বৃদ্ধাশ্রম শব্দটার সাথে বর্তমান সমাজে আমরা সকলেই পরিচিত। বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মা, দাদা-দাদীকে বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও কোন প্রবীণ নিবাসে রেখে আসাকেই আমরা এখন বৃদ্ধাশ্রমের সংঙ্গা হিসেবে জানি।
প্রায় প্রতিটি দেশেই বৃদ্ধাশ্রম রয়েছে। তবে বর্তমান সমাজে বাবা-মা একটু বয়স্ক হলেই যেন হয়ে যান সন্তানের চোখের কাটা। পরিবার থেকে বাবা-মা বিদায় হলেই যেন এদের বড় বোঝা নেমে যায়। কিন্তু এই বাবা মাই ছোটবেলায় অনেক কষ্ট করে আমাদের বড় করেন।সুতরাং তাদের বৃদ্ধ বয়সে তাদের প্রতি আমাদের রয়েছে দায়িত্ব ও কর্তব্য।
জাতিসংঘ ৬০ বছর বয়সকে বার্ধক্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আর বাবা-মা এই বার্ধক্যে পা রাখলে অর্থাৎ তাদের কর্মক্ষমতা যখন হ্রাস পায় তখন বেশিরভাগ পরিবারে সন্তানদের ভাব এমন হয় যেন বাবা-মা পরিবারে না থাকলেই তারা ভালো থাকেন।তাই মাসে মাসে টাকা দিয়ে হলেও বেশির ভাগ ছেলে মেয়ে বাবা মাকে রেখে আসেন বৃদ্ধাশ্রম নামক কারাগারে।
কিন্তু তারা এ বৃদ্ধ বয়সে তাদের পরিবার থেকে আশা করেন একটু ভালোবাসা ও যত্ন। এক জরিপে দেখা গেছে বাংলাদেশের শতকরা ৮৮ ভাগ প্রবীণরা কোন না কোন সন্তান থেকে দূরে থাকেন।
পৃথিবীর প্রথম বৃদ্ধাশ্রমম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রাচীন চীনে। এই উদ্যােগ ছিল শান রাজবংশের। ২২০০ শতকে পরিবার থেকে বিতারিত বৃদ্ধদের জন্য এই আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করে ইতিহাসে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে শান রাজবংশ।
এখানে বৃদ্ধদের জন্য ছিলো সকল রকম ব্যবস্থা। খাবার,বিনোদন, আরাম আয়েশের কোন কমতি ছিলো না। বৃদ্ধশ্রম বৃদ্ধ নারী পুরুষদের আবাসস্থল। ইতিহাসবিদরা এ প্রতিষ্ঠানকে প্রাচীন চীনে গড়ে ওঠা সভ্যতারই অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিহিত করেছেন।
বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়াংশে বিজ্ঞানের অভাবনীয় সাফল্য, চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি সমগ্র বিশ্বে গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে সমগ্র বিশ্বে লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।
বর্তমান বিশ্বে মোট জনসংখ্যার ৬.১ শতাংশ প্রবীন নর -নারী। ২০২৫ সালে এই সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে ১০.১ শতাংশে। তাছাড়া বর্তমানে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে একক পরিবার গড়ে উঠছে। ফলে বৃদ্ধ বাবা মা তাদের আশ্রয় ও বাসস্থান হারাচ্ছে। তাছাড়া আলাদা থাকার কারণে তাদের সাথে বাবা মায়ের যোগাযোগ ও কম হচ্ছে।
বাংলাদেশে শতকরা ২০ জন হয় একাকী থাকেন অথবা স্বামী-স্তী এক সাথে থাকে না। শতকরা দরিদ্র প্রবীনদের সংখ্যা ৩৭ জন।তবে বর্তমান সরকার কর্তৃক প্রবীনদের জন্য বয়স্কভাতা চালু করেছে। এছাড়াও সরকার কর্তৃক ৬ টি বিভাগে ৬ টি বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং বেসরকারি পর্যায়ে ও বৃদ্ধাশ্রম চালু করার উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে।তবে চাহিদার তুলনায় বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা বেশ কম।
বৃদ্ধাশ্রম আমাদের জন্য সুখকর কোন শব্দ নয়। আমাদের জন্য পাশ্চাত্য সংষ্কৃতির এক লজ্জাকর উপহার এ বৃদ্ধাশ্রম। সরকার সেখানে যতই আরাম আয়েশের ব্যবস্থা করুক না কেন আমরা কখনই চাই না কোন সন্তানের অবহেলায় কোন বাবা মায়ের স্থান হোক এই বন্দি কারাগারে। বরং প্রতিটি সন্তানের প্রতি অনুরোধ থাকবে আপনার বৃদ্ধ বাবা মাকে অবহেলা না করে আপনার সন্তানকে আপনার ছেলে মেয়ের সাহচর্যে যেতে দিন।
আপনার সন্তান এতে করে যেমন ভালো বন্ধু পাবে।তেমনি ভালো মানুষ হিসেবেও গড়ে উঠবে। আর অবশেষে আমরা চাইব কোন বাবা মাকে যেন আর বৃদ্ধ বয়সে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে না হয়। আর যেন কোন প্রবীন বাবা মায়ের চোখের জলে ভরে না ওঠে বৃদ্ধাশ্রমের প্রতিটি কর্ণার। প্রতিটি সন্তানের হৃদয়ই যেন হয় প্রতিটি বাবা মায়ের জন্য বৃদ্ধাশ্রম।
আরও পড়ুনঃ
নার্সিসিজম: যে রোগে ভুগছেন আপনিও
প্রেমের কাছে বয়স কি তবে শুধুই সংখ্যা!
ছবিঃ সংগৃহীত
আমি কবিতা ও গল্প নিয়ে লিখকে চাই। কোথায় লিখবো এবং কোথায় পোস্ট করতে হবে?
কবিতা ও গল্প কিছু সময়ের জন্য স্থগিত আছে।