আমার নিজের দেখা বলিউড ও হলিউডের জনপ্রিয় ৫টি শিক্ষণীয় মুভি, কাহিনী সংক্ষেপ এবং মুভির শিক্ষা নিয়ে আজ চলে আসলাম আপনাদের মাঝে আলোচনা করতে।
অবসর সময়ে আমরা কে না মুভি দেখতে পছন্দ করি? লম্বা সময় হাতে থাকলে হয়তো ওয়েব সিরিজ দেখতেও বসে যাই আমরা। সপ্তাহের শেষে ব্যস্ত প্রত্যেকটি মানুষই চায় একটু দেরিতে ঘুমাতে যেতে, কারণ পরের দিন তো ছুটি! দেরিতে উঠলেও সমস্যা নেই।
ঘুমানোর আগে ভালো একটা মুভি দেখে যদি ঘুমাতে যান, গবেষণা বলে, আপনার মনে সেই মুভির শিক্ষা দাগ কেটে যায়। পরবর্তী দিনগুলোকে সেই মুভির শিক্ষা যথেষ্ট প্রভাবিত করে। চলুন তাহলে আলোচনা শুরু করা যাক বলিউড ও হলিউডের জনপ্রিয় ৫টি শিক্ষণীয় মুভি নিয়ে-
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
মুভি লাভার, অথচ এই মুভি দেখেনি, এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। যারা দেখেননি এখনো, আপনার পরবর্তী ছুটির আগের রাতে দেখে ফেলতে পারেন অসাধারণ এই মুভিটি। এটি ১৯৯৪ সালে নির্মিত একটি মুভি।
হলিউড ও বলিউডের জনপ্রিয় ৫টি শিক্ষণীয় মুভি এর মধ্যে অন্যতম এই মুভিটি পরিচালনা করেন ফ্র্যাঙ্ক ড্যারাবন্ট নামক তৎকালীন বিখ্যাত মার্কিন পরিচালক। অভিনয়ে ছিলেন টিম রবিন্স, মরগান ফ্রিম্যান, বব গান্টন, উইলিয়াম সেডলার, ক্ল্যান্সি ব্রাউন, গিল বেলোস, জেমস হুইটমোর প্রমুখ।
মিলিয়ন ভোটের উপর ভিত্তি করে আইএমডিবি’র ‘‘টপ ২৫০’’’ মুভির মধ্য এটি ১ নম্বরে রয়েছে এবং সর্বকালের সেরা মুভি হিসেবে বিবেচিত। এখনো পর্যন্ত মুভিটি IMDB তে টপ পজিশন ধরে রেখেছে।
জনপ্রিয় এই মুভিটির নির্মাণ ব্যয় ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উপার্জন করে নেয়। ইতিহাসের অন্যতম ব্যবসাসফল মুভি বলা যায় এই মুভিকে।
মুভিটির মূল চরিত্র এন্ডি ডুফরেন্স,একজন ব্যাংকার। মুভিতে দেখা যায়,পরকিয়ায় লিপ্ত তার স্ত্রী আর প্রেমিককে খুনের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হয়।শশাঙ্ক স্টেট পেনিটেনশিয়ারি কারাগারে তার বন্দীজীবনে বন্ধু হয়ে ওঠে সহবন্দী যাবজ্জীবন-দন্ডপ্রাপ্ত এলিস “রেড” রিডিং।
রেড জেলে বিভিন্ন বেআইনি জিনিস জেলের বাসিন্দাদের কাছে পাচার করতো। একবার অ্যান্ডিকে সে একটা রকহ্যামার এবং আরেকবার অভিনেত্রী রিটা হেওয়ার্থের একটা বিরাট পোস্টার এনে দিয়েছিল খুব গোপনীয়তা বজায় রেখে।
জেলের লন্ড্রিতে কাজ করার সময় অ্যান্ডিকে প্রায়ই বগস ও তার দল “সিস্টার”-এর গুন্ডারা নিপীড়ন করতো।জেলরক্ষীদের ক্যাপ্টেন বায়রন হ্যাডলি তার সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট কর দেওয়ার ঝামেলায় পড়েছিল।
