“সুস্থ দেহে সুন্দর মন” অথবা “স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল” এই প্রবাদ বাক্য গুলো সবারই পরিচিত । নিজেকে সুস্থ রাখার কোন বিকল্প নেই । নিজেকে সুস্থ রাখতে কে না চায়? শরীরের বাহ্যিক অঙ্গগুলোর পরিচর্যার সাথে সাথে কিছু অভ্যন্তরীন মুখ্য অঙ্গের বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে ভাল থাকার জন্য । একটি অতি গুরুত্বপূর্ন অঙ্গ হচ্ছে বৃক্ক বা কিডনি । নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য কিডনির সুস্থতা খুবই জরুরী। সুতরাং চলুন জেনে নেই কীভবে কিডনিকে সুস্থ রাখা যায়-
কিডনি উদরগহব্বরের ভেতরে, মেরুদন্ডের দুইপাশে কোমরের দিকে অবস্থান করে । কিডনি দেখতে সাধারনর শীম বিচির মত এবং এরা লালচে রঙের হয় । কিডনির একক নেফ্রন এবং প্রতিটি কিডিনিতে প্রায় ১০-১২ লক্ষ নেফ্রন থাকে ।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের কিডনি সাধারনত দৈর্ঘে প্রস্থে যথাক্রমে ১০ এবং ৫ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে । প্রতিটি কিডনির ওজন প্রায় ১৫০-১৭০ গ্রাম হয় । কিডনিতে উৎপন্ন মূত্র ২৪-২৫ সেন্টিমিটার লম্বা মূত্রনালী দ্বারা মূত্রথলিতে পৌঁছায় । কিডনি দৈনিক প্রায় ১৫০০মিলিলিটার মূত্র তৈরি করে ।
আমাদের দেহের প্রধান রেচন অঙ্গ হলো কিডনি । কিডনি আমাদের দেহের তরল পদার্থের ভারসাম্য বজায় রাখে, দেহের অতিরিক্ত পানি দেহ থেকে বের করে দেয় । আমাদের শরীরে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় যেসব নাইট্রোজেন ঘটিত বর্জ পদার্থ উৎপন্ন হয় (যেমন –ইউরিয়া, ইউরিক এসিড , ত্রিয়েটিনিন ইত্যাদি ) তা রক্তের থেকে ছেঁকে রেখে রক্তকে পরিশোধিত করে । সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ইত্যাদির পরিমান নিয়ন্ত্রন করে । এছাড়াও কিডনি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে ভূমিকা পালন করে ।
১। একজন সুস্থ মানুষকে প্রতিদিন কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করতে হবে । আবহাওয়া অনুযায়ী পানি গ্রহনের পরিমানে তারতম্য হতে পারে যেমন অতিরিক্ত গরমে বেশি ঘাম হলে অবশ্যই বেশি পানি পান করা জরুরি । পানি কম পান করলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি রয়ে যায় ।
২। অতিরিক্ত তেল চর্বি যুক্ত খাবার অম্লীয় মূত্র তৈরি করে এবং বেশি পরিমানে শাকসবজি খেলে ক্ষারীয় মূত্র তৈরি হয় । তাই আমাদের খাদ্য তালিকা থেকে অতিরিক্ত তেল চর্বি যুক্ত খাবার যেমন গরুর মাংস , ফাস্টফুড , জাঙ্গফুড ইত্যাদি বাদ দিতে হবে ।
৩। সব ধরনের কোমল পানীয় ত্যাগ করতে হবে।
৪। মানুষের দৈনিক লবন গ্রহনের মাত্রা মাত্র ১ চা চামচ তাই অতিরিক্ত লবন খাওয়া পরিহার করতে হবে ।
আরও পড়ুনঃ অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা কি কেন লক্ষণ ও প্রতিকার
৫। কিডনি ভাল রাখতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখা খুবই জরুরি । উচ্চ রক্তচাপের কারনে কিডনি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে । তাই রক্তচাপ সর্বদা স্বাভাবিক বা ১২০/৮০ রাখার চেষ্টা করুন ।
৬। প্রতিদিন খাবারে কিছু প্রটিন , ভিটামিন সি রাখুন কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত নয় ।
৭। ধূমপান বা মদ্যপান থেকে বিরিত থাকতে হবে কারন এগুলো ধীরে ধীরে কিডিনির স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধাঁর সৃষ্টি করে ফলে স্বাভাবিক রক্তচাপে বিঘ্ন ঘটে ।
৮। দৈনন্দিন রুটিনে হাটাঁ কিংবা শরীরচর্চার জন্য কিছু সময় রাখা আবশ্যক ।
৯। আদা, লেবুর শরবত , রসুন , অলিভ অয়েল , সবুজ শাকসবজি , আপেল ইত্যাদি কিডিনিকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে তাই খাদ্য তালিকায় এই খাবারগুলো যুক্ত করুন ।
কিডনির সুস্থতা নিশ্চিতকরনে মাঝেমাঝে কিডনি পরীক্ষা করা ভাল । সাধারনত যাদের উচ্চ রক্তচাপ , ডায়াবেটিকসের মত জটিল রোগ রয়েছে তাদের জন্য কিডনি পরীক্ষা করা খুব জরুরি কারন বেশিরভাগ সময় এসব রোগ কিডনিকে অকেজো করে দেয় । এছাড়াও খুব সহযে রক্তের ক্রিয়েটিনিন ও মূত্রের অ্যালবুমিন পরীক্ষার মাধ্যমে কিডনির অবস্থা সম্পর্কে জানা যায় ।
অসাধারন 🖤