প্রিয়তমা স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) এর প্রতি রাসুলুল্লাহ -এর ভালােবাসার কথা এতটাই সুমধুর ও প্রসিদ্ধ যে, তা আর খুলে বলার কোন অপেক্ষা রাখে না। বলাই বাহুল্য যে, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) কে যতটা বেশি ভালােবেসেছেন তা আর অন্য কাউকে বাসেননি। যা আমরা নবিজি (সাঃ) এর প্রেমময় দাম্পত্য জীবন থেকে স্পষ্ট দেখতে পাই। আবার এর মানে এই নয় যে, তিনি অন্য স্ত্রীদের ভালোবাসতেন না, হক আদায় করতেন না!
বরং তিনি তো ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় আল্লাহ প্রেরিত সেরাদের মাঝে অদ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন। স্ত্রীদের যথাযথ হক আদায়ের শিক্ষা তিনিই প্রথম দিয়েছেন। তবে ভালোবাসার ক্ষেত্রে পছন্দের কমবেশি হওয়া ইনসাফ বহির্ভূত নয়। তাই স্ত্রীদের মাঝে উম্মুল মুমিনিন আয়িশা (রাঃ) ছিল রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সবচেয়ে পছন্দের। চলুন এনজরে জেনে আসি প্রিয়তমা স্ত্রীর সাথে রাসূল (সাঃ) এর প্রেমময় দাম্পত্য জীবনের কিছু মুহুর্ত! ইং শা আল্লাহ।
নবিজির দাম্পত্য জীবন থেকে জানা যায় সকল স্ত্রীদের মাঝে একমাত্র কুমারী স্ত্রী ছিল হযরত আয়িশা (রাঃ)। অর্থাৎ তাঁকে ছাড়া অন্য কোনাে কুমারী নারীকে তিনি কখনোই বিয়ে করেননি। তাই হযরত আয়িশা (রাঃ) এর প্রতি তাঁর ভালোবাসার এই অনুরাগের কথা তিনি গােপন করতেন না। বরং সবার সামনে বলতেন, তিনি আয়িশা (রাঃ) কে কতটা বেশি ভালােবাসেন!!
যেমন, একবার এক সাহাবীর প্রশ্নে তা স্পষ্ট বোঝা যায়। সাহাবীর নাম ছিল আমর বিন আস (রাঃ) তিনি রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল আপনার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ কে? রাসুল (সাঃ) উত্তর দিলেন, ‘আয়িশা‘। সাহাবী হযরত আমর (রাঃ) এরপর আবার জানতে চাইলেন, ‘পুরুষদের মধ্য থেকে?’ রাসুল (সাঃ) উত্তর দিলেন, ‘আয়িশার বাবা‘ অর্থাৎ হযরত আবু বরক (রাঃ)।” [সহিহ বুখারী]
প্রিয়তমা স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) এর প্রতি তাঁর ভালোবাসার অনেক ঘটনা রয়েছে। যেমন তিনি (সাঃ) ঘর থেকে বের হওয়ার সময় তিনি স্ত্রীদের চুমু খেতেন। হযরত উরওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত-
“আয়িশা (রাঃ) বলেন, ‘রাসুল ও তাঁর জনৈক স্ত্রীকে চুমু খেয়ে অজু না করেই বের হলেন নামাজের উদ্দেশ্যে। উরওয়া বলেন, ‘সে স্ত্রী আপনি ছাড়া আর কে!’ আয়িশা (রাঃ) আমার কথা শুনে হেসে দিলেন।” [তিরমিজি, নাসায়ি]
অর্থাৎ জনৈক স্ত্রী ছিল আয়িশা (রাঃ) নিজেই, তাই তিনি লজ্জা পেয়ে হেসে দিলেন।
এমনকি রােজা অবস্থায়ও রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের চুমু খেতেন। আয়িশা (রাঃ) এও বলেন-
“রােজা অবস্থায়ও রাসুল (সাঃ) তাঁর স্ত্রীদের চুমু খেতেন। তাঁদের আলিঙ্গন করতেন। আর প্রবৃত্তির ওপর তিনি তােমাদের চেয়ে বেশি সংযমী ছিলেন।” [সহিহ বুখারী]