সে সময় অ্যান্ডি তা জানতে পেরে নিজের কাজ ফেলে এগিয়ে আসে এবং ট্যাক্স এড়িয়ে সম্পত্তি পেতে তাকে সাহায্য করে। কিছুদিন পর বগস অ্যান্ডিকে পিটিয়ে প্রায় মেরেই ফেলেছিল, তখন হ্যাডলি বগসকে ধরে নিয়ে প্রচুর মারধোর করে এবং অন্য জেলে বদলি করে দেয়।
এদিকে জেলের ওয়ার্ডেন হিসেবে যে থাকে,তাঁর নাম থাকে স্যামুয়েল নর্টন।সে অ্যান্ডির কথাবার্তায় এবং ব্যবহারে চমৎকৃত হয়ে তাকে জেল-লাইব্রেরীতে নিয়োগ দেয়। সেখানে বুড়ো কয়েদী ব্রুকস অনেক বছর হলো দেখভাল করতো।
অ্যান্ডি তাঁকে লাইব্রেরির কাজে সাহায্য করতে থাকে। পাশাপাশি জেলের কর্মচারীরা তাকে দিয়ে তাদের অর্থনৈতিক হিসাব-নিকাশের কাজ করিয়ে নিতে থাকে।
একসময় জেলের প্রায় সবাই, প্রহরী থেকে কয়েদী পর্যন্ত, এমনকী স্বয়ং ওয়ার্ডেনও তার ব্যাংকের লেনদেন অ্যান্ডিকে দিয়ে করাতে শুরু করে তাঁর ব্যাংকার হওয়ার সুবাদে।
এরই মাঝে অ্যান্ডি জেলের ভঙ্গুর লাইব্রেরীটার জন্য অর্থ অনুদান চেয়ে স্টেট গভর্নমেন্টের কাছে চিঠি পাঠাতে থাকে।পঞ্চাশ বছর জেল খাটার পর ১৯৫৪ সালে ব্রুকস প্যারোলে মুক্তি পায়, কিন্তু বাইরের দুনিয়ার সাথে সে তাল মেলাতে পারে না এবং ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহ্ত্যা করে বসে।
অ্যান্ডির লাইব্রেরিতে সরকারি অনুদান হিসেবে আসে আর্থিক সাহায্য, প্রচুর বইপত্র ও গানের রেকর্ড। অ্যান্ডি একদিন উন্মক্ত হয়ে “দ্য ম্যারেজ অফ ফিগারো” গানের খানিকটা অংশ জেলের কেন্দ্রীয় মাইকে বাজিয়ে দেয় এবং রুমের দরজা বন্ধ করে উপভোগ করতে থাকে।
তার পাগলামির এই পরিণতিতে তাঁকে অন্ধকার কুঠুরিতে কারাভোগ করতে হয়। পরে রেডকে সে বলেছিল যে, মুক্তির আশাই তাকে টিকে থাকতে সাহায্য করছে; রেড সেটা অস্বীকার করে।
১৯৬৩ সালে নর্টন জনস্বার্থমূলক কাজে দক্ষ শ্রমিক ব্যবহারের বদলে কয়েদীদের খাটিয়ে মুনাফা কামাতে শুরু করে, পাশাপাশি ঘুষও নেয়। আর অ্যান্ডিকে দিয়ে এসব কালো টাকা মানি লন্ডারিং করে র্যান্ডল স্টিফেনস ছদ্মনামে ব্যাংকে গচ্ছিত রাখে।
১৯৬৫ সালে চুরির অপরাধে বন্দী হয়ে টমি উইলিয়ামস শশাঙ্ক জেলে আসে। অ্যান্ডি ও রেডের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়, অ্যান্ডি তাকে জেনারেল এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট (GED) পরীক্ষা পাস করতে সাহায্য করে।
১৯৬৬ সালে, টমি রেড ও অ্যান্ডিকে বলে যে অন্য এক জেলে এক সহবন্দী তার কাছে স্বীকার করছিল যে কোনো এক ব্যাংকারের স্ত্রীকে সে খুন করেছে। অ্যান্ডি তখন নিশ্চিত হয় যে সেই খুনি আর কেউ নয়,তাঁর স্ত্রীর খুনি কারণ তখনকার সময়ে এরকম কাহিনী অহরহ ঘটতো না।
মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতির আশা ঝলক দিয়ে উঠে। এ তথ্য নিয়ে নর্টনের কাছে যায় এন্ডি কিন্তু নর্টন তার কথা প্রত্যাখ্যান করে।
কথাপ্রসঙ্গে সে মানি লন্ডারিংয়ের উল্লেখ করলে নর্টন তাকে আবার নির্জন কারাবাসে আটকে রাখে এবং পরে হ্যাডলিকে দিয়ে টমিকে খুন করায় ও প্রচার করে যে টমি জেল থেকে পালাতে গিয়ে মারা গিয়েছে।
অ্যান্ডি লন্ডারিং চালিয়ে যেতে রাজি না হলে নর্টন বিভিন্ন হুমকি দিয়ে তাকে বাধ্য করে। দুমাস পর সে ছাড়া পায়, রেডকে বলে যে তার স্বপ্ন মেক্সিকোর উপকূলে ছোট্ট একটা শহরে বসবাস করা।
রেড বুঝতে পারে যে অ্যান্ডির ভাবনা কতো অবাস্তব, তবু সে অ্যান্ডিকে কথা দেয় যে কখনো মুক্তি পেলে অ্যান্ডির কথামতো মাইনের বাক্সটনে এক বিশেষ স্থানে গিয়ে তার রাখা একটি জিনিস খুঁজে বের করবে। সে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় যখন জানতে পারে যে, আরেক কয়েদীর কাছ থেকে অ্যান্ডি 6 ফুট দড়ি চেয়ে নিয়েছে।
পরদিন বন্দীদের রুটিন নামডাকার সময় রক্ষীরা দেখে যে অ্যান্ডির সেল খালি। এতে নর্টন রেগে গিয়ে গালাগালি করে এবং একসময় দেয়ালে সাঁটা এক অভিনেত্রীর পোস্টারে পাথর ছুঁড়ে মারে।
পাথরটি পোস্টার ফুটো করে তার আড়ালের একটি সুড়ঙ্গে গিয়ে পড়ে, যে সুড়ঙ্গ অ্যান্ডি খুঁড়েছিল বিগত ১৯ বছর ধরে সামান্য রকহ্যামার দিয়ে।
আগের রাতে সে সুড়ঙ্গ ও সুয়েজের পাইপ বেয়ে পালিয়ে গেছে, সাথে দড়িতে বেঁধে নিয়েছিল নর্টনের স্যুট, শু, এবং মানি লন্ডারিংয়ের প্রমাণ “লেজার বই”।
জেলরক্ষীরা যখন এন্ডিকে খুঁজছে, তখন সে স্টিফেনস ছদ্মনামে বিভিন্ন ব্যাংকে গিয়ে লন্ডারিং-করা টাকা তুলে নিচ্ছে এবং স্থানীয় পত্রিকায় শশাঙ্কের দুর্নীতির লেজারবই ও প্রমাণ ডাকে পাঠিয়ে দিয়েছে।
স্টেট পুলিশ এসে হ্যাডলিকে কাস্টডিতে নেয়। কিন্তু, তার অফিসে পুলিশ আসার আগেই নর্টন আত্মহত্যা করে।
চল্লিশ বছর জেল খেটে রেড প্যারোলে মুক্তি পায়। জেলের বাইরের জীবনে অভ্যস্ত হবার চেষ্টা করতে থাকে, কিন্তু আশঙ্কা হয় যে সে টিকতে পারবে না।
তখন অ্যান্ডিকে দেয়া কথা মনে পড়ে, রেড বাক্সটনে যায় এবং সেখানে পায় অ্যান্ডির চিঠি, ছোট্ট সেই শহরে যাবার আমন্ত্রণ এবং সাথে টিকিটের টাকা।
রেড প্যারোল ভেঙে চলে যায় টেক্সাসের ফোর্ট হ্যানকক দিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে মেক্সিকোতে।স্বীকার করে, এতোদিনে সে আশা ফিরে পেয়েছে।
অ্যান্ডিকে সে পায় জিহুয়াতানেজো নামক সেই ছোট্ট শহরের এক সমুদ্রসৈকতে এবং দুই বন্ধু শেষপর্যন্ত একত্র হয়।মুভিটির শেষ পরিণতি,শিক্ষা আপনার মনকে আন্দোলিত করতে বাধ্য।
