“ওথেলো” উইলিয়াম শেক্সপিয়র এর একটি ট্রাজেডি যা ১৬০৩ সালে লেখা হয়েছিল বলে মনে করা হয়। নাটকের কেন্দ্রিক চরিত্র ছিল “ওথেলো”।
একজন যোদ্ধা, নায়ক,একজন প্রেমময় স্বামী যে তার স্ত্রীকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে থাকত সবসময় এবং ধীরে ধীরে এই ভয় এর পরিণতিটা গিয়ে ঠেকল সন্দেহে। তার স্ত্রী ছিল অত্যন্ত রুপবতীদের একজন।
সে আস্তে আস্তে তার স্ত্রীকে অসতী হিসেবে সন্দেহ করতে থাকে এবং নাটকের শেষে ওথেলোর হাতেই মৃত্যু হয়েছিল তার স্ত্রীর। বর্নবাদ, প্রেম, ঈর্ষা ,বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতিশোধ এবং অনুতাপের বৈরিতা ফুটে উঠেছে এই নাটকে।
জন শেক্সপিয়র ও মেরি আর্ডনের পুত্র উইলিয়াম শেক্সপিয়রের জন্ম ইংল্যান্ডের ওয়ারউইকশায়ার জেলার স্টেটফোর্ড-অন-অ্যাভন- এ ১৫৬৪ সালের ২৩ শে এপ্রিল।
শেক্সপিয়রের পড়াশুনা সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। সম্ভবত তিনি স্টেটফোর্ডের গ্রামের স্কুলে গিয়েছিলেন। তিনি বিবাহ করেন অ্যানি হ্যাথওয়েকে যিনি শেক্সপিয়রের থেকে আট বছরের বড় ছিলেন।
১৫৮৭ সালে শেক্সপিয়র তাঁর জন্মস্থান ছেড়ে চলে আসেন। ১৫৯৫ সাল নাগাদ তিনি প্রচুর সাহিত্যিক কাজকর্ম করেন।তাঁর নাম লর্ড চেম্বারলেনের দলের অভিনেতাদের দলে দেখা য়ায়।
তিনি তাঁর দলের জন্য নাটক লিখে স্বীকৃতি লাভ করেন। ১৬১০ সাল নাগাদ তিনি স্টেটফোর্ডে ফিরে আসেন। ১৬১৬ সালের ২৩- শে এপ্রিল তাঁর মৃত্যু হয় এবং তাকে গির্জার মধ্যে সমাহিত করা হয়।
ওথেলোঃ ভেনিসীয় সামরিক বাহিনীর এক পদস্ত সেনানায়ক।
ডেসডিমোনাঃ ওথেলোর স্ত্রী।
ইয়াগোঃ ওথেলোর বিশ্বাসভাজন কিন্তু ইর্ষাকাতর ও বিশ্বাসঘাতক অধস্তন সামরিক আধিকারিক।
ক্যাসিওঃ ওথেলোর বিশ্বস্ত ও সর্বাধিক প্রিয় ক্যাপ্টেন।
ব্রাবানশিওঃ ভেনেসীয় পরিচারিকা সেনেটের ও ডেসডিমোনার পিতা।
রডরিগোঃ অসচ্চরিত্র ভেনেসীয় ডেসডিমোনাকে প্রনয়প্রার্থী।
লোডাভিকোঃ ব্রাবানশিওর আত্মীয় ও ডেসডিমোনার জ্ঞাতিভাইয়ের ভ্রাতা।
নাটকের প্রধান “ওথেলো”একজন কৃষ্ণাঙ্গ মূর সেনাপতি। ডেসডিমোনার ভালবাসা তাকে মুগ্ধ আর বিস্মিত করে তোলে, সেখানে কোনো কামুকতা নেই। ডেসডিমোনা অপরুপ সৌন্দর্য তা যে শুধু দেহের নয় মনের দিক থেকেও।
ইয়াগো খল চরিত্র। যার ছল আর প্রতিশোধ স্পৃহায় শিকার হয় ওথেলোর জীবন ইয়াগো ওথেলোকে অপছন্দ করতেন কারন তিনি ক্যাসিও নামে এক যুবককে তাঁর থেকে উচ্চপদে উন্নীত করেছেন।
