হরতাল শব্দটির সাথে পরিচিত নয় এমন কেউ নেই বললেই চলে। আমরা দেখতে পাই প্রায়শই রাজনৈতিক বিভিন্ন কারনে হরতাল শব্দটি খরবের কাগজের হেড লাইনে স্থান নিয়ে থাকে। কিন্তু একবার কি ভেবে দেখছেন, ইসলামের দৃষ্টিতে হরতাল কতটুকু বৈধ? অর্থাৎ প্রশ্ন হচ্ছে ইসলামে হরতালের শরঈ বিধান কি হতে পারে?
হ্যা, আজ আমরা এ বিষয়ের উপর একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের চেষ্টা করবো। তবে আমাদের কাছ থেকে এটি কোনো ফতোয়া নয়। বরং একটি বিশ্লেষণ। বহুদিন ধরে সোশাল মিডিয়ায় হরতালের শরঈ বিধান নিয়ে নানা ধরনের মতামত লক্ষ্য করেছি । একদল আলেম বলেছেন, হরতাল ইসলামে জায়েজ নয়! আবার অন্যদল বলছেন জায়েজ! আমরা আলেমগণের মূল্যবান ফতোয়াকে সম্মান দিয়ে, মধ্যমপন্থায় একটি বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহনের চেষ্টা করবো, ইং শা আল্লাহ।
আমরা জানি ইসলামি শরিয়তের সবচেয়ে বড় বিধান হচ্ছে আল-কুরআনের দেওয়া বিধিমালা। এরপরই অবস্থান সহিহ হাদিসের। তাই একটি বিষয়ে হলাল না হারাম তা প্রমানে পবিত্র কুরআনের কথাই হল মূল প্রমান এবং দ্বিতীয়ত সহিহ আল হাদিসের ৷
এখন আমরা যদি পবিত্র কুরআন ও আল-হাদিস খুব ভালো করে অধ্যায়ন করে দেখি। তবে দেখতে পাবো, পবিত্র কুরআনে হরতাল বলতে কোন শব্দ আসেনি এবং হাদিসের কিতাবের কোথাও আসেনি। এমনকি আকার ইঙ্গিতেও এমন কোন শব্দ আছে বলে আমি খুঁজে পাইনি।
তাই এখন পবিত্র কুরআনের অন্যান্য বিধিমালার আলোকে হরতালের শরঈ বিধান প্রয়োগের একটি সমাধানে যেতে হবে। আমাদের সম্মানিত একদল আলেমগণ যারা হরতালকে জায়েজ মনে করেন না, তাদের যুক্তি হচ্ছে হরতালের কারনে সাধারণ মানুষ নানা ধরনের কষ্ট পেয়ে থাকে। রাষ্ট্রের সম্পদ ও জনগণের সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়, এমনকি অনেক মারামারি ও প্রানহানিও ঘটে থাকে।
আর পবিত্র কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে-
“যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে, সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। এবং যে কারও জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে।” [সূরা মায়িদাহ: ৩২]
এ আয়াত থেকে স্পষ্টত যে কাউকে অন্যায় ভাবে হত্যা করা যাবে না। তাহলে সে পৃথিবীর সমস্ত ব্যক্তিকে হত্যা করার মত জঘন্য পাপে লিপ্ত হলো। তাই অন্যায়ভাবে হত্যা করা ইসলামে কঠোর ভাবে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন-
“যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের (যে কোন মুসলিম) দিকে কোনো লৌহবস্তু তাক করে, ফিরিশতারা তাকে অভিশাপ দেয়। যদিও সে ব্যক্তি তার আপন ভাই হয়।” [সহীহ মুসলিম: ২৬১৬]
তেমনি ভাবে অন্যের সম্পদ, জান-মাল সম্পর্কে বিদায় হজ্জের ভাষনে তিনি স্পষ্ট সতর্ক করে গিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন-
“তোমাদের রক্ত, সম্পদ ও সম্মান একে অপরের জন্য হারাম।” [সহীহ বুখারী]
