মানবতা প্রাধান্য নয় তত
-আমজেদ হোসেন সাজ্জাদ
মৃত্তিকায় তৈরি, রক্ত-মাংসে গড়া এক ধূর্ত প্রাণের
অস্তিত্বের কথা অদৃশ্য দূতের পানে কহেছ সঙ্কেতে!
দেবদূত প্রত্যুত্তরে পুছিল,″তবে কী আপনি এ ধরায়
রূধির স্রোত প্রণয়নে উদ্গ্রীব?″দিব্য তখন ওঁৎপেতে।
হেতু কী ছিল তবে! মানব সৃষ্টিতে ওগো মহান স্রষ্টা;
ণত্বষত্ব জ্ঞানে বলেছ,″অসীম জ্ঞাত আমি সর্ব দ্রষ্টা″।
মনুষ্যকে করেছ ঐশ্বর্য, চিন্তা-চেতনায় শ্রেষ্ঠ গুনী;
জৌলুস ক্ষমতা একচ্ছত্র আধিপত্যে করেছ “জ্ঞানী”।
একত্ব পূজার বিশেষণে বহু সেকালে প্রেরিত প্রাণ;
নির্বিঘ্ন-প্রশান্তির অমিয় বার্তা ছড়াবে সুমধুর ঘ্রাণ।
কিন্তু সত্ত্বার মনশ্চক্ষু প্রগাঢ় চৈতন্যের উদ্দেশ্য বুঝা
জমিনের উপর বিচরণরত জীবের পক্ষে অসম্ভব;
উৎকর্ষ চিন্তক মানুষকে তার ইচ্ছা,মন অভীপ্সার
উপর সঁপে দিয়ে ইনসাফ করেছ কী হে আমার রব!
সততা, নৈতিকতা ও শান্তি প্রসারের দীক্ষার জন্য
পাঠিয়েছ সর্বো উৎকৃষ্ট পন্থার আধ্যাত্মিক শাস্ত্র ;
বাস্তবতা ও শিক্ষনীয় গল্পে মানব দূতের ইশারায়
শিখিয়েছ জীবন অতিবাহনের অজস্র কার্যকরী অস্ত্র।
কিন্তু সে শিক্ষার ঘটেনি শুধু ইতিবাচক ফলাফল,
বৈপরীত্যে গড়িয়েছে নেতিমূলক অপশিক্ষার জল।
‘একটি প্রাণের মুক্তিতে সম্পূর্ণ মানবতার মুক্তি,
বিপরীতে হত্যায় পুরো মানবতার হত্যা’ দিয়েছ যুক্তি!
অথচ গূঢ়ার্থ সন্নিহিত বিষয়ের করেনি তারা কর্ণপাত,
সত্ত্বার প্রত্যক্ষ অবাধ্যে নির্বাহিত করছে দিন ও রাত।
সৃষ্টির সেরা বুদ্ধিমত্তায়,করেছ মনুষ্যকে স্বাধীনচেতা,
সেই অহংকারের ঐশ্বর্যে উদ্গম হয়েছে নৃশংসতা।
ধ্বংসের দ্বারস্থ হয়ে, মূঢ় মানব সন্তানের বিনষ্ট সত্তা;
ধর্মের অসত্য গূঢ়ার্থে,ঘটাচ্ছে অজ্ঞানে অজস্র হত্যা।
প্রকান্ড মহাবিশ্বের নীড়ে বসে অসীম ক্ষুদ্র ধরিত্রী;
তার বুকে নিমগ্নে ঘুমিয়ে,শত নিথর আত্মার নিবৃত্তি
মৃত ব্যক্তির নেই জানা কেন সে আজ পরলোক গত;
নিষ্ঠুর, নির্মম খুনির বোধে, “মানবতা প্রাধান্য নয় তত”।
“মানবতা প্রাধান্য নয় তত”
—সমাপ্ত—
কবিতার ব্যাখামূলক বিশ্লেষণ
মানুষকে সৃষ্টিকর্তা অনেক ভেবে চিন্তে সৃষ্টি করেছেন। যখন তিনি পৃথিবীতে মানব সৃষ্টি করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। তখন সর্বপ্রথম তিনি তার সিদ্ধান্তের কথা অনন্য সৃষ্টি ফেরেশতাদের কাছে পেশ করেন।
ফেরশতারা তখন সাথে সাথে সৃষ্টিকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুধীতা করে বলেন, আপনি কি আবার এ পৃথিবীতে ফিতনা ফাসাদ ও রক্তপাত বয়ে আনতে চান? ফেরেশতাদের এমন প্রশ্নের কারন হচ্ছে তারা আগ থেকে জীন জাতির উপর বিরক্ত।
জীন জাতির তখনকার পৃথিবীতে দাঙ্গা,হাঙ্গামার অবিজ্ঞতা থেকে ফেরশতারা এমন মন্তব্য করেছিল। তখন আল্লাহ বলেন, আমি অবশ্যই তোমাদের থেকে বেশি জানি, যা তোমরা যান না ১ ।
আল্লাহর এমন সিদ্ধান্তের কথা শয়তান ওঁতপেতে শুনেছিল এবং পরবর্তীতে সে মানুষকে সিজদা করতে অপারগতা স্বীকার করে।এবং প্রকাশ্যে আল্লাহর বিরোধীতা করে ২।
