মানুষের সৌন্দর্য্যের অন্যতম এক অংশ হল চুল। নারীর সৌন্দর্য্যের পাশাপাশি পুরুষের সৌন্দর্য্যের ক্ষেত্রেও চুল কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সুতরাং চুলের যত্ন নেয়া নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই জরুরী। নারী-পুরুষ উভয়ের সৌন্দর্য্যকে বাড়িয়ে তুলতে চুলের স্বাস্থ্যকরন প্রয়োজন।
চুল নিয়ে আমাদের কতই না ভাবনা। চুলকে আমরা কতভাবে সাজিয়ে তুলি। কিন্তু কখনো কখনো চুলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় যার জন্য দুশ্চিন্তার শেষ নাই। চুলের সমস্যায় শুধুমাত্র নারীরা নয় পুরুষদেরও ভুগতে হয়। সব সমস্যার সমাধান আছে সুতরাং চুলকে সমস্যামুক্ত করতে অর্থাৎ চুলের যত্ন নেয়ার জন্য রয়েছে নানা ঘরোয়া উপায়। আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো চুলের যত্ন নেয়ার এমন কিছু ঘরোয়া উপাদান যা চুলকে করবে স্বাস্থ্যজ্জ্বল লাবণ্যময় যা সবার নজর কাড়তে বাধ্য।
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
চুলের যত্ন নেয়ার জন্য মেথির গুন অতুলনীয়। মেথিতে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন ও নিকোটিনিক এসিড যা চুলকে মজবুত করে ও চুলের গোড়ায় পৌঁছে আরো পুষ্টিকর করে তোলে। মেথি চুলকে খুশকিমুক্ত, ঘন ও লম্বা করতে সাহায্য করে। চুলের অকালপক্বতা রোধে, চুল পড়া রোধে, নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে।
ব্যবহার:
মেথি দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে কয়েক ধরনের প্যাক। যেমন- ২-৩ চামচ মেথি ১ কাপ পানিতে কমপক্ষে ১০ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে মেথিসহ কিছু পানি ব্লেন্ড করে পেষ্ট করে নিয়ে এর সাথে ২-৩ চামচ টক দই যোগ করে ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে চুলের গোড়ায় দিয়ে ৩০-৪০ মিনিট পর ধুয়ে নিন। এতে খুশকির সমস্যা দূর হবে। এভাবে প্যাকটি মাসে ১৫ দিন ব্যবহার করা যেতে পারে । এছাড়া চুল পড়া বন্ধ করার জন্য নারকেল তেলের মধ্যে মেথি ডুবিয়ে রাখুন। ঐ তেল মাথায় দিয়ে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। এ পদ্ধতিটি খুব ভালো কাজ করে।
চুলের জন্য মেহেদীপাতার ব্যবহার সেই আদিকাল থেকেই চলে আসছে অর্থ্যাৎ মেহেদীপাতার ব্যবহার বেশ পুরনো পদ্ধতি। মেহেদীপাতা খুব সহজেই পাওয়া যায়। বিশেষ করে গ্রামের প্রায় বাড়িতেই এর গাছ দেখা যায়। চুলকে সুন্দর ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল করার জন্য মেহেদী খুব উপকারী। মেহেদীপাতা ব্যবহারে চুল হয়ে ওঠে ঘন ও ঝরঝরে। চুলের গোড়া শক্ত করে, রুক্ষতা দূর করে, মাথা ঠান্ডা রাখে, চুলের আগা ফাটা প্রতিরোধ করে এবং খুশকি দূর করে। এছাড়া এ পাতার প্রাকৃতিক রং- এর জন্য একে সাদা চুলে ব্যবহার করা হয়। এতে চুল গাঢ় লালচে রং ধারন করে এবং ২/৩ মাস দীর্ঘস্থায়ী হয়।
ব্যবহার:
মেহেদীপাতা দিয়েও বিভিন্নভাবে প্যাক তৈরি করা যায়। যেমন- মেহেদীপাতা পেষ্ট করে এর সাথে ৩/৪ টি আমলকির রস মিশিয়ে নিয়ে চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে নিন। এরপর ৩০ মিনিট পর ধুয়ে নিন। এতে খুশকির সমস্যা দূর হওয়ার সাথে সাথে চুল মজবুত হবে। আবার মেহেদীপাতার সাথে ১ টি ডিমের সাদা অংশ ও ২/৩ চামচ টক দই যোগ করে ভালো করে মিশিয়ে ব্যবহার করলে চুলের রুক্ষতা দূর হবে, চুল উজ্জ্বল ও রেশমি হবে।