এ হাদিসে স্ত্রীদের চুমু খাওয়ার অর্থে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয়তমা আয়িশা (রাঃ) যে সবচেয়ে বেশি ভাগ্যবতী ছিলেন হাদিসের বর্ণনায় জ্বলজ্বল করছে। প্রকৃত অর্থে হাদিসের কথায় উম্মুল মুমিনিন আয়িশা (রাঃ) যখন নিজে বলছেন তখন ভালোবাসার এক অকৃত্রিম লজ্জাশীলতা তাঁর মাঝে ফুটে উঠেছে। তাই তিনি বারবার ‘স্ত্রীদের’ শব্দটি উল্লেখ করেন অথচ তাঁকেই যে বেশি চুমু খেতেন এটি তিনি যথার্থ ভাবে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন। অর্থাৎ তাঁকে চুমু খেতেন একথা না বলেও তাঁকেই ইঙ্গিত করে দিলেন, সুবহানাল্লাহ।
প্রিয়তমা স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) খাবার সময় পানি পাত্রের যেখান থেকে ঠোঁট লাগিয়ে খেতেন তিনি (সাঃ) খুঁজে খুঁজে ঠিক সেখান থেকে ঠোঁট লাগিয়ে পানি পান করতেন।
সহিহ হাদিসে এসেছে- পানপাত্রের যে স্থানে মুখ লাগিয়ে স্ত্রী পান করেছে, সেখানে মুখ দিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিজেও পান করতেন। হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন-
“ঋতুবতী অবস্থায়ও আমি পান করে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিতাম। তিনি (সাঃ) ঠিক সেই জায়গায় মুখ লাগিয়ে পান করতেন, যেখানে মুখ লাগিয়ে আমি পান করেছি। তিনি আরও বলেন, ঋতুবতী অবস্থায় আমি গােশতযুক্ত হাড় খেয়ে রাসুলুল্লাহকে দিতাম। তিনি ঠিক সেই জায়গায় মুখ লাগাতেন, যেখানে মুখ লাগিয়ে আমি খেয়েছি।” [সহিহ মুসলিম]
শব্দান্তরে হাদিসটি এভাবেও বর্ণিত হয়েছে-
“পানপাত্রের যে অংশে মুখ রেখে। আমি পান করতাম, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও ঠিক সে অংশে মুখ রেখে পান করতেন। আমার পান করার উচ্ছিষ্ট পানিও তিনি পান করতেন। যদিও আমি তখন ঋতুবতী অবস্থায় থাকি।” [সুনানে নাসায়ি ]
এটা প্রিয়তমা স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) এর প্রতি তাঁর প্রগাঢ় ভালােবাসার অনন্য এক সুমধুর বহিঃপ্রকাশ। স্ত্রীর সাথে প্রেমময় সম্পর্কের এই ছােট্ট কাজটি কত বেশি প্রভাব ফেলে একজন স্ত্রীর উর্বর হৃদয়ে যা একমাত্র রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই দেখিয়েছেন। একজন রাসূল যিনি কিনা বিশ্ব জাহানের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব তিনি তাঁর স্ত্রীর চিবানো হাড় তুলে আবার নিজে চিবুচ্ছেন। স্ত্রীর দেওয়া জায়গায় মুখ রেখে হাড় চিবুচ্ছেন, আবার স্ত্রীর দেওয়া জায়গায় মুখ রেখে পান করছেন। অথচ সেই স্ত্রী তখন ঋতুবতী! সুবহানাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, নিঃসন্দেহে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা ও স্ত্রীর প্রতি পরম ভালােবাসার পরিচয়।
তিনি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) মুখে মাজা মিসওয়াক দিয়ে নিজের দাঁত মাজতেন। উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন-
