রূপকল্প ২০২১ এর অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ ডিজিটাল বাংলাদেশ। যার মূল লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে আধুনিক, জ্ঞানভিত্তিক ও মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত করা । অবকাঠামো উন্নয়ন ও কানেক্টিভিটি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, ই-গভর্মেন্ট এবং আইসিটি শিল্পের উন্নয়ন এই চারটি স্তম্ভকে ঘিরে ডিজিটাল বাংলাদেশ এর বাস্তবায়ন হচ্ছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর দিকনির্দেশনা এবং তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এর পরমর্শে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক এ বিভাগের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে নেতৃত্ব দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে চলেছেন।
এ উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিনত হবে। স্বনির্ভর ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে সরকার নানাবিধ প্রকল্প ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু প্রকল্প ও কর্মসূচি সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। এসব অগ্রগতি ও সাফল্যের কথা নিচে তুলে ধরা হলো-
ডিজিটাল বাংলাদেশ এর অর্জন ও উন্নয়ন কার্যক্রম
- ইনফো-সরকার (ফেজ-৩) প্রকল্পের আওতায় ২৬০০ ইউনিয়নের মধ্যে ২০০০টি ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক Installation সম্পন্ন এবং ১১০০টি ইউনিয়নে উচ্চ গতির ইন্টারনেট Integation
সম্পন্ন করা হয়েছে।
- ডেভলপমেন্ট অব ন্যশনাল ইনফ্রা নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভর্মেন্ট এর মাধ্যমে দেশব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানসহ তথ্য ও প্রযুক্তি সেবা নিশ্চিত করনের লক্ষ্যে সকল সরকারি অফিসসমূকে একই
নেটওয়ার্ক এর আওতায় নিয়ে হয়েছে।
- বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে সারা দেশে ২৮টি হাট-টেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ভিলেইজ, আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউাশেন সেন্টার স্থাপনের কাজ চলছে। এর মধ্যে ৩টি হাই-টেক পার্ক কার্যক্রম শুরু করেছে। এছাড়াও বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ১৩টি আই.টি প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারি সফটওয়্যার পার্ক হিসেবে ঘোষণা করেছে।
- দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে আইসিটি শিল্পের সুষম বিকাশ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এর মাধ্যমে যশোরে “শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক” স্থাপন করা হয়েছে।
বর্তমানে সেখানে ৪৮টি আইটি কোম্পানি কাজ করছে।
- ঢাকার অদূরে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরে ৩৫৫ একর জমির উপর “বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি” স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানি বিনিয়োগ করেছে।
- ঢাকার কাওরান বাজারস্থ ১২ তলা বিশিষ্ঠ জনতা টাওয়ারে কানেক্টিং স্টার্টআপ ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। জনতা টাওয়ার সফটওয্যার টেকনোলজি পার্কে ১৮টি আটি প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
- নাটোর জেলায় পুরাতন জেলখানার “শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার” এর স্থাপন কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
- লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভলপমেন্ট প্রকল্প এর আওতায় সারা দেশে ৩৯০০০ প্লাস তরুণ-তরুণীকে বিভিন্ন মেয়াদে আইটি প্রশিক্ষন প্রদান করা হয়েছে।
- মোবাইল গেইম ও এপ্লিকেশন এর দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প এর আওতায় ৫টি বিষয়ে ১৬,১০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ৩৮টি মোবাইল টেস্টিং অ্যাপস ও গেইম টেস্টিং ল্যাবের মধ্যে ২৫টি ল্যাব প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট ১৩টি ল্যাবের কাজ চলমান রয়েছে।
