বাউকুল বাংলাদেশের একটি লাভজনক সম্ভাবনাময় ফল। এই কুলের রঙ সবুজ সাদৃশ হওয়ার কুলটির নাম দেওয়া হয়েছে বাউ কুল। কষহীন মিষ্টি স্বাদের আর আগাম পাকে বলে অন্যান্য কুলের চেয়ে এর বাউকুল চাষ দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে।
বাউকুল চাষ করে আপনিও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারেন, কয়েক বছর ধরে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে বাউকুল।
আপনি খুব সহজেই অল্প পুঁজি, অল্প জমি এবং অল্প সময়ে বাউকুল চাষ করে সফলতা আনা সম্ভব। চারা লাগানোর প্রথম বছর ছাড়াও প্রতি বছর গাছ ছাঁটার পর জমি ফাঁকা হয়ে যায়।
জলা বদ্ধতাহীন যে কোন মাটিতে বাউকুল চাষ করা যায়। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া কুল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
মে থেকে আগষ্ট পর্যন্ত কুলের চারা রোপনের উৎকৃষ্ট সময়। পাহাড়ের ঢালে, পুকুর পাড়ে, কিংবা বালুময় চরাঞ্চলে বাড়ির আঙ্গিনায় রৌদ্রজ্জ্বল স্থানে এমনকি আপনার বাড়ির ছাদে টব কিংবা ড্রামে। এছাড়াও পর্যাপ্ত সেচ ব্যবস্থা থাকলে সারা বছরই কুলের চারা রোপন করা যায়।
পাহাড়ের লাল মাটি, পুকুর পাড়, বাড়ির আঙ্গিনা এবং অসমতল অনাবাদী জমি ব্যতীত অন্যান্য ফসলি জমি যেমন, এঁটেল, দো-আঁশ, পলি মাটিতে গর্ত করে মাদা তৈরি করার প্রয়োজন হয় না।
এক সারি থেকে অন্য সারি ১০-১২ ফুট এবং চারা থেকে চারা ছয় ফুট দূরত্বে চারা রোপনের লক্ষ্যে আপনাকে উল্লেখিত দূরত্বে দুই ফুট দূরত্বে দুই ফুট দৈর্ঘ্য, দুই ফুট প্রস্থ এবং দুই ফুট গভীর গর্ত করতে হবে।
গর্ত থেকে উত্তোলিত মাটির সাথে ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০গ্রাম এমওপি, ১০০ গ্রাম সরিষার খৈল ও ১০ গ্রাম পাউডার সোহাগা এবং ১৫-২০ কেজি পঁচা গোবর ভালভাবে মিশিয়ে গর্তের পাশে ঢিবি করে রেখে দিতে হবে এক সপ্তাহ।
সবার প্রথমে টবের তলায় ১ ইঞ্চি পরিমাণ ইটের খোয়া, পচাঁ পাতা এবং খড় বিছিয়ে দিতে হবে।
২য় ধাপে পুরো টব বা ড্রামটি সমপরিমান পচাঁ গোবর ও দো-আঁশ মাটির মিশ্রন দিয়ে ভরে দিতে হবে।
৩য় ধাপে টবের মাঝ খানে একটি সুস্থ্য ও সবল কলম রোপন করতে হবে। এ জন্য কোন প্রকার রাসায়নিক সারের দরকার নাই।
৪র্থ ধাপে গাছের কচি পাতা বের হয়ে তা পরিপক্ক হলে ২-৩ টি সিলভা মিক্স ট্যাবলেট সার গাছের গোড়া হতে ৫-৭ সে.মি. দুরে ৫-৭ সে.মি. মাটির গভীরে পুতে দিতে হবে।
শেষ ধাপে গাছের প্রয়োজন অনুসারে সেচ ও নিকাশের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ভালভাবে যত্ন করলে এক
বছরের বয়সী গাছ থেকে হেক্টর প্রতি ১০-১৫ টন ফলন পাওয়া যায়।
চারা লাগানোর পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে এবং গাছে ফুল আসার আগে উপরি প্রয়োগ করতে হয়। এছাড়াও গাছের বৃদ্ধি কম হলে প্রথম প্রয়োগের ৩০-৪০ দিন পর গাছ প্রতি ১০০- ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ড্রাগন ফল এর উপকারিতা ও চাষ পদ্ধতি
এছাড়াও প্রতি বছর কুল ওঠানোর পর মার্চ মাসের শেষের দিকে গাছগুলোর আকার অনুসারে ৪-৫ ফুট উচ্চতায় মূল কাণ্ডটি রেখে সব ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে এবং বাগানের মাটি হালকা করে কুপিয়ে প্রথমবার জমি তৈরির মত গোবর ও অন্যান্য সার পরিমাণ মত প্রয়োগ করে নালাসহ বেড তৈরি করে দিতে হবে।
বিছাপোকা ও অন্যান্য পাতাখেকো পোকার জন্য প্রতি লিটার জলতে দুই মি.লি. পাইরিফ্স জাতীয় কীটনাশক মিশিয়ে সমস- গাছে স্প্রে করে দিতে হবে।
যথেষ্ট প্রতিকূলতা সহনশীল কুল গাছ সাধারণত বিছাপোকা, লাল ক্ষুদ্র মাকড়সা, কাণ্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোকা ও এক ধরণের ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয়।
কুলবাগান সব সময় পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখতে হবে। বর্ষার পর বাগানে বিভিন্ন ধরনের আগাছা জন্মায়। এরা গাছের খাদ্যে ভাগ বসায় এবং বিভিন্ন পোকামাকড় ও রোগজীবাণুর আশ্রয়স্খল হিসেবে কাজ করে।
এ জন্য কোদাল দিয়ে কুপিয়ে বাগানের সব আগাছা দমন করতে হবে। কুলবাগানে বর্তমানে অ্যানথ্রাকনোজ রোগ দেখা যাচ্ছে। রোগটি কুলের গুটি বাঁধার পর বেশি ক্ষতি করে।
এই রোগ হলে কুলের গায়ে কালো দাগ দেখা যায়। রোগ দেখা মাত্রই কার্বেনডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক সাত থেকে ১০ দিন পরপর দুই বার স্প্রে করতে হবে।
বাউকুল এটি রক্ত শোধন, রক্ত পরিস্কার এবং হজমিকারক হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া পেটে বায়ু, অরুচি ও প্রদর রোগ ফুল থেকে তৈরি ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
রেফারেন্সঃ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, উইকিপিডিয়া, দেশি ফল চাষ
মন্তব্য লিখুন