প্রসেসর একটি হার্ডওয়্যার ডিভাইস যা আমাদের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস সচল এবং ইনফরমেশন প্রকিয়াজাত করে। এটি কম্পিউটার এর ব্রেইন হিসেবে কাজ করে। ক্লক স্পীড এবং কোর এক সাথে একই উদ্দেশ্যে কাজ করে কিন্তু তাদের কাজের ধরন আলাদা।
ক্লক স্পীড নির্ধারণ করে একটি কাজ সে কতো দ্রুত করতে পারবে। আবার কতোটি কাজ একসাথে করতে পারবে সেটা নির্ভর করে কিন্তু কোরের ওপর। আপনার কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করবে কোন ধরনের প্রসেসর প্রয়োজন।
ভারি কাজে কিংবা গেমিং এর জন্য প্রসেসরের কোরের ওপর গুরুত্ব দিবেন নাকি ক্লক স্পীডের ওপর ? জানতে হলে আমাদেরকে জানতে হবে কোর এবং ক্লক স্পীড কিভাবে কাজ করে।
প্রসেসরকে পূর্ণরূপে Central Processing Unit বা সংক্ষেপে CPU বলে ডাকা হয়। এটি কম্পিউটারকে সচল রাখে এবং কম্পিউটারে থাকা বিভিন্ন সফটওয়্যার, অ্যাপ্লিকেশানের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে। মানে কম্পিউটারে ইন্সটল হওয়া সফটওয়্যার এর নির্দেশ গ্রহন করে এবং সে অনুযায়ি কাজ সম্পাদন করে প্রয়োজনীয় আউটপুট দেয়।
কম্পিউটারের যতো ধরনের গাণিতিক এবং নিয়ন্ত্রণের কাজ রয়েছে সব এই প্রসেসরের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। আমরা অনবরত যে কম্পিউটারে কাজ করি তার প্রয়োজনীয় আউটপুট তৈরি করে দেয়।
তাহলে প্রসেসর হলো এমন একটি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস যা ইউজার কর্তৃক গৃহীত ইনফর্মেশন প্রক্রিয়াজাত করে প্রয়োজনীয় আউটপুট দিয়ে কম্পিউটার কে সচল রাখে।
প্রসেসর কম্পিউটারের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এবং একটি আদর্শ অংশ। এটি ইলেক্ট্রো স্ট্যাটিক ডিসচার্জের ওপর সংবেদনশীল। মানে হলো এটি কোন কিছুর সংস্পর্শে আসলে ইলেকট্রন আদান প্রদান করতে পারে। তাই খালি হাতে প্রসেসরের পিনগুলো ধরা ঠিক না ।
সিপিউ মাদারবোর্ডে বসানোর সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। প্রসেসর হলো একটি সিলিকন প্লেটের ওপর বসানো কোটি কোটি ট্রানজিস্টর যা বিশাল লজিক সার্কিট তৈরি করে। বর্তমানে একটি সিপিউ ১৭০ কোটিরও অধিক ট্রানজিস্টর থাকতে পারে।
এই লজিক সার্কিট টি নিরাপদে রাখার জন্য সিরামিকের তৈরি একটি কাভার দিয়ে রাখা হয়। এই কাভার বিদ্যুৎ অপরবাহী কিন্তু তাপ পরিবাহী। তাই সিরামিকের কভারটি ভিতরে উৎপন্ন তাপ বাহিরে বের করে দেয়।
সিরামিকের এই কভারের মধ্যেই প্রসেসরের ধরন, স্পীড এবং অন্যান্য ডিটেইলস দিয়ে দেয়া হয়। প্রযুক্তি যতো এগিয়ে চলেছে সিপিউ ততোই শক্তিশালী ও ছোট হয়ে আসছে। ট্রানজিস্টরের সংখ্যা যতো বাড়বে প্রসেসর ততোই শক্তিশালি হবে।
প্রযুক্তি যতই এগুচ্ছে ততোই কম জায়গার মধ্যে বেশী ট্রানজিস্টর বসানো সম্ভব হচ্ছে।
প্রসেসর যেকোনো কম্পিউটার এর খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটির আঁকার ছোট বলে একে মাইক্রো প্রসেসর বলেও ডাকা হয়। সিপিউর কাজ হলো ডাটা এনে প্রক্রিয়াজাত করে তাকে আবার সঠিক গন্তব্যস্থলে পাঠানো। মূলত সিপিউ তিনটি প্রধান কাজ করে থাকে।
(১) সফটওয়্যার প্রোগ্রাম থেকে ইনফর্মেশন আনা , ডিকোড করা এবং সম্পাদন করা।
