সাহিত্যের প্রতি বাঙালির আকর্ষণ বেশ প্রবল। আর সেই সাহিত্য যদি হয় গোয়েন্দা সাহিত্য, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। বাংলা ভাষায় অনেক গুলো গোয়েন্দা চরিত্র সৃষ্টি হয়েছ। যেগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে আছে বাঙালি পাঠকের মনে।শুধু বাংলা নয় অন্য ভাষার গোয়েন্দা সাহিত্যের প্রতিও কার্পন্য করেনা বাঙালি পাঠকেরা। এর প্রমাণ মেলে বিদেশি গোয়েন্দা চরিত্র শার্লক হোমস এর বেলাতে। বিদেশি ভাষার গোয়েন্দা চরিত্র হলেও বাঙালি পাঠকের মন জয় করে নিয়েছে এই চতুর গোয়েন্দা “শার্লক হোমস”।
গোয়েন্দা শার্লক হোমসের কথা সবারই জানা। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় গোয়েন্দা মনে করা হয় গোয়েন্দা শার্লক হোমস -কে। শার্লক হোমস গল্পের স্রস্টা আর্থার কোনান ডায়েল। জনপ্রিয় এই গোয়েন্দা চরিত্রটিকে পৃথিবীর মানুষের সামনে তিনি প্রথম নিয়ে আসেন ১৮৮৭ সালে।
আর্থার কোনান ডায়েল ছিলেন একজন মেডিকেল ছাত্র। ডাক্তারি পাস করে চাকরির সুবাদে গ্লাইমাউথের সাউথ সি’র ১ নম্বর বুশ ভিলাতে বাড়িভাড়া করে থাকতেন তিনি। ডাক্তারির পাশাপাশি তার লেখালেখির শখ জাগে।
তাই ডাক্তারির পাশাপাশি লেখালেখির কাজে হাত দেন ডায়েল । এবং ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে “এ টেলড স্কিন’ নামের একটি উপন্যাস লিখে ফেলেন। এই উপন্যাসের মাধ্যমেই গোয়েন্দা শার্লক হোমসের জন্ম।
তবে সম্পুর্ন অর্থে জন্ম বলা যায় না। কারণ এ উপন্যাসে শার্লক হোমসের নাম ছিল শেরিনফোর্ড হোমস। কিন্তু নাম টি আর্থার কোনান ডায়েলের নিজেরই পছন্দ হচ্ছিল না,তাই তার নাম পাল্টে নাম রাখেন শার্লক হোমস।
শুধু উপন্যাসের নায়কের নাম নয় পুরো উপন্যাসটির নাম পাল্টে ফেলেন তিনি। নতুন নাম দেন “এ স্টাডি ইন স্কারলেট”।এই উপন্যাসের মাধ্যমে মানুষের সামনে প্রথম আবির্ভূত হয় শার্লক হোমস।
এ স্টাডি ইন স্কারলেট’ বইটি লেখা শেষে তিনি অনেক প্রকাশকের সাথে আলাপ করেন,কিন্তু কেউই তার বইটি প্রকাশ করতে রাজি হয়না। অনেক খোঁজাখুঁজি করে একটি ম্যাগাজিনে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করেন গোয়েন্দা শার্লক হোমসের গল্প।
প্রকাশিত হবার পরেই সব বয়সের পাঠকের মন জয় করে নেয় গোয়েন্দা শার্লক হোমস। শার্লক হোমসের জনপ্রিয়তা পাল্টে দেয় ডায়েলের জীবনের গতিপথ।লিখতে থাকেন একের পর এক উপন্যাস ও ছোটগল্প।
আর্থার ডায়েল হোমসকে নিয়ে চারটি উপন্যাস ও ৫৬টি ছাটো গল্প লিখেছেন। প্রথম কাহিনী ‘এ স্টাডি ইন স্কারলেট’ ১৮৮৭ সালের বিটনস ক্রিসমাস অ্যানাল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় কাহিনীটি ‘দ্য সাইন অব দ্যা ফোর’ এ প্রকাশিত হয় ১৮৯০ সালে লিপিনকোটম মাসিক ম্যাগাজিন পত্রিকায়।
