লাইলাতুল কদর হলো হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ রাত অর্থাৎ ইসলামি শরিয়তে নফল ইবাদতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাত। এই রাতের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তায়া’লা পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করেছেন। রাসূল (সা.) এর হাদিস থেকে এ সম্পর্কে আমরা আরও বিস্তারিত জানতে পারি।
মহান রব আল্লাহ তায়া’লা এই মহিমান্বিত রজনীতেই নাজিল করেছেন সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব আল-কুরআন। তাই কুরআনের মর্যাদা ও সম্মানের জন্য লাইলাতুল কদর কে আল্লাহ তায়া’লা সাজিয়েছেন তাঁর রহমত, দয়া ও মহিমা দিয়ে। এই রাতকে নফল ইবাদতের জন্য শ্রেষ্ঠ রাত হিসেবে তিনি ঘোষণা করেছেন।
পবিত্র কুরআনে তাই তিনি এই রাতকে হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ রাত হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তবে চলুন একনজরে জেনে আসা যাক, পবিত্র কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে সম্মানিত কদরের রাতের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে।
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
মহান আল্লাহর তায়া’লা কদরের রাতকে সম্মানিত করেছেন পবিত্র কুরআনে মাজীদ নাজিলের মাধ্যমে। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়া’লা ‘ক্বদর’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরাই নাজিল করেছেন। মহান আল্লাহ তায়া’লা বলেন-
“নিশ্চয় আমরা কুরআন নাযিল করেছি ‘লাইলাতুল-কদরে’; আর আপনাকে কিসে জানাবে ‘লাইলাতুল-কদর’ কী? ‘লাইলাতুল-কদর’ হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফিরিশ্তাগণ ও রূহ্ নাজিল হয় তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে। শান্তিময় সে রাত, ফজরের আবির্ভাব পর্যন্ত।” [সূরা আল-ক্বদর]
কদরের এক অর্থ মাহাত্ম্য ও সম্মান। এর মাহাত্ম্য ও সম্মানের কারণে একে ‘লাইলাতুল-কদর’ তথা মহিমান্বিত রাত বলা হয়। কদরের আরেক অর্থ তাকদীর এবং আদেশও হয়ে থাকে। এ রাত্রিতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত ও বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাগণের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এতে প্রত্যেক মানুষের বয়স, মৃত্যু, রিজিক, বৃষ্টি ইত্যাদির পরিমাণ নির্দিষ্ট ফেরেশতাগণ কে লিখে দেওয়া হয়। [সা‘দী]
যেমন পবিত্র কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে-
“এটা সেই রাত যে রাতে আমার নির্দেশে প্রতিটি বিষয়ে বিজ্ঞোচিত ফায়সালা দেয়া হয়ে থাকে৷ অর্থাৎ সে রাতে প্রত্যেক চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত স্থিরকৃত হয়।” [সূরা আদ-দোখান: ৪]
এ আয়াতে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, এ পবিত্র রাত্ৰে তাকদীর সংক্রান্ত সব ফয়সালা লিপিবদ্ধ করা হয়। এই রাত্ৰিতে তাকদীর (ভাগ্য) সংক্রান্ত বিষয়াদি নিম্পন্ন হওয়ার অর্থ এ বছর যেসব বিষয় প্রয়োগ করা হবে, সেগুলো লওহে মাহফুয থেকে নকল করে ফেরেশতাগণের কাছে সোপর্দ করা। নতুবা আসল বিধি-লিপি তো আদিকালেই লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে।[ইমাম নববী: শারহু সহীহ মুসলিম ]