আমাদের একদল ইসলামিক স্কলার এ সকল তথ্য সামনে রেখে অবরোধ বা হরতালের শরঈ বিধান হারাম ঘোষনা করেছেন। সৌদি আরবের প্রজ্ঞ অনেক শায়খদেরও তেমনি ফাতোয়া। তাদের প্রধান যুক্তি ও দলিল হলো হরতালে মারামারি, নৈরাজ্য, হত্যাকান্ড, জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়৷ আর ইসলামে যেহেতু এসবের কোন স্থান নেই, তাই তারা হরতাল কে হারাম বা জায়েজ নয় বলে থাকেন৷
কিন্তু আমাদের সম্মানীত ইসলামি স্কলারগণের এই ফাতোয়ার যুক্তি ও দলিলের বিপরীতে, অন্য একদল আলেমের বেশ শক্ত দলিল ও যুক্তি রয়েছে। এখন আমরা সে বিষয়ে জানার চেষ্টা করবো।
একঃ পূর্বেই উল্লেখ করেছি পবিত্র কুরআন ও আল হাদিসের কোথাও হরতাল বলতে কোন শব্দের কথা উল্লেখ নেই। হরতাল একটি গুজরাটি শব্দ। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের রেশ ধরে এই শব্দে জন্ম হয়েছে। তখন থেকেই হরতাল শব্দটি একটি রাষ্ট্রীয় শব্দ ও আইনে পরিনত হয়েছে।
আমরা বাংলাদেশের নাগরিক আমাদের রাষ্ট্রীয় সংবিধানে হরতাল একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন। সরকারি দলের বিভিন্ন অরাজকতা ও অন্যায়ের প্রতিবাদে বা বিরোধীতার জোরে রাষ্ট্রীয় আইনে হরতালের বৈধতা রয়েছে। মূলত হরতাল একটি চুড়ান্ত কর্মসূচী। এই পদ্ধতিতে সরকারের অন্যায়ের বিরোধিতা এবং সরকারের পতন ঘটানোর অনেক নজির ইতিহাসে রয়েছে ।
দুইঃ এখন একটি প্রশ্ন, আচ্ছা কখন হরতাল দেওয়া হয়? হরতালের শারঈ বিধান সম্পর্কে স্পষ্ট হতে হলে এসকল পারিপার্শ্বিক সকল বিষয় মাথায় রেখেই আমাদের আলিমদের ফাতোয়া প্রধান করা উচিত মনে করি। যেহেতু হরতাল একচ্ছত্রভাবে কোন ইবাদতের অংশ নয়। আবার সেকুলার রাষ্ট্রে ইসলামি হুকুমমত কায়েমের জন্য হরতাল একটি দ্বীনের বিরাট একটি অংশও হতে পারে।
তবে দ্বীন কায়েমের জন্য হরতালই কোন মূখ্য বিষয় নয়। কিন্তু এটি একটি প্রক্রিয়া হতে পারে মাত্র। আর যেহেতু কুরআন-হাদিসে হরতাল সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোন বক্তব্য নেই। তাই এটি একটি ইজতিহাদি ফাতোয়াও বটে৷
তিনঃ হরতাল তো শুধু দ্বীন কায়েম করার সাথে সম্পর্তিত নয়। এটি প্রধানত সাধারণ রাজনীতির একটি অংশ মাত্র। তাহলে শুধু ইসলামি শরিয়তে উপর হরতালের শরঈ বিধান চাপানো ঠিক হবে না। কেননা এটি ইসলামের মৌলিক কোন কর্মও নয়।
রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী সাধারনত হরতাল তখনি দেওয়া হয়ে থাকে, যখন সরকারের কোন অন্যায় কর্ম বা অরাজকতা বৃদ্ধি পেয়ে যায়। আর যা আলোচনা বা সমালোচনার মাধ্যমে সংশোধনের আশা ব্যর্থ হয়। তখন দেশের সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের সার্থে হরতাল দিতে বাধ্য করা হয়।
কেননা তখন যালিম শাষকের পতন ও অধিকার আদায়ের জন্য এ ছাড়া অন্য কোন পথ আর খোলা থাকে না। তাই হরতালের মাধ্যমে জনগনের দাবি দাওয়া আদায়ে সরকারকে বাধ্য করা হয়। মূলত এটিই হরতালের প্রধান উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। আর এটি রাষ্ট্রের সংবিধানেরও রয়েছে। তাই কোনো দেশের রাষ্ট্রীয় নিয়মে এটা সেই দেশের জন্য বৈধ্য নয় কি?
