উচ্চ রক্তচাপ বর্তমান সময়ে আমাদের কাছে অতি পরিচিত একটি সমস্যার নাম। আমরা আমাদের সকলের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে নূন্যতম একজনকে হলেও এই রোগে আক্রান্ত দেখতে পাই। সঠিক মেডিকেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে এর প্রতিকার করা সম্ভব। কিন্তু একটি কথা আছে- PREVENTION IS BETTER THAN CURE অর্থাৎ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম।
আমাদের এই ব্যস্ত জীবনে যে অভ্যাস গুলো আমরা তৈরি করি তাদের মধ্যে সামান্য কিছু পরিবর্তন আনতে সক্ষম হলে উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। তাহলে আসুন জেনে নেই উচ্চ রক্তচাপকে কমানোর জন্য কিভাবে আমাদের লাইফস্টাইল পরিবর্তন করতে হবে:
১. স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ:
আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার এর কোন বিকল্প নেই। এই বিষয়টি আমরা সবাই জানি কিন্তু আমরা এটিকে মেনে চলতে প্রায়শই ব্যর্থ হই। কিন্তু শুধু স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণে এই সমস্যা সমাধানের আসল চাবিকাঠি নয়।
আপনাকে প্রত্যেকটি স্বাস্থ্যকর খাবারই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মতো গ্রহণ করতে হবে। কোন ভালো জিনিসও অতিরিক্ত হলে কখনই ভাল ফলাফল প্রদান করতে সক্ষম হয় না।
উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করার জন্য আপনার খাদ্যতালিকায় সর্বপ্রথম রাখতে হবে দুধ, শাকসবজি এবং ফলমূল।
বেশি চর্বিযুক্ত খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। চর্বিযুক্ত খাবারের পরিবর্তে আপনাকে বাদাম, মটরশুটি, মাছ, পোল্ট্রি এবং উদ্ভিজ্জ তেল এর দিকে হাত বাড়াতে হবে।
আপনারা হয়তো অনেকেই রান্নার ক্ষেত্রে সয়াবিন তেল ব্যবহার করে থাকবেন। এটি রান্নার স্বাদ বৃদ্ধি করলেও আপনার উচ্চ রক্তচাপের জন্য মোটেই সুবিধার নয়।
আমরা যারা মিষ্টি খেতে পছন্দ করি তাদের ক্ষেত্রে তেমন কোনো অসুবিধা নেই। আপনি আপনার দৈনন্দিন মিষ্টিজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে সক্ষম হবেন কিন্তু খেয়াল রাখবেন যেন একটি নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম না করে।
২. একটি সহজ এক্সারসাইজ রুটিন তৈরি করুন:
শারীরিক পরিশ্রম আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই বেশি উপকারী। কিন্তু বর্তমান সময়ে এই টেকনোলজির যুগে আমরা শারীরিক পরিশ্রম থেকে অনেক বেশি দূরে অবস্থান করছে। যার ফলে আমাদের শরীর বিভিন্ন ধরনের রোগের আস্তানায় রূপান্তরিত হয়েছ। উচ্চ রক্তচাপও এর কোন বিকল্প নয়।
তাই আপনার প্রতিদিন ব্যায়াম করার অভ্যাস তৈরি করা উচিত। এর মানে এই নয় যে আপনার কোন জিমে গিয়ে ব্যায়াম করতে হবে। এই ব্যায়াম করার অর্থ হল আপনার শরীরকে প্রতিদিন কর্মক্ষম রাখা যাতে আপনার শরীরের প্রত্যেকটি সিস্টেম সচল থাকে।
ন্যাশনাল লাইব্রেরী অফ মেডিসিন রিপোর্ট করেছে-“ব্যায়াম সিস্টোলিক রক্তচাপ হ্রাস করার সাথে সংযুক্ত।”এমনকি এটি আপনার কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার ঝুঁকিও এড়াতে সক্ষম। অর্থাৎ ব্যায়াম আপনার উচ্চ রক্তচাপ সামগ্রিকভাবে কমাতে সক্ষম।
৩. মদ্যপান এড়িয়ে চলুন:
মদ্যপান নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এটি আপনার রক্তচাপকে একটি অস্বাভাবিক স্তরে নিয়ে যায়। বিশেষ করে অতিরিক্ত মদ্যপান আপনার রক্তচাপকে ব্যাপক পরিমাণে বৃদ্ধি করতে সক্ষম।
মদ্যপান শুধু উচ্চ রক্তচাপ ই নয়, বরঞ্চ আমাদের শরীরের আরো বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি সাধন করে থাকে। তাই মদ্যপান কে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করুন।
আরও পড়ুনঃ
- রমজানে স্বাস্থ্য সুরক্ষা: পবিত্র রমজানে স্বাস্থ্যকর কিছু খাদ্যাভ্যাস
- মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমূহ
৪. ধ্যান করুন:
এটি আপনাদের অনেকের কাছেই হয়তো নতুন বিষয়। আমরা সবাই মেডিটেশনের ওপর তেমন একটা যোগ দেই না আমাদের দৈনন্দিন জীবনে। কিন্তু আপনার রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে এটি একটি অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি।
আপনারা হয়তো জানেন না, দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ আপনার রক্তচাপকে বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মেডিটেশন বা ধ্যান এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই আপনার এই মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবেন। শুধু এটুকু বিষয় খেয়াল রাখবেন যে এমন কোন মেডিটেশন বা ধ্যান করবেন না যা আপনার শরীরের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলব।
৫. যথাসম্ভব হাসিখুশি থাকা:
বেশিরভাগ সময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন। এ ক্ষেত্রে কখনোই নিজেকে আটকে রাখবেন না। কারণ হাসি হলো সর্বোৎকৃষ্ট ঔষধ। এটি আপনার মানসিক চাপকে কমাতে সক্ষম হবে যা আপনার রক্তচাপ এর ওপর প্রভাব ফেলবে।
আমরা যদি একটু সময় নিয়ে আমাদের লাইফ স্টাইল কে উপরের নিয়মে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয় তাহলে খুব সহজেই উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
তথ্যসূত্রঃ www.komando.com