কথিত আছে, ডায়াবেটিস হল, “Mother Of All Disease “. ডায়াবেটিস মূলত কোনো রোগ নয়, এটি একটি মেটাবলিক ডিসঅর্ডার বা বিপাকীয় অসামাঞ্জস্যতা।
যদিও ডায়াবেটিস কোনো মারাত্মক রোগ নয়। পরিমিত আহার, নিয়মিত ব্যায়াম এবং সঠিক ঔষধ সেবনের মাধ্যমে এই রোগীরা সাধারণ জীবন-যাপন করতে পারেন।
আমাদের দেহে অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স কোষ থেকে ইনসুলিন নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ করে। ইনসুলিন হরমোন বেঁচে থাকা এবং সুস্থ থাকার জন্য অতি প্রয়োজনীয়। যখন অগ্ন্যাশয় পরিমিত পরিমাণ হরমোন নিঃসরণ না করে অথবা অন্য কোনো কারণে ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ না করে তখন মেটাবলিক ডিসঅর্ডার দেখা দেয়। মানবদেহের এই অবস্থাকে ডায়াবেটিস বলা হয়।
আমাদের শরীর কোটি কোটি কোষ দিয়ে তৈরী এবং স্বাভাবিক কাজকর্মের জন্য প্রত্যেকটি কোষেরই খাবার প্রয়োজন। আমরা মুখে যাই খাই না কেন, সেগুলো হজম হয়ে সুগার বা শর্করা তৈরি করে যা প্রত্যেকটি কোষের জন্য আদর্শ খাবার। কিন্তু কোষগুলোর দেয়াল চর্বি দিয়ে তৈরি, আর চিনি তো তেলে মেশানো যায় না। ব্যতিক্রমী কিছু কোষ ছাড়া, বেশীরভাগ কোষই রক্ত থেকে সরাসরি তাদের খাবার অর্থাৎ সুগার গ্রহণ করতে পারে না। কোষগুলোর দেয়ালে একটি দরজা থাকে, যেটা আবার তালা দেওয়া থাকে। ইনসুলিন হলো সেই তালার চাবি। ইনসুলিন এসে দরজা খুলে দিলেই কেবল কোষগুলোতে রক্ত থেকে তাদের প্রয়োজনীয় সুগার প্রবেশ করে। ফলে কোষগুলো ও খাবার পায়, আবার রক্তে ও অতিরিক্ত সুগারের জটলা থাকে না। কিন্তু যখন কোষগুলো কোনো কারণে রক্ত থেকে সুগার গ্রহণ করতে পারে না তখন রক্তে অতিরিক্ত সুগার জমা হয়। রক্তে যখন অতিরিক্ত সুগার জমা হয়, তখন ডায়াবেটিস হয়।
রক্তে সুগার বেশি থাকলে রক্তের ঘনত্ব বাড়িয়ে দেয়। আমাদের শরীরে এমন সূক্ষ্ম শিরা উপশিরা আছে, যেগুলোকে খালি চোখে দেখা যায় না। এইসব সূক্ষ্ম রক্তনালী দিয়ে দিনে গড়ে প্রায় একলক্ষ বার রক্ত চলাচল করে। রক্তের ঘনত্ব বেশি হওয়ার কারণে সুগার জমে রক্তনালীগুলো আস্তে আস্তে ব্লক হয়ে যাওয়া শুরু করে। এই রক্তনালীর মাধ্যমে যে কোষসমূহ পুষ্টি ও অক্সিজেন সরবারহ করে আসছিলো সেগুলো আস্তে আস্তে মরে যেতে শুরু করে। এজন্যই ডায়াবেটিস হলে মস্তিষ্ক, চোখ, কিডনি, নার্ভ, হার্ট ইত্যাদির ক্ষয় শুরু হয়।
Oral Glucose Tolerance Test (OTGG) পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস শনাক্তকরণ করা হয়। এই পদ্ধতিতে খালি পেটে রক্তের গ্লুকোজ বা সুগারের পরিমাপ করা হয়। যদি অভুক্ত অবস্থায় রক্তে গ্লুকোজ ৭মি.লি মোলার বা এর বেশি এবং ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ানের ২ ঘন্টা পর যদি সুগার ১১.১ মিলি মোল বা তার বেশি হয়, তবে তাদের ডায়াবেটিস রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়।
এছাড়াও গ্লুকোমিটারের মাধ্যমে ও ডায়াবেটিস নির্ণয় করা যায়।
অন্য যেকোনো রোগের চেয়ে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা সম্পূর্ণ আলাদা। রোগীর বয়স, পেশা, ওজন, খাদ্য অভ্যাস অনান্য অসুখে ইত্যাদি বহু বিষয়ের উপর নির্ভর করে। এজন্যই একই ঔষধ বা ইনসুলিনের একই ডোজ বিভিন্ন রোগীর শরীরে বিভিন্ন মাত্রার ফলাফল প্রদর্শন করে। আবার একই চিকিৎসা একই রোগীর ক্ষেত্রে বেশিদিন একই ফলাফল বজায় রাখে না। সুতরাং নির্দিষ্ট সময় পর পর ঔষধ পরিবর্তন করতে হয়। ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য না হলেও নিয়ন্ত্রণযোগ্য। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন, সুস্থে থাকুন।
আরও পড়ুনঃ মেরুদণ্ডের যত্ন নিনঃ মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কারন ও প্রতিকার
মন্তব্য লিখুন