বর্তমান সময়ে ল্যাপটপ আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সঙ্গী হয়ে উঠেছে। ইন্টারনেটের কল্যাণে ল্যাপটপের যত্ন নেওয়ার অনেক ভিডিও আমরা দেখতে পাই। কিন্তু, সবগুলো হয়তো করা হয় উঠে না সময়ের অভাবে, অথবা পরিশ্রমের ভয়ে। আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো ল্যাপটপ নিয়ে বসে কাজ করার সময়ে কাজের ফাঁকেই কিভাবে ল্যাপটপের যত্ন নিতে পারেন এবং কিভাবে অনেক বছর পর্যন্ত টেকসই রাখতে পারেন আপনার ল্যাপটপকে।
কম্পিউটার তথা আপনার ল্যাপটপটি ভাইরাস দ্বারা খুব সহজেই আক্রান্ত হতে পারে। এর মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো ট্রাস্টেড সোর্স ছাড়া কোনো অ্যাপ্লিকেশন নামানো, ভাইরাস আক্রান্ত কোনো ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত করা যেমনঃ পেনড্রাইভ, মেমোরি কার্ড ইত্যাদি। বর্তমান সময়ের ল্যাপটপগুলোতে “Built in” অ্যান্টিভাইরাস থেকে থাকে সেগুলো ব্যবহারের পরামর্শ থাকলো।
ল্যাপটপ কেনার কিছুদিন পর দেখা যায় স্লো কাজ করে।হার্ড ডিস্কর (HDD) ব্যবহার না করে SSD ব্যবহার করুন।এর ফলে আপনার ল্যাপটপ অনেক ফাস্ট কাজ করবে।
সাথারণত বাজারে SSD এর দাম HDD থেকে অনেক বেশি হয়।কিন্তু,ল্যাপটপের সুবিধা আর দীর্ঘকালীন আয়ুর জন্য এটা ব্যবহার করা উচিত।
ল্যাপটপের যত্নে Windows এর যে ভার্সনই ব্যবহার করেন আপডেট ভার্সন ইউজ করবেন। উইন্ডোস এর সর্বশেষ সংস্করণ Windows 10। এটার বড় সুবিধা হলো, এটি ভাইরাস প্রক্টেটেড। অর্থাৎ এটি ব্যবহার করলে আপনার কোন এন্ট্রিভাইরাস ব্যবহার না করলেও চলবে।
ব্যাটারিতে ল্যাপটপ চালানোর সময় স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখুন। এতে ব্যাটারির ওপরে চাপ অনেকটাই কম পড়বে।আর জরুরি প্রয়োজনে ব্যাটারি সংরক্ষণ করা লাগে যদি সেক্ষেত্রে প্লাগ ইন করে ব্যবহার করুন।
আপনার ল্যাপটপের জন্য একটি ভালো কোয়ালিটির ব্যাগ ব্যবহার করুন। বেশী চাপা বা আকারে ছোট ব্যাগ না হলেই ভালো।জার্নির সময় নরমাল ব্যগে ভুলেও ল্যাপটপ বহন করবেন না।
ফোম দেওয়া ল্যাপটপ কম্পার্টমেন্টে ল্যাপটপ বহন করুন এবং ব্যগে অন্য কোনো সামগ্রী ঢোকানো থেকে বিরত থাকুন। ল্যাপটপ কেনার সময় যে ব্যাগ গিফট দেয়, সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
প্রসেসরের উপর চাপ কমাতে অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার গুলো বন্ধ করে দিন বা আনইন্সটল করুন। এতে ল্যাপটপ স্লো হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবেন।
ব্যাটারির কানেক্টর এর লাইন মাঝে মাঝেই পরিষ্কার করুন। ধুলাবালি মুক্ত রাখার চেষ্টা করুন।এছাড়া ডিস্প্লেতেও সুতি কাপড় দিয়ে নরমভাবে পরিস্কার করুন। কখনোই স্যানিটাইজিং পদার্থ ব্যবহার করবেননা ডিস্প্লে তে।
যখন ল্যাপটপ ব্যবহার করবেন,দরকারি উইন্ডোগুলো ছাড়া অন্য উইন্ডোগুলো মিনিমাইজ বা বন্ধ রাখুন।অনেকে কাজের পর ও অদরকারি উইন্ডোজগুলো মিনিমাইজ করে রেখে দেন।এতে ল্যাপটপের পারফর্মেন্সে ব্যঘাত হয়।
ল্যাপটপের যত্নে সব সময় C drive ব্যতীত আপনার যাবতীয় কাজের জন্য অন্য কোন অন্যকোন ড্রাইভ ব্যবহার করুন। কারন সি ড্রাইভের সিস্টেম সফটওয়্যাল ইন্সটল থাকে যার মাধ্যমে আপনার ল্যাপটপটি পরিচালিত হয়।
সকল ধরনের কাজের ফাইল বা অডিও, ভিডিও, সফটওয়্যার সি ড্রাইভে রাখবেন না। C drive এর আওতাধীন স্থানগুলো হলো- Desktop, Documents, Picture, videos, Download ইত্যাদি জায়ায় কোন ফাইল রাখলে তা C drive এর জায়গা দখল করে।
