বর্তমান সময়ে কম্পিউটার দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমরা অনেকেই জানি কম্পিউটার মূলত এক গুচ্ছ কমান্ড বা নির্দেশাবলীর সাহায্যে তার উপর অর্পিত কাজগুলো সম্পাদন করে। প্রথম দিকে কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম সমূহ জটিল এবং দুর্লভ হলেও বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যপী এর সহজলভ্যতা সৃষ্টি হয়েছে। আজকে আপনাদের সামনে এই বিষয়েই আলোকপাত করবো।
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
অপারেটিং সিস্টেম হলো একগুচ্ছ কমান্ড এর উপস্থাপনা যার মাধ্যমে একটি কম্পিউটার তার কার্যাবলী সম্পাদন করে।
উইকিপিডিয়ার ভাষায় যদি বলা যায়, “অপারেটিং সিস্টেম হলো একটি সিস্টেম সফটওয়্যার যা কম্পিউটার ও সফটওয়্যার এবং কম্পিউটার প্রোগ্রামের জন্যে সাধারণ সেবা সরবরাহ করে। অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটার ও ব্যহারকারীদের ইনপুট নেয় এবং বিভিন্ন টাস্ক ও কম্পিউটারের অভ্যন্তরীণ সিস্টেম সম্পদগুলি বণ্টন ও ব্যবস্থাপনা করে ব্যবহারকারী ও অন্যান্য প্রোগ্রামকে সেবা প্রদান করে।“
কম্পিউটারে সাধারণত নিম্নোক্ত অপারেটিং সিস্টেমগুলো প্রচুর জনপ্রিয়। এদেরকে সংক্ষেপে “ওএস (OS)” বলা হয়।
উইন্ডোজ সর্বাধিক জনপ্রিয় কম্পিউার ওএস। ধারণা করা হয়, সচল কম্পিউটারগুলোর ভিতর ৪ ভাগের ৩ ভাগই উইন্ডোজ ওএস এর দখলে রয়েছে। ম্যাকওএস ১৮% ও লিনাক্স ২% জায়গা দখল করে রয়েছে।
প্রচুর পরিমাণে কাস্টমাইজেশন সুবিধা এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি হওয়ার কারণে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম শুরু থেকেই সবার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
কয়েকটি অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারে ইনস্টল করা থাকেনা, ব্যবহারের পূর্বে ইনস্টল করে নিতে হয়। আবার কিছু কিছু অপারেটিং সিস্টেম কেনার পূর্বেই প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কম্পিউটারে ইন্সটল করা থাকতে পারে। আবার কিছু কিছু অপারেটিং সিস্টেম অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ মাধ্যম যেমন: লাইভ সিডি বা ফ্ল্যাশ মেমরি থেকে সরাসরি চালানো সম্ভব।
এটি মূলত চার ভাগে বিভক্ত- রিয়েল টাইম অপারেটিং সিস্টেম, সিঙ্গেল ইউজার সিঙ্গেল টাস্ক অপারেটিং সিস্টেম, সিঙ্গেল ইউজার, মাল্টিটাস্ক অপারেটিং সিস্টেম ও মাল্টি ইউজার অপারেটিং সিস্টেম।
ডাটা প্রসেসিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কম্পিউটারের জন্য। ডাটা প্রসেসিং এর জন্য যেখানে বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় সেখানে রিয়েল টাইম অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে কোন বাফারিং সৃষ্টি হয় না।
এটি মূলত ব্যবহারকারীর একবারে সুনির্দিষ্ট একটি কাজ সম্পন্ন করার জন্য নির্মিত। পালম ওএস হলো সিঙ্গেল ইউজার সিঙ্গেল টাস্ক অপারেটিং সিস্টেমের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
বর্তমান সময়ে প্রচলিত সকল কম্পিউটারেই এই প্রকারভেদ এর আওতাভুক্ত। বহুল আলোচিত উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম সিঙ্গেল ইউজার, মাল্টিটাস্ক এর উদাহরণ। এর সবচেয়ে ভালো দিক হলো একই সময়ে এই সিস্টেম একাধিক প্রোগ্রাম চালু রাখতে সক্ষম।
