তুমি চাইলেই একটা মধ্যবিত্ত
প্রেমের গল্প হবে আমাদের।ঐ আকাশের বৃষ্টি, বসন্ত,
কৃষ্ণচূড়া কিংবা রোদেলা বিকেল,
একটাও নেই আমার নিয়ন্ত্রণে।তোমার এসব শখ অথবা আকাংখার
কোনটাই তুমি চাইলে পারব না দিতে,
তবে আমার একটা আমি আছে,
একটা “মধ্যবিত্ত” আমি।
আয়াস কেমন আছো? আমি মোটেও ভালো নেই, বাবা আমার বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। কি করব বুঝতেছি না,আমি বিয়ের জন্য মোটেও প্রস্তুত না। বাবাকে কোন ভাবেই কনভেন্স করতে পারছি না।
ম্যাসেজটা দেখে আয়াস থমকে গেল, কারণ আয়াস তখন আফ্রিন তথা কোন মেয়ের জন্য উপযুক্ত নয়। আয়াস হল মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান, আয়াস জানে মধ্যবিত্তরা চাইলেই সব কিছুর সঠিক সমাধান করতে পারে না। এইসব ভাবতে ভাবতে আয়াস আর রিপ্লাই দিল না।
পরক্ষণেই আফ্রিন বলল আমরা একদিন একটু দেখা করতে পারি, আয়াস? হুম, নিশ্চয়ই পারি, কেন নয়? আফ্রিনের সাথে দেখা করতে চাওয়ার উন্মাদনায় আয়াস সব ভুলে দেখা করার দিন তারিখ ফাইনাল করল।
আয়াস আফদার করে বসল আফ্রিন তোমাকে সেদিন শাড়ি পড়ে আসতে হবে। আফ্রিন সাথে সাথে রিপ্লাই দিল নিশ্চয়ই পড়ব। রীতিমত আয়াস তো মুগ্ধ আফ্রিনের পজিটিভ মনোভাব দেখে। মাঝে মাঝে ওদের কথা হত, এভাবে বেশ কিছু দিন চললো।
৭ আগষ্ট, আয়াস তড়িঘড়ি করে নির্ধারিত স্থানে গেল। আফ্রিন আসতে লেইট করতেছে …….., কিছুক্ষন পর আফ্রিন আসল।
আয়াসঃ তুমি জানোনা লেইট করে আসা এবং কারো জন্য অপেক্ষা করা আমার মোটেও পছন্দ না।
আফ্রিনঃ থামো, আজ তুমি মোটেও রাগ করতে পারবা না।
আয়াসঃ কেন আজ কি মাদার তেরেসার জন্মদিন?
আফ্রিনঃ আমি শাড়ি পড়ে আসছি, গার্লফ্রেন্ড শাড়ি পড়ে আসলে তখন রাগ করা বারণ।
আয়াসঃ শাড়ির সাথে রাগের সম্পর্ক কি?
আফ্রিনঃ সব প্রেমিকার বাসায় তার প্রেমিকের জন্য শাড়ি কেনা থাকে না। অনেক স্ট্রাগল করে, হয় বান্ধবী না হয় বড় বোন অথবা ভাবীর কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হয়।
শুধু শাড়ি ম্যানেজ হলেই হয় না শাড়ির সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ, চুড়ি এবং টিপ ম্যানেজ করতে হয়। আচ্ছা যাই হোক সবই ম্যানেজ হল কিন্তু শাড়ি কে পড়িয়ে দিবে? এবার বড় বোনের কাছে যাও, মায়ের কাছে যাও, তারপরও সাড়া রাত বসে ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখে দেখে তোমার জন্য শাড়ি পড়া শিখলাম।
আর এখানেই শেষ নয়, সকালে যখন শাড়ি পড়ে জীবনের শ্রেষ্ট সাজ সেজে বের হই তখন আম্মু বলে, আফ্রিন এত সেজে কোথায় যাওয়া হচ্ছে? আম্মু আমার ইউনিভার্সিটিতে প্রোগ্রাম আছে, এই আছে সেই আছে, হ্যান আছে ত্যান আছে, এমন ১০১ টা মিথ্যা বলে বাসা থেকে বের হতে হয়।
আর এসব আমি তোমার জন্য-ই করেছি। তুমি জানো একটা প্রেমিকা যখন শাড়ি পড়ে তখন শাড়ির ভাজে ভাজে তার প্রেমিককে নিয়ে হাজারো স্বপ্ন লুকিয়ে থাকে?
