হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আমাদের জীবনে এক অনুকরণীয় ও অনুস্বরনীয় হিসেবে দৃষ্টান্তস্বরুপ। যাকে, আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটি কাজের সঠিক পথ দেখানোর জন্য নেতা মনোনীত করে পাঠিয়েছেন। মুসলিম হয়ে আদৌ কি আমারা সেগুলো পরিপূর্ণভাবে জানি? এটা আমাদের একটি লজ্জাকর বিষয় কারন আমরা ইসলাম ধর্মের অনুসারী হয়েও সুন্নতগুলো জানিও না আর তা জানার চেষ্টাও করি না। ফলে দুর্বল ইমানের মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। নিচে সহজে আমলযোগ্য বিশ্বনবীর ২০টি সুন্নত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। যা সঠিকভাবে পালন করতে পারলে একজন মুসলিম অন্ধকার পথ থেকে আলোর পথে খুব সহজেই ধাবিত হবে।
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
একজন মানুষ অপর একজন মানুষকে জানিয়ে দেবে যে, সে তাকে ভালোবাসে অর্থাৎ যে যতই খারাপ ব্যবহার করুক না কেন তারপরও নবীর দেওয়া শিক্ষা অনুযায়ী তাকেও ভালোবাসতে হবে। নবী বলেছেন একজন মুসলমান অপর একজন মুসলমানের ভাই। সুতরাং ভাই আরেক ভাইকে কখনও ঘৃনা করতে পারে না।
এতিমদের দেখাশোনা করার জন্য ইসলাম শিক্ষা দিয়েছে। মানবজাতিকে যা সরাসরি দৃষ্টান্তমূলকভাবে দেখিয়েছে আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ( সাঃ)। বিশ্বনবী নিজেও একজন এতিম ছিলেন। সে পথে ঘাটে যতো এতিম দেখতেন সবার সাথে ভালো ব্যবহার করতেন এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “কুস্তিতে পরাক্রমশালী প্রকৃত বীর নয়, রাগের সময় যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সেই প্রকৃত বীর”। এবং রাগ আসে শয়তান থেকে তাই রাগের সময় অযু করা বা শরীরে পানি ঢালা আমাদের দায়িত্ব। যে রাগ না দেখিয়ে ধৈর্য্য ধরে থাকতে পারবে সে সওয়াবের ভাগিদার হবে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা ধরনের কাজ রয়েছে যা সাধারনত ঘরের নারীরাই করে থাকে অর্থাৎ ঘরের স্ত্রী এগুলো সব সামলায়। এখানে যদি একজন অপরজনকে একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে কাজটি সহজ হয়ে যায়।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কঠোর যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরেও তার বিবি আয়েশা -কে রুটি বানানো থেকে ঘরের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করতো”। যা থেকে আমাদেরও শিখা উচিৎ।
দান–সাদকা করা সমাজে যেমন সম্মানীয় কাজ তেমনি পরকালের জন্য সাহায্যের একটি দিকস্বরুপ। যেটাকে আমরা পরকালের একটি জমা রাখা পরকালীন অর্থও বলতেপারি। বিশ্বনবী বলেছেন, “তোমরা বেশি বেশি সাদকা করো যেটা কেয়ামতের দিন জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবে।”
দৈনন্দিন জীবনে আমরা ঘর থেকে বাহির হলেই চলার ক্ষেত্রে রাস্তা ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। সেখানে যদি কোনো অপ্রয়োজনীয় জিনিস অর্থাৎ যেটা চলতে সমস্যা সৃষ্টি করে যেমনঃ বিভিন্ন গাছের কাটা, পিচ্ছিল জাতীয় ফলের খোসা, বড়ো গাছ রাস্তা জুড়ে পরে থাকা ইত্যাদি। স্বয়ং রাসুল (সাঃ) কে, এক বুড়ি প্রতিদিন তার চলার পথের রাস্তায় কাটা দিয়ে রাখতো যাতে সে চলতে না পারে। এটা অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা ছিলো।
একজন লোক আরেকজন লোককে বিশ্বাস করে একটি গোপন কথা বললো, সে জদি এটা গোপন না রেখে ফাঁস করে দেয় তা এক বড় ধরনের গুনাহ্ হবে। প্রিয়নবী এর থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।
