বাসায় পড়াশোনা: জেনে নিন ২০টি কার্যকর টিপস

বাসায় পড়াশোনা: জেনে নিন ২০টি কার্যকর টিপস

বাসায় পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের জন্য অবশ্যই ফলপ্রসূ একটি উপায়। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থীর জন্য বিষয়টি বেশ অসাধ্যও বটে। বাসায় বসে পড়াশোনার অসংখ্য উপকারী দিক থাকার পরেও এর যথাযথ নিশ্চিতকরণে বিভিন্ন মানসিক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। যে কারণে বাসায় পড়াশোনার উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

স্বাভাবিকভাবেই স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে সপ্তাহে যতক্ষণ ক্লাস হয়ে থাকে, তাতে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরই পাঠ কার্যক্রমে অসম্পূর্ণ দিক থেকে যায়। তাই বাড়িতে পড়াশোনা করাটা একপ্রকার অবশ্য করণীয়। সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারলে পড়াশোনায় ঘাটতি রয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

বাড়িতে বসে পরিপূর্ণ শিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিত করতে সঠিক পরিবেশের ব্যবস্থা করার জন্য প্রয়োজনীয় ২০টি পদ্ধতি আলোচনা করা হল-

১) সঠিক স্থান নির্বাচন

যেকোনো স্থানই পড়ালেখা করার জন্য আদর্শ হতে পারে না। বাড়িতে নির্বিঘ্নে পড়ার জন্য শান্তিপূর্ণ স্থান নির্বাচন করা জরুরি। পাশাপাশি সে স্থানে ছোটখাটো লাইব্রেরি তৈরি করে নিলে ভালো। বাসায় পড়ার জন্য সঠিক স্থান নির্বাচন না করায় পড়াশোনায় সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে সমস্যা হতে পারে। লিভিং রুম, ডাইনিং রুম কিংবা বারান্দা পড়াশোনা করার সঠিক স্থান নয় কারণ এসকল জায়গা মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে আদর্শ ভূমিকা পালন করে।

২) সংগঠিত হতে হবে

প্রায়ই দেখা যায় পড়তে বসে কোনো জিনিসের জন্য আমাদের পড়ার টেবিল ছেড়ে উঠতে হয়। এরপর আমাদের অজান্তেই আমরা অন্য কাজে জড়িয়ে পড়ি এবং সময় নষ্ট করে ফেলি। এ সমস্যা দূরীকরণে আমাদের উচিত সংগঠিত হওয়া অর্থাৎ অর্গানাইজড হওয়া। শুরুতেই নিজের প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে পড়তে বসা উচিত যাতে করে পড়ার মাঝে উঠতে না হয়।

৩) পড়ার জায়গা পরিপাটি রাখা

বাড়িতে কার্যকরী শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে পড়ার টেবিল এবং এর আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং পরিপাটি করে রাখাও উপকারী। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আমাদের মস্তিষ্ক আশেপাশের অগোছালো পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়। পরিপাটি পরিবেশে থাকলে পড়াশোনায় আমাদের মনোযোগ দিতে সুবিধা হয়।

৪) একবারে একটি কাজেই মনোযোগ দিতে হবে

বাসায় পড়াশোনা এর ক্ষেত্রে সহজেই মনোযোগ হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। আমরা খুব সহজেই অন্যান্য অনেক কাজে ডুবে যেতে পারি। ফলস্বরূপ পড়ায় বিঘ্ন ঘটে। খেয়াল রাখতে হবে আমরা যেন একবারে যেকোনো একটি কাজেই নিয়োজিত থাকি। পড়া শুরু করার পর অন্য কোনো অসমাপ্ত কাজের কথা ভাবা যাবে না। এতে করে মনোযোগ বিঘ্নিত হয়। বর্তমানে মোবাইল ফোন অমনোযোগী হওয়ার পেছনে বিশাল ভূমিকা পালন করে। পড়াশোনার সময়ে ফোনকে যথাসম্ভব নিজের আওতার বাইরে রাখার চেষ্টা করতে হবে।

৫) পরিবারের সদস্যদের নিজের পরিকল্পনা জানানো

পরিবারের সদস্যদের নিজের পড়াশোনার সময় এবং পরিকল্পনা সম্পর্কে জানিয়ে রাখা বেশ কার্যকরী। এতে করে তারাও সচেতন থাকতে পারবে। হুট করে কেউ কোনো কাজ বা ঘটনা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করবে না। অর্থাৎ পরিবারের সদস্যরা মনোযোগে বিঘ্ন ঘটানোর কারণ হবে না। পরিবারের সবার সহায়তা পেলে কোনো রকম অযাচিত সময়ক্ষেপণ ছাড়াই নিজের কাজে পূর্ণ মনোযোগী হওয়া সহজ হবে।

