মানুষ পৃথিবীর সেরা জীব। জ্ঞান-বুদ্ধির বিবেচনায় মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোনো জীব মহান স্রষ্টার সৃষ্টি কুলে নেই। তাই তো মানুষকে বলা হয়, আশরাফুল মাখলুকাত অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা জীব। তবে এই মানুষের মধ্যে আবার তারাই উত্তম যারা প্রকৃত মুমিন হতে পারে৷ কেননা মুমিনের অনুপম বৈশিষ্ট্য তাকে সবার চেয়ে করে নেয় অনন্য গুণের অধিকারী।
সৃষ্টিগতভাবে জন্মগ্রহণ করলেই একজন মানুষ কখনো প্রকৃত মানুষ হতে পারে না৷ প্রকৃত মানুষ হওয়ার জন্য প্রয়োজন আদর্শ চরিত্র, সুশৃঙ্খল জ্ঞান ও অনুপম বৈশিষ্ট্য। যা তাকে মানুষের প্রকৃত সত্তা উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। তাই মানবজাতির জন্য মহান আল্লাহ তায়া’লা দেখিয়েছেন তাঁর নির্দেশিত হেদায়েতের পথ।
যে ব্যক্তি সেই হেদায়েত লাভ করে থাকে অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাঁদের আদেশ-নিষেধ মেনে চলে, আনুগত্যের ছায়ায় স্থান করে নেয় একমাত্র তাকেই ইসলামে প্রকৃত মুমিন বলা হয়ে থাকে। তাই ইসলামের সুশীতল ছায়ায় স্থান নেওয়ায় একজন মুমিনের আচার-আচরণ, কথাবার্তা, চরিত্র হয়ে থাকে অনন্য উত্তম ও অনুসরণীয়।
মহান আল্লাহ তায়া’লা মুমিনের অনুপম বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে পবিত্র কুরআনুল কারিমে অসংখ্য আয়াত নাজিল করেছেন এবং রাসূল (সা.) এর হাদিসেও এ সম্পর্কে ব্যাপক বানী উল্লেখিত হয়েছে। তাই আজ আমরা পবিত্র কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে একজন মুমিনের কিছু অনুপম বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা তুলে ধরার চেষ্টা করবো, ইংশাআল্লাহ।
একজন আদর্শ মুসলিম বা মুমিনের পরিচয় প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়া’লা বলেন-
“যারা গায়েবের প্রতি ঈমান আনে সালাত কায়েম করে এবং তাদেরকে আমরা যা দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে। আর যারা ঈমান আনে তাতে, যা আপনার উপর নাযিল করা হয়েছে এবং যা আপনার পূর্বে নাযিল করা হয়েছে, আর যারা আখেরাতে নিশ্চিত বিশ্বাসী। তারাই তাদের রব-এর নির্দেশিত হেদায়েতের উপর রয়েছে এবং তারাই সফলকাম।” [সূরা বাকারাহ : ৩-৫]
{ ঈমান এবং গায়েব। শব্দ দু’টির অর্থ যথার্থভাবে অনুধাবন করলেই ঈমানের পুরোপুরি তাৎপর্য ও সংজ্ঞা হৃদয়ঙ্গম করা সম্ভব হবে। ঈমান শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, ‘কোন বিষয়ের স্বীকৃতি দেয়া’। ইসলামী শরী’আতের পরিভাষায় ইমান বলতে বুঝায়, কোন বিষয়ে মুখের স্বীকৃতির মাধ্যমে অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা এবং তা কাজে পরিণত করা।
এখানে ঈমানের তিনটি দিক তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমতঃ অন্তরে অকপট চিত্তে দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা। দ্বিতীয়তঃ সে বিষয়ের স্বীকৃতি মুখে দেয়া। তৃতীয়তঃ কর্মকাণ্ডে তার বাস্তবায়ন করা।