পরিবার একটি সমাজ গড়ে তোলার সর্বোপ্রথম হাতিয়ার। এখানে কম বেশি লোক থাকে, স্ত্রী সন্তানসহ। এই পরিবারের জন্য যদি একজন পুরুষ অর্থ খরচ করে যা ব্যয় করবে তাও সওয়াবের পাল্লায় জমে থাকবে। মাঝে মাঝে স্রী সন্তান নিয়ে ঘুরতে যাওয়া, আবার প্রতি মাসে স্ত্রীকে কিছু হাত খরচের টাকা প্রদান করাও এক ধরনের নেকির কাজ। ভরন পোষনসহ সকল কিছু ব্যয় করার জন্য ভালো কাজের তালিকায় কেয়ামতের দিন গন্য হবে।
অযু অবস্থায় থাকা এমন একটি দিক, যেটা সকল শয়তান থেকে আসা সকল কুকাজ বা খারাপ কিছু থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। যেমন রাত্রে শোয়ার আগে যদি আমরা অযু অবস্থায় শুই তাহলে সারারাত যেমন ঘুমানের ভিতরেও সওয়াবের সামিল হবে, তেমনি খারাপ স্বপ্ন থেকেও হেফাজত পাবে। তাই নবী আমাদের অযু অবস্থায় ঘুমানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
আমাদের সমাজে সবাই দাত খিলাল বা পরিষ্কার করার জন্য ব্রাশ করে। কিন্তু রাসূল (সাঃ) এর সূন্নতি তরিকায় কি আছে তা কেও এনালাইসিস করার চেষ্টা করে কি? ব্রাশ ব্যবহারের ফলে দাতের ক্ষয় আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে এছাড়াও নানা ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে, মেসওয়াক ব্যবহারের ফলে দাতের অনেক উপকারিতা রয়েছে কোনো ক্ষয় বা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা বেশি বেশি মেসওয়াক করো কেননা এটা মৃত্যুর যন্ত্রণার কষ্ট কমিয়ে দেয়।”
রাসূলের যুগে, রাসূলের সাহাবিরা মসজিদের সংলগ্নে বাড়ি থাকা স্বত্বেও তারা দূরে যেয়ে বাড়ীঘর স্থাপন করতেন।কারন, বাড়ি থেকে মসজিদে যেতে যে কয়টা কদম মাটিতে পরবে ঠিক তেমন অনুযায়ী সওয়াবের পাল্লা ভারি হবে।তাই যতো দূরে বাড়ী আর পায়ে হেটে মসজিদে যাওয়া যায় ততোই নেকির ওজন বাড়বে, এজন্য আমরা মসজিদে যাওয়ার সময় কোনো গাড়ি ব্যবহার করবো না।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)বলেছেন, “অন্যান্য দিনের চেয়ে জুমার দিন সবচেয়ে উত্তম দিন”। তাই এই দিনে পরিষ্কার হয়ে অর্থাৎ গোসল থেকে শুরু করে পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করে, সুগন্ধী লাগিয়ে মসজিদে আগমন করে দোয়া করলে খুব শীগ্রই দোয়া কবুল হয়। আমাদের সমাজের লোকজনও এ কাজ করে থাকে, কিন্তু কিছু কিছু লোক ইসলামের অনুসারী হয়েও জুমার দিনকেও মানে না তাই আমাদের উচিৎ তাদেরকে সজাগ করে দেওয়া।
খাদ্য জীবনকে বাচিয়ে রাখার জন্য সবার ক্ষেত্রে অপরিহার্য। এই খাদ্য যদি শুদ্ধ না হয় অর্থাৎ খারাপ রুপে পরিনত হয় তাহলে এই খাদ্য খাওয়ার চেয়ে না খাওয়াই শ্রেয়। যেমন, আমরা খাবার প্লেটে রেখে বিসমিল্লাহ পাঠ না করেই খেতে শুরু করি তাহলে এই খাদ্যগুলো আমাদের সাথে সাথে শয়তান খেয়ে ফেলে।
যেটা আমরা এই দুষ্ট শয়তানদের চোখে দেখি না, তাছাড়া খাবারে কোনো বরকতও আসবে না। কারন আমরা আল্লাহর নাম শুরু করে আহার করি নি। তাই আমাদের উচিৎ বিসমিল্লাহ বলে আহার শুরু করা।
আমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর একটি হাদিস হতে পাই, কেও যদি পানাহারের পর আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করলো সে একটি রোজা রাখার সওয়াব পেলো। যেহেতু আমরা মুসলিম তাই আমাদের আহার করা শুরু হবে আল্লাহর নামে আর শেষ হবে আল্লাহর প্রশংসার মাধ্যমে। এটাই বিশ্বনবীর সুন্নত, অপরদিকে নেকি লাভের একটি বিশাল সুযোগ।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)বলেছেন, “তোমরা বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করো কেনোনা এই কুরআন কাল কেয়ামতের দিন পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে”। কুরআন এমন এক বরকতময় নাম যেটায় একটি হরফ পরলেও নেকি পাওয়া যায়। কিন্তু আজকের সমাজে মুসলিম হয়েও অনেক মুসলিম কুরআন পাঠদানে দুর্বল।