চারঃ ইসলামি শরিয়তে কোন একটি বিষয়কে হারাম ঘোষনা করার আগে আমাদের সেই কাজটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে গুরুত্বারোপ করা একান্ত জারুরী৷ কেননা জনসাধারণের সার্থে ও রাষ্ট্রীয় সার্থে এরকম অনেক কাজ ইসলামে জায়েজ ফাতোয়া দেওয়া হয়ে থাকে।
তাই হরতালের শরঈ বিধান প্রসঙ্গে আমাদের আলেমগণকে আরো সুক্ষভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন নয় কি? অধিকাংশ মুসলিমের অধিকার আদায়ের সার্থে ও সরকারের অন্যায় কাজের বিরোধিতা করা কি জরুরী নয়!!
রাসূল (সা.) তো অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে বলেছেন-
“তোমাদের কেউ কোনো অন্যায় সংঘটিত হতে দেখলে সে যেন তা নিজ হাতে প্রতিরোধ করে। (নিজ হাতে প্রতিরোধ করতে) সম্ভব না হলে যেন মুখে প্রতিবাদ করে। যদি তাও সম্ভব না হয় তবে যেন অন্তত মন থেকে ঘৃণা করে। এটা দুর্বলতম ঈমানের আলামত।” [সহিহ মুসলিম]
তাহলে এখন কি দাড়ালো সরকারের অন্যায় কাজের প্রতিবাদ কি করা যাবে না? আবার তা সাংবিধানিক স্বীকৃত অধিকারও। প্রশ্নটা আপনাদের কাছেই রেখে যাচ্ছি। আর মনে রাখা জরুরী, মুসলিম রাষ্ট্রের খলিফার আনুগত্য করতে ইসলামে আদেশ করা হয়েছে। কোন গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কোন সরকারের ক্ষেত্রে তা কখনোই প্রযোজ্য নয়!
আর যদি তাকেও আনুগত্য করতে ইসলাম বলে থাকে, তাহলে আপনি মুসলিম খলিফাকে কেন আনুগত্য করবেন? আর যদি খলিফার আনুগত্যে বিশ্বাসি হন, তাহলে প্রচলিত ছলনাময়ী গনতন্ত্রের মধ্যমে নির্বাচিত নারী শাষকের আনুগত্য কেন করবেন? তবে দেশে কি যোগ্য পুরুষ শাসক নেই? আর আনুগত্য করে থাকলে তখন নারী শাসককে আবার হারাম কেন বলছেন? তাহলে নারী শাসককেও হারাম বলা প্রশ্নবিদ্ধ ।
উক্ত হাদিস অনুযায়ী জেনে রাখা দরকার, মনের প্রতিবাদ হলো ইমানের দূর্বলতম আলামত। তাহলে যখন অন্যায়ের প্রতিবাদে রাস্তায় হরতাল পালন করা হয়, তখন কেনই বা তাকে হারাম বলা হচ্ছে? আর যদি এতটুকুও করা না যায় তবে তো অন্যায়ের প্রতিবাদ যুদ্ধের মাধ্যমে করতে হবে। তখন ফলাফল কি দাঁড়াবে? বরং একটি ভালোর প্রতিষ্ঠায় কিছুতো আত্মত্যাগ করতেই হয় এটাই স্বাভাবিক। হরতালের উদ্দেশ্য কিন্তু কখনোই ক্ষয়ক্ষতি নয়।
আমরা আবারও বলছি, হরতাল তখনি দেওয়া হয় যখন অন্যায়ের প্রতিবাদের অন্য সকল রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তখন বাধ্য হয়ে রাষ্ট্রীয় অধিকার ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে হরতাল দেওয়া হয়ে থাকে। আর এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অত্যাচারী সরকারের পতনও ঘটানো যেতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করাও সম্ভব হয়।
যদি আমরা হরতালের শরঈ বিধান জায়েজ নয় বলে থাকি, তাহলে হারতালের মাধ্যমে অন্যায় প্রতিবাদের কোন গুরুত্বই আর থাকে না। দেখুন হরতালকে হারাম বলার পিছনের বড় যুক্তি তো হলো এর মাধ্যমে জনমতের ক্ষয়ক্ষতি হয়। তাই বলে হরতালের মহৎ উদ্দেশ্য কি হারাম হয়ে যাবে?
রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী হরতালের উদ্দেশ্য কখনোই ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে না। বরং উদ্দেশ্য থাকে শান্তিপূর্ণভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ ও জনগণের ন্যাজ্য অধিকার ফিরে পাওয়া চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তাহলে হারতালে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে তার দায়ভার কার?
একঃ আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাব এই ক্ষয়ক্ষতি, মারামারি, অগ্নি সংযোগ কখনোই শান্তিকামী হরতাল কর্মীরা শুরু করে না৷ বরং যারা হরতালের বিরোধীতা করে থাকে তারাই এর সূত্রপাত ঘটিয়ে থাকে। আর তাদের হাতে-ই নিরীহ হরতাল কর্মীরা আহত-নিহত হয়ে থাকে। এর ফলস্বরূপ উভয় পক্ষে সংঘর্ষ ঘটে থাকে।
আর ফলাফলে দেখা যায় অন্যায়ের প্রতিবাদের হরতালকর্মীরাই আহত ও অনেক ক্ষেত্রে নিহতও হলো। অন্যায় প্রতিবাদে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হল। এখন যদি এই সামান্য ক্ষয়ক্ষতির জন্য হরতাল হারাম হয়ে যায় তবে হয় যুদ্ধ করতে হবে। না হয় অন্যায় সহ্য করবেন। না হয় প্রতিবাদ মন দিয়ে করাই আপনার ইমানি শক্তি, না হয় উক্ত অন্যায় বা অপকর্মের আনুগত্য করা উচিত।
তবে কি করা উচিত? যখন আপনি আলোচনা ও সমালোচনায় ব্যর্থ হবেন। আর হরতালের উক্ত দায়ভারই বা কার? প্রশ্ন রইল আপনাদের কাছে। প্রশ্নের উত্তরগুলো পরিস্কার হতে হয়তো আরও একটু ভাবতে হবে!!
দুইঃ আগেই বলেছি, হরতালে কখনোই জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করা উদ্দেশ্য থাকে না। জনমনের কষ্ট দেওয়াও উদ্দেশ্য থাকে না। তাই জরুরি সকল সেবা চালু রাখা হরতালের আইনি নিয়মে রয়েছে। তারপরও আমরা দেখতে পাই, একটি সময় সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। এরজন্য প্রকৃত দায়ী কখনো অন্যায়ের প্রতিবাদকারী হয়ে থাকে না, কেননা তাহলে তো সেটা আর হরতালই হলোই না।
একথায় বলতে গেলে হরতাল অর্থ সাধারণের ক্ষয়ক্ষতি নয়। বরং হরতাল বলতেই বুঝায় সাধারণ মানুষের অধিকার আদায় এবং অন্যায়ের প্রতিবাদের মাধ্যমে সরকারকে সংশোধন করা। নতুবা সরকারের পতন ঘটানো।
তিনঃ হরতালের শারঈ বিধান জায়েজ নয়, এর প্রমানে একদল আলেমগণ সৌদি আরবের সম্মানিত স্কালারগনের ফতোয়া উল্লেখ করে থাকেন। এটা তাদের একটি ভুল ধারনা বলা যেতে পারে। কেননা সৌদি আরবের রাজনীতি আর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আকাশ পাতাল ব্যবধান রয়েছে।
আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক সরকারের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে৷ তাই রাষ্ট্রীয় নিয়মে সরকারের অন্যায় প্রতিবাদ করা জনগণের মৌলিক অধিকের অন্তর্ভুক্ত। যদি এখানে সৌদি আরবের ফাতোয়া কার্যকর করা হয়৷ তবে বাংলাদেশের পুরো রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৌদি আরবের মত হওয়া জরুরী। আর ইসলামী রাষ্ট্রের খলিফা জীবিত থাকাকালীন এরকম কোনো হরতাল থাকেও না। জায়েজও নয়।
