপোর্ট করে না। তাই জরুরী ভিত্তিতে এসকল বই সংশোধন করে পুনঃমুদ্রিত করুন। প্রকৃত অর্থে বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় শিক্ষা দান করুন। নতুবা তীব্র আশঙ্কা অদূর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সভ্যতা থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবে।
তাঁর কথায় কোন যুক্তি ছিলো না।
ছিলো শুধু বিশ্বাস।
বিশ্বসীরা পৃথিবীতে কোন কিছু করে দেখাতে পারেনি।
আর যাদের নিয়ে কথা হচ্ছে-এদের ধারণা দিয়ে
মানুষ আজ আকাশে উড়ে,এক জায়গায় বসে অন্য জায়গার লোকের সাথে কথা হয়-দেখা হয়।
বিশ্বাসীরাও এসব সুবিধা নেই বাট এগুলো দেখেও বিশ্বাস করে না।
আপনার কমেন্ট অনুযায়ী, আপনি যা বুঝচ্ছেন এতে আমার ধারণা বিজ্ঞান বিষয়ে আপনার জানার বেশ ঘাটতি রয়েছে। আপনি হয়তো জানেন না মুসলিম বিজ্ঞানীদের আবিস্কার অগণিত। যদি জানার আগ্রহ থাকে তো ন্যাশনার জিওগ্রাফি থেকে প্রকাশিত বইয়ের বাংলা অনুবাদ ‘মুসলিম বিশ্বের ১০০১ আবিস্কার’ বইটি পড়ুন।