আয়াসঃ নাতো আমি জানতাম না।
আফ্রিনঃ তোমার মত গাধা এগুলা বুঝবে না, জানতেও পারবেনা কখনও। তুমি যখন আমার সাথে রাগ করছো তখন আমার কি ইচ্ছে হইছে জানো?
আয়াসঃ কি ইচ্ছে হইছে?
আফ্রিনঃ ইচ্ছে হইছে অনেক কাঁধি কিন্তু আমি কাঁধতেও পারব না, কাঁধলে তো আমার কাজল গোলে গোলে পড়বে, আমি তো দৌড়ে পালাতেও পারব না কারণ শাড়ি পড়ে দৌড়ানোও যায়না।
আয়াসঃ স্যরি ডিয়ার, আমার ভুল হইছে আমি বুঝতেই পারিনি, যখন প্রেমিকা শাড়ি পড়বে তখন প্রেমিক ভুলেও রাগ করতে পারবে না, তখন রাগ করা মহাপাপ তাই না? তো এখন আমি কি করতে পারি, বাবু?
আফ্রিনঃ অনেক ভালোবাসবা, ইচ্ছে মত ভালোবাসবা, বেশি করে ভালোবাসবা, বুঝচ্ছ? আর দাঁড়িয়ে আছো কেন, জড়িয়ে ধরো, বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরো। আর শোন, আমি যখন শাড়ি পড়বো আমার সাথে রাগ করবা না সব রাগ একটা বক্সের মধ্যে জমিয়ে রাখবা আমি যখন অন্য ড্রেস পরবো তখন রাগ করবা। তুমি কেমন একটু আমায় বলো তো?
আয়াসঃ কেন কি করলাম আবার?
আফ্রিনঃ এতক্ষণ হল কেমন লাগে আজ আমাকে? বললা না তো!
আয়াসঃ অনেক সুন্দর লাগে, কিন্তু তোমার ওই কাজল কালো চুলের খোঁপার মধ্যে যদি বেলি ফুল জড়ানো থাকত তবে আর অনেক অনেক সুন্দর লাগতো। ওমা তোমার চুলের খোঁপায় একটা পোকা বলা মাত্রই আফ্রিন চমকে উঠলো, সেই সুযোগে আয়াস, আফ্রিনের খোঁপায় বেলীফুল পড়িয়ে দিলো।
বিকাল থেকে আফ্রিন অফলাইনে, বিকেল গরিয়ে রাত এভাবে তিন দিন কেটে গেল। হঠাৎ একটা অপরিচিত ফোন, রিসিভ করা মাত্র কানে ভেসে এল জরাজীর্ণ কন্ঠে আমি আফ্রিন, বাবা সেদিন সব দেখে ফেলছে, অনেক জামেলা হইছে। বাবা আমাদের কখনও মেনে নিভে না, তাছাড়া আমি তোমার কথা বলতেও পারব না।
হ্যাঁ তাই তো, কিভাবে আমার কথা বলবা? আমি তো মধ্যবিত্ত! মধ্যবৃত্তের ঘরে জন্মানো টাই ছিল আমার আজন্ম পাপ। ওহ তোমার জন্য তো বেশ ভালো ভালো প্রস্তাব আসে, তুমিতো বেশ সুন্দরী, তোমার বাবা বড় সরকারি কর্মকর্তা।
তবে আফ্রিন তোমাকে আমি ভালো করেই বুঝি, প্লিজ আমাকে একটু সময় দাও, আমি তোমার যোগ্য হয়েই তোমার বাবার কাছে তোমাকে চাইব। আয়াস বলল……..
