শীতকালীন স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির মধ্যে শ্বাসকষ্ট অন্যতম। দিনের যে কোনো সময়, বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর সময় বা ভোরের দিকে এই রোগ শুরু হতে পারে। রাতের বেলা হঠাৎ রোগী উঠে বসে থাকে, ঘুমাতে পারে না। অনেকের বুকের ভেতর থেকে সাঁই সাঁই আওয়াজ হয়। অনেকের আবার ঠান্ডা লাগা, কাশি, নাক চোখ থেকে পানি পড়া সহ বিভিন্ন উপসর্গ থাকে। বিশেষ করে এই শীতকালে এবং যেকোনো ঋতু পরিবর্তনের সময় শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়। হঠাৎ রাতবিরাতে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হলে প্রতিকার করার মতো কিছুই হয়তো থাকে না আমাদের হাতে। তাই চটজলদি বাড়িতে থাকা জিনিসগুলি দিয়েই কিভাবে এই রোগটি থেকে তাৎক্ষনিক স্বস্তি পাওয়া যায় আজ তাই জানবো।
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
সরিষার তেলের বহুমুখী গুণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি গুণ হলো এটি শ্বসনতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারি। শ্বাস প্রশ্বাসকে সহজ করতে, শ্বাসকষ্টজনিত ব্যাথা কমাতে এটি খুব দ্রুত কাজ করে। বাটিতে কিছুটা সরিষার তেল নিয়ে একটু গরম করে তা রোগীর বুকে, গলায় ও পিঠে ভালো ভাবে মালিশ করে দিতে হবে। দরকার হলে নিয়মিত প্রতিদিন এটি চালিয়ে যেতে হবে। শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য এটা খুবই ভালো।
শ্বাসকষ্টের আরেকটি খুব সহজ সমাধান হলো গরম কফি। ধোয়া ওঠা গরম কফি খেতে কমবেশি সবারই ভালো লাগে। তাই এখনকার দিনে প্রায় সবার বাসাতেই কফির উপকরণ রাখা হয়। আর এই কফিই আপনার শ্বাসকষ্ট অনেকটা লাঘব করতে পারে। যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে তারা এবার থেকে কফি ট্রাই করতে পারেন, নিশ্চিত উপকার পাবেন। এক্ষেত্রে কফি যতো কড়া হবে উপকার ততো বেশি পাবেন। তবে একথা মনে রাখতে হবে যে দিনে সর্বোচ্চ ৩ কাপ কফি খেতে পারেন। এর বেশি কোনো অবস্থাতেই খাওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত কফি খাওয়া শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
রসুন স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। এটি বিশেষ করে হৃদপিন্ড ও শ্বসনতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। গরম রসুন তেল, রসুন ভাজা, বা তরকারিতে রোজ কয়েক কোয়া রসুনের ব্যবহার শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা কমায়।
আদার বহুবিধ উপকারিতার মধ্যে এটি অন্যতম। আদা শ্বাসনালীর সংকোচন ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। আদা ও মধু দিয়ে চা তৈরি করে খেতে পারেন। আবার শুধু কিছু আদার টুকরোও চিবোতে পারেন। তাৎক্ষণিকভাবে আদা দারুন কাজ করবে।
অ্যাজমা রোগীদের জন্য মধু খুবই ভালো কাজ করে। এক্ষেত্রে ১গ্লাস গরম পানিতে ১চা চামচ মধু মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার খেলে আরাম পাওয়া যায়। এটি শুধু অ্যাজমার রোগীদের জন্য নয়, সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য যে কেউ এই মধু মিশ্রিত পানি রোজ পান করতে পারেন, সুফল পাবেন।
গবেষণায় জানা যায় ডুমুর ফলে এমন উপাদান রয়েছে যা শ্বাসকষ্ট উপশমে কার্যকর। যাদের অ্যাজমা বা হাপানী আছে তারা রোজ রাতে এক গ্লাস পানিতে কয়েকটা ডুমুর ভিজিয়ে রাখতে পারেন। পরের দিন সকালে সেই ডুমুর ও তার পানি পান করতে হবে। ডুমুরে উপস্থিত উপাদান ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়ায়, ফলে শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্ত থাকা যায়।
শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা যাদের আছে তাদের অ্যালার্জি হয় এমন খাবার সবসময় এড়িয়ে চলা উচিৎ। চিংড়িমাছ, ডিম, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত মাংস, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, পুইশাক, ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের খাবার থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। তবে সবার ক্ষেত্রে একই খাবারে অ্যালার্জি হয় না। এছাড়া ঠান্ডা দুধ, দই, আইস্ক্রিম শ্বাসকষ্টে আক্রান্তদের একদমই খাওয়া উচিৎ নয়। আর ধূমপান করা বা যে স্থানে ধোঁয়া আছে সেখানে যাওয়া পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
এছাড়া, বায়ুতে উপস্থিত ধূলিকণাও শ্বাসতন্ত্রের জটিলতার একটি বড় কারন। এখন সারা দেশেই, বিশেষ করে শহর অঞ্চলে বায়ু দূষণ চরম আকার ধারণ করেছে। তাই এখন করোনা থেকে বাঁচতে এবং পরবর্তীতেও বায়ুতে উপস্থিত ধূলিকণা ও রোগজীবাণু দূরে রাখতে মাস্ক ব্যবহার করা উচিৎ।
অবশেষে, শ্বাসকষ্ট যাদের আগে থেকেই আছে তাদের উচিৎ সবসময় ইনহেলার এবং প্রয়োজনে স্পেসার সাথে রাখা। ইনহেলার শ্বাসকষ্টের প্রাথমিক চিকিৎসা। এছাড়া নেবুলাইজার, ইনজেকশন সহ আরো বেশ কিছু চিকিৎসা রয়েছে। যাদের অতি মাত্রায় শ্বাসকষ্ট রয়েছে তাদের যতো দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের নিকট নিয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি খুব বিপদজনক আকার ধারণ করতে পারে। তাই সব সময় তাদের বিশেষ যত্ন নেয়া দরকার।
মন্তব্য লিখুন