প্যাকেটজাত দুধ কেনার সময় সচেতন কিংবা অসচেতনভাবে হোক সব সময় মেয়াদ দেখে কেনা হয় না। নিয়মিত খাবারের পাশাপাশি বাড়তি পুষ্টির জন্য আদর্শ খাবারের উৎস হিসেবে দুধে ভরসা রাখতে চান অনেকেই। তাই শহর অঞ্চলে অনেকেই প্যাকেটজাত দুধ ফ্রিজে রাখেন। হঠাৎ একদিন যদি নজরে আসে দুধের মেয়াদ শেষ! দূর্মূল্যের বাজারে খটকা লাগতেই পারে, ফেলেই দিতে হবে নাকি ব্যবহার করা যাবে, যেহেতু ফ্রিজেই ছিল। সেইক্ষেত্রে জানা খুব জরুরি প্যাকেটজাত দুধের মেয়াদ সম্পর্কে গবেষক, বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদগণ কি বলেন ? প্যাকটের গায়ে লেখা মেয়াদ মূলতঃ কি নির্দেশনা দেয় ? সহজ ভাবে জিনিসগুলোর গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা থাকলে সংশয় ও দ্বিধা কাটানো সম্ভব ।সেই বিষয়গুলোই এই আর্টিকেলের উপজীব্য।
গতিময় সময়ে মানুষের ব্যস্ততা প্রতি মূহুর্তের, নিত্য দিনের। সময় টা এমন যে, একটু জিরিয়ে নিতে গেলেই পিছিয়ে পরা কিংবা ছিটকে পরা। এমন যান্ত্রিক জীবন হয়তো খুব প্রত্যাশিত না, তবুও এর বাইরে যাবার সুযোগ নাই বাস্তবতা বিবেচনায়।তাই প্রত্যেকেরই একান্ত চাওয়া সুস্থ যেন থাকি ,সুস্থ যেন থাকে পরিবারের সবাই। খাদ্য তালিকায় আলাদা করে সব উপাদান থাকলো কি, থাকলো না; এত হিসেব করে চলা তো আর সহজ কথা নয় তাই আদর্শ খাবার হিসেবে দুধের কদর বরাবরই।
মফস্বলে প্রতিদিন বাজার থেকে কিংবা পরিচিতজনের কাছ থেকে সংগ্রহের সুযোগ থাকলেও নগর জীবনে তা নেই বললেই চলে । তাই প্যাকেটজাত দুধের ওপরেই ভরসা।
দিনের শেষে কর্মক্ষেত্র থেকে ফেরার পথে কয়েক প্যাকেট দুধ নিয়ে ফেরার চিত্র খুব চেনা । প্যাকেটের গায়ে মেয়াদ শেষ হবার তারিখ কি আমরা সব সময় দেখে নেই ? সবাই যে সব সময় দেখি তা হয়ত না , দোকানি কে বড়জোর জিজ্ঞেস করা হয়, প্যাকেট আজকের তো? মোটামুটি ভাবে ভাবনায় কাজ করে ৫/৭ দিন তো থাকবেই।
ফ্রিজে সংরক্ষণ করে দুধ প্রয়োজন মত আমরা বের করি। কোন একদিন দুধের প্যাকেট ফ্রিজ থেকে বের করে দেখা গেল মেয়াদ শেষ! দূর্মুল্যের বাজারে মনটা নিশ্চয়ই খচখচ করবে! ফেলেই দিতে হবে এত দামে কেনা দুধ ?! আবার ফুড পয়জনিং ও কাম্য নয়। তাহলে জানা দরকার ফুড এক্সপার্টরা কী বলছেন এ বিষয়ে ?