অর্থাৎ শুধু বিশ্বাসের নামই ঈমান নয়। কেননা খোদ ইবলিস, ফির’আউন এবং অনেক কাফেরও মনে মনে বিশ্বাস করত। কিন্তু তা না মানার কারণে তারা ঈমানদারদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি। তদ্রুপ শুধু মুখে স্বীকৃতির নামও ঈমান নয়। কারণ, মুনাফেকরা মুখে স্বীকৃতি দিত। বরং ঈমান হচ্ছে জানা ও মানার নাম। বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকৃতি দেয়া এবং কার্যে পরিণত করা–এ তিনটির সমষ্টির নাম ঈমান। তাছাড়া ঈমান বাড়ে ও কমে।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে ঈমান বিল-গায়েব অর্থ এই দাঁড়ায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে হেদায়াত এবং শিক্ষা নিয়ে এসেছিলেন, সে সবগুলোকে আন্তরিকভাবে মেনে নেয়া। তবে শর্ত হচ্ছে যে, সেগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শিক্ষা হিসেবে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হতে হবে। আহ্লে-ইসলামের সংখ্যাগরিষ্ট দল ঈমানের এ সংজ্ঞাই দিয়েছেন।} [ তাফসীরে ইবনে কাসীর]
একজন প্রকৃত মুমিন সর্বদা আল্লাহর ভয়ে ভীতসভ্যস্থ থাকে। জীবনের সর্বাবস্থায় একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ভয়ে ভীত হওয়া তার বৈশিষ্ট্য নয়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে বলেন-
“প্রকৃত মুমিন তারাই যখন তাদের কাছে আল্লাহর নাম নেয়া হয়, তখন তাদের অন্তর কেঁপে ওঠে। আর যখন তাদের কাছে তাঁর (কুরআনের) আয়াত পাঠ করা হয়, তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। তারা তাদের প্রভুর ওপরই ভরসা করে। তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমার দেয়া রুজি থেকে (আল্লাহর পথে) খরচ করে। তারাই হলো সত্যিকারের মুমিন।” [সূরা আনফাল : ২-৪]
এ আয়াত এবং এর পরবর্তী আয়াতে সেসব গুণ-বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে, তা প্রতিটি মুমিনের মধ্যে থাকা খুবই প্রয়োজন। আয়াতে বর্ণিত প্রথম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, “তাদের সামনে যখন আল্লাহর আলোচনা করা হয়, তখন তাদের অন্তর আঁতকে উঠে” অর্থাৎ তাদের অন্তর সর্বদা আল্লাহর মহত্ত্ব ও ভালবাসায় ভরপুর, যার দাবী হলো আল্লাহর ভয় ও ভীতি।
কুরআনুল কারীমের অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছে-
“(হে নবী!) সুসংবাদ দিয়ে দিন সে সমস্ত বিনয়ী, কোমলপ্ৰাণ লোকদিগকে, যাদের অন্তর তখন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে উঠে, যখন তাদের সামনে আল্লাহর আলোচনা করা হয়। “ [সূরা হজ: ৩৪]।
অর্থাৎ আল্লাহর অনুগত বান্দা হিসেবে একজন প্রকৃত মুমিন সবসময় তাঁর আদেশ উপদেশ মেনে চলায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাই সে আল্লাহর অমান্য, নিষেধ, পাপ বা হারাম কাজের শাস্তির ভয়ে সর্বদা ভীতসাভ্যস্থ থাকে। কেননা আমরা সবাই আল্লাহর সৃষ্ট বান্দা বা গোলাম। তবে প্রকৃত অর্থে একমাত্র আল্লাহই আমাদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। আর এই ভয় করা তাঁর প্রতি মুমিনের ভালোবাসারই অংশ।
একজন প্রকৃত মুমিন ব্যক্তির অন্তর বা দেহমন হবে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ। কেননা, সে সর্বদা মহান আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক পবিত্রতা অবলম্বন করে থাকে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়া’লা বলেন-
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীকে ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরকেও তিনি ভালোবাসেন।”[সূরা বাকারাহ, আয়াত-২২২]
মুমিনের অনুপম বৈশিষ্ট্য হলো আল্লাহর যিকর করার মাধ্যমে তার অন্তর প্রশান্ত হয়ে উঠে। যেমনটি পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-“জেনে রাখ, আল্লাহর যিকর-এর দ্বারাই আত্মা শান্তি লাভ করে, প্রশান্ত হয়।”[সূরা আর-রাদ: ২৮]