এই সিস্টেমের মাধ্যমে অনেকগুলো পৃথক ইউজারকে একই কম্পিউটারে রিচার্জ গুলো একত্রে ব্যবহার করার সুযোগ করে দেয়। ইউনিক্স, মেইনফ্রেম এই অপারেটিং সিস্টেমগুলো মাল্টি ইউজার এর উদাহরণ। বিশেষ কাজের জন্য নির্মিত হওয়ায় জনসাধারণের মধ্যে এসকল অপারেটিং সিস্টেমগুলোর নাম প্রচলিত নয়।
মাইক্রোসফট উইন্ডোজ হল মাইক্রোসফটের অপারেটিং সিস্টেম এর একটি অংশ। এটি মাইক্রোসফট কর্পোরেশন এর দ্বারা তৈরি। ইন্টারনেট হতে প্রাপ্ত তথ্যমতে ১৯৮৫ সালে সর্বপ্রথম মাইক্রোসফট উইন্ডোজ বাজারে আসে।
যাই হোক, প্রত্যেকটি অপারেটিং সিস্টেম তৈরীর জন্য কোডিং ল্যাঙ্গুয়েজ প্রয়োজন। মাইক্রোসফট উইন্ডোজ জাভাস্ক্রিপ্ট, সি এবং ভিজুয়াল বেসিক এর সমন্বয়ে তৈরি। এগুলো প্রত্যেকটি কম্পিউটারের অনুধাবনযোগ্য প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ।
এই উইন্ডোজ নামকরণ করা নিয়ে একটি প্রচলিত ধারণা রয়েছে। উইন্ডোজ বা জানালা খুলে এর ভিতরের বিষয়গুলো যে রকম দেখা যায়, তেমনি উইন্ডোজের বিভিন্ন আইকন এর মাধ্যমে এর মধ্যে কি আছে তা দেখা যায়।
উল্লেখ্য, উইন্ডোজে ১৩৭ টি ভাষা অধিভুক্ত রয়েছে। ওয়েবসাইট এর নাম হলো windows.microsoft.com
প্রথমদিকে ডিস্ক ভিত্তিক অপারেটিং ব্যবস্থা অর্থাৎ এম এস ডস চালু ছিল। পরে ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা মাথায় রেখে উইন্ডোজ বাজারে আনা হয়।
সাধারণত, ডেস্কটপ ও সার্ভার দু’ধরনের ব্যবহারের জন্যেই লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন বা ডিস্ট্রো নামে প্যাকেজ আকারে এই অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহৃত হয়। সাধারণত সি এবং অ্যাসেম্বলি প্রোগ্রামিং ভাষার সমন্বয় লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম নির্মিত।
এটি একটি মূলত ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম। এতে মনোলিথিক কার্নেল ব্যবহৃত হয়েছে। এর ওয়েবসাইট এর নাম হলো www.linuxfoundation.org
যাই হোক, এখন আসা যাক লিনাক্স কেন অন্যসব অপারেটিং সিস্টেম হতে আলাদা সেই বিষয়ে। লিনাক্স সোর্স অপারেটিং সিস্টেম হওয়াতে এর সোর্সকোড যে কেউ সম্পাদনা পুনর্মার্জন এবং ব্যবহার করতে পারবেন। একটা সময় শুধু মাত্র কয়েকজন ব্যক্তি নিজেদের আকর্ষণের জায়গা থেকে লিনাক্সের উন্নতি সাধন করতেন। বর্তমান সময়ে বড় বড় কর্পোরেশন এর দায়িত্ব গ্রহণ করেছে এবং একে আরও উন্নয়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
টেক জায়ান্ট অ্যাপলের জনপ্রিয় একটি ওএস হলো ম্যাকওএস। সবচেয়ে বেশি স্টেবল এবং মনিটরাইজ অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে মহাকাশ প্রচলিত। আপনি যদি কাস্টমাইজেশন সুবিধা পছন্দ করেন তাহলে ম্যাক ওএস আপনার জন্য নয়।
এটি ম্যাকিনটোশ অপারেটিং সিস্টেমের দ্বিতীয় প্রধান সিরিজ। ২০০১ সালে এটি সর্বপ্রথম মুক্তি পায়। সি++, সুইফ্ট, অবজেক্ট সি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ম্যাক ওএসে ব্যবহৃত হয়েছে।
এটি লিনাক্স এর মত ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম নয়। এটি একটি ক্লোজ সোর্স অপারেটিং সিস্টেম। তাদের ওয়েবসাইট এর নাম হলো www.apple.com/macos.