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন- এ আয়াতের অর্থ কুরআন অবতরণের রাত্রি অর্থাৎ, শবে-কদরে সৃষ্টি সম্পর্কিত সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা স্থির করা হয়। যা পরবর্তী শবে-কদর পর্যন্ত এক বছরে সংঘটিত হবে। অর্থাৎ, এ বছর কারা জন্মগ্রহন করবে, কে কে মারা যাবে এবং এ বছর কি পরিমাণ রিজিক দেওয়া হবে।
মাহদভী (রহ.) বলেন- এর অর্থ এই যে, আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তকদীরে পূর্বাহ্নে, স্থিরীকৃত সকল ফয়সালা এ রাত্রিতে সংশ্লিষ্ট ফেরেশতাগণের কাছে অৰ্পণ করা হয়। কেননা, কুরআন ও হাদিসের অন্যান্য বর্ণনা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ তা’আলা এসব ফয়সালা মানুষের জন্মের পূর্বেই সৃষ্টিলগ্নে লিখে দিয়েছেন।
অতএব, এ রাত্রিতে এগুলোর স্থির করার অর্থ এই যে, ফেরেশতাগণের মাধ্যমে ফয়সালা ও তাকদীর প্রয়োগ করা হয়, এ রাত্ৰিতে সারা বছরের বিধানাবলী তাদের কাছে অৰ্পণ করা হয়। ইবন আব্বাস (রা.) বলেন- তুমি কোন মানুষকে বাজারে হাঁটাচলা করতে দেখবে অথচ তার নাম মৃতদের তালিকায়। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করে বললেন, প্রতি বছরই এ বিষয়গুলো নির্ধারিত হয়ে যায়। [মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৪৪৮-৪৪৯]
সূরা ক্বদরে আরও বলা হয়েছে- আমি লাইলাতুল কদরে কুরআন নাযিল করেছি। যা পবিত্র কুরআনের অন্যত্রও বলা হয়েছে। সূরা আল-বাকারাহ্ এর ১৮৫ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন “রমযান মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে।”
এ থেকে জানা যায়, নবী মুহাম্মদ (সা.) কাছে হেরা গুহায় যে রাতে আল্লাহর ফেরেশ্তা অহী নিয়ে এসেছিলেন সেটি ছিল রামাদান মাসের একটি রাত। এই রাতকে এখানে কদরের রাত বলা হয়েছে।সূরা আদ-দেখানে এটাকে মুবারক রাত বলা হয়েছে।
যেমন আল্লাহ তায়া’লা বলেছেন-
“অবশ্যই আমরা একে একটি বরকতপূর্ণ রাতে নাযিল করেছি।” [সূরা আদ-দোখান: ৩]
এ আয়াত থেকে পরিষ্কার জানা যায় যে, পবিত্র কুরআনে পাক লাইলাতুল-কদরে অবতীর্ণ হয়েছে। এর এক অর্থ এই যে, সমগ্র কুরআন লওহে মাহফুয থেকে লাইলাতুল-কদরে অবতীর্ণ করা হয়েছে। অতঃপর জিবরাঈল (আ.) একে ধীরে ধীরে তেইশ বছর ধরে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) এর কাছে পৌঁছাতে থাকেন। দ্বিতীয় অর্থ এই যে, এ রাতে কয়েকটি আয়াত অবতরণের মাধ্যমে কুরআন অবতরণের ধারাবাহিকতা সূচনা হয়ে যায়। এরপর অবশিষ্ট কুরআন পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে পূর্ণ তেইশ বছরে নাযিল করা হয়। [আদ্ওয়াউল বায়ান]
আর এ সূরায় রূহ নাজিল হওয়া বলে কি বুঝানো হয়েছে তা নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও, প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত হলো এর দ্বারা জিবরাঈলকে বোঝানো হয়েছে। জিবরাঈল আলাইহিস সালামের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার কারণে সমস্ত ফেরেশতা থেকে আলাদা করে তাঁকে উল্লেখ করা হয়েছে। আর ফেরেস্তা নাজিল বলতে বুঝানো হয়েছে, এ রাতে জিবরাঈল (আ.) এর সাথে ফেরেশতারাও সে রাত্ৰিতে অবতরণ করে। [ফাতহুল কাদীর]