প্রকৃত অর্থে একজন ইমানদার ব্যক্তি প্রতিনিয়ত আল্লাহর কাছে তওবা পেশ করে থাকেন এবং যিকর করে থাকেন, সেই সাথে সর্বদা তারা পবিত্রতা অবলম্বন করে থাকেন। আর মহান আল্লাহর তায়া’লা পবিত্র ব্যক্তিদের ভালোবাসেন।
প্রকৃত মুমিন ব্যক্তি কখনোই আল্লাহকে ভুলে যায় না৷ তারা সর্বদাই আল্লাহর নিয়ামতের প্রসংশা এবং শুকরিয়া আদায় করে থাকে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ তায়া’লা বলেন-
“কাজেই তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করবো। আর তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং অকৃতজ্ঞ হয়ো না।”[সূরা বাকারাহ : ১৫২]
আল্লাহ্ তায়া’লা আরো বলেন-
“যখন তোমরা সালাত সমাপ্ত করবে তখন দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে, যখন তোমরা নিরাপদ হবে তখন যথাযথ সালাত কায়েম করবে; নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।”[সূরা নিসা: ১০৩]
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন- “তোমাদেরকে কি এমন একটি উত্তম আমলের সংবাদ দেবো যা তোমাদের মালিকের কাছে অধিকতর পবিত্র, তোমাদের মর্যাদা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অধিকতর সহায়ক, স্বর্ণ ও রৌপ্য ব্যয় করা থেকেও তোমাদের জন্য উত্তম, শত্রুর সাথে মোকাবেলা করে গর্দান দেয়া-নেয়া থেকে উত্তম? তারা বলল, হ্যাঁ অবশ্যই বলবেন। তিনি বললেন, যিকরুল্লাহ। অর্থাৎ সর্বদা মহান আল্লাহকে স্মরণ করা।”[ তিরমিজি- ৫/৪৫৯ ]
অন্য এক হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন-“যে ব্যক্তি যিক্র করে এবং যে ব্যক্তি যিক্র করেনা তাদের উপমা হচ্ছে জীবিত ও মৃতের ন্যায়।”[সহিহ বুখারী, হাদীস-২০৮]
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদীসে-কুদসীতে আছে, আল্লাহ্ তাআলা বলেন-
“বান্দা যে পর্যন্ত আমাকে স্মরণ করতে থাকে বা আমার স্মরণে যে পর্যন্ত তার ঠোঁট নড়তে থাকে, সে পর্যন্ত আমি তার সাথে থাকি।”[সহিহ বুখারী, হাদিস- ৭৪০৫]
তাই একজন প্রকৃত মুমিনের অনুপম বৈশিষ্ট্য এর অন্যতম একটি দিক হল, সে সর্বদা মহান আল্লাহ্ তায়া’লাকে সরণ করে থাকে।
যারা প্রকৃত মুমিন তারা কখনোই তাদের সালাত সম্পর্কে গাফেল হয় না৷ সময়মত সালাত আদায়ে সে অধিক যত্নশীলতা অবলম্বন করে তাকে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর তায়া’লা বলেন-
“তারা নিজেদের নামাজে বিনয়াবনত হয় এবং নিজেদের সালাতগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করে।”[সূরা মুমিনুন-২ ও ৯]
আল্লাহ্ তায়া’লা আরও বলেন-
“বলো, নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য।”[সূরা আনয়াম-১৬২]
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত-“পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমার সালাত থেকে অপর জুমার সালাত এবং এক রমজান মাসের সিয়াম থেকে অপর রমজান মাসের সিয়াম সেসব গুনাহের জন্য কাফফারা হয়, যা এর মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে থাকে; যখন কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা হয়।”[সহিহ মুসলিম-২৩৩]
হাদিসে আরও এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন-
“সালাতের সময় আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দার প্রতি সৰ্বক্ষণ দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখেন যতক্ষণ না সে অন্য কোন দিকে দৃষ্টি না দেয়। তারপর যখন সে অন্য কোন দিকে মনোনিবেশ করে, তখন আল্লাহ্ তা‘আলা তার দিকে থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেন।”[ইবনে মাজাহঃ ১০২৩]
