কতটুকু নিরাপত্তা নিয়ে দিন কাটাচ্ছে আমাদের মেয়েরা? কতটুকু স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে চলার অধিকার নিশ্চিত করতে পেরেছে আমাদের শহরগুলি নারীদের জন্য? নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মেয়েদের সম্ভ্রম রাখার দায়িত্বে কতটুকু তৎপর আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী? এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর আমরা চারপাশে একটু চোখ বুলালেই বেশ ভাল করে পেয়ে যাব ।
খবরের কাগজ, টিভি চ্যানেল গুলোর সংবাদ বা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রতিদিন উঠে আসে ধর্ষনের খবর , নারীর উপর অত্যাচারের খবর , নারীর শ্লীলতাহানীর খবর, এগুলো নতুন কিছুনা । প্রতিদিন অনেক নারী ধর্ষনের স্বীকার হচ্ছে , নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে । তবে এর শেষ কোথায় ? এর সমাধান কই ?
আমাদের স্বাধীনতার আগের সময়টার কথা বলছি , যখন নারীদের অধিকারের সিকিভাগটুকু ও দেয়া হত না । তখন নারীর ক্ষমতায়ন ছিল না , নারীর স্বাধীনতা ছিল না, হাজার প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়ে যেতে হত তাদের ।
তখন বাল্যবিবাহ প্রথা খুব প্রকট ছিল তাই উপযুক্ত সময়ের আগেই স্বামীর ঘরের চার দেয়ালে বন্দী হয়ে যেত মেয়েরা । শিক্ষাগত যোগ্যতাও ছিলনা তেমন , কারন তখন মাত্র গুটিকয়েক মেয়েই লেখাপড়ার সুযোগ পেত ।
কর্মক্ষেত্র , সাহিত্যচর্চা, রাজনৈতিক অঙ্গন সর্বত্রই নারীরা কয়েক গুন পিছিয়ে ছিল পুরুষের তুলনায় । মোটকথা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নারীদের অবদান ছিল খুবই নগন্য ।
নারীদের সামাজিক মর্যাদা অর্জন বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল তবে আমাদের স্বাধীনতার পরে তা ক্রমেই সুপ্রশস্থ হয়েছে । এর পরেই নারী শিক্ষা অগ্রসর হয়েছে যদিও গ্রাম অঞ্চলে নারী শিক্ষা কার্যক্রম পৌঁছাতে বেশ সময় লেগেছে তবে আজ দেশের প্রায় সব পর্যায়ের নারীরাই শিক্ষার আলোয় আলোকিত ।
নারীদের উন্নয়নের প্রথম শর্তই হচ্ছে শিক্ষা । ২০১৩ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী , বিরোধীদলীয় নেত্রী , সংসদের প্রধান স্পিকার, পররাষ্ট্র মন্ত্রী সবাই ছিলেন নারী । এদেশের নারীরা মন্ত্রীপরিষদ থেকে এভারেস্টের চুড়া অবধি সবখানেই সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে ।
নারী ক্ষমতায়নের দ্বারপ্রান্তে এসেও নিরাপত্তা পাবার আশায় তাদের রাস্তায় নামতে হয় , নিরাপত্তা ভিক্ষা চাইতে হয় । এর চেয়ে বড় লজ্জা আর কি হতে পারে আমাদের জাতির জন্য ?
প্রত্যেক সচেতন বাবা মা চায় তার মেয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হোক , ডাক্তার হোক , ইঞ্জিনিয়ার হোক , উকিল হোক , শিক্ষক হোক কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য মেয়েকে ঘরের বাইরে পাঠাতে শঙ্কিত হচ্ছে তারা বারবার কারন নিরাপত্তাহীনতার ভুক্তভোগী পুরো নারী সমাজ ।
আরও পড়ুনঃ ধর্ষণের জন্য কি ধর্ষক বেশি দায়ী নাকি ধর্ষক হয়ে ওঠার কারণ গুলো?
আজ মেয়েরা নিজের ঘরে নিরাপদ না , রাস্তাঘাটে নিরাপদ না, নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ না, গন পরিবহনে নিরাপদ না, নিজের কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ না । প্রতিদিন কোন না কোন অস্বাভাবিক পরিস্থিতির স্বীকার তারা ।
প্রতিদিন বিভিন্ন অনিশ্চয়তার সাথে দিন কাটায় এদেশের হাজার হাজার নারী । তবে একথা স্বীকার করতেই হয় যে আমাদের দেশ ও জাতি নারীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যার্থ ।
বর্তমান সমীক্ষা অনুযায়ী দেশে পুরুষ ও নারীর অনুপাত ১০০ঃ ১০৩ । অর্থাৎ পুরো জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি নারী । তাই নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আবশ্যক ।
এই নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব অবশ্যই রাষ্ট্রের উপরেই বর্তায় । তাই নারীর চলাফেরা থেকে শুরু করে বাকি সব ক্ষেত্রে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্রকে ।
নারী ক্ষমতায়ন বাড়ালেই চলবে না , নারীকে তার জীবনের সব অনিশ্চয়তা, অনিরাপত্তার মধ্য থেকে বের করে আনতে হবে । তবে এ ব্যাপারে পুরো জাতিকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে ।
আরও পড়ুনঃ ধর্ষণ বিস্তারে দিশেহারা জাতিঃ সমাধান কি? মিজানুর রহমান আজহারি
পারস্পারিক সহযোগীতা এবং ভাল মানসিকতা পুরো জাতির কাছে কাম্য । আমরা চাইলেই পারি আমাদের মা , বোন , শিক্ষিকা এছাড়াও বাকি পেশার সকল নারীকে সম্মান দিতে । তাহলেই নারী নিরাপত্তার সাথে বিশ্বজয়ের তাগিদে সামনে এগিয়ে যেতে উদ্যোমী হবে ।
আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি নারী হওয়া সত্ত্বেও আমাদের নারীরা নিরাপদ নয় , তাদের সুরক্ষার কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেই । যেখানে সেখানে যে কোন ভাবে অপদস্ত হচ্ছে নারীরা , বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতির স্বীকার হচ্ছে । তাই যত দ্রুত সম্ভব নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি ।
মন্তব্য লিখুন