“আমার ওপর আল্লাহর অন্যতম মেহেরবানি হচ্ছে, রাসুল এই আমার ঘরেই মৃত্যুবরণ করেন। সে দিনটি আমার পালায় ছিল। মৃত্যুর সময় তাঁর ও আমার মুখের লালা একত্রিত হয়েছিল। (সেদিন) আব্দুর রহমান আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। তাঁর হাতে ছিল একটি মিসওয়াক ছিল। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তখন আমার গায়ে হেলান দিয়ে ছিলেন। আমি দেখলাম, তিনি আব্দুর রহমানের হাতের মিসওয়াকের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি জানতাম, তিনি (সাঃ) মিসওয়াক করতে পছন্দ করেন। রাসুল (সাঃ) -এর কাছে জানতে চাইলাম, আমি কি মিসওয়াকটা নেব? মাথা নেড়ে তিনি সায় দিলেন। মিসওয়াক নিয়ে বললাম, “নরম করে দিই?” রাসুল (সাঃ) আবারও মাথা নেড়ে সায় জানালেন। আমি দাঁত দিয়ে মিসওয়াকের আগা কেটে নিলাম, এরপর চিবিয়ে নরম করে রাসুলুল্লাহ-কে দিলাম। তিনি আমার বুকের ওপর ভর দেওয়া অবস্থায় মিসওয়াক করলেন।”[সহিহ বুখারী]
একবার এক সফরে উম্মুল মুমিনিন আয়িশা (রাঃ) রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন। ঘটনাক্রমে এক জায়গায় আয়িশা (রাঃ) এর হার হারিয়ে যায়। সাহাবিরা সবাই হার খুঁজতে লেগে গেলেন। হারের জন্য কাফেলাকে এমন জায়গায় দাঁড়াতে হলাে, যেখানে পানি নেই। পিতা হযরত আবু বকর (রাঃ) এসে আয়িশা (রা)-কে তিরস্কার করলেন (কেননা তাঁর কারণে পুরাে কাফেলা কষ্টে পড়ল)। হযরত আয়িশা (রাঃ) আরও বলেন- পিতা হযরত আবু বকর (রাঃ) আমাকে ভৎসনা করলেন। তিনি আঙুল দিয়ে আমার কোমরে ধাক্কা দিতে লাগলেন। রাসুল (সাঃ) তখন আমার উরুর ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছেন। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কোলে ঘুমিয়ে থাকার কারণে আমি এতটুকুও নড়িনি।” [সহিহ বুখারী]
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয়তমা স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) আরও বলেন-
“আমি ঋতুবতী অবস্থায় থাকলেও নবিজি (সাঃ) আমার কোলে ঠেস দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করতেন।” [সহিহ বুখারী]
এ হাদিস থেকে আমরা শিখলাম যে মহিলাদের হায়িজ হলেও তাদের প্রতি নাক সিটকানাে আচরণ গ্রহণযােগ্য নয়। এমনটা ইহুদিরা করে থাকে। তারা ঋতুবতী মহিলার সাথে একত্রে খায় না; এমনকি একসঙ্গে বসেও না। অবশ্য আজ আমাদের সমাজে অজ্ঞ কিছু মুসলমানও এমন আচার-আচরণ করে থাকে। স্রীর সাথে তাঁদের আচারণ এতোটা নিচু যা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদর করে তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) এর নামকে ছােট করে ডাকতেন। উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন-
“রাসুল (সাঃ) একদিন আমাকে বললেন, “হে আয়িশ, জিবরাইল তােমাকে সালাম দিচ্ছেন। তখন আয়িশা (রাঃ) বললেন, তাঁর ওপরও আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হােক।” [সহিহ বুখারী]
রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশা (রাঃ) কে ‘হুমাইরা‘ নামেও ডাকতেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন-
