বেগুন খাওয়া কি নিরাপদ? এ প্রশ্নটি বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুবই আলোচিত বিষয়। খুব সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা যায় যে, বেগুনে কিছু ভারি ধাতু (heavy metal) লেড, নিকেল মাত্রাতিরিক্ত পরিমানে পাওয়া গেছে। গবেষণাটি জামালপুরের ইসলামপুর ও মেলানন্দহ উপজেলায় করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত বিজ্ঞান জার্নাল “নেচার পোর্টফোলিও” -এ গবেষণার ফলাফল ২২ আগস্ট প্রকাশিত হয়েছিল । বেগুনে মাত্রাতিরিক্ত ভারি ধাতু (heavy metal) নিয়ে মানব মনে আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি রসায়ন বিভাগের প্রধান গবেষক ও অধ্যাপক মোঃ জাকির হোসেন বলেন, “আমরা জামালপুরের ইসলামপুর ও মেলান্দহ উপজেলার ২০টি জায়গা থেকে ৮০টি বেগুনের নমুনা এবং ৬০টি মাটির নমুনা নিয়ে কাজ করেছি।”
“আমরা বেশিরভাগ নমুনায় সীসা এবং নিকেলের উপস্থিতি খুঁজে পেয়েছি, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। ওই এলাকার মাটিতেও এই উপাদানগুলির উপস্থিতি বেশি। এই পদার্থগুলি সার বা কীটনাশক থেকে মাটিতে ছড়িয়ে পড়ে থাকতে পারে।”
গবেষক বলেন, “আমরা প্রধানত সীসা, নিকেল এবং ক্যাডমিয়ামের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছি। অন্যান্য উপাদানের উপস্থিতিও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে কিন্তু সেগুলো পরীক্ষা করার জন্য আমাদের কোনো ব্যবস্থা নেই”
বেগুন একটি জনপ্রিয় সবজি যা বাংলাদেশে প্রতিদিনের খাবারে (৭.২৮ গ্রাম/ব্যক্তি-দিন) ব্যবহৃত হয় এবং সারা বছর পরিবেশন করা হয়। বেগুন ফলের খাদ্যতালিকা একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক চাহিদার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভিটামিন, খনিজ এবং ফেনোলিক যৌগ সরবরাহ করে।
বেগুন ৯২% পানি, ৬% কার্বোহাইড্রেট, ১% প্রোটিন এবং নগণ্য চর্বি (টেবিল) আছে। এটি কম পরিমাণে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে, শুধুমাত্র ম্যাঙ্গানিজের দৈনিক মূল্যের মাঝারি শতাংশ (১১%) রয়েছে। ঋতু, চাষের পরিবেশ (উন্মুক্ত মাঠ বা গ্রিনহাউস) এবং জিনোটাইপের সাথে পুষ্টির গঠনে ছোটখাটো পরিবর্তন ঘটে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, “বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে (মোট সবজি উৎপাদনের ৯.৬%) এবং শীতকালে (মোট সবজি উৎপাদনের ৪.৭%) উভয় সময়েই বেগুন চাষ করা হয় যা এই দেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি”
জামালপুর জেলা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বেগুন উৎপাদনকারী, যা দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ৮.৫%। ইসলামপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পরিমাণে (জামালপুরের মোট উৎপাদনের ৬০.৪%) বেগুন ফল পাওয়া যায়।
বেগুনে অধিক পরিমানে পোকার আক্রমনের জন্য কৃষক অধিক মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার করে যা মাটির সাথে মিশে মাটির top soil কে দূষিত করছে। তাই পরবর্তীতে তা বেগুনে ঢুকে যায়।
ধারনা করা হচ্ছে মাটি দুষণ ও পরিবেশ দুষণজনিত কারনেই বেগুনে ভারি ধাতু (heavy metal) মাত্রাতিরিক্ত পরিমানে পাওয়া গেছে।
অনুরূপ গবেষণা একই স্থানের অন্যান্য ফসলের উপর করা যেতে পারে যাতে ভারি ধাতু পাওয়া যাওয়ার কারণটি পরিষ্কার হবে।
আর অনুরূপ গবেষণা দেশের বিভিন্ন স্থানে করে তা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল নিয়ে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা করা উচিত। তবে সাধারন জনগণের বেগুনকে বর্জন করার মত পরিস্থিতি এখনও উদ্ভব হয়নি। তাই বেগুন চাষীগণের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
মন্তব্য লিখুন