সূরা ক্বদরের শানে নুযুল সম্পর্কে ইবনে কাসির (রা.) বলেন-
“আলী ইবনে উরওয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বনি ইসরাইলের চারজন আবেদ সম্পর্কে বলছিলেন, তারা আশি বছর ধরে অনবরত আল্লাহর ইবাদত করছিল। এর মধ্যে মুহূর্ত সময়ের জন্যও ইবাদত থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হননি।
বিখ্যাত এ চারজন আবেদ হলো আল্লাহর নবী জাকারিয়া (আ.), আইউব (আ.), হাজকিল ইবনে আ’জূজ (আ.) এবং ইউশা ইবনে নূহ (আ.)। এমনটি শুনে সাহাবিরা (রা.) রীতিমতো অবাক হলেন। এ সময় জিবরাইল (আ.) এসে বললেন, ‘হে মুহাম্মাদ (সা.)! আপনার উম্মতরা এ কথা শুনে অবাক হচ্ছে? তাদের জন্য আল্লাহ তায়ালা এর চেয়ে উত্তম কিছু রেখেছেন। এরপর সূরা কদর পাঠ করা হয়।” [তাফসিরে ইবনে কাসির ]
পবিত্র কুরআনে পাকের সুস্পষ্ট বর্ণনা দ্বারা একথা প্রমাণিত হয় যে, লাইলাতুল-কদর রামাদান মাসে। কিন্তু সঠিক তারিখ সম্পর্কে আলেমগণের বিভিন্ন মতামত বা উক্তি রয়েছে, যা সংখ্যায় চল্লিশ পর্যন্ত পৌঁছে। এসব উক্তির নির্ভুল তথ্য এই যে, লাইলাতুল-কদর রামাদান মাসের শেষ দশ দিনের মধ্যে আসে; কিন্তু এরও কোন তারিখ নির্দিষ্ট নেই; বরং যে কোন রাত্রিতে হতে পারে। আবার প্রত্যেক রামাদানে তা পরিবর্তিতও হতে পারে। সহীহ হাদিসদৃষ্টে এই দশ দিনের বেজোড় রাত্রিগুলোতে লাইলাতুল-কদর হওয়ার সম্ভাবনা অধিক।
আবু সাঈদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- “আমরা রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে রমাযানের মধ্যম দশকে ই‘তিকাফ করি। তিনি বিশ তারিখের সকালে বের হয়ে আমাদের কে সম্বোধন করে বললেনঃ আমাকে লাইলাতুল ক্বদর (-এর সঠিক তারিখ) দেখানো হয়েছিল পরে আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতে তা সন্ধান কর।
আমি দেখতে পেয়েছি যে, আমি (ঐ রাতে) কাদা-পানিতে সিজদা করছি। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (সা.) -এর সঙ্গে ই‘তিকাফ করেছে, সে যেন ফিরে আসে (মসজিদ হতে বের হয়ে না যায়)। আমরা সকলে ফিরে আসলাম (থেকে গেলাম)। আমরা আকাশে হাল্কা মেঘ খন্ডও দেখতে পাইনি। পরে মেঘ দেখা দিল ও এমন জোরে বৃষ্টি হলো যে, খেজুরের শাখায় তৈরি মসজিদের ছাদ দিয়ে পানি ঝরতে লাগল। সালাত শুরু করা হলে আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কাদা-পানিতে সিজদা করতে দেখলাম। পরে তাঁর কপালে আমি কাদার চিহ্ন দেখতে পাই।” [সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ]
আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমের সূরা ক্বদরে ঘোষণা করেছেন- লাইলাতুল ক্বদর হাজার মাসের (ইবাদতের) চেয়েও উত্তম। সহীহ শুদ্ধ হাদিস থেকে জানা যায় যে, লাইলাতুল কদর রমযানের শেষ দশ দিনের যেকোন বিজোড় রাত্রিতে হয়ে থাকে। বিভিন্ন সহীহ হাদিসে ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখে লাইলাতুল-কদর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা উল্লেখিত আছে। হাদীসে এ কথাও উল্লেখিত আছে, যে কোন একটি নির্দিষ্ট বিজোড় রাত্রিতেই তা হয় না।
