“আন্না কারেনিন” বইটিকে নামকরণ করা হয় উপন্যাসের প্রধান চরিত্র আন্নার নামে। আন্নার স্বামীর পদবী কারেনিন। স্বামীর নামের অংশ কারেনিন যুক্ত হয়ে আন্নার নাম হয় আন্না কারেনিনা।
আন্নার স্বামী আলেক্সান্দ্রভিচ কারেনিন ছিল রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের উঁচুতলার একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং ক্ষমতাধর সরকারি কর্মকর্তা। বয়সে সে আন্নার চেয়ে বিশ বছরের বড়।
আন্নার ৪ বছর বয়সী একটি পুত্রসন্তান আছে যার নাম সেরিওজা। আন্নার ভাই অব্লোনস্কির সাংসারিক টানাপোড়েন আসে তা মিটমাট করার জন্য আন্না মস্কো যায়। মস্কো শহরে এক অনুষ্ঠানে আন্নার পরিচয় হয় সুদর্শন পুরুষ কাউন্ট ভ্রনস্কির সঙ্গে। প্রথম দেখাতেই তাদের প্রেম হয়ে যায়।
অত্যন্ত তীব্র সেই প্রেম। ভ্রনস্কির ভালবাসা পাবার জন্য আন্না প্রকশ্যে তার স্বামী এবং এবং প্রানপ্রিয় সন্তান সেরিওজাকে ছেড়ে চলে আসে ভ্রনস্কির কাছে। ভ্রনস্কি ও আন্না দুজন দুজনকে পেয়ে আপাত সুখী হলেও সেই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয় না। ভ্রনস্কি ও আন্নার মধ্যে শুরু হয় দাম্পত্য কলহ।
এছাড়া সন্তান সেরিওজার জন্য মন পোড়াত আন্নার। মা ও প্রেমিকা এই দুই সত্তার দ্বন্দ্ব তাকে শান্তিতে থাকতে দেয় নি।সমাজের চাপ,ইর্ষা, অসন্তোষ এবং ব্যক্তিগত ননিরাপত্তাহীনতা তাকে গ্রাস করে।
একসময় আন্না নিজের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবার জন্য ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করে। পুরো উপন্যাসে তলস্তয় আন্নার প্রতি ছিল সহমর্মী।
পুরো নাম কাউন্ট লেভ(লিও) নিকোলায়েভিচ তলস্তয় কিন্তু সবার কাছে তিনি পরিচিত লিও তলস্তয় নামে। তিনি একজন খ্যাতিমান রুশ লেখক।১৯২৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর (২৮ আগস্ট পুরাতন ক্যালেন্ডার অনুযায়ী) রাশিয়ান সম্রাজ্যের টুলা প্রদেশের ইয়াম্নানা পলিয়ানার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তার জন্ম।
বাবা ও মা উভয় দিক থেকেই তিনি ছিলেন খাঁটি অভিজাত পরিবারের বংশধর। বাবা কাউন্ট নিকোলাই ইলিচ তলস্তয় ছিলেন বিশাল জমিদারির মালিক। চার সন্তানের মধ্যে তলস্তয় ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ।
তাকে রুশ সাহিত্যের ইতিহাসের অন্যতম সেরা লেখকই নয়, বরং বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি উপন্যাস ছাড়াও নাটক, ছোটগল্প এবং প্রবন্ধ রচনায় ও ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন।
তার দুইটি বিখ্যাত উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘ওয়ার এন্ড পিস‘ এবং ‘আন্না কারেনিনা’ । ১৯১০ সালের ২০ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিলো ৮২ বছর।
