সামাজিক সংগঠন হলো এমন একটি সমাবেশ যেখানে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ একত্রিত হয়ে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে কিংবা সার্বিক বিষয়ে সমাজের উন্নয়নে তথা জনগণের উন্নয়নে কাজ করে থাকে। সমাজের প্রত্যেক স্তরের মানুষের ভিতর সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বৃদ্ধির মিলনস্থল হলো সামাজিক সংগঠন।
সামাজিক সংগঠন মূলত সমাজ সংস্কারের দিকে মনোনিবেশ করে থাকে। সাংস্কৃতিক সংগঠন যেমন সাংস্কৃতিক বিকাশে,সাহিত্য বিষয়ক সংগঠন যেমন সাহিত্য বিষয়ক প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করে, ঠিক অনুরূপভাবে সামাজিক সংগঠনগুলো সামাজিক সমস্যা নিরসনে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে থাকে।
ভলান্টিয়ারিং করা বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে যুক্ত থাকা যদিও একদমই নিজস্ব পছন্দ, তবুও ছাত্রজীবনে ভলান্টিয়ারিং-এর একটা আলাদা গুরুত্ব আছে। চলুন, সেগুলে জেনে নেওয়া যাক:
সংগঠন করতে এসে না চাইতেও অনেক স্কিল ডেভেলপ হয়ে যায়।একজন মানুষ ঠিকভাবে গুছিয়ে কথা বলতে না পারলে তিন চার বছর সংগঠন করলে এমনিতে কথা বলা রপ্ত করে ফেলতে পারবে।
বিভিন্ন সংগঠনবর সোশ্যাল মিডিয়া টিমের সদস্যরা কমিউনিকেশনে দক্ষ হয়ে উঠে। ডিজাইনিং টিমের সদস্যরা মাইক্রোসফট অফিস ব্যবহারে দক্ষ হয়ে উঠে। এছাড়া রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্টে যারা থাকে, তারা দৃঢ় পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এবং সমস্যা সমাধানে দক্ষ হয়ে উঠে।
নেতৃ স্থানীয় পদবীতে থাকা সদস্যরা নেতৃত্বদানের পাশাপাশি ভবিষ্যত জীবনের জন্য সঠিকভাবে বিকাশ লাভ করে।
সুতরাং, সংগঠন এর মাধ্যমে যে স্কিল ডেভেলপমেন্টের সুবিস্তৃত একটি সুযোগ থাকে, এটি অকাট্য একটি সত্য।
ছাত্রজীবনই ভলান্টিয়ারিং করার উপযুক্ত সময়। লেখাপড়া শেষ করে যখন আমরা ক্যারিয়ার গড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়ি তখন ইচ্ছে করলেও অনেক কিছুতে সময় দেয়া যায় না।
ছাত্রজীবনে দায়িত্ব কিছুটা কম থাকে ও অর্থনৈতিক চিন্তাও কম থাকে।সেই সাথে নানা ধরণের এক্সপেরিমেন্ট করার সুযোগ থাকে। তাই পরবর্তী জীবনে আফসোস করতে না চাইলে ছাত্রজীবনেই ভলান্টিয়ারিং করা উচিত।
লেখাপড়া শেষ করে চাকরিতে ঢোকার পরে কাজের চাপে চাইলেও অনেক কিছুই করা যায় না। ভলান্টিয়ারিং করার সময় কাজের চাপ খুব বেশি থাকে না, পরিবেশও থাকে বন্ধুসুলভ। অন্যদিকে কর্মক্ষেত্রে বস ও অন্যান্য কলিগদের এক্সপেক্টেশন মেটানোর একটা বিষয় থাকে।টার্গেট পূরণের বিষয় থাকে। এই চাপটা ভলান্টিয়ারদের উপরে কম থাকে।
তাই ভলান্টিয়ারিং করতে গিয়ে নেটওয়ার্কিং করার একটা সুযোগ তৈরি হয়। ভলান্টিয়ারদের বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন পেশার বিভিন্ন বয়সের মানুষের সাথে ইন্টারঅ্যাকশনের সুযোগ থাকে। প্রায় সবাই-ই ভলান্টিয়ারদের বেশ গুরুত্ব দেয়। নিজের কাজটা ঠিকমত গুছিয়ে করতে পারলে যে কোন গুরুত্বপূর্ণ মানুষের চোখে পড়াটাও সহজ। তাই ভলান্টিয়ারিং আপনাকে কোন চাপ বা এক্সপেক্টেশন ছাড়াই নতুন মানুষজনের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেবে।
শুধু তাই নয়, ভলান্টিয়ারিং করতে গিয়ে আপনি সমমনা মানুষদের সাথে একটা কমিনিউটি গড়ে তুলতে পারো। একসাথে ভলান্টিয়ারিং করার সময় খুব ভালো কিছু বন্ধুও খুঁজে পাবেন।
আমরা অনেকেই চাকরিতে আবেদন করতে গিয়ে একটা সাধারণ সমস্যায় পড়ি। সাধারণত বেশিরভাগ চাকরিতেই জব এক্সপেরিয়েন্স চাওয়া হয়। একদম ফ্রেশারদের জন্য চাকরির সুযোগ খুবই কম থাকে। এক্সপেরিয়েন্স না থাকার জন্য আমরা অনেক জায়গায় আবেদন পর্যন্ত করতে পারি না।