মুভিটি হিন্দি ভাষায় নির্মিত কমেডিধর্মী একটি চলচ্চিত্র। বলিউডের জনপ্রিয় এই মুভিটি পরিচালনা করেছেন নিতেশ তেওয়ারি ও সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা। চলচ্চিত্রটি নির্মিত হচ্ছে নাদিয়াদওয়ালা গ্র্যান্ডসন এন্টারটেইন্টমেন্টের ব্যানারে।
অভিনয় করেছিলেন বলিউডের বিখ্যাত সব নায়ক-নায়িকারা। আন্নি হিসেবে অভিনয় করেন প্রয়াত অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত,মায়া হিসেবে শ্রদ্ধা কাপুর।
এছাড়া সেক্সা,ডেরিক, এসিড,মাম্মি মুভির অন্যতম আকর্ষণীয় চরিত্র। ছবিটি সর্বমোট বক্সঅফিসে ৮৩.৫৯ কোটি রুপি অর্জন করে এবং সুপার-হিট বলে গণ্য হয়। ছবিটির প্রথমদিনের অর্জন ছিল ৭.৩২ কোটি রুপি।
আন্নি নামের এক সদ্য ভর্তি হওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্রের হোস্টেল লাইফের “লুজার” ট্যাগ পাওয়ার গল্প জানতে হলে মনযোগ দিয়ে দেখতে হবে মুভিটি।
মুভির শুরুতে দেখা যায়, চাকুরিজীবী আন্নির ছেলে অল ইন্ডিয়া এন্ট্রাস পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল করে ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ার সুযোগ পায়না।
ফলাফল, সুইসাইড করে বসে। তখন তাঁকে হাসপাতালে দেখতে যায় আন্নি ও তার মা মায়া।তখন আন্নি তার ছেলেকে অপারেশনে নেওয়ার আগে তার হোস্টেল জীবনের সব গল্প বলতে থাকে।
হোস্টেল জীবনের একজন একজন করে সিনিয়র, ক্লাসমেটকে হাসপাতালে উপস্থিত করতে থাকে এবং তাঁর ছেলেকে বলা গল্পের সাথে সত্যিকারের চরিত্রগুলোর পরিচয় করিয়ে দিতে থাকে।
ঘটনা বর্ণার শুরু মূলত এখান থেকে। ইঞ্জিনিয়ারিং এ ছাত্র থাকার সময় হোস্টেলে সিট বুকিং এর সময় দুর্ভাগ্যক্রমে খারাপ ছাত্রদের হোস্টেলে সিট পায় আন্নি।
প্রথমদিকে হোস্টেলের খাবার থেকে শুরু করে হাল চাল, রাত জেগে সিনিয়রদের Ragging সব কিছু তার জীবনকে অতীষ্ট করে তুলে।
সে যেকোনো মূল্যে পাশের ভালো হোস্টেলে শিফট হতে চায়।তাঁর এই ইচ্ছার আগুনে Raggie নামের একজন সিনিয়র ঘি ঢালে।
সে যখন জানতে পারে আন্নি ভালো ক্রিকেট প্লেয়ার, তখন সে সিদ্ধান্ত নেয় আন্নিকে তাদের হলে নিয়ে আসবে। হোস্টেল ভিত্তিক যে চ্যাম্পিয়নশিপ হয়, সেখানে পারফর্ম করাবে।
আন্নিকে নিয়ে সেজন্য ভালো হোস্টেলটি ঘুরিয়ে দেখায় এবং বোঝাতে চায় যে লুজারদের হোস্টেলের থেকে তাদের হোস্টেলের মান অনেক ভালো।
এর মধ্যে ক্যাম্পাসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় মেয়ে মায়ার সাথে আন্নির প্রেমের সম্পর্ক হয়ে যায়। আন্নি হোস্টেলে চেঞ্জের আগের দিন রাতে মায়াকে খুলে বলে যে এই কয় মাসে তাঁর হোস্টেলের সিনিয়রদের সাথে আত্মার সম্পর্ক হয়ে গিয়েছে।