আন্না কারেনিনা অসম্ভব সুন্দরী, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও মেধাসম্পন্ন নারী। স্টিফেন অব্লোনস্কির বোন, কারেনিনের স্ত্রী এবং ভ্রনস্কির প্রেমিকা। আন্নাই উপন্যাসের প্রধান এবং কেন্দ্রীয় চরিত্র।
আন্নার স্বামী আলেক্সান্দ্রভিচ কারেনিন এবং তাদের ৪ বছর বয়সী একটি পুত্র আছে। কিন্তু আন্না ভ্রনস্কিকে ভালোবাসে। ভালবাসা পাবার জন্য স্বামী, পুত্র ত্যাগ করেন।
আলেক্সি আলেক্সান্দ্রভিচ কারেনিন আন্নার স্বামী। একজন সম্ভ্রান্ত, গম্ভীর ও যথেষ্ট ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন পুরুষ। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের উচুঁতলার একজন ক্ষমতাধর সরকারি কর্মকর্তা এবং প্রবীণ রাজনীতিবিদ। তিনি বয়সে আন্নার চেয়ে বিশ বছরের বড়। কাউন্ট আলেক্সি কিরিলোভিচ ভ্রনস্কি আন্নার প্রেমিক। একজন সুদর্শন পুরুষ। তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর অশ্বারোহী অফিসার।
ভ্রনোস্কির চরিত্রের মধ্যে উল্লেখ করা যেতে পারে উদারতা, সততা, সমবেদনা। প্রিন্স স্তেপান অব্লোনস্কি (স্টিভা) আন্নার ভাই ও ডলির স্বামী একজন সরকারি কর্মকর্তা। অত্যন্ত ফুর্তিবাজ, বয়স ৩৪ বছর।
কনস্ট্যান্টিন দিমিত্রিভিচ লেভিন স্টিভার পুরোনো বন্ধু। একজন অভিজাত জমিদার, প্রচুর ভূ-সম্পত্তির মালিক।প্রথমে কিটিকে ভালোবাসে কিন্তু কিটির থেকে প্রত্যাখিত হয়। পরবর্তীতে কিটির সাথে তার বিয়ে হয়।
তার চরিত্রের মধ্যে উল্লেখ করা যেতে পারে আদর্শবাদী,ধীর, লাজুক, জীবন জিজ্ঞাসু,অনুভূতিপ্রবন, চিন্তাশীল, বিচারশীল যুবক। রাজকন্যা একেতেরিনা “কিটি” ডলির ছোট বোন এবং পরবর্তীতে লেভিনের স্ত্রী।
প্রথমে সে ভ্রুনস্কিকে ভালবাসতো কিন্তু ভ্রনস্কির থেকে প্রত্যাখিত হওয়ার পর লেভিনকে বিয়ে করে যদিও লেভিন তাকে আগে থেকেই ভালবাসতো।সেরিওজা আন্না ও কারেনিনের ছেলে। বয়স ৪ বছর অ্যানি আন্না এবং ভ্রনস্কির মেয়ে।কাউন্টারেস ভ্রনস্কায়া ভ্রনস্কির মা।
দুটি খন্ডসহ আট অংশের একটি জটিল উপন্যাস । ভালোবাসার গল্পের মধ্যে দিয়ে এই উপন্যাসটি উনিশ শতকের রাশিয়ার উঁচুতলার রাজনীতি, বিত্তবান সমাজের গল্প, ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতি তুলে ধরেছেন ।
পাশাপাশি দুই দম্পত্তির সমান্তরাল কাহিনি তুলে ধরে তলস্তয় ভুল কিংবা ঠিক, প্রেম -অপ্রেম,ভালো বা মন্দের এক দ্বন্দ্বজটিল প্রতিবেশ নির্মাণ করেছেন এ উপন্যাসে।
এছাড়া উপন্যাসে বিশ্বাসঘাতকতা, বিশ্বাস, পরিবার, বিবাহ, আকাঙ্ক্ষা এবং গ্রামীন বনাম শহর জীবনের থিমগুলো ফুটে উঠে। এ উপন্যাসের মধ্যে দিয়ে তলস্তয় তুলে ধরেন এক চিরন্তন সত্যকে।
