“প্রত্যাশিত মৃত্যু” গল্পের নায়ক জাবেদ। বয়স ৩৫ কি ৩৬। একটা ব্যাংকে চাকরি করে। বর্তমানে জাবেদ খুব খুশি, কারণ সে বাবা হতে চলছে। আর জাবেদর স্ত্রী এতটাই খুশি যে বাপের বাড়ি গিয়ে আরাম করছে। তাই জাবেদ এখন তার বাসায় একা থাকে।
এবার মূল গল্পে আসা যাক, বৃহস্পতিবার, ব্যাংকের কাজ শেষ করে বন্ধুদের সাথে বসে সিগারেট আর বিয়ার খেয়ে বাসায় ফিরতে টকটু রাত হয়ে গেলো।বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে, বউয়ের সাথে ফোনে কথা বলে ঘুমাতে চলে গেলো জাবেদ।
শুক্রবার, ঘড়িতে সকাল ৮ টা বাজে, অ্যালার্ম বেজে উঠলো,জাবেদ কোনো রকমে অ্যালার্ম টা বন্ধ করে উঠে বসলো। খুব খারাপ লাগছে তাঁর। ঘেমে গেছে সে। সে ওপরে তাকিয়ে দেখলো ফ্যান চলছে, তবুও সে ঘামছে।
জাবেদ বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াবার চেষ্টা করলো, কিন্তুু বসে পরলো তার পা দুটি যেন সকল শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।
অনেক চেষ্টা করে সে বেসিন এর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো দাঁত ব্রাশ করার জন্য, আয়নার সামনে দাড়াতেই সে চিৎকার করে ছিটকে পরলো কিছুটা দূরে।
সে ভয়ে ভয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখলো সে ছাড়া আর কেউ নেই ঘরে, তবে আয়নায় সে যে এক বৃদ্ধের প্রতিবিম্ব দেখলো কে সে! জাবেদ সাহস সঞ্চয় করে বহু কষ্টে আবার উঠে দাঁড়ালো আয়নার সামনে এবারো সে সেই বৃদ্ধের প্রতিবিম্ব দেখতে পেলো।
এবার সে তার নিজের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠলো, সে দেখলো সে আর গতকাল রাতের জাবেদ নেই,সে এখন বৃদ্ধ। তার শরীরের চামড়া কুঁচকে গেছে।
নিজেকে দেখে নিজেরই ভয় লাগছে। তার গলা শুকিয়ে আসছে। প্রচন্ড পানির পিপাসা তাকে আচ্ছন্ন করেছে।সে অনেকটা পানি পান করলো তবুও যেন তার পিপাসা মিটলো না।সে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো।
তার পিপাসা বেড়েই চলেছে। মনে হচ্ছে যেন শরীরের সমস্ত শিরা-উপশিরা শুকিয়ে আসছে। হঠাৎ ই তার দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো। চোখের সামনে অন্ধকার হয়ে আসছে। জাবেদ ভাবলো সে হয়তো মারা যাবে।
তখন তার পরিবারের কথা,তার অনাগত সন্তানের কথা মনে পরলো।সে মনে মনে বললো, হে আল্লাহ, আমি মরতে চাই না।আপনি আজ আমার বদলে অন্য কাউকে মৃত্যু প্রদান করুন।
আরও পড়ুনঃ ছোট গল্পঃ “প্রথম গুলি, প্রথম রক্ত, প্রথম শহীদ”
এমন সময় তার ফোন বেঁজে উঠলো (রিংটোন)। রিংটোনের শব্দে ঘুম ভাঙলো জাবেদের। সে লাফিয়ে উঠে বসলো। সে দেখলো সে ঘামছে।সে বুঝতে পারলো যে সে স্বপ্ন দেখছিলো।
ফোন হাতে নিয়ে দেখলো যে তার শ্বশুর ফোন করেছেন। জাবেদ কলব্যাক করলো,জবেদ শুনতে পেলো ওপার থেকে তার শ্বশুর বলছেন মিষ্টিকে(জাবেদের স্ত্রী) হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি, তুমি দ্রুত আসো।
প্রায় চার ঘন্টা পর জাবেদ হাসপাতালে পৌছালো। সে দেখলো তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ির মন খারাপ, চোখে পানি।সে গিয়ে শ্বশুরের পাশে বসে পরলো।শ্বশুর মসাই, জাবেদের ঘাড়ে হাত দিয়ে বললো, ডাক্তাররা বাচ্চাকে বাঁচাতে পারেনি।
জাবেদের চোখ বেয়ে পানির ফোঁটা গড়িয়ে পরতে লাগলো।আর মনে মনে বলতে লাগলো, হে আল্লাহ আপনি আমাকে মেরে ফেলতেন কিন্তু আমার সন্তান কে বাঁচিয়ে রাখতেন।
“প্রত্যাশিত মৃত্যু”
সমাপ্ত
মন্তব্য লিখুন