৬) মানসিক দৃঢ়তা বজায় রাখা

বাড়িতে পড়াশোনার ক্ষেত্রে খুব সহজেই অন্যের দ্বারা মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা থাকে। পরিবারের কেউ কিংবা প্রতিবেশী এক্ষেত্রে দায়ী হতে পারে। তবে একজন শিক্ষার্থী যদি মানসিকভাবে দৃঢ় হয় এবং নিজ লক্ষ্যে অটুট থাকতে পারে তাহলে অন্য কেউই তার পথে সহজে বাধার সৃষ্টি করতে পারবে না। বাড়িতে সঠিক শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিতকরণে শিক্ষার্থীর মানসিক দৃঢ়তাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

৭) রুটিন অনুযায়ী পড়ার চেষ্টা করা

নিয়মানুবর্তিতা একজন শিক্ষার্থীর জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে বাড়িতে নিজ উদ্যোগে পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে এটি আরও অধিক পরিমাণে জরুরি। যে কারণে কখন কি পড়বে তার একটি রুটিন তৈরি করে নেয়া উচিত। শুধু রুটিন তৈরি করলেই হবে না, এর যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সময়ের কাজ সময়ে করে ফেললে কোনো কাজই জমে থাকার ভয় থাকে না। আর একজন শিক্ষার্থীর জন্য এই গুণটি অর্জন করা খুব ফলপ্রসূ।

আরও পড়ুনঃ

পড়া‌শোনায় ম‌নো‌যোগ বাড়ানোর ৯টি গোপন টিপস এন্ড ট্রিকস

ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্ব সেরা, নেই হোম ওয়ার্ক ও পরীক্ষা

৮) পড়ার জায়গা আরামদায়ক কিনা

বাড়িতে পড়াশোনার ক্ষেত্রে কেবল সঠিক স্থান নির্বাচন করাই প্রধান কাজ নয়। বরং সে স্থান আরামদায়ক কিনা সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। আরামদায়ক মানে এই নয় যে বিশ্রাম নেয়ার জন্য জায়গা ঠিক করা। এক্ষেত্রে পড়ার জন্য যতটুকু সাবলীলতার প্রয়োজন তা নিশ্চিত করতে বলা হচ্ছে। দীর্ঘ একটা সময় বসে পড়ার জন্য যেমন আরামের প্রয়োজন ততটুকু নিশ্চিত করতে হবে। মোটকথা যে শিক্ষার্থী যেভাবে পড়তে স্বচ্ছন্দ বোধ করবে সে যাতে সেই পরিবেশটি পায়।

৯) সঠিক খাদ্যাভ্যাস

সুস্থ থাকা জীবনের সকল পর্যায়ের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা ভীষণ জরুরি। পড়াশোনায় মনোযোগী হতে এবং একটানা দীর্ঘ সময় পড়ার আগে সঠিক পরিমাণে প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি।

১০) পরিপূর্ণ বিশ্রাম ও ঘুম

পরিপূর্ণ ঘুম একজন শিক্ষার্থীকে মনোযোগী হতে এবং পড়া মনে রাখতে সাহায্য করে। পড়াশোনায় কার্যকর ফল লাভ করতে চাইলে পরিপূর্ণ বিশ্রাম এবং ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। আগে ঘুমাতে যাওয়া এবং সকাল সকাল উঠে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

১১) বাড়িতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা

অপর্যাপ্ত আলোতে পড়াশোনা করা চোখের জন্য ক্ষতিকারক। এছাড়াও দীর্ঘক্ষণ পড়ার ক্ষেত্রে বাসায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এমনকি বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে পর্যাপ্ত আলোর অভাব আমাদের মস্তিষ্ককে মনোযোগ দিতে বাধা দেয়। বাড়িতে পড়ার স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে সেখানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা আছে কিনা।

১২) মাঝেমধ্যে বিরতি নেয়া

পড়াশোনার মাঝে কিছুক্ষণের জন্য বিরতি নেয়া মস্তিষ্কের জন্য সহায়ক। এতে করে একঘেয়েমি চলে আসবে না এবং পড়ার প্রতি মনোযোগও ঠিক থাকবে। বিরতির সময়ে শিক্ষার্থীরা হাঁটাহাঁটি করা, গান শোনা এমনকি পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলতে পারে। এতে করে মনও প্রফুল্ল থাকবে এবং পড়াশোনার গতিও ত্বরান্বিত হবে।

১৩) লক্ষ্য স্থির করা

নিজের লক্ষ্য স্থির করা থাকলে গন্তব্যে পৌঁছান সহজতর হয়। লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়ার স্পৃহাই আমাদেরকে নিজের কাজে আরও বেশি দায়িত্ববান করে তোলে। পড়াশোনার ক্ষেত্রেও লক্ষ্যই পারে অধিক পরিশ্রমী করে তুলতে। লক্ষ্য স্থির করা নিজের গন্তব্যে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কাজ।

