Google নাম শুনেনি বর্তমান সময়ে সচেতন মহলে থাকা এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। জ্বি, কথা বলছি আমেরিকার বিখ্যাত টেক জায়ান্ট গুগলকে নিয়ে। প্রফেশনাল আইটি সাপোর্ট কোর্স করে Google সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারেন ঘরে বসেই।
কম্পিউটার প্রকৌশলে পড়া দেশের শীর্ষ প্রকৌশল বিশ্বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের স্বপ্ন থাকে গুগলে জব করার। কিন্তু, সেই স্বপ্ন তো আর সবার পূরণ হয় না। তবে, দুধের স্বাদ যদি ঘোলে মেটানো যায়, ক্ষতি কি? কেমন হবে যদি আপনার কাছে Google এর সার্টিফিকেট থাকে? কেমন হবে যদি সেটা ঘরে বসেই অর্জন করে ফেলা যায়? চলুন কথা বলা যাক সেই বিষয়ে।
এই বিষয়ে কথা বলার আগে শুরুতেই অনলাইন কোর্সের জনপ্রিয় প্লাটফর্ম “Coursera” সম্পর্কে জানতে হবে আপনাকে। এখান থেকেই আপনি Google এর প্রফেশনাল কোর্সের সার্টিফিকেটটি অর্জন করতে পারবেন। Coursera তে যদি আপনার একাউন্ট না খোলা থাকে, তাহলে প্রথমেই আপনাকে একাউন্ট খুলে নিতে হবে।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই, Coursera তে আপনি বিনামূল্যে প্রায় সব কোর্সই করতে পারবেন কিন্তু সার্টিফিকেট (ই- সার্টিফিকেট) নেয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই পেমেন্ট করতে হবে। আপনি কোনো কোর্স এনরোলের পর যদি কারিকুলাম পছন্দ না হয়, আপনি আন-এনরোল করে টাকা ফেরত নিতে পারবেন নির্দিষ্ট সময়ের ভিতরে।
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
আপনার ব্রাউজারটি ওপেন করে (Recommended : Chrome browser) এড্রেস বারে টাইপ করুন coursera.org । আপনার আগে থেকে একাউন্ট না থাকলে সাইন আপ করে নিতে হবে।এজন্য আপনার ফুল নেম এবং ইমেইল, পাসওয়ার্ড এন্ট্রি করে আপনার একাউন্ট খুলে ফেলতে পারবেন। একাউন্ট খোলার পর সার্চ বার থেকে আপনি “Google IT support professional certificate” লিখে সার্চ দিবেন। দেখতে পাবেন আপনার সামনে কোর্সটির বিস্তারিত চলে এসেছে। আপনি চাইলে ৭ দিনের জন্য কোর্সটি ফ্রি এনরোল করতে পারবেন। এক্ষেত্রে “enroll for free” অপশনটি বাছাই করতে হবে আপনাকে। কোর্সটি বোঝার সুবিধার্থে প্রত্যেকটি ভিডিওর সাথে সাবটাইটেল যুক্ত করা থাকে। ইংরেজি, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ, অ্যারাবিক সাবটাইটেলের মধ্যে আপনার ইচ্ছামত বাছাই করতে পারবেন আপনি।
এই প্রফেশনাল কোর্সের অন্তর্গত মোট ৫ টি কোর্স। আপনি প্রত্যেকটি কোর্স আলাদাভাবে শেষ করলে প্রত্যেকটির জন্য আলাদা সার্টিফিকেট পাবেন এবং সবগুলো শেষ করার পর একটি স্পেশালাইজেশন সার্টিফিকেট পাবেন।
