বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় হলো বিভিন্ন স্বাদের চা । ব্রিটিশরা সেই যে বাঙ্গালিদের চায়ের সাথে পরিচয় করিয়েছিল, সেই পরিচয় আজ এক প্রকার নেশায় পরিনত হয়েছে।
শীতকালে আমরা চা ছাড়া একটা দিনও কল্পনা করতে পারি না। শীতের দিনে ধোয়া ওঠা এক কাপ গরম চা শুধু মানসিক প্রশান্তিই দেয় না, শরীরের জন্যও এটি যথেষ্ট উপকারি।
সাধারনত আমরা যে ব্ল্যাক টি খাই তার বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া সিনেনসিস। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন উপাদানের এবং বিভিন্ন স্বাদের চা আমাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
বিভিন্ন দেশের বৈচিত্রময় এই চায়ের স্বাদ যেমন ভিন্ন, পুষ্টি গুণাগুণেও অনন্য। এমনই কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্যের বিভিন্ন স্বাদের চা এর উপকারিতা জেনে নেওয়া যাক-
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
সাদা চা তৈরি করা হয় ক্যামেলিয়া সাইনেসিস গাছের অনুদ্ঘটিত কুঁড়ির উপরের রূপালি-সাদা আঁশ থেকে। এই গাছ থেকেই কালো চা ও সবুজ চা তৈ্রি হয়। তাই এই চায়ের উপাদানের সাথে আমাদের সাধারণ চায়ের উপাদানের কিছুটা মিল রয়েছে। তবে এই চায়ের উপকারিতা ব্ল্যাক টি ও গ্রীন টি থেকে অনেক বেশি।
সব থেকে বেশি এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, ওজন কমাতে খুব দ্রুত কার্যকর। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
সাদা চাতে আছে এন্টি এজিং প্রোপার্টিজ, সাথেই এটি সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি থেকে বাঁচায় আমাদের ত্বককে। এর এন্টি ব্যাক্টেরিয়াল প্রোপারটিজ ত্বক ও মুখের বিভিন্ন সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় এটি ডায়বেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
শুধু লাল চা বা দুধ চা নয়, শারীরিক সুস্থতার জন্য বিভিন্ন হারবাল টি এখন বেশ জনপ্রিয়। এর মধ্যে কিছু চায়ের উপকরণ আছে আমাদের হাতের মুঠোয়। এমনই একটি হলো হলুদ চা বা টারমারিক টি। এটি তৈরী করা হয় ফুটন্ত গরম পানিতে অল্প পরিমান হলুদ মিশিয়ে। স্বাদ বৃদ্ধির জন্য এতে আদা বাটা, লেবুর রস, মধু ও গোলমরিচ যোগ করা যায়।
রুইবস টি একপ্রকার ভেষজ লাল চা। এই আফ্রিকান রেড টি গ্রীন টি ও ব্ল্যাক টির তুলনায় অধিক ক্যাফেইন মুক্ত। এটি হজম ক্ষমতা উন্নত করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে ক্যালসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ থাকায় এটি হাড়ের বিকাশের জন্য উপকারি।
এই চা ক্যামেলিয়া সিনেনসিস গাছের পাতা থেকেই প্রস্তুত করা হয় তবে প্রস্তুতির পদ্ধতি কিছুটা ভিন্ন। এটির উৎপত্তি হয় চীনে। ওলোং শব্দটির অর্থ হলো কালো ড্রাগন। অন্যান্য ভেষজ চায়ের মতো এটিও ওজন কমানো, হৃদপিন্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি সহ আরো অনেক ক্ষেত্রে উপকারি।
বলুমিং টি কে ফুটন্ত ফুলের চাও বলা হয়। এই চা এমন ভাবে বানানো হয় যেন তৈরির সময় তাতে রাখা ফুলের কুড়ি ফুটে যায়। এর ফলে এই চাতে বেশ কিছু বিরল পুষ্টি উপাদান যোগ হয়। সুগন্ধি এই বিশেষ চা এখন বিশ্বব্যাপি বেশ সমাদৃত। এই চা-
হিবিসকাস টি বা জবা ফুলের চা তৈরি করা হয় এই ফুলের পাপড়ি দিয়ে।
গোলাপ ফুলের পাপড়ি দিয়ে প্রস্তুত গোলাপ চা স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারি। গোলাপ ফুলের পাপড়ী পানিতে ফুটিয়ে প্রয়োজনে তার সাথে কিছু সাধারন চায়ের লিকার যোগ করে এই চা তৈরি করা যায়। এই চায়ের উপকারিতা-
