হেপাটাইটিস একটি ইংরেজি শব্দ। এর বাংলা অর্থ হলো লিভার বা যকৃতের প্রদাহ। এটি একটি সংক্রামক রোগ। এটি যকৃত বা লিভারকে আক্রমণ করে। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের আক্রমনে এই রোগ হয়।
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
এ রোগের প্রথম দিকে কোন লক্ষণই প্রকাশ পায় না। সংক্রমনের পর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে ৩০-১৮০ দিন সময় লাগে।
হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের অ্যাকিউট সংক্রমনের লক্ষণ:
১. খাবারে অরুচি, শরীর ব্যাথা।
২. হালকা জ্বর, প্রস্রাবগাঢ় হওয়া, বমি হওয়া, গায়ের চামড়ার উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৩. বদহজম হতে পারে। এছাড়াও অনেক রুগীর জন্ডিস ও দেখা দিতে পারে।
হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের ক্রনিক সংক্রমণ: এ পর্যায়ে যকৃতে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ হতে পারে। সিরোসিস হতে বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লাগে। এর ফলে যকৃত ক্যান্সার ও হতে পারে।এছাড়াও এ পর্যায়ে লিভারে পানি আসতে পারে।
সাধারণত চামড়া ও তরল পদার্থের সংস্পশে এ রোগ হতে পারে। এছাড়া অনিরাপদ যৌন মিলন, সমকামিতা অথবা চুম্বনের ফলে এটি ছড়াতে পারে। একই সুই বা সিরিন্জ দিয়ে মাদক গ্রহণ করলে এটি হতে পারে। হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত কারো রক্ত নিলে এই রোগ হতে পারে। কোন মা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার গর্ভের সন্তানেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি ৯০%। এটি এইডস থেকেও ১০০গুন সংক্রামক। সন্তান থেকে মায়ের সংক্রমনের ঝুকি ২০%।
১. বাসার কেউ হেপাটাইটিস বি তে সংক্রমিত হলে তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও বাসনপত্র আলাদা করে দিতে হবে।
২. রোগীকে পুরোপুরি বিশ্রামে রাখতে হবে।
৩. প্রচুর তরল খাদ্য, ফলের রস ও সহজপাচ্য খাবার খেতে দিতে হবে
৪. রোগলক্ষণ প্রকাশ পেলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।নিয়মিত চিকিৎসায়য় সুস্থ থাকা যায় তবে সম্পূর্ন আরোগ্য হওয়া যায় না।
৫. রোগীর অবস্থা যদি খুবই খারাপের দিকে যায়,মুখ দিয়ে খেতে না পারে তবে স্যালাইনের মাধ্যমে তার পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে হবে।
৬. অড়হড় পাতা, ভুঁই আমকার পাতার রস খাওয়ানো যেতে পারে কারণ অনেকে দাবী করেন এটি খাইয়ে তারা উপকার পেয়েছেন।
৭. নিয়মিত ব্যয়াম করতে হবে যাতে শরীরের পরিপাক ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।এবং পরিমিত পরিমাণে ভিটামিন গ্রহণ করতে হবে।
১. রক্ত দান বা গ্রহণের ব্যাপারে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
২. সিরিজ্ঞ ব্যবহারের পূর্বে দেখে নিতে হবে তা ডিসপোজেবল কি না।
৩. অবাধ মেলামেশা পরিহার করতে হবে।
৪. যেখানে, সেখানে পানি বা খোলা খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
৫. হাতে পায়ে ক্ষত নিয়ে হেপাটাইটিস বি রোগীর সেবা করা উচিত না।প্রয়োজনে হাতে গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে।
৬. শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলকেই টিকা গ্রহণ করতে হবে।তবে টিকা গ্রহণের পূর্বে সবাইকে রক্ত পরীক্ষা করে যদি নেগেটিভ আসে তবো টিকা গ্রহণ করতে হবে।
হেপাটাইটিস বি এর ভ্যাকসিন ডোজ ৪টি। প্রথম ৩টি একমাস পরপর এবং ৪র্থটি প্রথম ডোজ থেকে একবছর পর।পাঁচ বছর পর বুস্টার ডোজ নিতে হয়।এর মাধ্যমে শরীরে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।
যে সব খাবার গ্রহন নিষেধ: তেল, চর্বি, ঘি, মাখন জাতীয় খাবার গ্রহণ করা যাবে না। মসলা কম খেতে হবে। মাংস জাতীয় খাবার কম খেতে হবে।
প্রতিবছর ২৮ শে জুলাই বিশ্বব্যাপী হেপাটাইটিস দিবস পালন করা হয়। ২০০৭ সাল থেকে এটি বিশ্ব হেপাটাইটিস জোট গঠন করে এবং ২০১০ সালে বৈশ্বিকভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন লাভ করে।
তাই এই মরণব্যাধি হেপাটািটিস বি যেন আর কারো জীবন কেড়ে নিতে না পারে তার জন্য আমাদের সকলের সচেতন থাকতে হবে। এবং পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে হেপাটাইটিস বি শরীরে আছে কি না।
যদি কেউ সংক্রমিত হয়ে থাকে তবে চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে সুস্থ থাকা সম্ভব। এছাড়া এই ভাইরাস যেন আর বিস্তার লাভ করতে না পারে তাই এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। আর সর্বোপরি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে।
ছবিঃ সংগৃহীত
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, কমিউনিটি নিউজ জাপান
মন্তব্য লিখুন