অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা বা রক্তস্বল্পতা, এটি বাংলাদেশের খুবই পরিচিত সমস্যা। বিশেষ করে মহিলা এবং শিশুরা অ্যানিমিয়াতে বেশি আক্রান্ত হয়। কিন্তু আমরা অ্যানিমিয়া -কে প্রথম অবস্থায় গুরুত্ব দেই না, কিছুটা অবহেলার চোখে দেখি। পরবর্তী সময়ে অ্যানিমিয়া আরো জটিলতা তৈরি করতে পারে। সুতরাং অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা সম্পর্কে কিছু জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক।
অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা হচ্ছে এমন একটি শারীরিক অবস্থা যখন শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন বহন করার জন্য লোহিত রক্তকণিকা কমে যায় অথবা লোহিত রক্ত কণিকায় হিমোগ্লোবিন কমে যায়।
আমাদের শরীর তিন ধরনের রক্ত কণিকা তৈরী করে। শ্বেত রক্তকণিকা রোগ প্রতিরোধ করে। প্লাটিলেট রক্ত জমাট বাধতে সহায়তা করে এবং লোহিত রক্ত কণিকা সারা শরীরে অক্সিজেন পরিবহন করে।
লোহিত রক্ত কণিকায় হিমোগ্লোবিন থাকে। হিমোগ্লোবিন লৌহ যুক্ত প্রোটিন এবং রক্তের লাল বর্ণের জন্য দায়ী। হিমোগ্লোবিন লোহিত রক্ত কণিকাকে ফুসফুস থেকে সমস্ত শরীরে অক্সিজেন পৌঁছে দিতে এবং শরীরের অনান্য অংশ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড ফুসফুসে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে যাতে ফুসফুস কার্বন ডাই -অক্সাইড ত্যাগ করতে পারে।
আয়রণের বা লৌহের অভাবজনিত অ্যানিমিয়াই বেশি হয়। অস্থিমজ্জাতে লোহিত রক্ত কণিকা তৈরী করার জন্য লৌহ দরকার। পর্যাপ্ত পরিমাণ লৌহ না থাকলে শরীর প্রয়োজনীয় লোহিত রক্ত কণিকা এবং হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে পারে না।
গর্ভবতী অবস্থায় যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন না খাওয়া হয়, তবে এই সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ, আলসার, ক্যান্সার এবং অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ নিয়মিত খেলে সমস্যা হতে পারে।
লোহিত রক্ত কণিকা তৈরী করার জন্য লৌহের পাশাপাশি ফলিক এসিড এবং ভিটামিন বি-১২ দরকার। যদি দৈনিক খাবারের মাধ্যমে সঠিক পরিমাণ ভিটামিন গ্রহণ না৷ করা হয়,লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদন কমে যায়।
কিছু মরণব্যাধি যেমন ক্যান্সার, HIV/AIDS, বাতজ্বর, কিডনির সমস্যা ইত্যাদি রোগের জন্য লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন কমে যায়।
যখন শরীরের লোহিত রক্ত কণিকা তৈরীর হারের থেকে ভাঙ্গার হার বেশি হয়,তাকে হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া বলে। কিছু কিছু রোগের জন্য লোহিত রক্ত কণিকা অতি দ্রুত ভেঙ্গে যায়। এছাড়া হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া বংশগত হতে পারে।
খাদ্যাভাস ঠিক করলে অ্যানিমিয়া অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায়। নিম্নোক্ত খাবারগুলো অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
মাংশ, ডাল, শিম, সবুজ শাকসবজি, খাদ্যশস্য, ড্রাই ফ্রুটস।
ফল, শিম,পাস্তা, বাদাম জাতীয় খাবার।
দুধ, দুগ্ধজাত খাবার, মাছ, মাংস, সয়াবিন ইত্যাদি।
টকজাতীয় বিভিন্ন ফল, ফলের রস, তরমুজ, স্ট্রবেরি ইত্যাদি।
অ্যানিমিয়া প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্ত হলে সহজেই নিরাময়যোগ্য। তাই অ্যানিমিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সঠিক খাবার খেলে এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে অ্যানিমিয়ার ভয়কে সহজে জয় করা যায়।
আরও পড়ুনঃ রক্তদান -রক্তদানের আগে যে বিষয়গুলো অবশ্যই জানতে হবে
মন্তব্য লিখুন