- বঙ্গবন্ধু কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপন করা হয়েছে। এটা জাতির টেলিযোগাযোগের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘোষণা।
- সারা দেশে ৩৫৪৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন; ১০১৩টি বিদ্যুত বিহীন ইউনিয়নে সৌর-বিদ্যুত সহকারে Union Information Service Centre (পরবর্তী কালে UDC) স্থাপন; ১৪৭টি UNO কার্যালয়ে UISC সদৃশ্য ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন; জাতীয় ডেটা সেন্টার (Tier-3) (Certified) স্থাপন; জাতীয় ডেটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং যশোরে ডিজাস্টার রিকভারী সেন্টার স্থাপন; দেশে ডিজিটাল স্বাক্ষর প্রবর্তন;
- ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেবা কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা কল্পে দেশের সকল জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে ৩১টি টার্মিনাল সহকারে নেটওয়ার্ক স্থাপন; ৭টি বিভাগীয় কার্যালয়ে অনুরূপ নেটওয়ার্ক স্থাপন; ই-গভর্নেন্স বাস্তবায়নে ১৮৪৩৪টি সরকারি অফিসকে একীভূত পাবলিক নেটওয়ার্কের আওতায় আনায়ন;
- সরকারি পর্যায়ে ২৫,০০০টি ট্যাব বিতরণ, ৪৮৭টি ইউএনও কার্যালয়ে সৌর বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদান, বাংলাদেশ সচিবালয়ে ও আইসিটি টাওয়ারে WiFi জোন স্থাপন;
- বর্তমান সরকারের “ডিজিটাল বাংলাদেশ” গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে কৃষি তথ্য সার্ভিস এর মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্র আইসিটিভিত্তিক তথ্যসেবা কাযক্রম পরিচালনার জন্য ২৫৪ টি এগ্রিকালচারাল ইনফরমেশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
- রোগীদের যাতায়াতের কষ্ট লাঘবসহ আর্থিক সাশ্রয় হয় এবং উন্নত মানের চিকিৎসা সেবা গ্রহণের জন্য ২৫ টি টেলিমেডিসিন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
- ইনফো-সরকার প্রকল্প থেকে স্থাপিত ইন্ট্রানেট কানেক্টিভিটির উপর ভিত্তি করে ৮৮৩টি ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম এর মাধ্যমে এ পর্যন্ত মোট ২৯৭টি মাল্টি ভিডিও কনফারেন্সিং সম্পন্ন করা হয়েছে।
- নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনার জন্য বিসিসি’তে Network Operation Centre স্থাপন করা হয়েছে । জাতীয় ই-গভর্নমেন্ট নেটওয়ার্ক কেন্দ্রিয় মনিটরিং সিস্টেমের আওতায় ১৮১৩০টি দপ্তরের মধ্যে ১৬৮৩৩টি সরকারি অফিস এবং ৮৯৩টি ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম বিসিসি’র Network Operation Centre মনিটরিং এর আওতায় আনা হয়েছে ।
- বিসিসিতে ১টি Specialized Network Lab, ১টি Special Effect Lab এবং ১টি Titanium Lab স্থাপন করা হয়েছে। স্থাপিত এ সকল ল্যাবের মাধ্যমে নেটওয়ার্কিং, মোবাইল এ্যাপস, মোবাইল গেইম এবং সাইবার সিকিউরিটি, বিগডাটা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে ।
- করোনা ভাইরাস সনাক্ত করনে করোন ট্রেচার বিডি (Corona Tracer BD Apps) অ্যাপস অথবা এক দেশ অ্যাপস (EK-Desh Apps), অনলাই ভিসা চেকিং অ্যাপস, ই-লার্নিং এ্যাপস, এক সেবা অ্যাপস, এক-পি অ্যাপস ইত্যাদি তৈরি করা হয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য এত কর্মসূচি ও প্রকল্প বাস্তবায়তন করলেও আমরা যদি যুব সমাজকে প্রযুক্তির কাজে যথোপযুক্ত গাইডলাইন দিয়ে মনোনিবেশ না করাতে পারি তাহলে আমাদের সকল ধরনের ডিজিটাল পরিকল্পনাই ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা । বর্তমানে আমাদের দেশে প্রযুক্তির অপব্যবহারই বেশি হচ্চে। তাই আমাদের উচিৎ হবে যত দ্রুত সম্ভব যুবসমাজকে উপযু্ক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ও গণ সচেতনা তৈরি করে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তোলা।
তথ্যসূত্রঃ বিসিসি ও অনলাইন জার্নাল
Post Views: 178
এই প্রবন্ধটা কি সাহায্যকর ছিল?
হ্যানা
মন্তব্য লিখুন