‘পারিবারিক দুঃখগুলো যার যার তার তার,সুখের অনুভূতি সবারই সমান’। উপন্যাসের শুরুর এই কথাটি দ্বারা তলস্তয় তুলে ধরেন এক চিরন্তন সত্যকে। পুরো উপন্যাসের দুইটি চরিত্রকে (আন্না ও লেভিন) আমরা আলোচনার দুইটি স্তম্ভ করে নিচ্ছি।
১. আন্না কারেনিনা উপন্যাসটির গল্প শুরু হয় প্রিন্স স্তেপান অব্লোনস্কি এবং তার স্ত্রী ডলিকে নিয়ে। তাদের দাম্পত্য জীবনে চলছে টানাপোড়েন কারন তাদের সন্তানদের গৃহশিক্ষিকার সঙ্গে অব্লোনস্কির অবৈধ সম্পর্ক জেনে গেছে তার স্ত্রী ডলি। বিষয়টি ডলি মানতে পারে নি ফলে বিবাহবিচ্ছেদ চাইছে সে।
এক পর্যায়ে আন্না এই কথা শুনতে পারে। ভাইয়ের সংসার ভাঙ্গার উপক্রম দেখে আন্না তা সমাধান করার উদ্দেশ্যে সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে মস্কো আসে। আন্নার স্বামী আলেক্সান্দ্রভিচ কারেনিন সেন্ট পিটার্সবার্গের একজন ক্ষমতাধর কর্মকর্তা।
রাশিয়ার উচ্চবিত্ত সমাজে আন্না কারেনিনা বেশ জনপ্রিয় ছিল কারণ তার স্বামীর মাধ্যমে সে অনেক সম্মান অর্জন করেছিল এবং তার আচার-আচরণ, কথা-বার্তা সবকিছু ছিল একজন সম্ভ্রান্ত মহিলার মতই। যদিও তাদের মধ্যেকার বয়সের পার্থক্য ছিল ২০ বছর ।
আন্না কারেনিনা মস্কো এসে ডলিকে বোঝায় যে তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সংসার রক্ষা করতে হবে। অবশেষে সে তাঁর ভাবিকে বোঝাতে সক্ষম হয়। সেই যাত্রায় আন্নার ভাই অব্লোনস্কির সংসার রক্ষা হয় কিন্তু আন্নার সংসারে ধ্বংসের বীজ রোপিত হয়।
অব্লোনস্কির দুই বন্ধু লেভিন ও ভ্রনস্কি। মস্কো শহরের এক বলনাচের অনুষ্টানে আন্নার পরিচয় হয় সুদর্শন পুরুষ কাউন্ট ভ্রনস্কির সঙ্গে। ভ্রনস্কি একজন সেনা কর্মকর্তা। ভ্রনস্কি অবশ্য আগে থেকেই আন্নার কথা শুনেছে তার বন্ধু অব্লোনস্কির কাছে। প্রথম দেখাতেই ভ্রনস্কি আন্নার প্রেমে পড়ে যায়।
কিছুদিন পরে মস্কো ছেড়ে সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের দিকে রওনা হয় আন্না। ভ্রনস্কি একই ট্রেনে ভ্রমণ করেন।রাতভর যাত্রার সময় দুজনের দেখা হয় এবং ভ্রনস্কি তার প্রেমের কথা আন্নাকে জানায়।
কিন্তু আন্না জানায়,এই প্রস্তাব তার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয় যদিও ভ্রনস্কি তার মনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছেন।সেন্ট পিটার্সবার্গ পৌঁছানোর পর আন্না ব্যাকুল হয়ে যায় ভ্রনস্কিকে দেখার জন্য।
এছাড়া ভ্রনস্কির সাথে দেখা হওয়ার পর প্রথমবারের মত আন্না তার স্বামীর কাছে নিজেকে অপ্রস্তুত মনে করেন। এর কিছু কারণও আছে। আন্না ও কারেনিনের মধ্যেকার বয়সের পার্থক্য প্রায় ২০ বছর।
আন্নার কারেনিন একজন ভালো মানুষ কারন আন্না যাই করুক না কেন ভুল কিংবা ঠিক কারেনিন তাকে মাফ করে দিত।এটা আন্না নিতে পারত না।সে ভাবত যে এটা মাফ করা নয় এটা একধরনের শান্তি।