শিউলী শুধু এর ফুলের জন্যই সকলের প্রিয় নয়, এর পাতাও অনেক ভেষজ গুণ সম্পন্ন। এক কাপ পানির সাথে দুটি শিউলী পাতা ও তুলসী পাতা ফুটিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। যেমন- দীর্ঘস্থায়ী জ্বর কমায়, কাশি উপশম করে। সাইটিকা, আর্থ্রাইটিস প্রভৃতির ব্যাথা কমায়।
পাট পাতার চা বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় নতুন পন্য। বিদেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গবেষনা থেকে জানা যায় পাট পাতার পানীয় ডাইবেটিস ও উচ্চ রক্ত চাপ প্রশমন করে, লিভার ও কিডনী সুস্থ রাখে, ক্যান্সার প্রতিরোধেও কার্যকর।
সোজনে সবজি হিসেবেই শুধু উপকারি নয়, এর পাতা দিয়ে তৈরী চাও খুব উপকারী। সজনে পাতার চা ব্লাড প্রেশার কমায়, ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রন করে। তা ছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রনে, ত্বকের সৌন্দর্য্য রক্ষায় এই চা কার্যকর।
অর্জুন গাছের ছাল থেকে তৈ্রী হয় এই চা। হৃদরোগ প্রতিরোধ, নিয়মিত রক্ত সঞ্চালন ছাড়াও আরো অনেক গুন রয়েছে এই চায়ে। এই চায়ে অ্যাজমা প্রতিরোধী উপাদনও আছে বলে মনে করা হয়।
ক্যামোমিল ফুল শুকিয়ে তৈরি করা হয় ক্যামোমিল টি। যারা অনিদ্রা বা ইনসোমিয়ার সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য এই চা অসাধারন কাজ করে। যারা ঘুমের সমস্যা ও মানসিক অবসাদের ভুগছেন এটি তাদের স্নায়ুকে আরাম দেয়।
পাশাপাশি এতে আছে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট যা হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ আরো অনেক রোগের প্রতিষেধক।
এন্টি মাইক্রোবিয়াল, এন্টি ফাংগাল বৈশিষ্টের জন্য এই চা জনপ্রিয়। কিছু ক্ষেত্রে স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, দাঁতের জন্যও ভালো।
চীনের সিচুয়ান প্রদেশে প্রথম এই চা তৈরি শুরু হয়। হ্যাঁ, নামের মতোই এই চা তৈ্রিতে কিছুটা পান্ডার মল ব্যবহার করা হয়। এই চা বিশ্ববাসীর নিকট এক শিল্পের থেকে কম নয়। বিশ্বের সব থেকে বেশি দামী চা গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এর প্রতি কেজির মূল্য প্রায় ৭০ হাজার ডলার।
এর কড়া স্বাদ অনেকটা কফির মতো। কফি প্রেমীরা এটা বেশ পছন্দ করবেন। অন্যান্য চায়ের মতো এটিও যথেষ্ট উপাদেয়। বিশেষ করে গলা ও মুত্রনালীর সংক্রমনের ক্ষেত্রে এটি বেশ কার্যকর।
তিব্বতের ঐতিহ্যবাহী একটি পানীয় হলো মাখন মিশ্রিত টি বা ওদের ভাষায় পো চা। কোনো শুভ কাজের পূর্বে বা অতিথি আপ্যায়নে সেখানে এই চা পরিবেশনের রীতি রয়েছে। পূর্বে এটি চামরীগাই এর মাখন দিয়ে তৈরি হতো। কিন্তু এখন গরুর দুধ দিয়েও বানানো হয়।
তিব্বতের শীতে এককাপ ধোয়া ওঠা মাখন চা বেশ আরামদায়ক। আরো বেশ কিছু জনপ্রিয় চায়ের ফ্লেভারের মধ্যে রয়েছে জুঁই ফুল, চন্দ্রমল্লিকা, আপেল, ব্লেন্ড টি, লেমন গ্রাস টি ইত্যাদি। এছাড়া দার্জিলিংএ পাওয়া যায় মাকাইবাড়ি চাও বিশ্ববাসীর কাছে বেশ জনপ্রিয় ও উচ্চ দামে বিক্রি হয়।
প্রকৃতপক্ষে বিশ্বজুড়ে আরো অনেক বিভিন্ন স্বাদের ও গন্ধের চা পাওয়া যায়। সুস্বাস্থ্যের জন্য এধরনের ভেষজ গুণ সম্পন্ন চা পান করার অভ্যাস করা ভালো। আজকাল অনলাইন শপিংএর সুবিধা থাকায় দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্বাদের চা অর্ডার করেই পেয়ে যেতে পারেন আপনার হাতের মুঠোয়।
ছবিঃ সংগৃহীত
তথ্য সহায়তাঃ কালের কণ্ঠ, বাংলা লাইভ, একুশে টিভি ও যুগান্তর
মন্তব্য লিখুন