ল্যাপটপের যত্ন নিতে স্লিপ মুড ব্যবহার করুন। অযথা বার বার শাট ডাউন আবার ওপেন না করে এর পরিবর্তে স্লিপ মোড অপশনটি ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার সময় ও বাঁচবে। স্লিপ মোডে থাকার সময় পিসির Ram ব্যতিত কোনো কিছুই এক্টিভ থাকেনা আর।
দরকার ছাড়া ব্লু-টুথ ও ওয়াই-ফাই কানেকশন বন্ধ রাখবেন। যখন দরকার কেবল তখনই চালু করুন।এসব ব্যবহারে চার্জ দ্রুত ফুরিয়ে যায়।
হার্ডডিস্ক ও সিপিইউ এর মেইটেইনেন্স এর সময় অন্য সকল কাজ বন্ধ রাখুন।সতর্ক থাকুন এবং কোনো পার্টসে বেশি নাড়াচাড়া থেকে বিরত থাকুন।ব্যাটারি খুলে মাঝে মধ্যেই ফুঁ দিয়ে ধুলো বালি জমা থেকে বিরত রাখুন।
একবার ব্যাটারিতে চার্জ শেষ হলে সম্পূর্ণ চার্জ দিয়ে তবেই আবার ব্যবহার করুন। ফুল চার্জ না দিয়ে ল্যাপটপ ব্যবহার করা ঠিক না।
সপ্তাহে অন্তত একবার হার্ডডিস্ক ডিফ্রাগমেন্ট করুন।ইন্টারনেটে এই বিষয়ে বিস্তারিত পাবেন।
বিছানায় ল্যাপটপ যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করুন।এমনকি,এক গবেষণায় দেখা গেছে কোলের উপর রেখে ল্যাপটপ ব্যবহার যৌন সক্ষমতা হ্রাস করে।
ল্যাপটপ টেবিল ব্যবহার করতে পারেন যদি টেবিলে রেখে চালাতে সমস্যার মুখোমুখি হন। তাহলে বাজারে অনেক ল্যাপটপ কুলার স্ট্যান্ড পাওয়া যায় এগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ Xiaomi POCO X2 one of the best budget স্মার্টফোন
ব্যাটারি যদি কম ব্যবহার করা হয় বা একবারেই ব্যবহার না করা হলে এর আয়ু কমে যায়। এর থেকে বাঁচার জন্য সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন ব্যাটারি দিয়ে ল্যাপটপ চালানোর চেষ্টা করুন। ব্যাটারির চার্জ শেষ হলে তবেই পুনরায় চার্জ দিন। এছাড়া ল্যাপটপের ব্যাটারি চেঞ্জ করুন যদি পুরাতন হয়ে যায়।
পানি এবং আর্দ্রতা থেকে ল্যাপটপকে দূরে রাখুন।এরা ল্যাপটপের জম শত্রু।ল্যাপটপ টেবিলে পানির গ্লাস বা বোতল রাখবেন না। কোলে নিয়ে কাজ করার সময় খাওয়াদাওয়া না করাই ভালো।
সহজে বায়ু চলাচল করে এমন স্থানে ল্যাপটপ রেখে কাজ করবেন। এবং অবশ্যই ফ্যানের নিচে বা এসি রুমে ল্যাপটপ ব্যবহার করুন। রান্নাঘরে বা এর আশেপাশে কোথাও ল্যাপটপ নিবেন না।অতিরিক্ত গরমের সময় ল্যাপটপ ব্যবহার মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।
সরাসরি সূর্যের আলোতে ল্যাপটপ ব্যাবহার করবেন না। কারন এতে আপনার ল্যাপটপ খুব দ্রুত গরম হয়ে যে কোন ধরনের ক্ষতি হতে পারে। মনে রাখবেন, ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ যতটা সম্ভব শীতল স্থানে রেখে ব্যবহার করতে পারলেই ভালো। তাই ঘরের যে স্থানে কড়া রোদ পড়ে, সেইসব স্থানে ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ ব্যবহার করবেন না।
ল্যপটপের যত্ন নিতে ল্যাপটপের কিবোর্ড, মাউস না ব্যবহার করে এক্সট্রা কিবোর্ড এবং মাউস কিনে ব্যবহার করুন। রাফ ইউজ করে আরাম পাবেন, ল্যাপটপ ও সুরক্ষিত থাকবে।
ল্যাপটপের যত্নের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো ডাটা ব্যাক আপ রাখা। নিজের কাজের ব্যাক আপ অবশ্যই রাখুন- বিশেষ করে ব্যক্তিগত স্মৃতি, অফিসিয়াল ডকুমেন্টস এসবের যাতে ল্যাপটপের কিছু হলেও আপনার কাজ গুলো হারিয়ে না যায়।
এই সহজ বিষয়গুলো মেনে একটু সতর্ক হয়ে ল্যাপটপ চালালেই আপনার ল্যাপটপ অনেক দিন টিকবে এবং দীর্ঘ সময় ধরে ভালো পারফর্মেন্স পাবেন। তাই নিয়মিত ল্যপটপের যত্ন নিন।
মন্তব্য লিখুন