সুতরাং সে ছাড়তে পারবেনা এই হোস্টেল।হোস্টেল ছাড়ার প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় র্যাগি নামের সেই সিনিয়র খুব ক্ষিপ্ত হয়।এর মাঝে আন্নির পরিচয় হয় লুজারদের হোস্টেলের লিডার ডেরিকের সাথে যাকে কিনা “সেক্সা” নামের আন্নির সবচেয়ে কাছের সিনিয়র “হাম সাবকা বাপ,ডেরিক” বলে পরিচয় করিয়ে দেয়।
এরপর ডেরিকের থেকেই আন্নি প্রথম জানতে পারে তাদের হোস্টেলের সবাইকে লুজার ডাকার কারণ প্রতিবছর মাসব্যপী চলা স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিবার লজ্জাজনকভকবে প্রত্যেকটি ক্যাটাগরিতে পরাজয়।
আন্নি নতুন উদ্দ্যোমে সবাইকে চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য রাজি করে।প্রচুর পরিশ্রম করতে থাকে সবাই।এর মধ্যে তাঁরা একদম ফাইনাল রাউন্ডে উপনীত হয়।
ফাইনাল রাউন্ডে মোট তিনটি গেম ছিল এবং লুজার টিম পয়েন্টে পিছিয়ে থাকায় তাদের তিনটি গেম ই জিততে হতো। কিন্তু, দুর্ভাগ্যক্রমে আন্নির দায়িত্বে থাকা বাস্কেটবল রাউন্ডে লুজার টিম একটুর জন্য একদম শেষ মোমেন্টে হেরে যায়।তাঁদের সব পরিশ্রম বৃথা যায়।
কিন্তু, জয়ী দলের ক্যাপ্টেন র্যাগি এগিয়ে এসে লুজার টিমকে অভিনন্দন জানায়।লুজার টিম যে এত বছর পরে এত পরিশ্রমের পর ভালো ফলাফল করেছে, এটাই অনেক।
হয়তো তাঁরা লুজার, কিন্তু তাঁরা তাদের সেরাটা দিয়েছে।ফলাফল দ্বারা কখনো সাফল্য নির্ধারিত হতে পারেনা,বরং কতটুকু চেষ্টা করেছে তা দ্বারাই সাফল্য নির্ধারিত হয়- এটাই জনপ্রিয় এই মুভির মূল মন্ত্র।
এটি ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বলিউডের অন্যতম এক জনপ্রিয় ব্যবসাসফল মুভি । মুভিটির পরিচালকের নাম গৌরি শিন্দে। মুভির কাহিনী পরিচালক নিজেই লিখেছিলেন।
মুভিটির মূল চরিত্র শশী যে একজন অর্ধশিক্ষিতা গৃহিণী। তাঁর ছেলে মেয়েরা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করে এবং শশীর ইংরেজিতে ভালো দখল না থাকায় মায়ের সাথে তাদের যোগাযোগ ঠিক মত হয়ে উঠতো না।
শশীর বোন যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। তার মেয়ের বিয়েতে শশীর পরিবার দাওয়াত পায়। শশী আগেই যুক্তরাষ্ট্র চলে যায় তবে যুক্তরাষ্ট্র যেয়ে সে সেই দেশের ভাষা জানেনা বলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
এয়ারপোর্ট থেকে USA তে ল্যান্ড করা পর্যন্ত সুপারস্টার অমিতাভ বচ্চনকে শশীর যাত্রা সঙ্গী হিসেবে দেখা যায়। ঐ দেশের মানুষের সঙ্গে কথা বলার জন্য চার সপ্তাহের একটি ইংরেজি প্রশিক্ষণ ক্লাসে ঐ দেশেই যোগ দেয় শশী।