জানলে অবাক হবেন, হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩ সালের এক স্টাডিতে দেখা গেছে ৯০ শতাংশের বেশি আমেরিকান খাবার ফেলে দেন মেয়াদজনিত লেবেল নিয়ে জটিলতায় এবং তারা এটিকে নিরাপদ খাদ্য বোঝার মানদণ্ড হিসেবেও মনে করে।
যদিও আমেরিকায় মেয়াদ এর তারিখ বিভিন্নভাবে দেয়া থাকে। ‘সেল বাই’, ‘ইউস বাই’ , ‘এঞ্জয় বাই’-এভাবে লেখা থাকে । এগুলোতে তারা অভ্যস্থ হলেও তারা বেশ জটিলতায়ও পড়েন । আর এই সব জটিলতায় অনেকেই ক্রয়কৃত খাবারের ২৫ শতাংশ ফেলে দেন।
সাম্প্রতিক সময়ে আর এক স্টাডিতে দেখা গেছে দুগ্ধজাতীয় খাবারের অর্ধেকই ফেলে দেয়া হচ্ছে নানা রকম মেয়াদজনিত দ্বিধায়। যদিও বেশিরভাগ আমেরিকান দোকান থেকে পাস্তুরিত দুধ ই ক্রয় করেন। প্রকৃতপক্ষে এই সব তারিখ গুলো দেন উৎপাদনকারীরা।
তারা মূলত খুচরা বিক্রেতা এবং ক্রেতাদের জানাতে চান পণ্যটি অমুক তারিখ পর্যন্ত স্বাদ এবং গুণাগুণে সবচেয়ে ভাল থাকবে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে , এর পরেই খাবার অনুপযোগী হয়ে যাবে। শিশু খাদ্যের বাইরে তারিখ পার হওয়া খাবার বিক্রীতে বাধাও নেই সেখানে ।
দুধ মূলত নষ্ট হয় ব্যাকটেরিয়ার কারনে। পাস্তুরিত করার মধ্য দিয়ে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হলেও পুরোপুরি হয় না। তাই ব্যাকটেরিয়া আবারও বংশবৃদ্ধি করে, তবে পাস্তুরিত দুধ নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে পারলে দুধ ভাল থাকে।
এখন ভাবার বিষয় বা বিবেচনার বিষয় হল, মেয়াদজনিত সমস্যায় অসুস্থ হবার সংখ্যা কত ? তার চেয়ে বড় আশঙ্কার জায়গা হল কতটা বিশুদ্ধ প্রক্রিয়ায় কিংবা বিশুদ্ধ পরিবেশে পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে? বাজারে ছাড়ার আগ পর্যন্ত কতটা স্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হচ্ছে ? এ্যারিজোনা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পুষ্টিবিদ সেই বিষয়টার দিকেই বেশি নজর দিয়েছেন।
পুষ্টিবিদদের মত অনুযায়ী, ফ্রিজে রাখা দুধ ৪ থেকে ৭ দিনের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায় তবে প্যাকেটজাত দুধের প্যাকেট না কাটলে, গায়ে লেখা মেয়াদ এর চেয়ে ৫ থেকে ১০ দিন ভালো থাকতে পারে। এই বিষয়টা নির্ভর করে দুধে থাকা চর্বির মাত্রার ওপর। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পুষ্টিবিদদের মতে, গুঁড়ো দুধের মেয়াদ প্রায় ১২ থেকে ২৪ মাস থাকে।
প্যাকেটজাত দুধের মেয়াদ প্যাকেটের গায়ে লেখা তারিখের চেয়ে, দুধের গন্ধ থেকেই কার্যকর উপায়ে বোঝা যায় দুধ নষ্ট হয়েছে কিনা। একটা সময় আমাদের পরিবারগুলোতে এমন চিত্রই দেখা যেত। আমাদের মায়েরা খুব সহজেই খাবারের নিরাপত্তা বজায় রাখতে পারতেন। গন্ধ যদি স্বাভাবিক না থাকে তবে ব্যবহার না করাই উচিত কারণ মানসিক দ্বন্দ্ব থেকেও তখন সমস্যা হতে পারে। গন্ধের পাশাপাশি রঙের দিকেও নজর দিতে হবে কারণ নষ্ট দুধ গ্রহণ করলে পেটের সমস্যাসহ নানা ঝামেলা হতে পারে।
অসাবধানতাবশত নষ্ট দুধ পান করে ফেললে প্রচুর পানি খেতে হবে এবং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে সব চেয়ে উত্তম কাজ হল পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী পরিমাণ মত দুধ বা যে কোন পণ্য কেনা, যাতে বেশিদিন পরে না থাকে।
তথ্যসূত্রঃ discovermagazine.com , bdnews24.com
মন্তব্য লিখুন