১৮৯১ সালে ‘দ্য স্ট্যান্ড ম্যাগাজিন’পত্রিকায় প্রথম ছাটো গল্পের সিরিজটি প্রকাশিত হয়।যার ফলে গোয়েন্দা শার্লক হোমসের জনপ্রিয়তা আরো বেড়ে যায়। আর্থার ডায়েল ১৯২৭ সাল পর্যন্ত হামেসকে নিয়ে অনেকগুলো ছোট গল্পের সিরিজ এবং দুটি উপন্যাস ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করনে।
শার্লক হোমসের কাহিনী ১৮৮০ থেকে ১৯০৭ সালের পটভূমিতে লেখা। শেষ ঘটনাটির সময়কাল অবশ্য ১৯১৪। শার্লক হোমস কাহিনীর প্রথম উপন্যাস ‘এ স্টাডি ইন স্কারলেট ‘এ আবির্ভূত শার্লক হোমসের বয়স বলা হয় ৩৩ বছর, তার এক ভাই মাইক্রোফট হোমস।
শার্লকের বন্ধু ডা. ওয়াটসন। শার্লক হোমস একজন চতুর ও জ্ঞানী গোয়েন্দা। বক্সিং ও তলোয়ারবিদ হিসেবেও সে খুব বিজ্ঞ।অবসরে সে ভায়োলিন বাজাতে ভালোবাসেন। তার অ্যাডভেঞ্চারের সময় তার সাথে থাকত পিস্তল, পাইপ, ম্যাগনিফাই গ্লাস ও ডিয়ার স্ট্যাকাজ ক্যাপ।
যে কোনো বিষয়ে মানুষের মন বুঝে ফেলা এবং তাদের সাথে বন্ধুত্ব করা তার একটি বিশেষ গুন। শার্লক হোমসের অধিকাংশ কাহিনীই(চারটি গল্প বাদে) শার্লক হোমসের বন্ধু ও সহকারী তথা জীবনীকার ডা. জন ওয়াটসনের জবানিতে লেখা হয়েছে।
দুটি গল্প (দ্য ব্লাঞ্চেড সোলজার্স ও দা লায়নস ম্যান) শার্লক হোমসের নিজের জবানিতে লেখা হয়েছে এবং বাকী দুইটি গল্প (দ্য ম্যাজারিন স্টোন ও হিজ লাস্ট বো) তৃতীয় পুরুষের জবানিতে লেখা হয়েছে। আর্থারের প্রথম উপন্যাস ‘এ স্টাডি ইন স্কারলেট ‘এ ড. ওয়াটসনের এক দীর্ঘ বর্ননা করা আছে ।
ডা. জন ওয়াটসন একজন সেনাবাহিনীর ডাক্তার ছিলেন। অবসর গ্রহণের পর শার্লক হোমসের সাথে তার পরিচয় হয় এয় এবং বন্ধুত্ব হয়, পরে সে শার্লককে তার কাজে সহায়তা করতে শুরু করে। তারা দুজন মিলে সকল কেস সমাধান করেন।
শার্লক হোমস প্রাইভেট ডিটেকটিভ হলেও অনেক কেসে পুলিশ কে সাহায্য করেছেন। ওয়াটসন তার বক্তব্যে বলেন হোমসের গুরুত্বপূর্ণ ৫৩টি কেসের মধ্যে ৪৯টির ক্রেডিট নিয়েছে পুলিশ। এতে অবশ্য হোমস কিছুই মনে করেননি।
শার্লক হোমস চরিত্রটি সবার কাছে এত বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে, ‘দ্য ফাইনাল প্রবলেম’ গল্পে হোমসের মৃত্যু হলে, পাঠকদের তীব্র ক্ষোভের মুখে আবার তাকে ফিরিয়ে আনা হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে আর্থার কোনান ডায়েলের লেখা শার্লক হোমস উপন্যাস ও গল্প গুলো।এছাড়াও অনেক সিনেমা ও সিরিজ তৈরি করা হয়েছে শার্লক হোমস এর গল্প ও উপন্যাস অবলম্বনে এবং অসংখ্য অভিনেতা অভিনয় করছেন শার্লক হোমসের চরিত্রে। মানুষের মনে এখনো শার্লক হামেস এক জীবন্ত চরিত্র হয়ে আছেন।
মন্তব্য লিখুন