সালাতে ‘খুশূ’ হচ্ছে, অন্তরে বাড়তি চিন্তা-ভাবনা ইচ্ছাকৃতভাবে উপস্থিত না করা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও স্থিরতা বজায় থাকা; অনর্থক নড়াচড়া না করা। বিশেষতঃ এমন নড়াচড়া, যা রাসূলুল্লাহ (সা.) সালাতে করতে নিষেধ করেছেন। যার ফলে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। তাই একজন মুমিন ব্যক্তি তার সালাতে বা ইবাদতে খুবই যত্নশীল হয়ে থাকে।
একজন মুমিনের অনুপম বৈশিষ্ট্য এর অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সে সর্বদা কোনো না কোন নেক কাজে লেগে থাকবে। ভালো কাজের কারনে সে পাপ কাজ থেকে দূরে থাকতে পারে৷ তাই সে ছোট হোক বা বড় কোনো না কোন নেক কাজে সর্বদা লেগে থাকার চেষ্টা করবে।
মহান আল্লাহ তায়া’লা বলেন-
“নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে এবং স্বীয় পালনকর্তার সমীপে বিনতি প্রকাশ করেছে তারাই বেহেশতবাসী, সেখানেই তারা চিরকাল থাকবে।”[সূরা হুদ, আয়াত-২৩ ]
হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন-
“একজন মুসলমান যতক্ষণ পর্যন্ত তার অপর মুসলমান ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে, ততক্ষণ আল্লাহও তার সাহায্যে হাত বাড়িয়ে রাখেন।”[সহিহ মুসলিম, নাসায়ি ও তিরমিজি]
তাই একজন প্রকৃত মুমিন সর্বদা নেক, সৎ, আদর্শ কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করবে।
মহান আল্লাহ্ তায়া’লা সকল প্রকার পাপ কাজকে হারাম ঘোষনা করেছেন৷ তাই মুমিন ব্যক্তি সর্বদা নিজেকে পাপ কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে থাকে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়া’লা বলেন-
“মুমিন ব্যক্তি,বাজে কাজ থেকে দূরে থাকে। নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে।”[সূরা মুমিনুন,আয়াত-৩ ও ৫]
তাই একজন প্রকৃত মুমিন সর্বদা মহান আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক এবং রাসূল (সা.) এর সুন্নাহ মোতাবেক তার জীবন পরিচালনা করে থাকবে। তাই সে সব প্রকার পাপকাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালায়। নফসের কুমন্ত্রণা থেকে নিজের আত্মাকে হেফাজত করা তার কাছে অন্যতম বড় জিহাদ। তাই সে সর্বদা আল্লাহর সাহায্য ও আশ্রয় প্রার্থনা করে থাকে।
একজন প্রকৃত মুমিনের অনুপম বৈশিষ্ট্য হলো সে তার ঈমানের দাবি অনুসারে বড়দের শ্রদ্ধা এবং ছোটদের স্নেহ করে থাকবে।
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন-
“যারা ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান করে না তারা আমার দলের অন্তর্ভুক্ত নয়।”[আবু দাউদ- ৪৮৪২]
তাই মুমিন ব্যক্তির জিহ্বা, হাত-পা দ্বারা কেউ কখনো কষ্ট পেতে পারে না। ইমানদার ব্যক্তি সবসময় তার থেকে বড়ের সম্মান দেখিয়ে কথা বলবে, পরামর্শ নিবে। আর তার থেকে ছোটদের সর্বদা আদর ও স্নেহ দিবে। কখনোই ছোটদের সাথে কটু কথা বলবে না বরং ভালোবাসবে।
ইমানদার ব্যক্তির জীবনের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, সে সাধ্যমত নিজের জীবনকে অপরের কল্যাণে বা পরোপকারে বিলিয়ে দিবে। অন্যের উপকার ব্যতিত ক্ষতির চিন্তা কখনোই মাথায় আনবে না। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়া’লা বলেন-