বোনের মেয়ে ছাড়া তার ইংরেজি ক্লাসের ব্যপারটি আর কেউ জানে না।গোপনে নিজের ইংরেজি শিক্ষার ক্লাস চালিয়ে যায় শশী এবং নিজের ইংরেজি দক্ষতা গড়ে তুলতে প্রাণপণ চেষ্টা করে।
সেখানে ফ্রান্সের একজন তরুণের সাথে শশীর ভাব হয়।এছাড়া বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন মানুষের সাথে শশীর পরিচয় হয়।সবাই ভারতীয় নারী হিসেবে তার বেশ ভূষা থেকে শুরু করে আচরণ, সব কিছুর ভূয়সী প্রশংসা করে।
মনুর বিয়ের অনুষ্ঠানে পরে শশীর স্বামী আর ছেলেমেয়েরা এসে যোগ দেয় এবং শশী ততদিনে ইংরেজি ভাষা হাল্কাপাতলা ভাবে রপ্ত করে ফেলেছে।
এরপর দেখা যায় বিয়ের অনুষ্ঠানে শশী কিছু বলতে চাইলেও তার স্বামী ভাবে তার স্ত্রী ইংরেজি জানে না জন্য সবার সামনে কথা বলতে যেয়ে কেলেঙ্কারি করে ফেলতে পারে তাই সে তার স্ত্রীকে কথা বলতে বারণ করে।
কিন্তু ততদিনে শশী তাঁর ইংরেজির দক্ষতা দেখানোর সুযোগ পায়। কোর্স থেকে শেখা ইংরেজি দে তাঁর মনের ভাব প্রকাশ করে সবাইকে দেখিয়ে দেয় দক্ষিণ এশিয়ার গৃহিণী নারীরাও পিছিয়ে নেই,সুযোগ দিলে তাঁরাও সব করতে পারে।
মুভিটি আপনার মধ্যে অদম্য ইচ্ছাশক্তির খোরাক যোগান দিতে বাধ্য।
বলিউড ও হলিউডের জনপ্রিয় ৫টি শিক্ষণীয় মুভি এর মধ্যে এটি অন্যতম একটি। ব্যক্তিগতভাবে অনেক পছন্দের মুভি এটা। মুভিটি ২০০৭ সালে বলিউডে মুক্তি পায়। ৬ টা আলাদা আলাদা গল্প নিয়ে মুভি শুরু হলেও পরিচাল সুনিপুণভাবে তার নির্মাণশৈলীর মাধ্যমে গল্পগুলোকে একই সুতায় গেঁথে ফেলতে পেরেছেন এবং দর্শক হৃদয় ছুঁয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন।
বৈচিত্র্য শহুরে জীবন নিয়েই মুভির প্লট রচিত।শারমান যোশির ফ্লাট সংশ্লিষ্ট যে কাহিনী মুভিতে রয়েছে, সেটা ফরাসি একটি সিনেমা হতে নকল করা হয়েছে।
লাইফ ইন অ্যা মেট্রো না বলে ঢাকা মেট্রো বললেও ভুল হবে না খুব একটা। যে শহরে আসলে কেউ সবকিছু হারিয়ে আশ্রয় খুঁজে যায়, আবার কেউ সব পেয়েও নিজেকে হারায়।
এই শহরে কেন থাকে সেটার উত্তর যেমন সহজেই দিতে পারেনা আবার কেন ছেড়ে যায়না সেটার উত্তর ও মেলেনা। বৈচিত্রময় শহর আর মানুষের জীবন মিলিয়েই প্রতিটি মেট্রো শহর। সেটা দুনিয়ার যে কোন শহর হোক না কেন।
অনুরাগ বসুর “লাইফ ইন অ্যা মেট্রো” এর বাইরে কিছু নয়। আর মুভিটা ভালো লাগার কারণ এর গল্প (যদিও মৌলিক গল্প না এটা) আর আমাদের দুষ্টু ছেলে জেমস ভাইয়ের গানে প্রীতম দাদার মিউজিক।
মুভিতে আমরা এক সুখি দম্পত্তিকে দেখতে পাই যারা আসলে মুখোশ পড়া সুখী,প্রকৃত সুখী নয়। ৩/৪ বছরের ছোট একটা মেয়ে আছে তাদের। তারা সুখ খুঁজে বেড়ায় শহরের গলিতে গলিতে।
একটু চোখ খুলে তাকালেই এমন উদাহরণ আপনি অনেক দেখতে পাবেন।মুভিতে কঙ্গোনা রনৌতকে দেখা যায় বসের বাহুডোরে নিরাপদ জীবন খুঁজতে।
