বিশ্বের পেশাদার কমিউনিটির মধ্যে সর্ববৃহৎ হচ্ছে এই লিংকডইন। আগামীতে সিভি এর বিকল্প হিসেবে ধরা হচ্ছে এই লিংকডইন সামাজিক মাধ্যমকে ।
একটি জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে কর্পোরেট জগতে ৭৮% নিয়োগকর্তা প্রার্থীদের যোগ্যতা যাচাইয়ে লিংকডইনের সাহায্য নেন, কারণ একজন কর্মীর সবগুলো পেশাগত দক্ষতা সম্পর্কে জানতে লিংকডইনের কোন তুলনা হয় না।
এজন্যই বিশ্বজুড়ে ৬০ কোটিরও বেশি মানুষ লিংকডইন ব্যবহার করে চলেছেন ক্যারিয়ারের অগ্রযাত্রাকে উন্নত করে তুলতে। এজন্য বাংলাদেশেও অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে লিংকডইনের জনপ্রিয়তা।
চলুন, জেনে নেওয়া যাক লিংকডইন কি, এটি কিভাবে ব্যবহার করতে হয় এবং কেন ব্যাবহার করবেন-
“Elevator pitch” এর নাম অনেকেই শুনে থাকবেন। মনে করুন এলেভেটরে আপনার বসের সাথে দেখা, মাত্র ৩০ সেকেন্ডের একটি ভালো সুযোগ নিজেকে উপস্থাপন করার! এটি বেশ কঠিন ব্যাপার, কিন্তু সুযোগটিকে কাজে লাগাতে জানতে হবে। কারণ নিয়োগকর্তারা আপনার পিছনে দীর্ঘ সময় খরচ করবে না। লিংকডইনের ‘Summary’ ও অনেকটা এলেভেটর পিচের মতোই। খুব সংক্ষেপে অল্প সময় এর মধ্যে নিজেকে তুলে ধরুন।
১। লিংকডইনের ছবিটি কেমন হয়া দরকার ? ছবির গুরুত্ব সম্পর্কে অনেকেই সচেতন নন, অথচ ছবি দেখেই আপনার সম্পর্কে মানুষের মনে প্রথমে ধারণা জন্মাবে। যেহেতু আপনার লিংকডইন প্রোফাইলটি ব্যবসায়িক প্রয়োজনে – তাই প্রফেশনাল ছবি হওয়া চাই ।
কভার ফটোতে এমন ছবি দেয়ার চেষ্টা করুন যেটি দেখে মানুষ আপনার কাজ সম্পর্কে একটি সুন্দর ধারণা পাবে। যেমন আপনি কোথাও বক্তব্য রাখবার সময় ছবি থাকলে – এই ছবি সবার মনে ইতিবাচক ছাপ ফেলবে আপনার আত্মবিশ্বাস, নেতৃত্বগুণ এবং যোগ্যতা সম্পর্কে।
২। মানুষ সবার আগে যে জিনিসটি খেয়াল করে তা হচ্ছে আপনার নাম। এই ভুলটি অনেকের প্রোফাইলেই দেখা যায় – নাম ঠিকমতো না লেখা। যেমন কারো নাম যদি লেখা হয় ‘EMAROT KHAN– এভাবে পড়তে কিন্তু আরাম হচ্ছে না।
‘Emarot khan ‘ আদ্যক্ষর বড় হরফে এবং বাকি অক্ষরগুলো ছোট হরফে – এভাবে পড়তে সহজ হয়। সূক্ষ্ম এই বিষয়টি অনেকে খেয়াল করেন না কিন্তু এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমেই আপনার যোগাযোগ দক্ষতা, অর্গানাইজেশন – ইত্যাদি সম্পর্কে একটা ভিত্তি গড়ে উঠবে।
৩। ছাত্রজীবনে লিংকডইন প্রোফাইল খোলা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু অনেকেই তাদের প্রোফাইলে পরিষ্কার করে লিখেন না তিনি কোন বিষয়ের ছাত্র/ছাত্রী বা তার দক্ষতা কিসে।
পরিচয়ে কেবল ‘ছাত্র/ ছাত্রী ’ না লিখে কোন প্রতিষ্ঠানে, কোন বিষয়ের উপর পড়ছেন, কোন বর্ষে আছেন সেগুলো উল্লেখ করুন, এবং নিয়মিত আপডেট করুন।
৪। ছাত্রজীবনে কাজের অভিজ্ঞতা থাকে না অধিকাংশের । এজন্য অনেকেই অভিজ্ঞতার জায়গায় শিক্ষাগত যোগ্যতার বর্ননা দিয়ে থাকেন। এগুলো মূলত ‘Education’ সেকশনে দেওয়া উচিত।
অভিজ্ঞতার জায়গাটি একদম খালি না রেখে আপনি কী কাজ করেছেন সেগুলো দিতে পারেন । অনেকেই কোচিং সেন্টারে পড়ান, ছোটখাটো ইন্টার্নশিপ করেন। এছাড়া অনলাইনে লেখালেখি করা, ভিডিও বানানো, ছবি তোলা ইত্যাদি নানারকম কাজের সাথে জরিত – আপনি এমন কিছুর সাথে যুক্ত থাকলে অভিজ্ঞতার জায়গায় সেগুলো তুলে ধরুন।
৫। ছাত্র/ছাত্রীদের আরেকটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে – শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম ঠিকভাবে লেখা দরকার। যেমন কেউ যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তাহলে প্রোফাইলে ‘Dhaka University’ না লিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল নাম ‘University of Dhaka লিখতে হবে। কারণ লিংকডইন একটি আন্তর্জাতিক মানের প্ল্যাটফর্ম, এখানে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড ব্যাবহার করা উচিত।
