সংখ্যা মিলানোর একটি বহুল জনপ্রিয় খেলা ‘সুডোকু’। সারাবিশ্বে এই নাম্বার পাজল গেমটি প্রাত্যহিক জীবনের সাথে মিশে গিয়েছে। এই খেলাটি মূলত একটি পাজল যেখানে প্রতিটি কলাম (লম্বালম্বি) এবং রোতে (আড়াআড়ি) যে ৯টি করে ঘর আছে তা ১-৯ সংখ্যাগুলো একবার করে ব্যবহার করে পূরণ করতে হয়। জাপানি শব্দ সামুনামুপুরে থেকে সুডোকু শব্দটির উৎপত্তি। আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি প্রধান দৈনিকেও নিয়মিত এই গেইমটি ছাপা হয়। প্রতি বছর ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব সুডোকু দিবস পালন করা হয়।
সুডোকুর উৎপত্তির সূচনা হয় ১৯ শতকের শেষের দিকে। ফ্রান্সের পাজল তৈরিকারীরা তখন ম্যাজিক স্কয়ার নিয়ে নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছিলেন।
১৮৯২ সালের ১৯ নভেম্বর প্যারিসের একটি দৈনিকে অর্ধেক পূরণ করা একটি পাজল প্রকাশিত হয় যা ছিল ৯×৯ ম্যাজিক স্কয়ার। এতে ৩×৩ সাব স্কয়ারও ছিল।
তবে এই পাজলটিকে সুডোকু বলা যায় না কারণ এখানে দুই ডিজিটের সংখ্যা ছিল। কিন্তু এই নাম্বার পাজলটিই সুডোকুর ধারণা সৃষ্টিতে সহায়ক ছিল বলে মনে করা হয়।
পরবর্তীতে ১৮৯৫ সালের ৬ জুলাই প্যারিসেরই অপর একটি দৈনিকে আরেক ধরনের নাম্বার পাজল প্রকাশিত হয় যার গঠন আধুনিক সুডোকুর মত।
তারা সেই পাজলের নাম দিয়েছিলেন Evil Magic Square. এখানে শুধু ৯×৯ ম্যাজিক স্কয়ার রাখা হয় যা ১-৯ সংখ্যাগুলো ব্যবহার করে পূরণ করতে হত। কোন সাব স্কয়ার ছিল না এতে।
এই সাপ্তাহিক পাজল প্রায় এক দশক ফ্রান্সের পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে। এরপর প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হলে পাজলটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়।
আধুনিক সুডোকু আবিষ্কার করেন Howard Garns. অজ্ঞাত পরিচয়ে তিনি একটি নাম্বার পাজল তৈরি করেন যাকে আমরা বর্তমানের সুডোকু রূপে চিনি।
তিনি তখন ৭৪ বছর বয়স্ক ইন্ডিয়ানার বসবাসকারী অবসরপ্রাপ্ত একজন স্থপতি এবং ফ্রিল্যান্স পাজল কনস্ট্রাক্টর ছিলেন। তার তৈরি পাজলটি নাম্বার প্লেস নামে ডেল ম্যাগাজিনে প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৯ সালে।
নাম্বার প্লেস পাজলটিই জাপানে গিয়ে সুডোকু নাম লাভ করে এবং নতুন নামটিই বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করে। জাপানে এই পাজল প্রথম পরিচিতি পায় মাকি কাজি নামক এক ব্যক্তির মাধ্যমে।
তিনি জাপানের Nikoli Puzzle Company এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তারা Monthly Nikolist পত্রিকায় নাম্বার প্লেস পাজলটি প্রথম প্রকাশ করেন ১৯৮৪ সালের এপ্রিলে। জাপানে এসেই নাম্বার প্লেস পাজল সুডোকু নামে পরিচিতি পায়।
ব্রিটেনে সুডোকুর পরিচিতি ঘটান হংকং এর বিচারক Wayne Gould. তিনি জাপানের এক বইয়ের দোকানে সুডোকুর সন্ধান পান। দীর্ঘ ৬ বছর কাজ করে তিনি সুডোকুর জন্য একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করেন। যা নতুন নতুন সুডোকু গঠনে সক্ষম।
এটিকে ব্রিটেনের দ্য টাইমস এ প্রোমোট করেন তিনি যা প্রকাশ পায় ২০০৪ সালের ১২ নভেম্বর। এরপর দ্রুততার সাথে সুডোকু ছড়িয়ে পড়তে থাকে ব্রিটেনে। পত্রিকার পাশাপাশি বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে এই খেলাটি সংক্রান্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু হয়।
২০০৫ এর জুলাই থেকে ব্রিটেন ভিত্তিক ‘চ্যানেল ফোর’ ডেইলি সুডোকু গেম প্রচার করতে থাকে। এছাড়া বিবিসিও বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান শুরু করে। এক পর্যায়ে বিশ্বের অসংখ্য দেশে এই গেইমটি বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে গেইমটি সফটওয়্যার আকারেও পাওয়া যায় বিভিন্ন কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোনেও।
প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের ৯ তারিখ বিশ্বব্যাপী পালিত হয় সুডোকু দিবস। যারা এই খেলাটি খেলেন তারা সহজেই এ তারিখটির তাৎপর্য বুঝতে পারেন। সেপ্টেম্বর ৯ অর্থাৎ ৯/৯ যা মূলত সুডোকুর ৯×৯ ম্যাজিক স্কয়ারকে নির্দেশ করে।
২০১৩ সালে The World Puzzle Federation সেপ্টেম্বরের ৯ তারিখকে ইন্টারন্যাশনাল সুডোকু-ডে হিসেবে ভূষিত করে। এরপর থেকে প্রতি বছর বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও গেম শোয়ের আয়োজন করা হয় দিবসটিকে কেন্দ্র করে।
সুডোকু বা নাম্বার প্লেস বর্তমানে বহুল পরিচিত একটি পাজল। আমাদের দেশেও প্রায় প্রতিটি প্রধান পত্র পত্রিকায় সুডোকু পাওয়া যায়। সংখ্যা মেলানোর এ খেলাটি একইসাথে যেমন মজাদার তেমন মস্তিষ্কের জন্য ব্যায়াম হিসেবে সমান কার্যকরী।
দন্যবাদ