সুতরাং যদি লাইলাতুল-কদর রামাদানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলোতে ঘূর্ণায়মান এবং প্রতি রামাদানে পরিবর্তনশীল মেনে নেয়া যায়। তবে লাইলাতুল-কদরের দিন-তারিখ সম্পর্কিত হাদিস সমূহের মধ্যে কোন বিরোধ অবশিষ্ট থাকে না। এটিই প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত। [ইবন হাজার: ফাতহুল বারী, ৪/২৬২-২৬৬]
মুফাসসিরগণ বর্ণনা করেছেন, এ রাতের সৎকাজ কদরের রাত নয় এমন হাজার মাসের ইবাদত বা সৎকাজের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এ শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসেও বিস্তারিত বলা হয়েছে। এক হাদিসে এসেছে, রামাদান আগমন কালে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন-
“তোমাদের নিকট রামাদান আসন্ন। মুবারক মাস। আল্লাহ সাওম ফরয করেছেন। এতে জান্নাতের দরজাসমূহ খোলা হয়ে থাকে এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানগুলোকে বেঁধে রাখা হয়। এতে এমন এক রাত রয়েছে যা হাজার মাস থেকেও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাত্রির কল্যান থেকে বঞ্চিত হয়েছে, সে তো যাবতীয় কল্যান থেকে বঞ্চিত হলো।” [নাসায়ী: ৪/১২৯, মুসনাদে আহমাদ: ২/২৩০, ৪২৫]
অন্য এক হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন-
“যে কেউ ঈমান ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদর রাত্রিতে সালাত আদায় করতে দাঁড়াবে তার পূর্ববর্তী সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।” [বুখারী, মুসলিম, তিরমিয়ী,মুসনাদে আহমাদ]
হাদিসে আরো বলা হয়েছে-“লাইলাতুল-কদরের রাত্রিতে পৃথিবীতে ফেরেশতারা এত বেশী অবতরণ করে যে, তাদের সংখ্যা পাথর কুচির চেয়েও বেশি।” [মুসনাদে আহমাদঃ ২/৫:১৯]
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রমজান মাস এলে রাসূল (সা.) বলতেন-
“হে জনমণ্ডলী! তোমাদের কাছে মহিমান্বিত রমজান এসে পড়েছে। এ মাস খুবই বরকতময়। এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। আর জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। এ মাসে এমন একটি রাত আছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বিরত হয়, সে প্রকৃতপক্ষেই হতভাগ্য।” (মুসনাদে আহমাদ; সুনানে নাসায়ি)
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সা.) বলেছেন-
“যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতেসাবের সঙ্গে কদরের রাতে ইবাদত করবে আল্লাহ তায়ালা তার পেছনের জীবনের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।” [সহিহ বুখারি ও মুসলিম
একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) বনি ঈসরায়েলের একজন মুজাহিদ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, তিনি এক হাজার বছর দীর্ঘ হায়াত পেয়েছিলেন। দীর্ঘ এ আয়ুষ্কাল তিনি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে রত ছিলেন। একবারের জন্যও অস্ত্র সংবরণ করেননি।