৬। এবারে আসা যাক কর্মজীবীদের প্রসঙ্গে। ধরুন আপনি এ পর্যন্ত দুইটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন, কিন্তু লিংকডইন ফোকাস করবে কেবল মাত্র একটি প্রতিষ্ঠানকে – সর্বশেষ যে প্রতিষ্ঠানে আপনি চাকরি করছেন সেটিকে।
৭। যোগাযোগের জন্য একটি মাত্র ইমেইল ব্যবহার করুন। অনেকেরই কয়েকটি ফোন নাম্বার/ইমেইল একাউন্ট থাকে। এমন একাউন্ট দেন যেখানে আপনাকে সবসময় পাওয়া যাবে। সেই ইমেইলটি প্রতিনিয়ত চেক করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। দ্রুত রিপ্লাই পেলে প্রাপকের মনে আপনার পেশাদারিতা এবং দক্ষতা সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। অনেকে শুধু অফিসে মেইল চেক করেন, ছুটির দিনে মেইল চেক করেন না এগুলো অপেশাদারিতার লক্ষণ।
১। লিংকডইন মানেই যে কেবল পেশাদারি কাজের কথা লিখতে হবে এমন না। মানুষের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলার সবচেয়ে ভাল উপায় ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে যোগাযোগ গড়ে তোলার মাধ্যম এটি।
তাই প্রোফাইলে আপনার বিভিন্ন গঠনমূলক কথা লিখতে ভুল করবেন না। যারা আপনার প্রোফাইল পড়ছে তাদের অনেকের সাথেই আপনার hobby মিলে যেতে পারে, সেখান থেকে আপনার সাথে পরিচয়ের আগ্রহও তৈরি হতে পারে।
২। লিংকডইন আপনার সঙ্গে যুক্ত পেশাদারদের কাছ থেকে বিভিন্ন পেশাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার সুপারিশ পাবেন। তাই নিয়োগকর্তারা অনেকক্ষেত্রেই ইন্টারভিউর আগে চোখ বুলিয়ে নেন প্রার্থীর লিংকডইন প্রোফাইলে।
৩। কানেকশন বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন গ্রুপে জয়েন করুন। কিন্তু এক্ষেত্রে একটি সমস্যা হচ্ছে বেশিরভাগ গ্রুপই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণে সহায়ক না। কেননা লিংকডইনে প্রতি সেকেন্ডে গ্রুপ তৈরি হয়।
৪। আপনার দক্ষতা গুলোর বিবরণ দেওয়ার সময় বিভিন্ন ‘কি ওয়াড’ ব্যবহার করুন। চিন্তা করুন আপনার নিয়োগকর্তা কী কী দক্ষতা প্রত্যাশা করবেন আপনার কাছে সেগুলো কি-ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করুন।
৫। কানেকশন তৈরি অনেক ভালো একটি দক্ষতা। ফেসবুকে এমন অনেকেই আছেন যারা একদম কাছের মানুষছাড়া কাউকে ফ্রেন্ডলিস্টে রাখেন না। কর্পোরেট জগতে এটি বোকামি হিসেবে গণ্য হয়। কানেকশন যতো বড়, আপনার কর্পোরেট জগত ততোই বড় হবে। বিভিন্ন মিটিং, সেমিনার, ওয়ার্কশপে মানুষের সাথে কথা বলুন, পরিচিত হন, লিংকডইনে কানেক্টেড থাকুন।
৬। ‘Company Buzz’ নামে লিংকডইনের একটি অ্যাপ আছে, এটি ব্যবহার করে আপনি জানতে পারবেন টুইটার, লিংকডইন ইত্যাদি সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে আপনার সম্পর্কে মতামত, ধারণা ইত্যাদি।
৭। সামাজিক মাধ্যমে আপনি ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, যেখানেই থাকুন না কেন লিংকডইন প্রোফাইল লিঙ্কটি দিতে ভুলবেন না। এর মাধ্যমে নতুন নতুন নেটওয়ার্ক তৈরি হবে।
সবশেষে এটাই বলতে চাই, লিংকডইন একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক মাধ্যম, অতএব আপনি সঠিক ভাবে আপনার লিংকডইন আইডিটি সম্পাদনা করতে পারলে আশা করি দ্রুত এর সুফল ভোগ করতে পারবেন ।
আরও পড়ুনঃ ছাত্রজীবন থেকেই শুরু হোক ফ্রিল্যান্সিং
মন্তব্য লিখুন