ডিমেনশিয়া এমন একটা রোগ যার কারনে মাঝে মাঝে আমরা চাবি বা মোবাইল কোথায় রেখেছি, কোথাও যাওয়ার রাস্তা কোনদিকে, নিজের পরিবারের সদস্যদের নাম, এমনকি পরিচিত আত্মীয়-স্বজনদের কথাও ভূলে যাই অনেকে।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে বেশির ভাগ লোকেরই এরকম হয়ে থাকে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটি মূলত একটি রোগ যার নাম ডিমেনশিয়া । বয়স বাড়ার সাথে যে সবারই ডিমেনশিয়া হবে বিষয়টা মোটেও এমন না, বিভিন্ন রোগ এবং বয়সের প্রভাব থেকেই এই ডিমেনশিয়া রোগটি হয়।
‘Dementare’ নামক ল্যাটিন শব্দ থেকে ডিমেনশিয়া শব্দটির উৎপত্তি যার অর্থ পাগল করা বা পাগল করে দেয়া । মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রম যেমন ( কোন কিছু স্মরন করা , কথা বলা , চলাচল , বা আচরন ) ইত্যাদিতে যদি কোন রকমের ব্যাঘাত ঘটে বা স্বাভাবিক না থেকে তখন তাকে বলা হয় ডিমেনশিয়া । প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যাক্তিদের এ রোগটি হয়ে থাকে ।
১। খুব অল্প সময়ের মধ্যে সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া কোন কাজ বা ঘটনা মনে না করতে পারা ।
২। জিনিসপত্র রাখার জায়গা বা খুঁজে পাওয়া নিয়ে দ্বিধাদন্দে ভোগে ।
৩। চেনা পরিচিত মানুষ জনের নাম বা পরিচয় ভুলে যেতে পারে । এমনকি নিজের ঠিকানাও ভুলে যেতে পারে ।
৪। কোন জিনিসের উপর থেকে সহযেই মনোযোগ হারিয়ে ফেলে ।
৫। অন্যদের সাথে আচরনে বিশেষ পরিবর্তন লক্ষ করা যায় , এবং খুব দ্রুতই খুব বেশি খুশি বা খুব মর্মাহত হন বা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন।
৬। রোগটি যত বেশি প্রকট হয় রোগীর একা চলাফেরা বা কাজ করা বা কথা বলা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে পরে ।
যারা ইতিমধ্যে ৬০ বা ৬৫ বছর পার করেছেন তাদের ক্ষেত্রেই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি । এ রোগে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের আক্রান্ত হওয়ার বেশি সম্ভব রেকর্ড রয়েছে । তরুনদের জন্য এ রোগের সম্মুখীন হওয়ার ঘটনা খুবি কম ।
এছাড়া যারা পূর্ব থেকেই বিভিন্ন জটিল রোগ যেমন – হৃদরোগে আক্রান্ত থাকলে , উচ্চ রক্তচাপ থাকলে , রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে বা ডায়াবেটিকস থাকলে এ রোগের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায় ।
একবার ডিমনেশিয়া রোগে আক্রান্ত হলে তা পুরোপুরি নিরাময় করা প্রায় অসম্ভব । এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীর স্মৃতিশক্তি ভাল রাখতে কিছু ওষুধ দেয়া হয় । এছাড়া মস্তিষ্ক কার্যকর রাখতে রোগীর সাথে কিছু মাইন্ড গেম খেলা হয় ।
রোগীর সাথে প্রচুর কথা বলতে হয় , রোগীকে সময় দেয়া হয় এবং রোগীকে যথার্থ সম্মান দেয়া হয় । রোগটি জটিল পর্যায়ে পৌঁছানোর আগেই ডাক্তারের শরনাপন্ন হওয়া ভাল ।
১। প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে , ঘুম মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখে ।
২। ছোট বয়স থেকেই প্রতিদিন টুকুটাকি শরীরচর্চা বা হাটাঁহাটির অভ্যাস করতে হবে ।
৩। খাদ্য তালিকায় দৈনিক তাজা শাকসবজি ও ফলমূল রাখতে হবে । তেলচর্বি বা ফাস্টফুড জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে ।
৪। নিজেকে একা রাখা যাবেনা বরং বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়স্বজনদের সাথে সময় কাটাতে হবে ।
৫। নিজেকে ব্যাস্ততার মধ্যে রাখতে হবে তাই অবসরে পেপার , মেগ্যাজিন, আর্টিকেল , গল্পের বই পড়া যেতে পারে এবং বিভিন্ন আইকিউ টেস্টে অংশ নেয়া যেতে পারে ।
৬। ধূমপান বা মদ্যপানের মত বদ অভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে হবে ।
ছবিঃ সংগৃহীত
তথ্যসূত্রঃ alzheimersresearchuk.org
মন্তব্য লিখুন