২০১২ সালের শুরু থেকে অ্যাপল উচ্চ রেজ্যুলেশনের রেটিনা ডিসপ্লের ম্যাকবুক (অ্যাপল ল্যাপটপ) মডেল বিক্রি করা শুরু করলো। এ সময় ম্যাকওএস ও এর এপিআই রেজ্যুলেশন উন্নয়নের জন্য বেশ প্রশংসিত হয় এবং অনেক পর্যালোচকদের মত অ্যাপলের এই ওএস সমকক্ষ প্রতিযোগী উইন্ডোজ থেকে অনেক উন্নত।
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ২০২০-এর জুন মাস মোতাবেক ম্যাকওসের ব্যবহারকারী শেয়ার ৮.৩৫%, এবং শুধুমাত্র ডেস্কটপ ব্যবহারকারী হিশেবে সে শেয়ার গিয়ে দাঁড়ায় ১৭.৭%-এ। যেখানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ম্যাকওএস সংস্করণ ম্যাকওএস ১০.১৫।
টেক জায়ান্ট গুগল এর মালিকানাধীন। এটি মূলত লিনাক্স কার্নেলের উপর ভিত্তি করে নির্মিত একটি অপারেটিং সিস্টেম। এটিও লিনাক্স এর মত ওপেনসোর্স কোড ব্যাবহার করে।
যাই হোক, এটির যাবতীয় অ্যাপ্লিকেশন এবং ব্যবহারকারীর ডাটা একটি ক্লাউড স্টোরেজের জমা করে রাখা হয়। ফলে ডাটা হারানোর ভয় কম থাকে। মোবাইল ফোনের জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড ক্রোম ওএস এর জন্য উন্মুক্ত করা হয় ২০১৪ সাল থেকে। এর ফলে অ্যান্ড্রয়েড এর যাবতীয় অ্যাপ্লিকেশন ক্রোম হয়েছে খুব সুন্দরভাবেই চালানো যায়।
সোজা বাংলায় বলতে গেলে, অপারেটিং সিস্টেমের কাজ হল একটি কম্পিউটারের যাবতীয় বিষয় অপারেট করা।
প্রত্যেকটি কম্পিউটার চালু করার পর কিছু সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়ার এর সাথে সংযোগ স্থাপন প্রয়োজন হয়। এই সংযোগ স্থাপনের কাজ করে থাকে অপারেটিং সিস্টেম। এজন্য অপারেটিং সিস্টেমকে সিস্টেম সফটওয়্যার হিসেবেও অভিহিত করা যায়।
অপারেটিং সিস্টেম এর যাবতীয় কাজকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়।
কম্পিউটারে তথ্য পর্যালোচনা বা প্রসেসিং এর জন্য প্রসেসর ব্যবহৃত হয়। এটি একই সাথে বেশ কিছু বিষয় প্রসেসিং এর সক্ষমতা রাখে। অপারেটিং সিস্টেম প্রসেস ম্যানেজমেন্ট ক্ষমতা অধিগ্রহণ করায় সিদ্ধান্ত নেয় কোন সময় কোন প্রসেসিং সম্পন্ন করতে হবে। যেকোনো ফাংশনাল কাজের জন্য প্রসেস ম্যানেজমেন্টের ভূমিকা অপরিসীম।
কম্পিউটারে মূলত দুই ধরনের সেকেন্ডারি স্টোরেজ ডিভাইস থাকে। যথা: HDD ও SSD, র্যাম হলো কম্পিউটারের অস্থায়ী ডাটা সংরক্ষণাগার। ডাটা প্রসেসিং হওয়ার পূর্বে সেখানে অবস্থান করে। স্টোরেজ থেকে র্যামে ডাটা ট্রান্সফারে ওএস এর ভূমিকা আছে। কোন প্রসেস মেমোরির কতটুকু জায়গা দখল করবে তা নিরূপণ করে অপারেটিং সিস্টেম।
সিস্টেম স্টোরেজকে সিস্টেম ফাইলে রূপান্তরের কাজ করে থাকে ওএস।
রেললাইনের দুইটা ট্রেনের যেনো কখনই সংঘর্ষ না ঘটে তা বিশেষ যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ওএস ও কম্পিউটারে সেইরূপ ভূমিকা পালন করে। কম্পিউটারের ডাটা প্রসেসিং প্রক্রিয়া যেন পরস্পর সাংঘর্ষিক না হয়, সেই গুরু দায়িত্ব পালন করে ওএস।
অপারেটিং সিস্টেম ছাড়া আপনি একটি কম্পিউটারকে চালু করতে পারলেও কোনো কাজই সম্পাদন করতে পারবেন না। কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম নির্বাচনের সময় আপনার পেশা এবং কাজের ধরণ অনুসারে নির্বাচন করুন। উন্ডোজ ওএস ব্যবহার করলে সমস্যা এড়ানোর জন্য সবসময় জেনুইন উইন্ডোজ ব্যবহারের চেষ্টা করুন।
মন্তব্য লিখুন