তুমি চাইলেই একটা মধ্যবিত্ত
প্রেমের গল্প হবে আমাদের।
ঐ আকাশের বৃষ্টি, বসন্ত,
কৃষ্ণচূড়া কিংবা রোদেলা বিকেল,
একটাও নেই আমার নিয়ন্ত্রণে।
তোমার এসব শখ অথবা আকাংখার
কোনটাই তুমি চাইলে পারব না দিতে,
তবে আমার একটা আমি আছে,
একটা “মধ্যবিত্ত” আমি।
তোমায় আমি হাসাতে পারব
একটা সাধারণ ফুলে,
লাল টকটকে শাড়ি, কাচের চুড়ি
আর বিশ টাকার আলতার কৌটায়,
দুটি আশাবাদী চোখের পবিত্র জলে কিংবা
মুক্ত ঝড়ানো অবিরাম হাসিতে।
তুমি চাইলেই আমাদের একটা
মধ্যবিত্ত প্রেমের গল্প হবে।
আমি তোমায় দিতে পারব
কৃষ্ণচূড়া অথবা রোদেলা বিকেল।
গলির সামনের কসমেটিক্স দোকানের
এক জোড়া নুপূর, হরেক রঙের টিপ,
হাতভর্তি কাচের চুড়ি, একটা লিপস্টিক,
আর একটা পুতির মালা সহ
রকমারি গিফট তোমায় দেওয়া হবে!
তুমি চাইলে সত্যি একটা সুন্দর
মধ্যবিত্ত প্রেমের গল্প হবে।
আয়াস বেশ অভিমান করল এই ভেবে যে, আমি যদি এতই অযোগ্য তবে কেন তুমি বার বার ফিরে আস? কেন তুমি এত বছর মিথ্যা স্বপ্ন দেখালে? অভিমানী আয়াস কোন যোগাযোগ করছে না আফ্রিনের সাথে, আফ্রিন জানে আয়াস বেশ অভিমানী তাই বুঝতে পেরে আয়াসকে বলল…
অভিমান,
কখনো আমাকে বর্ষার মতো ভিজিয়ে দেয়,
কখনো আধার করে দেয় সম্মুখ পথ,
কখনো খাঁ খাঁ রৌদ্দুরের মতো চৌচির করে হৃদয়ের ভিটেমাটি।
অভিমান,
অভিধানের ছোট্ট একটি শব্দ বটে,
আমাকে নিমিষে নিঃশেষ করার ক্ষমতা অভিমানের আছে।
অভিমানের বিষে মরার আকুতি জাগে ,
বুক ধড়পড় করছে,
চোখে ভাসছে অদৃশ্য মায়া।
অভিমান যদি তোমাকে ছোঁতে না পারে,
আমাকেও পারবে না নীল কষ্ট ছুঁতে,
অভিমান বারবার আমাকে নিঃস্ব করে দেয়।
যদি আকশটা বইয়ের কভার হতো,
তবে লিখে দিতাম যত্ন করে,
“অভিমানী, যদি চাও সুখে থাকি,
তবে আর,
অভিমান করো না, অভিমান করো না”।
এটা পড়ার পর আয়াসের অভিমান ভেঙেছিল, আবেগ বেড়েছিল, তবে তাদের বাস্তবতার রং পাল্টে নি। আয়াস ঠিকই বুঝতে পারে আফ্রিন তাকে কত ভালোবাসে।
আয়াস বার বার ভাবতে চায় তারা বাস্তবতার শিকার, তবে মন চলে আপন গতিতে আয়াসের ভাবনার ঠিক বিপরীতে। এভাবে চলতে চলতে বেশ কিছু দিন কেটে গেল তবে আফ্রিন নিরুদ্দেশ। যদিও কথা হয় মাঝে মাঝে তবে কেমন আছি, কি করছি?
হঠাৎ আয়াসের মনে হল জীবনে কিছু করতে হবে পরিবার, সমাজ তার থেকে অনেক কিছু আশা করে, অপরদিকে আফ্রিনকে হারাতে চলছে আয়াস। পরবর্তীতে আয়াস পরিবারের স্বপ্নকে নিজের স্বপ্ন ভেবে ভালো ভাবে পড়াশোনা শুরু করলেও…………… চলমান (লোডশেডিং ভালবাসা শেষ পর্ব)
আরও পড়ুনঃ লোডশেডিং ভালবাসা (পর্ব-১) -সৈয়দ মেজবা উদ্দিন
nice