“কিছু হাবশি বালক মসজিদে খেলাধুলা করছিল। নবিজি (সাঃ) আমাকে ডেকে বললেন, “হুমাইরা, তুমি কি তাদের খেলাধুলাে দেখতে চাও?” আমি উত্তর দিলাম, হাঁ।” এরপর তিনি তাঁকে নিয়ে খেলা দেখলেন। [আস- সুনানুল কুবরা]
ইমাম কাজি ইয়াজ বলেন-
“আদর-সােহাগ ও ভালােবাসা প্রকাশে তিনি (সাঃ) তাঁকে ‘হুমাইরা‘ নামে ডেকেছিলেন তাকে।
রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রিয়তমা স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) কে ‘উম্মে আব্দুল্লাহ‘ উপনামেও ডাকতেন। হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন- “আব্দুল্লাহ বিন জুবাইরের জন্মের পর তাঁকে নিয়ে আমি নবিজি (সাঃ) -এর কাছে আসলাম। আব্দুল্লাহর মুখের ভেতর তিনি নিজের লালা দিলেন।আব্দুল্লাহর পেটে ঢােকা দুনিয়ার প্রথম জিনিস ছিল রাসুল (সাঃ)-এর মুখের লালা। তিনি (সাঃ) বললেন, “এ হলাে আব্দুল্লাহ। আর তুমি উম্মে আব্দুল্লাহ।”
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীর সাথে একসাথে গোসল করতেন। যেমন হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন-
“আমি ও রাসুল (সাঃ) একই পাত্র থেকে পানি নিয়ে গােসল করতাম। পাত্রটি আমার ও তাঁর মাঝে থাকত। কখনাে তিনি আমার আগে পানি নিয়ে নিতেন। কখনাে আমি তাঁর আগে পানি নিতাম। এমনকি তিনি বলতেন, “আমার জন্য রাখাে।” আমিও তাকে বলতাম, “আমাকে নিতে দিন।” [সহিহ বুখারী]
হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন- “একবার রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে এক সফরে বের হলাম। আমি তখন কিশােরী। শারীরিকভাবে ছিলাম হালকা। শরীরে তেমন মেদ জমেনি। রাসুল (সাঃ) সাহাবিদের বললেন, “তােমরা এগিয়ে যাও।” রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশে তাঁরা এগিয়ে গেল। এরপর তিনি (সাঃ) আমাকে বললেন, “চলাে, দৌড় প্রতিযােগিতা করি।” আমরা প্রতিযােগিতায় অবতীর্ণ হলাম। দৌড়ে হারিয়ে দিলাম তাঁকে। তিনি চুপ করে থাকলেন, কিছু বললেন না। (এরপর অনেক সময় কেটে যায়) আমার শরীর বাড়তে লাগল। দেহে মেদ জমল । আগের প্রতিযােগিতার কথা ভুলে গিয়েছিলাম ততদিনে। কোনাে এক সফরে আবার রাসুল (সাঃ) সাহাবিদের বললেন, “তােমরা এগিয়ে যাও।” রাসুল (সাঃ) -এর আদেশে তারা এগিয়ে গেল। এরপর আমাকে বললেন, “চলাে, দৌড় প্রতিযােগিতা করি।” আমি এবারও প্রতিযােগিতার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলাম। এবার তিনি আমাকে হারিয়ে দিয়ে হাসতে লাগলেন। বললেন, “এটা আগেরটার প্রতিশােধ।” [মুসনাদে আহমাদ]
যিনি একজন রাসূল যাঁর কাধে অনেক বড় নবুয়তের দায়িত্ব ছিল। শত ব্যস্ততা রাসূল (সাঃ) কে সর্বদা ঘিরে থাকত। কিন্তু তবুও তিনি স্ত্রীদের মনােরঞ্জনের দিকে নজর দিয়েছেন। বৈধ বিনােদনের ব্যবস্থা করেছেন তাঁদের জন্য। অথচ আমরা? আমরা বড় কর্মবিমুখ। একই সাথে বিমুখ হয়ে আছি রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ থেকেও। আমরা স্ত্রীদের সঙ্গে দৌড় প্রতিযােগিতা করব তাে দূরের কথা, হাঁটতেও