আর কেউ কেউ সারাজীবন কনফিউজড থেকে যায়, কারণ আসলে তারা জানেই না যে কি খুঁজছে তাই একজনের পর আরেকজন আসে আর যায় কিন্তু পড়ন্ত বিকেলে চোখে চোখ রেখে আর হারিয়ে যাওয়া হয় না জীবনের ঠিকানায়।
আমাদের আসেপাশে এই সংখ্যাটা দিন দিন বেড়েই চলছে ভয়াবহভাবে। আবার উল্টোটাও আছে। অনেক বছর আগে ছেড়ে গিয়েও আবার ফিরে আসা পড়ন্ত বিকেলে ভালোবাসার কাছে জীবনের শেষ ছবিটায় শেষ তুলির আঁচড় দিতে অথচ একদিন ছেড়ে চলে গিয়েছিলো।
আর কিছু কিছু মানুষ আছে যারা শুধু ভালোবেসেই যাবে কিন্তু বলতে পারবেনা আমি তোমাকে “ভালোবাসি” তারপর … “আজকে রাতে তুমি অন্যের হবে” গান শুনতে শুনতে কেঁদে বুক ভাসাবে।
মুভিটা দেখার পর জেমস ভাইয়ের গানের সাথে আমার আরেকটা গানের কথা মনে আসছিলো সেটা হলো –
“এই শহরের স্বপ্নগুলো লুকিয়ে থাকে আধারে
তবু ও আমি গাইছি এই শহরের গান
আমার যত কথা,যত স্বপ্ন দেখা
আমার হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো
এলোমেলো পড়ে থাকে
আমার মনেরই কোণে
ইট পাথরের এই শহরের
ভাঙ্গা বাড়ির নানা রঙের মানুষগুলো
ভাঙ্গা পথে খুজে বেড়ায়
একটুখানি অলস সময়
এই শহরের বাকে বাকে স্বপ্ন বেচার বিজ্ঞাপন…”
গানটা হয়ত সুমন ভাই নিজের ভাবনা থেকে গেয়েছেন। তবে আমার কাছে এই গানটা এই মেট্রো জীবনের পুরো ছবিটাই বলে দেয় মনে হয়েছে।
গল্প শেষ এবার আসি শেষ কথায় –
মুভির সবকিছু সুন্দর, গান ডায়লগ, অভিনয় সব, আর আলাদা করে বলতে গেলে “ইরফান খান” মানুষটার কাছে আরো অনেক কিছু পাওয়ার ছিলো। উনার অভিনয় একথায় দুর্দান্ত ছিলো।
উনার অভিনয় মিস করবো। তবে মুভির শেষভাগে প্রিয়তমাকে পেতে ঘোড়া নিয়ে বর সেজে ষ্টেশনে আসাটা একটু লেইম ছিলো, মানে টিপিক্যাল হিন্দি রোম্যান্স ঢুকে গেছে।
যাইহোক,এই মুভিটা একেবারে মৌলিক না আগেই বলেছি। আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে তবে ফ্রান্সের মুভি The Apartment (1960) থেকে কনসেপ্ট নেয়া এবং কিছু কিছু ডায়লগ একেবারে সেইমভাবে নেয়া।
তবে একটা কথা, রেডিমেড জীবন বা সুখ খুব বেশিদিন টেকেনা, এটা আসলে অনেক পথ পেরিয়ে অর্জন করে নিতে হয়। আর কাউকে ভালো রাখতে চাইলে আগে নিজেকে ভালো রাখতে হবে।
এটাই মুভির মূল কথা।আশা করি বোরিং হবেন না মনযোগ দিয়ে যদি দেখে ফেলেন মুভিটা।
বলিউড ও হলিউডের জনপ্রিয় ৫টি শিক্ষণীয় মুভি এর তালিকায় এটি আরও আগে আসা উচিত ছিল। কারণ মুভিটি অস্কারজয়ী মুভি। বলিউডের বিখ্যাত অভিনেতা ইরফান খান মুভিটিতে অভিনয় করেছিলেন।