(২) গাণিতিক হিসেব নিকেশ করা।
(৩) কন্ট্রোল করা এবং সব কিছু নিয়ন্ত্রণের টাইম সেট করা।
অ্যাপ্লিকেশান প্রোগ্রাম থেকে সিপিউ প্রথমে ইন্সট্রাকশন গ্রহন করে। ইন্সট্রাকশন হলো কতোগুলো পদক্ষেপের সমষ্টি যা প্রসেসরকে বলে দেয় কি করতে হবে । কোনো প্রোগ্রাম চালু হওয়ার আগে তা মেমোরিতে (RAM) জমা হয়।
এই সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রন করার জন্য প্রসেসর তার কন্ট্রোল ইউনিট কে কাজে লাগায়। মেমরির কোন লোকেশান থেকে ডেটা আনা হবে, কখন আনা হবে এবং কি করতে হবে তার সবটুকুই নিয়ন্ত্রন করে কন্ট্রোল ইউনিট।
সিপিউয়ের মধ্যে অন্য আরেকটি দ্রুতগতি সম্পন্ন মেমোরি থাকে যাকে রেজিস্টার বলা হয় । রেজিস্টার RAM এর থেকেও বহুগুন দ্রুত ডাটা আনা নেয়া করতে পারে । তাই সিপিউ তে যতো বেশী রেজিস্টার থাকবে সে ততো দ্রুত এবং ততো বেশী ডাটাকে একই সময়ে প্রসেস করতে পারবে।
র্যামের থেকে যে ডাটা গুলোকে প্রসেস করতে হবে তা সরাসরি সিপিউ তে থাকা রেজিস্টারে চলে আসে । কারন সিপিউ যতো দ্রুত কাজ করে র্যাম অতো দ্রুত কাজ করতে পারে না । ফলে পুরো পারফরমেন্স কমে যেতে পারে ।
এরপর ইন্সট্রাকশন অনুযায়ী ডেটা গুলো যদি তুলনা বা লজিকাল অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে তাহলে সেগুলোকে কন্ট্রোল ইউনিটে পাঠানো হয়। আর যদি যোগ , বিয়োগ , গুন , ভাগের প্রয়োজন পড়ে তাহলে ALU ( Arithmetic logic unit) তে পাঠানো হয়।
অবশেষে প্রসেস হওয়া ডাটাগুলোকে রেজিস্টার থেকে র্যামে পাঠানো হয়। এভাবে পুরো একটি সাইকেল সম্পূর্ণ হয় ।
প্রথম থেকে ইন্টেল সেরা নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও আরও কতোগুলো কোম্পানি রয়েছে যারা প্রসেসর নির্মাণ করে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে AMD খুবই ভালো মানের সিপিউ তৈরি করছে। কম দামে তারা ভালো মানের সিপিউ বিক্রি করছে ।
যা বর্তমানে ইন্টেলকে কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে । AMD এর শুরু দিকটা খুব একটা ভালো ছিলো না । তখন ইন্টেল AMD থেকে বহুগুনে এগিয়ে ছিল । কিন্তু পরে রাইজেন সিরিজ বের হওয়ায় AMD, ইন্টেলের সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে পারে ।
1. Advanced Micro Devices (AMD)
2. VIA
3. Integrated Device Technology (IDT) – acquired by VIA
4. Qualcomm
5. NVIDIA
6. IBM
7. Samsung
8. Motorola
9. Hewlett-Packard (hp)
10. Dell
11. Acer
12. Cyrix
13. Media Tek
প্রসেসরের কোর এবং ক্লক উভয়ই প্রসেসরের স্পীডের জন্য খুবই গুরুত্ব পূর্ণ । তাদের কাজের ধরন আলাদা কিন্তু তারা দুজনেই প্রসেসরের স্পীড বাড়াতে সাহায্য করে। সিপিউ এর কোর হলে আলাদা বা ইন্ডিভিজুয়াল প্রোসেসিং ইউনিট যা মাল্টি টাস্কিং এ কাজ করে ।
একেকটা কোর একেটা আলাদা আলাদা কাজের ইন্সট্রাকশন গ্রহন করে। আরেকটু ভেঙে বলতে গেলে একেকটা অ্যাপ্লিকেশান বা প্রোগ্রামের জন্য একটি কোর নিয়োজিত থাকে । সিপিউ তে যতো বেশী কোর থাকবে ততো বেশী অ্যাপ্লিকেশান প্রোগ্রাম একই সাথে চলতে পারবে । এটাকে মাল্টি টাস্কিং বলা হয় ।
