ডিজিটাল প্রযুক্তির আলোয় আলোকিত বাংলাদেশ। বিগত এক দশক ধরে ডিজিটাল প্রযুক্তির উন্নয়নের এই অগ্রগতি দৃশ্যমান। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ফরচুন ম্যাগাজিনের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, বিশ্বের বৃহত্তম কোম্পানির সিইওদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন প্রযুক্তি পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলা। প্রযুক্তির এই পরিবর্তনের সাথে সাথে যারা নিজেরকে খাপ খাইয়ে নিতে সময় নিবে তারা ছিটকে পড়বে আর যারা পারবে তারা এগিয়ে যাবে বহুগুন। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে প্রযুক্তিভিত্তিক উন্নয়নের মাধ্যমে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে বদ্ধপরিকর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নত বাংলাদেশ গড়ার ডিজিটাল প্রযুক্তির এ উন্নয়ন দর্শনের ফলেই দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছে।
২০০৮ সালে ১২ ডিসেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী ইশতেহার রূপকল্প-২০২১ ঘোষণার সময় ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনিমার্ণের ঘোষনা দেন। অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, ই-গর্ভমেন্ট ও তথ্য প্রযুক্তির বিকাশ এ চারটি মূল স্তম্ভকে ভিত্তি করে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মানের পথে শেখ হাসিনা এখন রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। সমগ্র দেশ এখন ডিজিটাল নেটওয়ার্কের আওতায়। দেশের সব উপজেলা ও ইউনিয়ন এখন ব্রডব্যান্ড কানেন্টিভিটিতে নিয়ে আসা হয়েছে, বাদ যায়নি দূর্গম এলাকাও। অন্যদিকে দেশের মানুষের হাতে এখন স্মার্টফোন ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি কাজে যেকোন পরামর্শ ও সহযোগিতা জানতে পারছেন নিমিষেই সংশ্লিষ্টরা। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য, ভর্তিফরম পূরন, অনলাইনে চাকুরীর আবেদন ফরম পূরন, জন্ম নিবন্ধন, বীমা, মোবাইল ব্যাংকিং, কৃষি কাজের জন্য মাটি পরীক্ষা ও সারের সুপারিশ, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ, চিকিৎসা সেবা-পরামর্শ সহ দৈনিক প্রায় ৬০ ধরনের সেবা পাওয়া যায় অনলাইনে।
অন্যদিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সরকারি ওয়েবসাইট “জাতীয় তথ্য বাতায়নে”- ৪৩ হাজার দপ্তর এখন সংযুক্ত। এতে রয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নসহ প্রায় ২৫ হাজারেরও বেশি ওয়েবসাইট। আরও ১৯০০ সরকারি সেবা ই-সেবায় পরিনত করার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। অনলাইনে সেবা পাওয়ায় মানুষের সময়, খরচ ও যাতায়াত ভোগান্তি কমেছে। ফলে সময় ও অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে। এছাড়াও কলসেন্টার ভিত্তিক সেবা ৯৯৯ এখন বেশ জনপ্রিয়।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আইসিটি অবকাঠামো নির্মানের উপর ব্যপক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দেশের ২৮টি স্থানে ২৮টি হাইটেক পার্ক ও আইটি ট্রেনিং ইনকিউবেশন সেন্টার গড়ে তোলা হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে গড়ে উঠেছে সাইবার জগৎ। তৈরি হচ্ছে প্রচুর ডেটা, সাইবার জগৎ ও ডেটার নিরাপত্তা বিধানের জন্য সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করেছে। আর সাইবার আক্রমন প্রতিরোধে গঠন করেছে বাংলাদেশ ই-গর্ভমেন্ট সার্ট- যা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অংশ নিয়ে সাইবার হামলা মোকবেলায় নিজেদের সক্ষমতার প্রমান দিয়েছে।
আরো পড়ুনঃ ডিজিটাল বাংলাদেশ এর অর্জন ও উন্নয়ন কার্যক্রম
ডিজিটাল অর্থনীতির ভিত গড়তে প্রয়োজন দক্ষ মানবসম্পদ। তাই ২০২১ সালের মধ্যে ২০ লক্ষ আইটি পেশাজীবী গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। ইতোমধ্যে প্রায় ৫ লক্ষ ৮৫ হাজার দক্ষ মানব সম্পদ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়াও দেশে প্রায় ৬ লক্ষ ফ্রিল্যান্সার সক্রিয় রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক তথ্য প্রযুক্তি বাজার থেকে ২ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় করছে। আগামী ২০২১ সাল নাগাদ এখাত থেকে সরকার প্রায় ৫ মিলিয়ন ডলার আয় করতে চায়। আর এজন্য আইসিটিতে বিনিয়োগ প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষনা করা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শন তরুণ প্রজন্ম স্বতঃস্ফুর্তভাবে গ্রহন করেছে। দেশের সবচেয়ে কর্মক্ষম তরুণ প্রজন্ম ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ পূরণ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে ফেসবুক ব্যবহারকারী ৬ কোটির বেশি। গড়ে উঠেছে এফ-কমার্স বা ফেসবুক-ভিত্তিক ব্যবসা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নারী উদ্যোক্তাদের উপস্থিতি বাড়ছে। ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) তথ্য বলছে, এখন দেশে প্রায় ২০ হাজার ফেসবুক পেজে কেনাকাটা চলছে। এর মধ্যে ১২ হাজার পেজ চালাচ্ছেন নারীরা। ফেসবুককে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে স্বল্প পুঁজিতেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন নারীরা। ই-ক্যাবের তথ্যমতে, গত এক বছরে ই-কমার্স খাতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। দেশে সফটওয়্যার খাতের একমাত্র সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস বা বেসিসে সদস্য কোম্পানি রয়েছে ১ হাজার ২০০টি। এর মধ্যে ৬০টি কোম্পানিতে শেয়ার ও কোম্পানির বোর্ডে রয়েছেন নারী উদ্যোক্তারা। দেশের তথ্যপ্রযুক্তিতে অন্যতম একটি খাত বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং বা বিপিও। খাতটিতে কাজ করছেন অন্তত ৩৫ হাজার তরুন-তরুণী।
চতুর্থ শিল্প বিল্পবের এই সময়ে বাংলাদেশের তরুণদের এগিয়ে থাকতে এটুআই, মেশিন লার্নিং, বিগ ডেটার মতো আধুনিক বিষয়গুলো শেখার দিকে নজর দিতে হবে। বাংলাদেশের সম্পদ তরুন জনশক্তি। তাঁরা তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ হলে এগিয়ে যাবে ডিজিটাল প্রযুক্তির আলোয় আলোকিত বাংলাদেশ। এ খাতে দেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হবে। তবে এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও এখন রয়েছে। ফ্রিল্যান্সারদের দীর্ঘদিনের দাবি বিদেশ থেকে অর্থ আনার ক্ষেত্রে পেপ্যাল চালু করা করা। এ খাতে এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি। এর বাইরে কম খরচে দ্রুতগতির ইন্টারনেট অত্যন্ত অঞ্চলে পাওয়ার দাবিও রয়েছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম কমলেও গ্রাহক পর্যায়ে তার সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ তথ্য প্রযুক্তি অধিদপ্তর ছবিঃ সংগৃহীত
সত্যিই প্রযুক্তি খাতে ব্যপক উন্নয়ন হয়েছে। আমরা চাই এর ধারাবাহিকতা অব্যহত থাকুক। বাংলাদেশ হোক ডিজিটাল আলোয় আলোকিত।