এই সমস্যার সবচেয়ে ভালো সমাধান হলো আপনি যে সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চাচ্ছের সেধরণেরই কোন একটা প্রতিষ্ঠানে ভলান্টিয়ারিং করা। যে ধরণের কাজ আপনাকে ভবিষ্যতে চাকরিক্ষেত্রে গিয়ে করতে হবে, তার কাছাকাছি কোন কাজ ছাত্রজীবনেই ভলান্টিয়ার হিসেবে করতে পারলে, সেটা পরবর্তীতে কাজে লাগবে।
তবে অন্য ক্যারিয়ার রিলেটেড ভলান্টিয়ারিং না করলেও সমস্যা নেই। যে কোন ধরণের ভলান্টিয়ারিং-ই সিভিতে এক্সপেরিয়েন্স, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি হিসেবে যোগ হবে। সামাজিক সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানে ভলান্টিয়ারিং এর অভিজ্ঞতা থাকলে তা যে কোন চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানেই গুরুত্বের সাথে নেওয়া হয়ে থাকে।
অনেকেই জব রিকোয়েরমেন্ট দেখে চাকরিতে আবেদন করার সময় আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভোগে। কাজটা করতে পারব কি পারব না- এই দ্বিধায় ভোগেন।ভলান্টিয়ারিং-এর এক্সপেরিয়েন্স থাকলে এই ধরনের ভয় কখনোই আপনার মধ্যে কাজ করবে না।
ভলান্টিয়ারিং-এর একটা অন্যতম সুবিধা হলো, বার্ডস আই ভিউ থেকে সমস্ত কিছু একবারে দেখা যায়। চাকরি করার সময় আপনি যে ডিপার্টমেন্টে কাজ করবেন, তার বাইরে অন্য সবকিছু সম্পর্কে জানা বা বোঝাটা কঠিন। কিন্তু ভলান্টিয়ারিং করতে গেলে আপনি সব ডিপার্টমেন্ট সম্পর্কেই কিছু না কিছু ধারণা নিতে পারবেন।
কোন সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পূর্বে অবশ্যই নিম্নোক্ত কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে:
১. সংগঠনে কতজন সদস্য রয়েছে তার স্পষ্ট ধারণা নিতে হবে।
২. আপনি কোন ধরণের সংগঠনে কাজ করতে চান সে বিষয়ে নিজের পরিস্কার মনোবাসনা থাকতে হবে। আইটি রিলেটেড সংগঠন যেমন আছে, সমাজসেবা মূলক সংগঠন ও তেমনি আছে। প্রয়োজনে ইন্টারনেট ঘেটে সমকালীন সেরা সংগঠনগুলো এবং তার নিজ জেলা কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইউনিটগুলোতে যোগাযোগ করতে পারেন।
৩. সংগঠনের বিভিন্ন উইং বা টিম রয়েছে। কোন উইং এ কাজ করতে চান এবং সে উইং এ কাজের গতি কিরকম তা নিরুপণ করে তবেই যুক্ত হবেন। কো অপারেটিভ উইং না হলে সংগঠন আপনার কাছে বোঝা মনে হবে।
৪. সংগঠনের ইনকাম সোর্স সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিতে হবে। অনেক সময় কিছু সামাজিক সংগঠন ব্যক্তির দানের টাকায় চলে, আবার কিছু সংগঠন সদস্যদের থেকে সংগৃহীত চাদার ভিত্তিতে চলে।
৫. সংগঠনটি কতটা সক্রিয় সেটা যাচাই করে যেতে হবে। শুধু মাত্র পদবী দখল করে বসে থাকার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। সংগঠন সক্রিয় না হলে কাজও করতে পারবেন না, আপনার ব্যক্তিগত কোনো উন্নয়নও হবেনা এবং সমাজেও সংগঠনটির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
নির্দ্বিধায় বলা যায় একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনে সম্প্রীতি নিশ্চিত করার জন্য সেচ্ছাসেবী সংগঠনের ভূমিকা হতে পারে অভিনব এবং তাৎপর্য মণ্ডিত। সমাজের সবচেয়ে তরুণ এবং সচেতন অংশ হচ্ছে ছাত্রসমাজ। পুরাতনকে, মিথ্যাকে, জরা-জীর্ণতাকে মুছে ফেলে, প্রাচীন সংস্কার ও গোঁড়ামিকে ঝেড়ে ফেলে একটি শোষণমুক্ত সুন্দর সমাজ গড়ার দায়িত্ব আজকের ছাত্রদের। ছাত্ররা তাদের সুন্দর মন ও সুকুমার বৃত্তির অভিনব প্রকাশের সাহায্যে সমাজের পঙ্কিলতা দূর করতে পারে।
বিশ্ব মানবতা এবং মানবিকতার বিজয় পতাকা ছাত্রদেরই হাতে। তারা তা সমাজের বুকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। সেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে চিরবঞ্চিত, বুভুক্ষ, অনাহরিক্লিষ্ট মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তারা শোনাতে পারে সান্তনার বাণী। আশাহীন বুকে জাগাতে পারে আশা। ভাষাহীন বুকে দান করতে পারে প্রাণের স্পন্দন।
তথ্য সোর্স: টেন মিনিট স্কুল ব্লগ, উইকিপিডিয়া
মন্তব্য লিখুন