সে ভাবত তার জীবন শান্ত জলাশয়ের মতো স্থির কারণ তার স্বামী তার ভাষার একটা নিয়মে চালিত যন্ত্রবিশেষ। হঠাৎ তার জীবনে এলো অসীম প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর, বাধনহারা যৌবনমত্ত অবিবাহিত যুবক ভ্রনস্কি।
ভ্রনস্কিকে দেখার জন্য আন্না ব্যাকুল হয়ে যাওয়ায় যেসব পার্টিতে ভ্রনস্কি যেতে পারে সেসব যায়গায় যাওয়া শুরু করে সে। তা সত্তেও আন্না নিজেকে বোঝায় এটা ভালবাসা নয়। কিন্তু নিজের প্রতি ভ্রনস্কির এই মনোযোগটা সে উপভোগ করে। খুব দ্রুতই ভ্রনস্কি এবং আন্নার একটি সম্পর্ক শুরু হয়।
তাদের প্রেম নিয়ে সেন্ট পিটার্সবার্গের উঁচু মহলে গুঞ্জন শুরু হয়। ভ্রনস্কি ও তার ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তায় পড়ে য়ায় তার পরিবার। চরম সঙ্কট ও আবেগের মধ্যে আন্না স্বামীর কাছে নিজের সম্পর্কের কথা স্বীকার করে। কিন্তু কারেনিন তাকে এটিকে ভেঙে দিতে বলে।
অন্যদিকে আন্না ভ্রনস্কিকে জানায়, তিনি তার সন্তানের মা হতে যাচ্ছেন। এই কারনে ভ্রনস্কির প্রতি আরও দুর্বলতা বাড়তে থাকে আন্নার। প্রকাশ্যে সে তার স্বামীকে ছেড়ে চলে আসে ভ্রনস্কির কাছে।বিষয়টি আন্নার স্বামী মেনে নিতে পারে না।
ভ্রনস্কির কাছ থেকে আন্নাকে জোড় করিয়ে হলেও দূরে সরিয়ে আনতে চায়।অনেক চেষ্টা করেও সে ব্যর্থ হয় ভ্রুনস্কির কাছ থেকে আন্নাকে সরিয়ে আনতে। এইদিকে আন্না মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে পৌঁছে যায় ভ্রনস্কির কন্যাসন্তান জন্ম দিতে গিয়ে।
ফলে ভ্রনস্কি কারেনিনের কাছে ক্ষমা চায় এবং আন্নাকে তালাক দেওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করে। কিন্তু কারেনিন তালাক দিতে অস্বীকার করে এবং জানায় সে আন্নাকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না। এই কথা শুনার পর ভ্রনস্কি আত্নহত্যা করার চেষ্টা করে কিন্তু ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়।
এরপর রাশিয়া ছেড়ে আন্না ও ভ্রনস্কি ইতালিতে চলে যায়। সেখানে গিয়ে তারা আপাতত সুখী হলেও সেই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয় না। ইতালি গিয়ে ভ্রনস্কি চিএকলা চর্চা শুরু করে এবং আন্নার ছবি আঁকে।
কিন্তু কিছুদিন পর ভ্রনস্কি বুঝতে পারল শিল্প সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব প্রতিভা এবং আবেগের অভাব রয়েছে তাই ক্রমশ অস্থির হয়ে তারা রাশিয়ায় ফিরে আসে। কিন্তু সেন্ট পিটার্সবার্গের উঁচু সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে আন্না।
ফলে তার মধ্যে হতাশা ভর করতে থাকে এছাড়া আন্নার চাহিদা মেটাতে গিয়ে ভ্রনস্কিও তার থেকে দূরে সরে যেতে থাকে।আন্নার ক্রমবর্ধমান তিক্ততা,একঘেয়েমি এবং হিংসার কারনে তাদের তর্ক হয়।এর ফলে একসময় ভ্রনস্কি বিরক্ত হয়ে যায়।