এই ক্যাসিওকে ইয়াগো তাঁর তুলনায় কম দক্ষ মনে করতেন। তাই তিনি ওথেলোর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহনের জন্য যে পরিকল্পনা করেছেন তা রডরিগোকে খুলে বললেন। ফলে তাদের স্বার্থহাসিলের জন্য তারা (ইয়াগে এবং রডরিগো) একজোট হয়।
আপাতভাবে ওথেলোর ক্যাসিওকে সহ সেনাপতি করার মূল কারন হতে পারে। কিন্ত সে শুনেছে তার স্ত্রী এমিলিয়ার সাথে ওথেলোর গোপন সম্পর্কের কথা। আবার ক্যাসিও সম্পর্কেও এমন কিছু। ক্যাসিওর যে সহজাত সৌন্দর্য্য, তা তাকে পীড়া দেয়।
সব মিলিয়ে সে ঈর্ষার চরম প্রতীক। আত্মসার্থ উদ্ধার করতে গিয়ে সে মিথ্যে আর কূটচাল ঢুকিয়ে দেয় ডেসডিমোনা সম্পর্কে।
ভাগ্য ইয়াগোকে অকৃপণ হাতে সাহায্য করে। অথচ সে নিজে ভাগ্যের মুখাপেক্ষী নয়।সবার কাছে অনেষ্ট ইয়াগো।
নৈপুণ্যের সাথে ধূর্ত সে অভিনয় করে চলে। সাহায্যের জন্য তার দ্বারস্থ হয় ক্যাসিও, ওথেলো, রডরিগো, ডেসডিমোনা। ওথেলো প্রমাণ চাইলে এমিলিয়ার মাধ্যমে হস্তগত রুমাল ক্যাসিওর ঘরে ফেলে আসে এবং ওথেলোর কাছে প্রমাণ করে ডেসডিমোনা ক্যাসিওকে তা ভালোবেসে দিয়েছে।
ওথেলোর দেয়া ভালবাসার নিদর্শন ছিল এই রুমালটা।ডেসডিমোনার ট্রাজিক মৃত্যু করুন আর বিষাদের। বেশিরভাগ সময় সে নিষ্ক্রিয় তবু তার সারল্য স্বভাবের মাধুর্য্য, নোংরা দিকের অজ্ঞতা, ওথেলোর প্রতি চূড়ান্ত ভালবাসা তাকে অন্যতম আকর্ষণীয় করেছে।
ডেসডিমোনা সংসার জীবনে অনভিজ্ঞ বলেই ওথেলোর ভেতরের ক্রোধ পড়তে পরার আগেই তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তার বাঁচার আকুতি দেখা যায়। তাকে নির্বাসিত করার জন্য অনুরোধ করে ওথেলোকে।
কিন্তু ওথেলো তখন উন্মও। অথচ এ দুটি চরিত্রের প্রতি তাদের রোমান্টিসিজমের প্রতি আমাদের আবেগ কখনো কমেনা।মৃত্যুর পূর্বে ও সে তার হত্যাকারী হিসেবে স্বামীকে অভিযুক্ত করতে পারেনা।
আরও পড়ুনঃ জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজ “তিন গোয়েন্দা” এর ৩৫ বছর
এমিলিয়ার প্রশ্নের উওরে তাই সে বলে, কেউ না। আমি নিজেকেই নিজেই হত্যা করেছি। ডেসডিমোনাকে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলেছে ওথেলো। এমিলিয়ার কাছে যখন সে জানতে পারে ডেসডিমোনা ছিল নিস্পাপ আর পবিত্র।
ওথেলো এইকথা জেনে শোকে, অনুতাপে আকুল হয়ে ওঠেন এবং বলে, “আমি ডেসডিমোনাকে ভালবেসেছিলাম কিন্তু জনৈক দুষ্ট লোকের চক্রান্তে আমি সব হারিয়েছি, এক মূল্যবান রত্ন আমি ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছি”।
তার হত্যার বিচার করতে লোডোভিকো আসে তখন সে নিজেই ছুরির আঘাতে মৃত্যুকে বরণ করে নেয়। এভাবেই নাটকের রক্তাক্ত সমাপ্তি ঘটে।
মন্তব্য লিখুন