অস্বস্তি বােধ করি।
পৃথিবীর মাঝে তিনি এমন এক নারী ছিলেন যিনি কিনা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসায় সিক্ত এক মহীয়সী জীবনসঙ্গিনী। যাঁর সাথে রাসূল (সাঃ) কাঁটানোর প্রতিটা মুহুর্ত ছিল অসামান্য সব প্রেমময় সম্পর্কে আবদ্ধ। আর এই মহীয়সী জীবনসঙ্গিনীর কোলেই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন-
“রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে মৃত্যুবরণ করেন। সেদিনটি আমার পালায় ছিল। যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেন, তখন তিনি (সাঃ) আমার বুকে ঠেস দিয়ে ছিলেন।” [সহিহ বুখারী]
জন্ম: ৬১২/৬১৩ খ্রিষ্টাব্দ।
বিয়ে: বিয়ের সময় আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার বয়স ছিল ৬ এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের বয়স ছিল ৫০।
বিবাহ সন: ৬২০ খ্রিষ্টাব্দ।
দাম্পত্যজীবন: রাসুলের সাথে তাঁর দাম্পত্যকাল ১০ বছর। (৯ বছর বয়সে স্বামীগৃহে আগমনের পর)
মৃত্যুসন: ১৩ জুন ৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দ মােতাবেক ৫৭/৫৮
হিজরি সনের রমজান মাসের ১৭ তারিখ ।
দাফন: মদিনার জান্নাতুল বাকিতে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩/৬৪ বছর।
তিনি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এমন এক মহীয়সী জীবনসঙ্গিনী ছিলেন। যাঁকে নিয়ে লিখেলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা শেষ হয়ে যাবে। তবুও লেখায় থেকে যাবে অপূর্ণতা। আমরা অতি সংক্ষিপ্ত করে এখানে সামান্য কিছুই লিখেছি। এ দৃশ্য স্পষ্ট যে, মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় রাসূলের জন্য স্পেশাল করেই এই মহীয়সী জীবনসঙ্গিনী দান করেছিলেন। যাঁর জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও মর্যাদা অন্য সকল স্ত্রীর চেয়ে ছিল উন্নত ও মহিমান্বিত জাফরানেন মত সুগন্ধিতে পরিপূর্ণ।
আমরা দেখেছি, প্রিয়তমা স্ত্রীর সাথে তাঁর কাঁটানো প্রতিটি মুহুর্ত কতটা বেশি সুমধুর ছিল। যা প্রত্যেকটি দম্পতির জন্য জীবন্ত এক শিক্ষা। আজ আমাদের সমাজ থেকে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাংসারিক এসকল সুন্নাহ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। কোন একটি এমন আদর্শে উজ্জীবীত পরিবার খুঁজে পাওয়া আজ বিরল হবে।
আর স্বামী-স্ত্রীর মাঝে এমন বন্ধন গড়ে ওঠা মানে রাসূলের সুন্নাহকে জীবন্ত করে রাখা সমান। দাম্পত্য জীবনকে প্রেমময় ও আদর্শ নববী বৈশিষ্ট্য ফুঁটে ওঠার নামান্তর। তাই ঐসকল সম্পর্ক-ই ভালোবাসার পরিপূর্ণতা পাবে যারা রাসূল (সাঃ) এর মত প্রেয়ময় দাম্পত্য জীবন গড়ে তুলবেন।
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয়তমা স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) এর মত আদর্শ আমাদের মা-বোনদের আল্লাহ তায়ালা দান করুক। আর আমাদের তৌফিক দান করুক প্রান প্রিয় রাসূল (সাঃ)-এর আদর্শে উজ্জীবীত হওয়ার, আমিন।
মন্তব্য লিখুন