1. Technical support fundamentals
2. The Bits & Bytes of computer networking
3. Operating system & you : becoming a power user
4. System administration & IT infrastructure services
5. IT security: Defense against the digital dark arts.
যদি প্রশ্ন জাগে কোর্সটির ক্লাস কারা নিবেন, তবে এই বিষয় নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকুন। গুগলের টপ ইঞ্জিনিয়াররাই ক্লাসের ভিডিওগুলো তৈরী করেছেন। তাদের সাবলীল উপস্থাপনার মাধ্যমে আপনি কঠিন বিষয়কে খুব সহজেই বুঝতে সক্ষম হবেন। মাঝে মধ্যে তাঁদের স্ট্রাগলের গল্প,গুগলে আসার গল্প শুনাবে তাঁরা। মন দিয়ে শুনুন তাঁদের জীবনের গল্প। কোর্স করার অনুপ্রেরণা ফিরে পাবেন কোর্স করতে করতে বোরিং হয়ে গেলে।
প্রথম ৭ দিনের ফ্রি ট্রায়ালে আপনি এসাইনমেন্ট সহ যাবতীয় বিষয়ে একসেস করতে পারবেন। এরপর থেকে আপনাকে $৪৯ ডলার করে প্রতি মাসে গুণতে হবে। যত দ্রুত কোর্স শেষ করতে পারবেন, আপনার তত কম খরচ হবে। আপনি চাইলে কোর্সটি ফ্রি তেও করতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে শুধু ভিডিও লেকচার গুলোতেই আপনি এক্সেস পাবেন, কোনো ধরণের এসাইনমেন্ট, গ্রুপ ওয়ার্কে অংশ নিতে পারবেন না এবং কোর্স সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারবেন না।
এনরোল করতে হলে আপনাকে অবশ্যই আপনার ক্রেডিট/ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট মেথড বাছাই করতে হবে। আপনার ইন্টারন্যাশনাল পে-পাল একাউন্ট থাকলে সেটাও ব্যবহার করতে পারবেন। উল্লেখ্য, করোনা মহামারির কারণে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ফ্রি তে কোর্সগুলো করার সুযোগ করে দিয়েছে এবং আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে এক্সেস নিয়ে ফ্রি-তে কোর্সটি শেষ করেছি।
এবার কোর্সগুলো সম্পর্কে বলা যাক। প্রত্যেকটি কোর্স “week” নামক সেগমেন্টে বিভক্ত। আপনি প্রথম কোর্সে ঢুকলে দেখবেন সেখানে ৬ টি উইক রয়েছে। সবগুলো উইক শেষ করতে পারলে আপনার একটা কোর্স শেষ হবে এবং আপনি সংশ্লিষ্ট কোর্সের সার্টিফিকেট পাবেন। এভাবে পাঁচটি কোর্সের প্রত্যেকটি উইক শেষ করার পর আপনার সম্পূর্ণ কোর্সটি শেষ হবে। প্রতিটি উইকেই অসংখ্য ছোট ছোট ভিডিও রয়েছে।
সেসব ভিডিও দেখে, রিডিং সেশন কম্প্লিট করে আপনাকে ছোট ছোট কিছু এসাইনমেন্ট দেওয়া হবে। সেগুলা আপনাকে সাবমিট করতে হবে।মাঝে মধ্যে আপনাকে গ্রুপ ওয়ার্ক করতে দেওয়া হবে। আপনার মাধ্যমে অন্যের এসাইনমেন্ট রিভিউ করিয়ে নেওয়া হবে এবং আপনার নিজের কাজ অন্যের থেকে রিভিউ আদায় করে নিতে হবে। এর মাধ্যমে ভার্চুয়ালি পারস্পরিক আন্তঃসম্পর্ক বৃদ্ধি হবে।
এছাড়া রয়েছে অসংখ্য প্র্যাকটিস সেশন যা কুইজের মত অনেকটা। ৮০% নম্বর না পেলে আপনি কোনো সেশনেই পাশ করতে পারবেন না। তাই,মনযোগ দিয়ে ভিডিও গুলো দেখতে হবে পাশ করতে চাইলে। “Grade” অপশনে গেলে আপনি আপনার এসাইনমেন্টে প্রাপ্ত গ্রেড দেখতে পারবেন। কোনো এসাইনমেন্টে নির্দিষ্ট গ্রেড পেলে সেটার পাশে সবুজ টিক চিহ্ন হয়ে থাাকবে। এছাড়া শতকরা আকারে আপনি কোনটায় কত পার্সেন্ট গ্রেড পেয়েছেন সেটাও দেখতে পারবেন।
প্রতিটি কোর্সের নিচে “Course info” অপশনে গেলে আপনি বিস্তারিত আরও অনেক কিছু দেখতে পারবেন। কোর্স শেষ করতে পারলে মেইলের মাধ্যমে আপনার সার্টিফিকেট দিয়ে দেওয়া হবে। তবে, এক্ষেত্রে আপনাকে আপনার আসল পরিচয় ভেরিফিকেশন করতে হবে। এজন্য আপনার লিগ্যাল কোনো ডকুমেন্ট দিয়ে(ড্রাইভিং লাইসেন্স,পাসপোর্ট ইত্যাদি) তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
কোর্স করার সময় কোনো রকমের সমস্যা হলে সরাসরি তাদের সাপোর্ট টিমকে মেইল করতে পারবেন। তারা খুবই ফ্রেন্ডলি এবং ফাস্ট রেসপন্স করবে। কোর্সের কোনো কন্টেন্ট না বুঝলে কোর্সের ইন্সট্রাকটরের সাথেও যোগাযোগ করতে পারবেন। এছাড়া থাকছে মুক্ত কমিউনিকেশন ব্যবস্থা যার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের কোর্সমেটদের সাথেও পরিচিত হতে পারবেন। আপনার ভার্চুয়াল কমিউনিকেশন স্কিলকে বাড়ানোর এত বড় প্লাটফর্ম আর কোথায় পাবেন!