বৃষ্টি আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে।এটার মধ্যেও অনেক কল্যানকর আছে,ক্ষেতে যতো ফসল ফলে তা ফলাতে বৃষ্টির গুরুত্ব অপরিসীম।এই বৃষ্টির সময় যদি আমরা দুহাত তুলে দোয়া করি তাহলে আল্লাহ্ তায়ালা অতি শীগ্রই কবুল করে নেয় কারন রহমতের পানি হাতে নিয়ে দোয়া কবুলের আশায় আল্লাহর কাছে আবেদন পেশ করি।
পানি থেকে শুরু করে সবকিছুই অযথা অকারনে ব্যয় করা যাবে না, কারন এর জন্যও কেয়ামতের দিন হিসাব দিতে হবে। যেমন- অযু বা গোসলের সময় পানি যতুটুকু দরকার ঠিক ততোটুকুই ব্যয় করতে হবে অতিরিক্ত পানি খরচ করা যাবে না। এতে শিষ্টাচারও শিখা হবে। আবার, নাচ গানে যদি আমরা অর্থ ব্যয় করে আনন্দ উৎসব করি তাহলে একদিকে যেমন পাপের ভাগিদার হবো তেমনি অযথা ব্যয় হবে। তাই, ওয়াজ মাহফিলে খরচ করা উচিৎ।
আল্লাহ্ তায়ালা পুরুষের সৌন্দর্যের জন্য দাড়িকে বানিয়েছেন এক অন্যান্য। বিশ্বনবীর সুন্নত হলো দাড়ি রাখা, কিন্তু আজকের সমাজে লোকজন বলে দাড়ি রাখলে কিনা বুড়ো দেখা যায়। দাড়ি রাখলে আজকের সমাজে অনেক জব থেকে বাতিল করা হয়। এটা খুবই দুঃখজনক। অপরদিকে, মোচকে খাটো করা কারন গোঁফ বড়ো থাকলে অনেক সমস্যা হয় খেতে সমস্যা আরও সমস্যায় পরতে হয়।
নবী বলেছেন, “কারো নামে গীবত বলে বেড়ানো তার মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সমান হয়“। বাড়ি থেকে শুরু করে বাজার–ঘাটে গীবত বলে বেড়ানোর প্রচলন রয়েছে। কাল কেয়ামতের দিন গরম সীসা তার মুখে ছুড়ে দেওয়া হবে। তাই রাসুল দুনিয়া থেকেই সাবধান হতে বলেছেন কেননা এখনই সুযোগ পরে মৃত্যুর পর আর কোনো নেক আমলনামা খোলা হবে না।
কাল কেয়ামতের দিন ঐ কঠিন বিপদের দিন আল্লাহ ছাড়া বাচাঁনোর কেও থাকবে না। এখন যদি দুনিয়ায় থাকতে আল্লাহকে ভয় না পাই তাহলে দুনিয়ায় সব পাপের কাজেই লিপ্ত হতে পারবো, আর যদি আল্লাহকে ভয় করি তাহলে পাপ কাজ দূরের কথা আরো আল্লাহর ভয়ে চোখের পানি চলে আসবে। রাসুল বার বার আমাদের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে আল্লাহর কাছে কাদঁতে বলেছেন।
উপরোক্ত বিশ্বনবীর ২০টি সুন্নতি কাজ থেকে আমরা কি শিখলাম যে, রাসূল কতটা সৎ ছিলো। কতোটা দয়ার নবী ছিলো। আমরা মুসলিম হয়ে এ কয়টি বিশ্বনবীর সুন্নত যদি পালন করতে পারি তাহলে অনেক সওয়াব লাভ করতে পারবো।আশা করি এ আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের জীবনকে কিছুটা পরিবর্তন আসবে। আজকে নবীর সুন্নতি কাজ থেকে মানুষ অনেকটা দুর্বল। তাদেরকে সবল করতে বেশি বেশি বিশ্বনবীর সুন্নত পালন করতে হবে। এগুলো সম্পর্কে বেশি বেশি পড়তে, জানতে ও লিখতে হবে। তাহলে সমাজও অনেকটা সুন্নতি কাজ দ্বারা প্রভাবিত হবে।
তথ্যসূত্রঃ
আল্লাহ তাআলা আমাদের সুন্নত গুলো পালন করার তৌফিক দান করুক। ধন্যবাদ লেখককে সুন্দর করে সাজিয়ে পরিবেশন করার জন্য ।
মাশাআল্লাহ
Amader sobaike mohan allah nobider sonnot palon korar towfiq dan koruk amin.abong beshi kore allah sokriya aday korar tawfiw dan koruk amin.
নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছিলেন অনেক সুন্দর চরিত্রের অধিকারী একজন। ওনার মত চরিত্র আর দ্বিতীয় কারো হবে না। তিনি ছিলেন অনেক নম্র প্রকিতির। তার আচরণ ছিল কুসুম এর মত কোমল।