সম্প্রতি প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের লাইভ টকশোতে দীর্ঘদিন আড়ালে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শরিফুল হক ডালিম (বীর বিক্রম) এই কড়া মন্তব্য করেছেন। মেজর ডালিম বাংলাদেশের ইতিহাসে বিতর্কিত এবং পরিচিত একজন সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে।
লাইভে দেওয়া বক্তব্যে মেজর ডালিম উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধুর শাসনকালে মানুষ তার জুলুমের অবসান চাইছিল এবং মুক্তির জন্য খোদার কাছে প্রার্থনা করছিল। তিনি বলেন, ১৫ আগস্টের ঘটনা কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছিল না, বরং এটি মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই পরিকল্পিত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের হতাহতের সংখ্যা নিয়েও করেছেন বিতর্কিত মন্তব্য। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ নয়, বরং ৩ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছে।
ইলিয়াস হোসেনের ইউটিউব চ্যানেলে লাইভ টকশোতে মেজর ডালিমের উপস্থিতি এতটাই আলোচিত ছিল যে এটি বাংলাদেশে একটি রেকর্ড তৈরি করে। প্রায় ৮ লাখ দর্শক একসঙ্গে টকশোটি উপভোগ করেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং অনেক নতুন আলোচনা ও বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে।
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে শরিফুল হক ডালিম পশ্চিম পাকিস্তানে ছিলেন। ২০শে এপ্রিল ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তান থেকে পালিয়ে ভারত আসেন এবং সেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ সাহস ও কৃতিত্বের জন্য তিনি বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হন।
বীর উত্তম খেতাব দেয়া হলেও ২০২১ সালের ৬ই জুন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় শরিফুল হক ডালিমসহ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চারজনের মুক্তিযুদ্ধের খেতাব বাতিল করে।
সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকের ট্রেন্ডিং পোষ্ট থেকে মেজর ডালিমের লাইভ সাক্ষাতের একটি সারাংশ নিচে দেয়া হলঃ
১। মুজিব নিজে স্বয়ং ধরা দিয়ে পাকিস্তানি আর্মির কাছে ফ্যামিলির দায়িত্বভার দিলেন।
২। মুজিবের ভাষনে নয় মেজর জিয়াউর রহমানের ডাকে লক্ষ লক্ষ মানুষ একতাবদ্ধ হয়েছিলো এবং আমি নিজেও পাকিস্তান থেকে চলে এসেছিলাম মেজর জিয়া’র ডাকে।
৩। মুক্তিযুদ্ধে সর্বমোট শহীদের সংখ্যা ৩০ লক্ষ নয়, ৩ লক্ষ।
৪। মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষণের শিকার নারীদের সংখ্যা ২ লক্ষ নয় বরং আরো অনেক অনেক কম কারণ ডালিম সাহেব বলেছেন উনি মাত্র দুইজন ধর্ষিতা নারীকে পেয়েছেন।
৫। মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাইনি।
৬। ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করছে যাতে তাদের একটি প্রদেশ বানাতে পারে।
৭। মুজিব হ’ত্যায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানও জড়িত ছিলেন।
৮। কোরআন শপথ করে জিয়া আগস্ট বিপ্লবীদের সাথে থাকার ওয়াদা করেন। (কিন্তু তার বদলে) তিনি ক্ষমতা সুসংহত করতে ৪০০০ লোককে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিলেন।
৯। বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিলো ভারতীয় বাহিনী।
১০। ভারত তৎকালীন ১৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ বাংলাদেশ থেকে লুট করে নিয়ে যায়। বাঁধা দিলে মুজিব মেজর জলিলকে গ্রেপ্তার করে।
১১। জহির রায়হান ও শহিদুল্লাহ কায়াসারকে হত্যা করেছিলো মুজিব।
১২। মুক্তিযুদ্ধে ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জৎ লুট হয়েছিলো এইটা একটা মিথ্যা প্রচারণা।
১৩। বিপ্লবী সিরাজ সিকদারকে পরিকল্পনা করে হত্যা করে মুজিব।
১৪। কথা আর কাজে কোন মিল ছিলোনা মুজিবের৷
১৫। মুজিব হত্যার পরে মিষ্টি বিতরণ করে দেশের মানুষ।
১৬। মেজর ডালিমের স্ত্রীকে চিকিৎসা নিতে দেয়নি হাসিনা ও খালেদা।
নতুন প্রজন্মের মধ্যে মেজর ডালিমের প্রকাশ্য উপস্থিতি ও মন্তব্য অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ২০২৫ সালেও দেশের ইতিহাসের এই অধ্যায় এখনও তাজা, এবং তার প্রকাশ্য আলোচনা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বিস্ময়ের সৃষ্টি করছে। আওয়ামীপন্থী সোশ্যাল মিডিয়া ইউজার অনেকে মেজর ডালিমের লাইভ টকশোকে সাজানো নাটক বলেছেন।
মেজর ডালিমের নীরবতা ভাঙার এই ঘটনা জনমনের মধ্যে নীতি-নৈতিকতার বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করে। কেন তিনি এতদিন পর প্রকাশ্যে এসেছেন এবং কেন এই ধরনের কঠোর মন্তব্য করছেন? দেশজুড়ে এক অনিশ্চয়তার ঘন মেঘ বিরাজমান, যা ভাঙার দায়িত্ব এখন নতুন প্রজন্মের কাঁধে।