অন্যদিকে ভ্রনস্কির মা আন্নাকে ছেড়ে প্রিন্সেস সরোকিনাকে বিয়ে কারার প্রস্তাব দেয় তাকে।এ কথা আন্না শুনার পর তাদের মধ্যে আরও ঝগড়া বাড়তেই থাকে।আন্না ভাবে ধনী সমাজের মহিলার সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য তার মায়ের পরিকল্পনা সে মেনে নিবে।
এছাড়া সন্তান সেরিওজার জন্য আন্নার মন পোড়াত। কিন্তু সন্তান ও মায়ের দেখা করার প্রতি ছিল কঠোর নিষেধাজ্ঞা। মা ও প্রেমিকা এই দুই সত্তার দ্বন্দ্ব তাকে শান্তিতে বাঁচতে দেয় নি। একসময় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে আন্না এবং সে বিশ্বাস করে যে সম্পর্কটি শেষ হয়েছে।
নিজের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি হিসেবে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় সে।একসময় আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে চলমান ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ যেন এক অন্তহীন প্রায়শ্চিত্ত তার।
২. লেভিন সমাজতন্ত্রের সুন্দর একটি রুপ তলতস্তয় তুলে ধরেছেন লেভিনের চরিত্রে। লেভিন জমিদার ছিলেন প্রচুর ভূসম্পত্তির মালিক। সেখানে অনেক গমের চাষ হতো।লেভিন জমিদার থাকা সত্ত্বেও চাকরদের সাথে একত্রে গম কাটত এবং অনেক কায়িক পরিশ্রম করত।
লেভিনের যখন মন খারাপ থাকত তখন সে মন ভাল করার জন্য চাকরদের সাথে গম কাটতেন। সে একটা পার্ট নিয়ে সমান্তরালে গম কাটতেন এভাবে তার মন ভাল হয়ে যেত।কিটিকে ভালোবেসে একবার প্রত্যাখিত হওয়ার পর চূর্নিত লেভিন বিয়ের আশা ছেড়ে দিয়ে ফিরে আসে তার গ্রামে।
পরবর্তীতে আবার তার কিটির সাথে দেখা হয় এবং তাদের বিয়ে হয়। বিয়ে করে কিটিকে নিয়ে সে চলে আসে গ্রামে এবং তারা নতুন জীবন শুরু করে।যদিও তারা সুখী কিন্তু কিছুদিন পর তাদের সম্পর্কেও একটু তিক্ততা আসল। কিছুদিন পর তাদের ঘর আলোকিত করে এক পুত্রসন্তান এলো।
লেভিন বাবা হলো।একসময় লেভিনদের জমিদার বাড়িতে অনেক ঝড় হয় তখন তার স্ত্রী পুত্রসন্তান বাইরে ছিল। তাদের সুরক্ষার ভয়ে লেভিন বুঝতে পারল সে তার স্ত্রী ও পুত্রকে কতটা ভালবাসে। লেভিন সমাজনীতি, রাজনীতি কোনোটার সাথেই নিজের একাত্না পায় না। জীবনের অর্থ খোঁজার অসীম তাগিদ, প্রতিষ্ঠিত ধর্মের বিরোধিতা করা এবং নিজের মধ্যে ইশ্বরের অস্তিত্বে অবিশ্বাসের যন্ত্রনা অনুভব করা এগুলোর কোনটাতেই সে নিজেকে খুঁজে পায় না।
অবশেষে তা পেয়েছে সে এক অশিক্ষিত কৃষকের থেকে। সে বুঝতে পেরেছে জীবনের অর্থ। সে নিজেকেই নিজে বলল, ‘এখন থেকে আমার জীবন, আমার পুরো জীবন, আমার যাই ঘটুক তার নির্বিশেষে, তার প্রতিটি মিনিট শুয়ে আগের মত অর্থহীন থাকবে না, তাতে থাকবে সুভের সন্দেহাতীত একটা বোধ, যা আমিই পারি সঞ্চারিত করতে!’