“সুতরাং তোমরা আল্লাহকে যথাসাধ্য ভয় করো এবং (তাঁর কথা) শ্রবণ করো ও (তাঁর) আনুগত্য করো এবং (তাঁর পথে) ব্যয় করো; এতেই তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে। যারা তাদের আত্মার কৃপণতা (স্বার্থপরতা ও লোভ) থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম। যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণদান করো তবে তিনি তোমাদের জন্য তা বৃদ্ধি করবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন; আর আল্লাহ অতিশয় গুণগ্রাহী, পরম সহনশীল।”[সূরা আত-তাগাবুন: ১৬-১৭]
হাদিসে এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন-
“তোমরা জামিনের অধিবাসীর প্রতি সদয় হও, তাহলে আসমানের মালিক আল্লাহ তায়ালা তোমাদের প্রতি সদয় হবেন।”[তিরমিজি: ১৮৪৭]
সুতরাং মুমিন ব্যক্তি সর্বদা সবার সাহায্য করে থাকবে, হোক সে মানুষ বা অন্য কোন প্রাণী। জামিনের প্রত্যেক যথার্থ সাহায্য প্রার্থীকে ইমানদার ব্যক্তি তার সাধ্যমত সবসময় সাহায্য করে থাকবে।
একজন প্রকৃত মুমিন সর্বদা তার নিজের কৃতকর্মের ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন হয়ে থাকবে। তাই প্রতিদিনকার কর্মকাণ্ডের জন্য সে কোনটি সঠিক, আর কোনটি বেঠিক এ নিয়ে আত্মসমালোচনা করে থাকবে। যা তার বৈশিষ্ট্যকে করে থাকে অনন্য। আত্মসমালোচনার ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়া’লা বলেন-
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত আগামীকালের জন্য (অর্থাৎ আখিরাতের জন্য) সে কী প্রেরণ করেছে, তা চিন্তা করা। আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে, ফলে আল্লাহ তাদের আত্মভোলা করে দিয়েছেন (অর্থাৎ তারা কোন কাজটি ভালো, কোনটি মন্দ তা বাছাই করা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে)। নিশ্চয়ই তারা ফাসিক।” [সূরা হাশর, আয়াত-১৮]
এক হাদিসে বর্নিত হয়েছে,হজরত ওমর (রা.) বলেন-
“তোমরা নিজেদের আমলনামার হিসাব নিজেরাই গ্রহণ করো, চূড়ান্ত হিসাব দিবসে তোমাদের কাছ থেকে হিসাব গৃহীত হওয়ার আগেই। আর তোমরা তোমাদের আমলনামা মেপে নাও চূড়ান্ত দিনে মাপ করার আগেই। কেননা, আজকের দিনে নিজের হিসাব নিজেই গ্রহণ করতে পারলে আগামী দিনের চূড়ান্ত মুহূর্তে তা তোমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে। তাই সেই মহাপ্রদর্শনীর দিনের জন্য তোমরা নিজেদের কে সুসজ্জিত করে নাও, যেদিন তোমরা (তোমাদের আমলসহ) উপস্থিত হবে এবং তোমাদের কিছুই সে দিন গোপন থাকবে না।” [তিরমিজি- ২৪৫৯]
তাই প্রত্যেক ইমানদার ব্যক্তি তার নিজের কৃতকর্ম নিয়ে আত্মাসমালোনা করে থাকবে। এর ফলে সে নিজেই ভীতসন্ত্রস্ত হবে এবং মহান আল্লাহর কাছে অধিক তওবাকারী হিসেবে প্রিয়ব্যক্তি হতে পারবেন। এতে তার ইমান আরও মজবুদ হবে। অন্যায় বা ভুল কাজের জন্য আত্মসমালোচনা তাকে অনুতপ্ত বান্দা হিসেবে ক্ষমার উপযুক্ত করে তুলবে। যা মহান আল্লাহর তায়া’লা অধিক পছন্দ করে থাকেন।
একজন মুমিন ব্যক্তি দ্বীনের সকলবিষয়ে অধিক যত্নশীল। সে ইমানের দাবিতে নিজের সুখ অন্যদের সাথে ভাগ করে নেয়, অন্যের দুঃখ-কষ্টে ব্যথিত হয়। নিজের দায়িত্বের ব্যাপারে অধিক সচেতন হয়ে থাকে। পবিত্র উত্তম চরিত্রে বলীয়ান হয় তার ভাষা, আচার-আচরণ অনুসরণীয়, সে সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী হয়, নীতির প্রশ্নে হয়ে থাকে আপসহীন। ইসলামের সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ে তার সকলবৈশিষ্ট্যে। তাই তো একজন প্রকৃত মুমিনের অনুপম বৈশিষ্ট্য ইসলামের অনন্য অমূল্য সম্পদ। যা তাকে নগন্য এই জামিন থেকে সুউচ্চ জান্নাতের উচ্চ মাকামে স্থান করে দেয়।
মহান আল্লাহ তায়া’লা আমাদের সকলকে প্রকৃত মুমিন হওয়ার তৌফিক দান করুক, আমিন।
তথ্য সহায়তা :
মন্তব্য লিখুন