১৪) নিজেকে উৎসাহিত করা

বাসায় নিজে নিজে পড়াশোনা প্রায়ই একঘেয়ে মনে হতে পারে। এক্ষেত্রে খুব সহজেই অমনোযোগী হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। এসব সমস্যায় যাতে না পড়তে হয় সে লক্ষে নিজেকে সর্বদা উৎসাহিত করতে হবে। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে এবং ধৈর্যশীল হতে হবে।

১৫) মাল্টি-টাস্কিং থেকে বিরত থাকা

মাল্টি-টাস্কিং অর্থাৎ একই সাথে একাধিক কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে এটি সময় বাঁচাতে সহায়ক। কিন্তু প্রকৃত অর্থে এটি একই সময়ে করা সেই সবগুলো কাজের জন্যই ক্ষতিকর। একসাথে একের অধিক কাজ করতে থাকলে মস্তিষ্কে চাপ পড়ে এবং কোনোটিই সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করা হয় না। আর পড়ার সময়ে মাল্টি-টাস্কিং আরও বেশি ক্ষতিকর। শিক্ষার্থীরা যদি পড়ার সাথে সাথে অন্য কাজে লিপ্ত থাকে তাহলে তার সম্পূর্ণ মনোযোগ পড়ায় থাকেনা। তারচেয়ে সময় নিয়ে একেকটি কাজ আলাদা আলাদাভাবে সম্পন্ন করে নিতে হবে।

১৬) ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক

শান্ত শীতল সুর মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। বাসায় পড়ার পরিবেশের ক্ষেত্রে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক কার্যকরী হতে পারে। এক্ষেত্রে ধীরলয়ের গান কিংবা পিয়ানোর শব্দ বেশ সহায়ক। তবে এই পদ্ধতিটি সকলের জন্য কার্যকরী নয়।

১৭) নিজেকে যাচাই করা

বাড়িতে নিজ উদ্যোগে পড়াশোনার ক্ষেত্রে অন্যতম জরুরি একটি কাজ হচ্ছে প্রতিনিয়ত নিজেকে যাচাই করা। কতটুক পড়া হয়েছে তার উপরে পরীক্ষা দেয়া সবচেয়ে উপযোগী একটি মাধ্যম নিজের দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য।

১৮) মস্তিষ্কের জন্য অনুকূল তাপমাত্রা নিশ্চিত করা

পড়াশোনার জন্য কি কোনো আদর্শ তাপমাত্রা আছে? উত্তর হচ্ছে অবশ্যই আছে! জরিপ অনুযায়ী, মস্তিষ্কের জন্য অনুকূল তাপমাত্রা ৭০ থেকে ৭৮ ডিগ্রী ফারেনহাইট। এছাড়াও অতিরিক্ত গরম কিংবা অতিরিক্ত ঠান্ডা উভয়ই পড়াশোনার জন্য আদর্শ পরিবেশ নয়। কারণ এতে করে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়।

১৯) ঘরের রং নির্বাচন

ঘরের রং নির্বাচনে আমরা সাধারণত খুব একটা গুরুত্ব দেই না। কিন্তু আমাদের মানসিক বিকাশে এর ভূমিকা লক্ষ করা গিয়েছে। বিশেষ করে পড়াশোনার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকরণে পড়ার ঘরের রংও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রং নিউরোলজিকাল পাথওয়েতে প্রভাব বিস্তার করে যা অবশ্যই আমাদের আচরণ এবং অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। যেমনঃ যার মনোযোগের অভাব তার ঘরের জন্য সবুজ রং উপকারী। আবার কমলা রং প্রাকৃতিকভাবেই প্রফুল্লতা বজায় রাখতে পারে। অন্য দিকে নীল রং প্রোডাক্টিভিটি বৃদ্ধিতে সহায়ক।

২০) অন্য সবকিছু থেকে আলাদা থাকা

বাসায় পড়াশোনা’র উপযোগী পরিবেশ মূলত নিরিবিলি একটি স্থান হবে যেখানে অন্য সদস্যরা সচরাচর যাবেন না। মোটকথা পড়ার টেবিল যে নির্ধারিত স্থানে থাকবে তাকে অন্য সবকিছু থেকে পৃথক করে রাখা হবে।

উপরোক্ত বিষয়গুলো বাসায় পড়ার জন্য যথাযথ পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু এর মানে এই নয়যে এসকল পদক্ষেপই একমাত্র কাজ। বস্তুত বাসায় পড়াশোনা এর কাজটি প্রতিটি শিক্ষার্থীকে নিজ দায়িত্বে অর্জন করে নিতে হয়। উক্ত পদ্ধতিগুলো কেবল এই কাজটিকে সহজ করে দেয়।

তথ্য সহায়তাঃ

Exit mobile version