এখন প্রশ্ন হলো এই কোর্সটি করে আসলে লাভ কি? আমি এই কোর্সের কোনো ফিজিক্যাল সার্টিফিকেট তো পাচ্ছি না তাহলে কোথায় কাজে লাগাবো? হ্যাঁ, কোর্সটি টাকা দিয়ে করার পরেও আপনি ইমেইলের মাধ্যমে সার্টিফিকেটের একটি পিডিএফ ফাইল পাবেন। এর মাধ্যমে আপনি কিভাবে উপকৃত হবেন, আপনার প্রফেশনে আপনি কিভাবে কাজে লাগাবেন তার রূপরেখা সংক্ষেপে তুলে ধরছি।
১. বিভিন্ন আইটি কোম্পানিতে ফ্রন্ট ডেস্ক এক্সিকিউটিভ নিয়োগ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে দেশের অধিকাংশ অদক্ষ তরুণ-তরুণীরা আবেদন করে এবং বেশিরভাগই ছাটাই হয়ে যায়।আপনার এই কোর্স করা থাকলে এটা নিশ্চিত আপনি একটি কম্পিউটারের খুঁটিনাটি সব জেনে এসেছেন কারণ কোর্সটার সার্টিফিকেট আপনি ততক্ষণ পাবেন না যতক্ষণ না আপনি ঠিকভাবে কোর্সটি আয়ত্ত করছেন, কুইজ টেস্ট গুলোতে পাশ করছেন। সুতরাং, ধরেই নিতে পারেন জব পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি এগিয়ে থাকবেন শতভাগ নিশ্চিত।পার্ট টাইম জব হিসেবে এসব জব বেশ ভালো স্যালারি অফার করে থাকে।
২. বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জবের সময় সিভিতে নানারকম কো কারিকুলার এক্টিভিটিজ চাওয়া হয়।আপনি যদি ফিল্ড বেজড কো কারিকুলার একটিভিটিজের কথা এড করতে পারেন,জব পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়।এজন্য,আপনার অর্জনটিকে আপনি সিভিতে এড করতে পারবেন, প্রয়োজনে সার্টিফিকেটটি সিভি মেইল করার সময় এটাচও করে দিতে পারেন।
৩. আপনি যদি কম্পিউটারের বেসিক গুলো ভালো মত না বুঝেন,আপনার জন্য এই কোর্সটি ফলপ্রসু হবে।আপনি কম্পিউটার সম্পূর্ণ খুলে নিজে লাগাতে পারবেন,সার্ভিসিং করতে পারবেন।
৪. কোনো এক সময় কম্পিউটারের ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়া লাগতে পারে আপনার।তখন,আপনার এই ফিল্ডে অসামান্য আইডিয়া আপনাকে আর সবার থেকে এগিয়ে রাখবে।
৫. লিংকডইন সহ সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করতে পারবেন।শুনতে খারাপ লাগলেও বর্তমান সময়ে শো অফ অনেক বড় একটা ট্রেন্ড।আপনি যত শো অফ করবেন,তত পরিচিতি পাবেন।কিন্তু, শো অফ টা অবশ্যই গঠনমূলক হতে হবে।তাই,কঠিন এই চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করুন,কোর্সটি শেষ করুন এবং সার্টিফিকেট অর্জন করে দেখিয়ে দিন সবাইকে।
৬. টেক রিভিউয়াররা উপকৃত হবেন।খুটি নাটি বিষয় আরও ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন।
১. কোর্সটির ভিডিও টেনে টেনে দেখবেন না।দেখলে আপনার ই লস।পরে মক টেস্ট গুলোতে ফেল করবেন এবং আপনার ভিডিওগুলো আবার দেখতে হবে।দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে কে চায় বলুন?
২. কোর্সটি শুরুতে বেশ মজার মনে হলেও ভিতরে যাওয়ার পর হতাশ হতে পারেন কম্পিউটারের খুঁটিনাটি এত কিছু দেখে।আইসিটি বিষয়ে অনেক ডিপ নলেজ নিতে গিয়ে হতাশ হওয়া স্বাভাবিক।রাগে মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছা হতে পারে,কোর্স শেষ না করে উঠে যেতে মন চাইতে পারে।মনে রাখবেন, “রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।”
৩. কোর্স সংশ্লিষ্ট অনেক এসাইনমেন্ট,মক টেস্ট আপনি বুঝতে পারবেন না হয়তো। “Coursera” নামক ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করে সেখানে আপনার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারেন।সারা পৃথিবীর ইউজারদের বৃহৎ একটা কমিউনিটি ঐ গ্রুপটি।
৪. কোর্সটি করার পর প্র্যাক্টিকালি নিজের কম্পিউটার নিয়ে বসুন।ঘাটাঘাটি করুন।নাহলে কোর্স শেষ হওয়ার সাথে সাথে সব কিছু ব্রেন আউট হয়ে যাবে।
সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা। Happy learning with Coursera
Vai ami financial aid niyechi ami ki certificate pabo?