বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতি এখন ব্যপক প্রভাবিত হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এর উন্নয়নের ফলে। এটির প্রভাব ব্যাপক ভাবে পরিবর্তন করে দিয়েছে বিশ্ব অর্থনীতিকে। মানুষের এমন কোনো কর্মক্ষেত্র নেই যেখানে প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগেনি। বর্তমানে অফিস অটোমেশন ও ইন্টারনেট সংযোগের সহজলভ্যতা আর দ্রুততার কারণে প্রতিদিনই হচ্ছে কোটি কোটি বাণিজ্যিক লেনদেন। শেয়ার করা হয় কোটি কোটি ম্যাসেজ ও ই-মেইল। বর্তমানে ইন্টারনেট হচ্চে ডিজিটাল অর্থনীতির ক্রমোন্নতির চালক। শুধু তাই নয় ডিজিটাল কর্মসংস্থান তৈরির নিয়মকও বটে।
ডিজিটাল ও এনালগ উভয় কর্মসংস্থানের উপর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রভাব নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং কর্মক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয়তা আনায়নে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। এটির ব্যবহার নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরিতে অগ্রণি ভূমিকা পালন করছে। অর্থাৎ আইসিটির ধারণা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে প্রচুর সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। প্রচলিত নিয়মে একটি দেশের একজন মানুষ কেবলমাত্র সেই দেশের প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করতে পারে। কিন্তু আইসিটি সেই সীমানাকে ভেঙে দিয়েছে। আইসিটি ব্যবহারের ফলেই কর্মসংস্থানের জন্য আমাদের আর নিজ দেশের সীমানার মধ্যে পড়ে থাকতে হচ্ছে না। যে কেউ বিশ্বের যে কোন প্রান্তে চাকরির জন্য আবেদন করতে পারছে তথ্য ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে। শুধু প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকলেই হলো।
আরো পড়ুনঃ ডিজিটাল প্রযুক্তি আলোয় আলোকিত বাংলাদেশ
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সফল ব্যবহার করে অনলাইন অর্ডারের মাধ্যমে মধ্যস্বত্বভোগীদের বাদ পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় করা এখন অতি সহজ। ফলে পণ্য উৎপাদন ও সরবারহকে নিয়ন্ত্রনে এনে ব্যবসায়ে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে সম্প্রসারণ করতে পারছে । আমাদের দেশের বৃহৎ এ জনগোষ্ঠীর আয়কে বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এর মত কাজ। জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্যে করতে পারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সফল ব্যবহার । অর্থনৈতিক উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কিছু ক্ষেত্র নিম্নে বর্ণনা করা হলো
ফ্রিল্যান্সিং
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্বব্যাপি কর্মসংস্থানের বাজার হয়েছে উন্মুক্ত। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই যে কোন দেশের লোকজন বিশ্বের যে কোন দেশের কাজকর্ম করতে পারছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীব্যাপি এ ধরনের কাজ করে অর্থ উপার্জন করার প্রক্রিয়াই হল ফ্রিল্যান্সিং। ওয়েবসাইট ডিজাইন, রক্ষণাবেক্ষণ, মাসিক বেতন-ভাতার বিল প্রস্তুতকরণ, ওয়েবসাইটে তথ্য যোগ করা, সফ্টওয়্যার তৈরি, বিভিন্ন কাজের জন্য ডিজাইন তৈরি, লোগো ডিজাইন, আর্টিকেল লেখা, অনুবাদ, ডাটা এন্ট্রি, এসইও, ওয়ার্ডপ্রেম, জুমলা সিএমস, ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট, ভিডিও এডিটিং, গেইমস ডেভলপমেন্ট ইত্যাদি কাজ ফিল্যান্সিং এর মাধ্যমে করা যায়। ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে এখন অনেকেই ঘরে বসে তার মেধা দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নিজে অর্থ উপার্জন করছে। ফলে অন্যদের জন্য কর্মক্ষেত্রও তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। এ সকল কাজ ইন্টারনেটে অনেক সাইটে পাওয়া যায়। এর মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি হলো আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার ডট কম, ফাইবার, ৯৯ডিজাইন, জুমলার্ট ডট কম, ইত্যাদি।
আরও পড়ুনঃ ডিজিটাল বাংলাদেশ এর অর্জন ও উন্নয়ন কার্যক্রম
ই-কমার্স
ই-কমার্স এর পূর্ণ অর্থ হচ্ছে ইলেকট্রনিক কমার্স। ইন্টারনেট প্রযুক্তিতে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পণ্য, সেবা ও তথ্য ক্রয়-বিক্রয়, হস্তান্তর বা বিনিময় কার্যকেই বলা হয় ই-কমার্স । ই-কমার্স একটি বাণিজ্য ক্ষেত্র যেখানে কোন ইলেকট্রনিক সিস্টেমের মাধ্যমে পণ্য বা সেবার লেনদেন সম্পূর্ণ হয়ে থাকে। আধুনিক ই-কমার্স সাধারণত ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব এর মাধ্যমে বাণিজ্যিক কাজ পরিচালনা করে। এছাড়াও এফ কমার্স, মোবাইল কমার্স, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার ও অন্যান্য আরো কিছু মাধ্যম ব্যবহৃত হয়। ই-কমার্সের সুবিধাসমূহ হলো-
১. ব্যবসার মান বিশেষভাবে উন্নয়ন করা যায়।
২. ই-কমার্স কোন প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় এবং আর্ন্তজাতিক বাজারে প্রবেশ করতে সাহায্য করে।
৩. ই-কমার্সের তথ্য প্রক্রিয়াকরণের বিভিন্ন খরচাদি যেমন- তালিকা তৈরী, বিতরণ, সংরক্ষণ এবং বাজারজাতকরণ ইত্যাদি কার্যক্রমের খরচ ব্যাপকভাবে কমায়।
৪. ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সহজে সুসম্পর্ক তৈরী করে।
৫. ই-কমার্স সময় বাঁচায় এবং অতি দ্রুত ভোক্তার কাছে পণ্য পৌঁছায়।
৬. যোগাযোগ খরচ কমায়।
৭. পণ্য ও সেবার মান উন্নয়ন করা সহজ হয়।
সারা বিশ্বে অনলাইন লেনদেন বাড়ার কারণে ই-কমার্সের গতি ও আকার বড় হচ্ছে। বাংলাদেশেও ই-কমার্সের প্রভাব ব্যপকভাবে পড়ছে। বর্তমানে বই থেকে শুরু করে জামা, কাপড়, খাবার, সৌখিন সামগ্রী ইত্যাদি অনলাইনে বেচাকেনা হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে এক সময় হয়তো পৃথিবীর সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য ই-কমার্সের মাধ্যমেই পরিচালিত হবে। তথ্য প্রযুক্তি ছাড়া অর্থনৈতিক কর্মকান্ড প্রায় অচল, বিশেষত উন্নত বিশ্বের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড অসম্ভব। তাই একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়েনর জন্য তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তির যথোপযুক্ত ও সর্বত্তম ব্যবহার একান্ত প্রয়োজন।
তথ্যসূত্রঃ গুগল ও ইমেইজ.গুগল