ছবিটির মূল কাহিনীতে দেখা যায়, ইরফার খান যখন ছোট ছিল, তার বাবা জু বিজনেস করতো। তাদের পারিবারিক জু তে অনেক ধরণের পশু পাখি ছিল। এই জু তে একটি বাঘ ছিল এবং সেই বাঘকে নিয়েই মুভির কাহিনী আগাতে থাকে।
Life of pi মুভিটির শুরুটা হয় মূলত মনোলগ বা স্টোরি টেলিং লগ দিয়ে। মুভির একটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র, রিচার্ড পার্কার, আদতে একটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
তার সাথে ছোট্ট কালের ইরফানের প্রথম পরিচয় হয় তার বাবার চিড়িয়াখানাতেই। পাই অর্থ্যাৎ ছোট্ট ইরফানকে মুভিতে দেখা যায় ছোটবেলা থেকেই প্রচন্ড আস্তিক একজন মানুষ হিসেবে বড় হয়।
সে হিন্দু, ইসলাম এবং ক্রিশ্চানিটি – তিনটা ধর্মেই একসাথে পালন করে। সে পুজো দেয়, সে নামায পড়ে, সে চার্চে যায়। জীবনের প্রখরবোধ তাকে স্রষ্টার উপর অবিচল আস্তা রাখতে শেখায় যা কিনা তার জীবন বাঁচিয়ে দেয়।
সরকারের সাথে একটা ঝামেলা হবার কারনে পাই এর বাবা কানাডাতে পাড়ি জমাতে চায় সপরিবারে। তার আগে বিক্রি করে দেয় বসতবাড়ি, ব্যবসা আর চিড়িয়াখানাটা।
নিজের বলতে থাকে শুধু চিড়িয়াখানার জন্তুগুলো। সে সব সে একে একে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের চিড়িয়াখানাকে বিক্রি করে দেবার চেষ্টা করে।
পাই তার বাবা-মা ও এক বড় ভাইকে নিয়ে পাড়ি জমায় জাপানিজ একটা নৌযানে। সেখানে বিট্রিশ এ্যালায় ফরাসিরা যে কি পরিমান রুক্ষ ও দুর্নিবার অভদ্র, কানাডিয়ান পরিচালক সেটা ফুটিয়ে তোলেন রান্নাঘরের পাচক আর পাই এর বাবার কথপকথনের মাধ্যমে।
ইতিমধ্যে একদিন প্রচন্ড এক ঝড় ওঠে সমুদ্রে বুকে। পাই বিছিন্ন হয়ে পড়ে তার পুরো পরিবারের কাছ থেকে। দুর্ঘনটাক্রমে পাই একটা শিপরেক (লাইফবোটের চেয়ে আকারে বড়, অনেকটা আমাদের দেশের ট্রলারের মতো) উঠে পড়ে।
সংগী হয় একটা জেব্রা, শিপরেকের তাবুর নীচে লুকিয়ে থাকা একটা হিংস্র হায়েনা, একটা হনুমান আর একটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার। মূল সিনেমা বা পাই এর মূল গল্প এখানে থেকেই শুরু হয়।
সেটা শেষ হয় টানা ২২৭ দিন সমুদ্রের বুকে অমানুষিক লড়াই করে টিকে থাকার মধ্য দিয়ে। এই লড়াই ছিলো যেমন ক্ষুধা-তৃষ্ণা আর পানির বিরুদ্ধে তেমনি ছিলো নিজের আর তার সাথে থাকা পশুদের বিরুদ্ধেও।
পাই’র নৌকাটি অত্যন্ত নয়নাভিরাম একটা দ্বীপে এসে ভিড়েছে। দ্বীপের মূল বাসিন্দা লাখ লাখ মিরকাত। [এক প্রকার প্রাণী বিশেষ।
যাই হোক,প্রতিকূল পরিবেশ টিকে থাকা, ধৈর্য্য ধরা, স্রষ্টার প্রতি অবিচল বিশ্বাস সম্পর্কে প্রগাঢ় অনুভূতিবোধ জাগ্রত করতে হলে দেখে ফেলতে হবে অস্কারজয়ী বিখ্যাত এই মুভিটি।
ছবি: ইন্টারনেট হতে সংগৃহীত
তথ্যসূত্র: গুগল, উইকিপিডিয়া
মন্তব্য লিখুন