সাহাবায়ে কেরাম (রা.) ঘটনা শুনে বিস্মিত হলেন এবং আফসোস করতে লাগলেন যে, বনি ঈসরায়েল সুদীর্ঘ হায়াত পাওয়ার কারণে অনেক বেশি ইবাদত-বন্দেগি করতে পেরেছে। অনেক সওয়াব অর্জন করতে পেরেছে।
আমাদেরও যদি তাদের মতো দীর্ঘ হায়াত দেয়া হতো, তাহলে আমরা তাদের মতো অনেক ইবাদত করতে পারতাম, অনেক বেশি পুণ্য লাভ করতে পারতাম। এ সময় মহান আল্লাহ সুরা কদর নাজিল করেন এবং বুঝিয়ে দেন যে, যদিও উম্মতে মোহাম্মাদিকে হায়াত কম দেয়া হয়েছে, তথাপি তাদের সওয়াব হাসিলের এবং মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের এত বেশি সুযোগ দেয়া হয়েছে, যা পূর্ববর্তী কোনো উম্মতকে দেয়া হয়নি। উম্মতে মোহাম্মাদি যদি শুধু একটি রাত (লাইলাতুল কদর) ইবাদত করে, তাহলে তারা এক হাজার মাস ইবাদত করার চেয়েও বেশি সওয়াব প্রাপ্ত হবে। [তাফসিরে ইবনে কাসির]
পবিত্র কুরআনে ও হাদিসে কদরের রাতের কথা বলা হয়েছে। হাদিসে বলা হয়েছে, কদরের রাত রামজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতের যেকোন একটি। কিন্তু কোন রাতটি তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি বরং তালাস করতে বলা হয়েছে। তবে হাদিসে লাইলাতুল কদর চেনার জন্য কিছু আলামত বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
(সহীহ ইবনু খুযাইমাহ, হাদীস নং: ২১৯০; বুখারী, হাদীস নং: ২০২১; মুসলিম, হাদীস নং: ৭৬২)
আমরা পবিত্র কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে কদরের রাত সম্পর্কে কিছুটা উপস্থাপনের চেষ্টা করলাম। তবে সহিহ হাদিস অনুসারে, বেশিভাগ আলেমগণের মতামত হলো রমজানের শেষ দশকের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখে লাইলাতুল-কদরের সন্ধান করা৷ কেননা এর যে কোন একদিনেই কদর হয়ে যেতে পারে। ভিন্ন কিছু আলেমগণ রমজানের ২৭ তম রাতকে বেশি গুরুত্বারোপ করেছেন। আমরা তাদের মতামত কে শ্রদ্ধা করি৷ এ সম্পর্কে একাধিক হাদিস ও রয়েছে। তাই তাদের মতামতকে অবহেলা করার সুযোগ নেই।
তবে, ২৭ তারিখ যে কদরের রাত হয়ে যাবে এমন নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব নয়। কেননা, প্রতি বছর একই দিনে লাইলাতুল কদর হবে না৷ আল্লাহর ইচ্ছায় দিন, মাস ও বছরের কারনে তা পরিবর্তন হতে পারে। (ধরুন, এবছর ২৭তম রাতে কদর হয়ে গেলেও, পরের বছর তা অন্য বিজোড় রাতে হয়ে যেতে পারে)। তাই বিশুদ্ধ কথা হলো, রমজানের শেষ দশকের যেকোন একটি বিজোড় রাতে লাইলাতুল-কদর হবে। আর কোন মুত্তাকী ব্যক্তি কি সে রাতের ফজিলত থেকে বঞ্চিত হতে চাইবে? তাই সে প্রতি রাতেই ইবাদতে মগ্ন হবে।
আর একটি কথা, বর্তমানে লাইলাতুল কদর হিসেবে ২৭তম রাত্রিতে জাগরণের জন্য বিভিন্ন মসজিদে সকলে সমবেত হয়ে ইবাদত, বিভিন্ন জিকির, আলোচনা, ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এ ব্যবস্থা একটি নবাবিষ্কৃত কাজ। কারণ, আল্লাহর নবী (সাঃ) তাঁর সময়ে সাহাবীদের নিয়ে মসজিদে জাগরিত হয়ে বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতিতে ইবাদত করতেন না। বরং নিজ নিজ পরিবারকে জাগিয়ে কিয়ামুল লাইল পালন করতেন।
মহান আল্লাহ তায়া’লা আমাদের সকলকে কদরের মহিমান্বিত রজনীতে ইবাদতে মগ্ন হওয়ার তৌফিক দান করুক, আমিন৷
তথ্য সহায়তাঃ
মন্তব্য লিখুন