বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি পরিচিত নাম করোনা ভাইরাস। করোনা ভাইরাস সম্পর্কে আমাদের জানতে হলে প্রথমেই জানতে হবে ভাইরাস কি? ভাইরাস হচ্ছে শারীরিক রোগ সৃষ্টিকারী অতি -আণুবীক্ষণিক বস্তু। করোনা ভাইরাস সমগোত্রীয় একটি বড় পরিবার যে গুলো সাধারণত জ্বর, সর্দি থেকে শুরু করে মিডল ইস্ট রেস্পিরেটরি সিন্ড্রোম ও সিভিয়া অ্যাকিউট রেস্পিরেটরি সিন্ড্রোমের মত মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে।
করোনা ভাইরাস যার পোশাকি নাম Covid-19। এই রোগটিকে বিশ্ব মহামারী ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯ এনসিওভি বা নভেল করোনা ভাইরাস। যা একটি সংক্রামক ভাইরাস। করোনাভাইরাস এর অনেক রকম প্রজাতি আছে কিন্তু এর মধ্যে মাএ ছয়টি প্রজাতি মানুষের দেহে সংক্রমণ করতে পারে।
তবে নতুন ধরণের ভাইরাসের কারণে সেই সংখ্যা এখন থেকে হবে সাতটি। এই করোনা ভাইরাসের পূর্ব নাম হলো চায়না ভাইরাস, নতুন ভাইরাস, রহস্য ভাইরাস ইত্যাদি। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর নাম দেয় ” Covid-19″।
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
করোনা ভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্ক আছে চীনের উহানের দক্ষিণ সমুদ্রের খাবারের পাইকারি বাজারের সঙ্গে। বিশেষজ্ঞরা আরো বলেছেন বেশ কিছু সামুদ্রিক প্রাণী করোনা ভাইরাস বহন করতে পারে যেমনঃ বেলুগা, তিমি। মূলত চীনের উহানের ঐ বাজারটিতে জীবন্ত প্রাণী ছিল যেমনঃ মুরগী, বাদুড়, খরগোশ, সাপ এ গুলো করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি হতে পারে। গবেষকরা বলেছেন চীনের হর্সশু নামের বাদুড়ের সঙ্গে এই ভাইরাসের ঘনিষ্ঠ মিল আছে।
এই ভাইরাস নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি জরিপ করেছে ৫৬ হাজার রোগীর উপরে। এই রোগে ৬% কঠিন অসুস্থ হয়। তাদের ফুসফুস বিকল হওয়া, সেপটিক শক, অঙ্গ বৈকল্য এবং মৃত্যুর সম্ভাবনা তৈরি হয়। ১৪% এর মধ্যে তীব্রভাবে উপসর্গ দেখা যায়। তাদের মূলত শ্বাস -প্রশ্বাস সমস্যা তৈরি হয়। ৮০% এর মধ্যে হালকা উপসর্গ দেখা যায়। তাদের জ্বর, কাশি ছাড়া ও কারো কারো নিউমোনিয়া উপসর্গ দেখা যেতে পারে। বয়স্ক ব্যক্তি যাদের অ্যাজমা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের অসুস্থ হওয়ার মারাত্নক সম্ভাবনা আছে ।
এটির মূল লক্ষণ হচ্ছে জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাস -প্রশ্বাস সমস্যা। সাধারণত জ্বর, সর্দি, কাশির মাধ্যমেই এই ভাইরাসের উপসর্গ প্রকাশ পায়। মূলত এই ভাইরাসের উপসর্গ প্রকাশ পেতে পাঁচ দিন সময় লাগে। গবেষকরা বলেছেন ভাইরাসটির ইনকিউবেশন পিরিয়ড ২৪ দিন কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ভাইরাসটির ইনকিউবেশন পিরিয়ড ১৪ দিন।
লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। যদি রক্ত পজিটিভ হয় তবে অবশ্যই আইসোলেশনে ১৪ দিন থাকতে হবে। আইসোলশন হচ্ছে পৃথক থাকা। প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন করা এবং গরম পানি পান করা এবং ভাপ দেওয়া। ১৪ দিন পর সুস্থ অনুভব করলে পুনরায় টেস্ট করা। যদি করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষায় নেগেটিভ আসে তবে সে করোনা মুক্ত।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ঘরের বাইরে গেলে সর্বদা মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ৩ ফুট সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে হবে। জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। পরিবহন- বাস, লঞ্চ, রেলপথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। হাঁচি, কাশি আসলে টিস্যু, রুমাল অথবা হাতের কনুই ব্যবহারকরতে হবে।
আরও পড়ুনঃ করোনা সংক্রমণ রোধে করোনা ট্রেসার বিডি অ্যাপ
সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড হাত ধুতে হবে। ঘন ঘন হাত ধুতে হবে। প্রয়োজনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। বাইরে থেকে এসে পরিধেয় কাপড় সাবান দিয়ে ধুতে হবে। কোন শারীরিক সমস্যা বোধ করলে ৩৩৩, ১৬২৬৩ নাম্বারে কল দিয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
মারাত্মক এই ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপি কেড়ে নিয়েছে ৮ লক্ষ ৬৮ হাজার মানুষের প্রাণ। বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ৬৩ লক্ষ। বাংলাদেশ ও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা ৪৩৮৩ জন। আক্রান্ত ৩ লক্ষ ১৯ হাজার ৬৮৬। গত ৩.৯.২০২০ ইং তারিখ অনুযায়ী।
সাধারণত একটি রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কার সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার এর দাবি করেছেন ইটালি, চীন, যুক্তরাষ্ট্র,যুক্তরাজ্য, রাশিয়া। বর্তমানে সম্ভাবনাময় ২ টি ভ্যাকসিন হলো mRNA-1273, Oxford Covid 19 (CHADOX1)।
পরিশেষে বলা যায় যে, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের সর্বদা সচেতন হতে হবে। ভয় নয় সচেতনতাই পারে এই ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে। নিজের সুরক্ষা নিজের করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার উদাসীনতা পরিহার করে নিজেকে ও দেশকে বাঁচানোর জন্য অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি।
মন্তব্য লিখুন