যারা একই সাথে বহু কাজ করে তাদের জন্য তিন বা তার অধিক কোর প্রয়োজন। আপনি একই সাথে ফটো এডিট করছেন সাথে সাথে গান শুনছেন আবার অন্যদিকে ইন্টারনেট এ ব্রাউজ করছেন তখনি একেকটা কাজের জন্য একেকটা কোর কাজ করে।
অন্যদিকে ক্লক স্পীড নির্ধারণ করে একেকটা টাস্ক সে কতো দ্রুত করতে পারবে । ক্লক স্পীড যতো বেশি হবে ততো দ্রুত প্রসেসর একটা ইন্সট্রাকশন নিয়ে কাজ শেষ করতে পারবে। ক্লক স্পীড বেশি হলে কম্পিউটার এর একেকটা ইন্সটল হওয়া প্রোগ্রাম ততো দ্রুত ওপেন হবে ।
অনেক সময় ভারী প্রোগ্রাম খুলতে অনেক সময় নেয় । ক্লক স্পীড বেশি থাকলে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যায় । ক্লক স্পীড সাধারণত গিগা হার্জ দিয়ে পরিমাপ করা হয় । এক গিগা হার্জ মানে এক সেকেন্ডে সে ১ বিলিয়ন ইন্সট্রাকশন এক্সিকিউট করতে পারবে । মানে দাঁড়ায় কোটি কোটি যোগ বিয়োগ গুনের কাজ সে মাত্র এক সেকেন্ডে করতে পারবে ।
ল্যাপটপ ও ডেস্কটপের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় । ল্যাপটপ আঁকারে ছোট বহন যোগ্য । ফলে ভিতরের যন্ত্রপাতির জন্য অনেক কম জায়গায় থাকে । ল্যাপটপের সিপিউ সাধারণত ডেস্কটপের সিপিউ এর থেকে কম শক্তিশালী হয় । জায়গা কম থাকায় অল্পেই ডিভাইসটি গরম হয়ে যেতে পারে ।
ডিভাইস গরম হয়ে গেলে ইলেকট্রন প্রবাহ কমে যায়। ফলে সিপিউ অপেক্ষাকৃত স্লো কাজ করে । কিন্তু ডেস্ক টপের এই ধরনের ঝামেলা কম পোহাতে হয় । অনেক জায়গা থাকে বলে ডেস্ক টপ গেমিং এর জন্য ভালো । ল্যাপটপের সিপিউ মাদার বোর্ডের সাথে স্থায়ী ভাবে লাগানো থাকে।
ফলে একবার সিপিউ খারাপ হয়ে গেলে পুরো মাদার বোর্ড পরিবর্তন করতে হয় । ডেস্ক টপের ক্ষেত্রে আপনি সহজেই প্রসেসর পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে পারবেন।
কোনটির দিকে বেশি গুরুত্ব দিবেন , কোর নাকি ক্লক স্পীড ? এটা আসলে সম্পূর্ণ আপনার কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করে । যারা গেম খেলতে পছন্দ করেন তারদের কোর এবং ক্লক দুটি বিষয়ের ওপরই গুরুত্ব দিতে হবে । গেম খেলার সময় গ্রাফিক্স লোড হয় , সাথে সাথে সাউন্ড আর গেম প্লেও ।
গেমের জন্য মাল্টি টাস্কিং প্রয়োজন । তাই বর্তমানের ভারী গেম খেলার জন্য কমপক্ষে চারটি কোর প্রয়োজন। এবং ক্লক স্পীড ৩.৫ থেকে ৪ গিগা হার্জ এর মধ্যে হওয়া জরুরি ।
সাধারণ কাজ যেমন ব্রাউজিং , গান শোনা , খবর পড়া , ভিডিও দেখা ইত্যাদি কাজের জন্য যদি কম্পিউটার ব্যাবহার করতে চান তাহলে ডুয়াল কোরই যথেষ্ট। ক্লক স্পীড ১ গিগা হার্জ বা তার একটু বেশি হলেই চলে যাবে ।
অন্যদিকে যদি ভিডিও এডিটিং এর জন্য কম্পিউটার বেঁছে নেন তাহলে ক্লক স্পীড হাই হওয়া জরুরি । সাথে সাথে মাল্টি টাস্কিং এর জন্য অনেকগুলো কোরও প্রয়োজন।
সময় যতই এগিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন গেম গুলো ততোই কম্পিউটার হার্ডওয়্যারগুলোকে কঠিন পরিক্ষায় ফেলে দিচ্ছে। সফটওয়্যার গুলোর রিকয়ারমেন্ট যতই বারছে ততোই হার্ডওয়্যার গুলোকে বাধ্য করছে তার সর্বোচ্চ সীমানায় নিয়ে যাওয়ার এরই সাথে তাল মেলাতে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তির । যুগের সাথে তাল মেলাতে কে না চায় ?
ছবিঃ সংগৃহীত
তথ্যসূত্রঃ turbofuture.com, hp.com
মন্তব্য লিখুন