তাই হরতালের শরঈ বিধান একটি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে থাকে। যদি ইসলামি শরিয়তে এটাকে হারাম বলতে হয়। তবে সবার আগে রাজনৈতিক অবস্থা ইসলামি শরিয়তে কনভার্ট করতে হবে। নতুবা দেশ ও জাতীয় সার্থে হরতালকে জায়েজ বলতেই হবে৷
হরতাল প্রসঙ্গে আমরা সম্মানিত আলেমগণের মধ্যে দুটি মত লক্ষ্য করতে দেখলেও, আমরা হরতাল বিষয়ে আলোচনা আপনাদের কাছে পেশ করেছি। তাই এখন বিষয়টি একটু হলেও আপনাদের কাছে পরিস্কার বা স্পষ্ট হবে আশা করি৷
তবে আমরা কখনোই বিজ্ঞ আলেমদের ফতোয়াকে অসম্মান করছি না। আর আমরাও কোনো ফতোয়া দিচ্ছি না। কিন্তু একটি বিষয়ে আমাদের সম্মানিত আলিমদের আরও একটু পরিস্কার হওয়া উচিত বলে মনে করছি। আর বিষয়টি হলো একটি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। নিঃসন্দেহে পবিত্র কুরআন ও সহিহ হাদিসই আমাদের জীবনের সকল কর্মের শরঈ বিধানের মূল ভিক্তি।
কিন্তু হরতাল বিষয়ে উভয়ের মাঝে তো স্পষ্টত কোন বানী উল্লেখ নেই। তাই হরতালের শরঈ বিধান কুরআন-সুন্নাহর আলোকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উপর নির্ভর করে প্রদান করাই উত্তম মনে করছি। দেশের আইন, জাতি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি উপর নির্ভর করে হরতালের ফাতোয়া এক এক দেশে ভিন্ন হওয়া তো অস্বাভাবিক কিছু নয়।
যেহেতু হরতালের শারঈ বিধান জায়েজ কিনা? এ প্রসঙ্গে ইসলামে স্পষ্টত কোন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি, তাই এ বিষয়টি একটি ইজতিহাদি ফাতোয়া হিসেবেই গৃহীত হবে। আর আমরা জানি ইজতিহাদি ফাতোয়া সঠিকও হতে পারে, আবার ভুলও হতে পারে। তাই এ বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ঠিক হবে না। আলেমদের ইজতিহাদের করার মর্যাদা দিয়ে আমাদের কাছে সহিহ হাদিস রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইমামদের ইজতিহাদ প্রসঙ্গে বলেন-
“যখন কোন বিশেষজ্ঞ হুকুম দেয়, আর তাতে সে ইজতিহাদ করে তারপর সেটা সঠিক হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে দু’টি সওয়াব। আর যদি ইজতিহাদ করে ভুল করে তাহলে তার জন্য রয়েছে একটি সওয়াব।” [সহীহ বুখারি, মুসলিম]
সুতরাং আমরা হরতালের শারঈ বিধান প্রসঙ্গে আলেমগণের ফাতোয়া কে বলতে পারি, একটি ইজতিহাদি ফাতোয়া। তাই যারা হরতাল কে জায়েজ বলেছেন তারাও সম্মানিত এবং যারা জায়েজ নয় বলেছেন, তারাও সম্মানিত। আমরা উভয় আলেমদের একমাত্র মহান আল্লাহর জন্য ভালোবাসি।
প্রকৃত সত্য ও সমাধান একমাত্র মহান আল্লাহই ভালো জানেন।
ছবি সংগ্রহীত
মন্তব্য লিখুন