অবশ্যই মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তিনি সর্বজ্ঞানী। তিনি তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভালোই অবগত।তাই তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেন সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে।এবং মানুষকে সকল জীবের উপর শ্রেষ্ঠত্য দান করেন ৩ ।
আল্লাহ মানুষকে দান করেছেন সুন্দর অবয়ব ৪। মানুষকে আল্লাহ জ্ঞান-প্রজ্ঞা, চিন্তা-চেতনায় করেছেন যথার্থ। মানুষকে ইচ্ছা অভিপ্সায় এক স্বাধীনচেতা বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন।
পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে মানুষের স্বাধীনচেতা বৈশিষ্টের প্রমাণ পাওয়া ৫ । আল্লাহ মানুষকে এভাবে সৃষ্টি করে ইনসাফ করেছেন। এমনকি মানুষকে সরল পথে সঠিক পথে চলার জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন ৬।
নবী-রাসূলদের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা সরাসরি মানুষকে শিখিয়েছেন কিভাবে নৈতিক সৎভাবে জীবন যাপন করতে হয়।এবং সম্পূর্ণ জীবন বিধান আল্লাহ আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন তার কিতাবের মাধ্যমে। আল্লাহ সর্বশেষ কুরআন পাঠিয়েছেন যাতে তিনি কোন কিছু বাদ রাখেননি ৭ ।
আরও পড়ুনঃ বাছইকৃত ২০টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস যা জানা জরুরী
কিন্তু এত কিছুর পরও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দেখানো পথ থেকে মানুষ সরে এসেছে। মানুষ নানা ধরনের ফিতনা ফাসাদ আর অপকর্মে লিপ্ত। মানুষ আজ একে অন্যকে হত্যা করছে।আজ মানবতা মানবের হাতে ধ্বংসের পথে।
অথচ মানবতা মানুষের কাছে গুরুত্বের বিষয় হওয়ার কথা।কিন্তু সেটা হচ্ছে কই।আজ চারদিকে হত্যার মিছিল। শত শত মানুষ দৈনিক পৃথিবীতে খুন হচ্ছে মানুষের হাতে।
অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন , কোন মানুষ অন্য একজন মানুষকে বাঁচালে সারা মানবজাতী তথা মানবতাকেই বাঁচিয়ে দেয়, আর কেউ একজনকে হত্যা করে মানে সারা মানবজাতি তথা মানবতাকেই হত্যা করে ৮। অথচ মানুষকে হত্যার মতো জগন্য গুণাহ আর নেই।
আল্লাহ এজন্য কাউকে ক্ষমা করেন না।আল্লাহ অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন ৯। কিন্তু আজ মানুষ নৈতিক মূল্যবোধ শূন্য হয়ে নৃশংস ও নির্মম, নিষ্ঠুর হয়ে গেছে। কোটি কোটি মানুষ আজ ধরিত্রীর বুকে নিথরে শুয়ে আছে ।
আজ মানুষ অন্য মানুষকে হত্যা করছে নির্ভয়ে নরপিশাচের। পশুত্বের চেয়ে নিচুতে নেমে গেছে আজ মানুষ।হত্যাকারী জানে না সে কেন অন্যকে হত্যা করছে, আর হত্যা হওয়া মানুষও জানে সে কেন হত্যা হলো। মানবতা আজ কারো কাছে প্রাধান্য নয়।
ফুটনোটঃ
১) সুরা-বাকারাঃ ৩০
২) (সুরা বনি-ইসরাঈলঃ ৬১, (সুরা-আরাফঃ ১২)
৩) সুরা বনি-ইসরাঈলঃ ৭০
৪) সূরা-ত্বিন, আয়াত: ৪
৫) সূরা-ইউনুসঃ ৯৯
৬) (সুরা-রা’দ ৭), (সুরা-ইউনুসঃ ৪৭)
৭) সূরা-আনআমঃ ৩৮
৮) সুরা-মায়েদাঃ ৩২
৯) সুরা-আনআমঃ ১৫১