প্রথমেই কালের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া বিশ্বনন্দিত এক অনবদ্য গ্রন্থের পর্যালোচনা রচায় লেখিকা মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু নিবন্ধটি পড়ে অনেকটা হতাশ হতে হলো— এত বড়ো দীর্ঘ সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস যিনি পড়ে অনুধাবনের ক্ষমতা রাখেন, বইয়ের পর্যালোচনায় পাঠক তাঁর কাছ থেকে এর চেয়ে উত্তম কিছু আশা করবে বইকি। গোটা নিবন্ধে যে দিকটিতে সবচেয়ে অপক্বতা ছাপ পাওয়া গিয়েছে, সেটি হচ্ছে লেখার প্রাণ ‘ভূমিকা’। হুট করে মূল আলোচনা পেড়ে না-বসে সরস ভূমিকায় পাঠকের কাছে আলোচ্য বিষয়বস্তুর স্পষ্ট ধারণা পৌঁছে দেওয়া নিঃসন্দেহে যে-কোনো লেখাকে অধিক আকর্ষণীয় করে তোলে।
তারপর এলো কাহিনি বর্ণনা— কোনো গ্রন্থের সামগ্রিক পর্যালোচনার সময় ওই বইয়ের চূড়ান্ত পরিণতি ঊহ্য রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যথা নব্য-পাঠক সম্পূর্ণ গ্রন্থটি পড়বার আগেই মূল আবেদন ও উত্তেজনা হারিয়ে ফেলেন। পাঠে আবেদন কমে গেলে পাঠকের মনোযোগ ও পাঠের গতি— উভয়ই শ্লথ হয়ে যায়, স্থায়িত্ব হ্রাস পায়, যা কখনো কাম্য নয়।
তৃতীয় ঘাটতি হচ্ছে উপন্যাসের ভাষিক বিশ্লেষণ কিংবা আলোচনা-সমান-আলোচনার অনুপস্থিতি। আন্না কারেনিনা নিঃসন্দেহে বিশ্বসাহিত্যের নিখুঁত সংযোজনসমূহের একটি। মানসম্মত বক্তব্য, নির্বাচিত বক্তব্যের প্রতি তলস্তয়ের আন্তরিক ভালোবাসা এবং বক্তব্যের সুনিপুণ প্রকাশে অভিভূত হয়ে আরেক রুশ কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক ও সমালোচক ফিওদর দস্তয়ভস্কি তো ‘শিল্প হিসেবে আন্না কারেনিনা সম্পূর্ণ ত্রুটিহীন’ বলে স্বীকৃতি দিয়ে তলস্তয়কে ‘শিল্পের দেবতা’ সম্বোধনে আখ্যায়িত করেছেন। উইলিয়াম ফকনার, ভ্লাদিমির নাবোকভ প্রমুখ সমালোচকও এই গ্রন্থটির শ্রেষ্ঠত্ব বিনা তর্কে মেনে নিয়েছেন; টাইমস ম্যাগাজিন ঘোষণা করেছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ উপন্যাস হিসেবে। কেবল এটিই নয়, তলস্তয়ের নব্বই খণ্ডে রচিত প্রতিটি সাহিত্যসম্পদই বিশ্বসাহিত্যের অমূল্য রত্ন। তাই, তাঁর লেখা যে-কোনো গ্রন্থের আলোচনা করতে গেলে তাঁর লেখন শৈলী নিয়ে কিছু বলাটা আবশ্যক কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়; আন্না কারেনিনা, ওয়ার অ্যান্ড পিস, পুনরুত্থান প্রভৃতি গ্রন্থের ক্ষেত্রে সে কর্তব্য হয়ে যায় দায়িত্ব। এখানে লেখিকা মহোদয় সে দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়েছেন বলেই আমি দায় চাপানোর অবকাশ পেয়ে গিয়েছি।
সবশেষ, সুন্দর প্রয়াসটির জন্যে আরও একবার সাধুবাদ জানিয়ে, এবং অনাকাঙ্ক্ষিতসব কথার জন্যে ক্ষমাপ্রার্থনা করে ছোটো মন্তব্যটির ইতি টেনে দিচ্ছি।
ধন্যবাদ।
রিভিউটা খুব গুছিয়ে লিখেছেন। ভালো লাগলো।