নারী অথবা পুরুষ সকলের সৌন্দর্যে চুলের গুরূত্ব অপরিসীম। কিন্তু এই চুলই যদি অসময়ে ঝরে যায় সেটা অত্যন্ত চিন্তার বিষয় এবং দুঃখজনক। দৈনিক ৭০-১০০ টা চুল পড়া স্বাভাবিক এগুলো আবার পুনরায় গজায় কিন্তু এর থেকে বেশি পড়লে সেটা সমস্যার সৃষ্টি করে। আসুন জেনে নেই চুল পড়ার প্রধান কারন ও প্রতিকার গুলো-
চুল পড়ার সমস্যার গুলোকে সাধারনত দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়-
আমরা নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে বাইরে বের হই ফলে ধুলাবালি খুব সহজেই আমদের চুলে প্রবেশ করে। চুল নিয়মিত পরিষ্কার না করলে চুলে খুশকি বা ছত্রাকের আক্রমন হতে পারে।এক্ষেত্রে আমাদের নিয়মিত চুল পরিষ্কার করতে হবে এবং অ্যান্ট্রি ড্যান্ড্রফ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।ছত্রাকের আক্রমন এবং খুশকি চলে গেলে পুনরায় চুল গজায়।
মাথার ত্বক অনুযায়ী শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার র্নিবাচন না করতে পারলে:আমাদের শরীরের ত্বকের মতো মাথার ত্বকও অয়েলি অথবা ড্রাই হয়।মাথার ত্বক অনুযায়ী শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার র্নিবাচন না করতে পারলে চুল পড়ে।এক্ষেত্রে মাথার ত্বক অনুযায়ী শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করলে সমস্যার সমাধান হয়।
যারা চুল পড়া নিয়ে খুব চিন্তিত তারা সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিনবার কয়েক মিনিটের জন্য হলেও চুলে তেল ব্যাবহার করুন।আপনার নারিকেল তেল,তিলের তেল,বাদাম তেল,কালোজিরা তেল ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।এছাড়া ক্যাস্টার ওয়েলও ব্যবহার করতে পারেন যা চুলের ঘনত্ব বাড়াতে সহায়ক।
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপের কারনে চুল ঝরে যায়। তবে দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ কমে গেলে পুনরায় আবার চুল গজায়। কিন্তু এটি দীর্ঘমেয়াদী হলে সমস্যা জটিল হয়। ব্যক্তিজীবনে দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ থাকতেই পারে কিন্তু এই দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ যদি ক্ষতির কারন হয় তাহলে এটি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ কমানোর জন্য নিয়মিত নামাজ বা প্রার্থনা করা, ইয়োগা , মেরিটেশন খুব উপকারী।
আমরা জানি চুলের ৯০% প্রোটিন দ্বারা তৈরী।তাই শরীরে প্রোটিনের মাত্রা ঠিক রাখা জরুরি। আমাদের নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস চুলের বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। আমরা প্রতিদিন যে খাবার গ্রহন করি তারই একটা অংশ চুলের বৃদ্ধিতে ও চুল মজবুত হতে সহয়তা করে। মাথার ত্বকে র্ডামিস স্তরে যে হেয়ার ফলিকল থাকে তাতে অসংখ্য রক্তবাহি নালিকা থাকে এগুলার মাধ্যমেই চুল পুষ্টি গ্রহন করে। তাই আমাদের নিয়মিত সুষম গ্রহন করতে হবে।
আমাদের চুলের গোড়ায় যে কোষ থাকে তাতে ২৫% ই পানি থাকে আমাদের দেহে পানির অভাব দেখা দিলে চুলের গ্রন্থি গুলো দূর্বল হয়ে যায় এবং চুল ঝরে যায় তাই আমাদের বেশি বেশি পানি পান করতে হবে এতে আমাদের চুল স্বাস্থ্যজ্জ্বল, মজবুত ও ঝলমলে হবে। যারা অতিরিক্ত লবন খান তাদের চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে কারন লবন মাথার ত্বকে পানি জমায় যা চুলের গোড়াকে নরম করে দেয়।
ভিটামিন এ এর অভাবে চুল রূক্ষ হয়ে যায় আবার অতিরিক্ত ভিটামিন এ এর জন্য চুল পড়ে যায়।ভিটামিন বি চুলকে চকচকে ও ঘন করে তোলে এবং চুলকে বিবর্নতার হাত থেকে বাঁচায়। ভিটামিন সি এর অভাবে চুল রুক্ষ ও খসখসে হয়ে যায়। ভিটামিন ই চুলের ঘনত্ব বাড়ায় এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় যা নতুন চুল গজাতে সহায়ক।এজন্য খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমান ভিটামিন ও খনিজ লবন সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে।
হেয়ার স্টাইলের জন্য চুল অনেকদিন যাবত টান করে বাধলে চুলের গোড়া ধীরে ধীরে নরম হয় যায় এবং পড়ে যায়। তাই আমাদের এই ধরনের হেয়ার স্টাইল এড়িয়ে চলা উচিত।
অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোনের প্রভাবে চুল পড়ে। পুরুষদের টাক হয়ে যাওয়ার পেছনে এটি অনেক সময় দায়ী থাকে। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হরমোনের প্রভাব বেশি থাকে। এছাড়া নারীদের মেনোপজের সময় ও পরে এই হরমোন আনুপাতিক হারে বেড়ে যায় তাই চুল পড়া বেড়ে যায়। থাইরয়েড হরমোন বেশি বা কম নিঃসরন হলে চুল ঝরে যায়।
আরও পড়ুনঃ করোনাভাইরাস ও কোভিড-১৯ কী? কোভিড-১৯ এর লক্ষণ সমূহ
ঋতু পরিবর্তনের কারনে অনেক সময় চুল ঝরে পরে তবে এটি বেশিদিন স্থায়ী হয়না। ২-৩ মাসের মধ্যেই পুনরায় নতুন চুল গজিয়ে পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে।
অ্যানিমিয়া, টাইফয়েড, ডায়াবেটিকস, ম্যালেরিয়া, জন্ডিস,থাইরয়েড জনিত রোগ ইত্যাদি রোগের কারনে চুল ঝরে যায়। এইসব রোগের কারনে চুল ঝরে গেলে আমার পুনরায় চুল নাও গজাতে পারে।
ক্যান্সার আক্রান্ত রোগিদের কোমোথেরাপি দেয়ার কারনে তাদের চুল পড়ে যায়। এক্ষেত্রে কোমোথেরাপি দেয়ার ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে চুল সব ঝরে যায় আবার কোমোথেরাপি শেষ হওয়ার ৩-৪ মাসের মধ্যে চুল গজিয়ে যায়।
শরীরে বড় কোন অস্রোপচার হলে শরীর দূর্বল হয়ে যায় ফলে চুল ঝরে পড়ার সম্ভবনা থাকে। এক্ষেত্রে বেশি বেশি বিশ্রাম নিতে হবে এবং পুষ্টিজাতীয় খাবার খেতে হবে। তাহলে আবার চুল গজাবে।
জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, মানসিক অসুস্থতার ওষুধ, প্রশারের ওষুধ ইত্যাদি ওষুধের প্রভাবে চুল পড়ে যায়।
অনেকের বংশগত চুল ঝরে যাওয়া ও টাক হওয়ার সমস্যা থাকে।
বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে চুল পড়া বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার।
মন্তব্য লিখুন