ঘরোয়া উপাদানে সাত দিনেই ফিরিয়ে আনুন ত্বকের জেল্লা
খুশকি কেন হয়? খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায়
চুল পড়ার প্রধান কারন ও প্রতিকার
ঘৃতকুমারী! যাকে আমরা অ্যালোভেরা বলে সবাই জানি। ত্বকের জন্য ব্যবহৃত হলেও কিন্তু আমরা সবাই কি জানি অ্যালোভেরা চুলের জন্য কতটা উপকারী!! চুলের জন্য এই উপকরনটি জাদুকরী কাজ করে। অ্যালোভেরায় আছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিয়োলাইটিক এনজাইম যা চুলের ত্বকের উপক্ষয়কে সরিয়ে চুলকে পরিষ্কার ও দুর্গন্ধমুক্ত করে তোলে। অ্যালোভেরায় প্রচুর পরিমাণে ময়েশ্চারাইজার থাকে যা খুশকির সমস্যা দূর করে। এটি ব্যবহারে চুলের গোড়া শক্ত হয়, ধীরে ধীরে চুল পড়া বন্ধ হয় এবং চুল দ্রুত বেড়ে ওঠে।
ব্যবহার:
অ্যলোভেরা দিয়েও তৈরি করা যায় অনেক ধরনের হেয়ার প্যাক। অ্যলোভেরার সাহায্যে উজ্জ্বল চুল পাওয়ার জন্য টক দই, মধু ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে একটি প্যাক বানিয়ে চুলে লাগিয়ে নিন। অ্যলোভেরা দিয়ে খুশকি কমাতে আপেলের সঙ্গে অ্যলোভেরা মিশিয়ে মাথায় লাগিয়ে ২০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। চুলের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে অ্যলোভেরার সঙ্গে ডিম মিশিয়ে চুলে ভালোভাবে মেখে নিন। এতে চুলের রুক্ষতা ধীরে ধীরে দূর হয়ে চুলে আনে ঝলমলে জেল্লা।
চুলের সৌন্দর্য্য ধরে রাখতে আমলকির কোন জুড়ি নেই। পুষ্টিগুণ ঠাসা ও ঔষধিগুণে পরিপূর্ণ এই ফলটির রয়েছে বিপুল কদর। আমলকিতে বিদ্যমান ভিটামিন- সি চুলের পক্ষে খুব উপকারী। চুলের জন্য আমলকির রস অথবা আমলকির তেলের ব্যবহার সহজলভ্য। আমলকি খুশকি দূর করে, চুল পড়া কমায়, চুলে কালোভাব আনে। মাথার চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে আমলকির রস দারুন কাজ করে। সবকিছুর সাথে সাথে আমলকি নিষ্প্রাণ চুলে বৃদ্ধি করে লাবণ্যতা। আমলকির রস মাথার রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। আমলকি হচ্ছে এক ধরনের প্রাকৃতিক কন্ডিশনার।
ব্যবহার:
আমলকি রোদে শুকিয়ে গুড়া করে পানি দিয়ে পেষ্ট করে পুরো চুলে লাগিয়ে ঘন্টাখানেক পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চুল পুরো ঝরঝরে হয়ে যাবে। অনেকেরই চুল পাকার সমস্যা আছে। এই চুল পাকার জন্য অনেকেই কলপ বা রাসায়নিক রঙ ব্যবহার করে থাকে। তা না করে প্রাকৃতিক উপায় অর্থাৎ আমলকির তেল ব্যবহার করলে চুল পাকার সমস্যা কমবে অনেকটা।
চুলের সমস্যার আরেকটি ঔষধ হচ্ছে জবা। চুলের যত্নে জবা ফুলের তেল গুরুত্ব অসাধারন। এছাড়া জবা ফুল শরীরের আরো বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেয়। জবাফুল ব্যবহারে চুল পড়া কমার সাথে সাথে নতুন চুল গজিয়ে চুলের ঘনত্ব বাড়ে। জবা ফুল অকালে চুল পেঁকে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। জবা ফুলের রস বা তেল চুলের ত্বকে লাগিয়ে মাসাজ করলে খুশকির সমস্যা দূর হয়ে যায়। অকালে চুল পড়া কমাতে জবাফুলের তেল বা রসের সাথে টকদই ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে মাসাজ করুন। ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাবে চুল পড়া।
ব্যবহার:
খুশকির জন্যও জবাফুল আর মেথির প্যাক খুব দারুন কাজ করে৷ জবাফুলের সাথে মেথির পেষ্ট মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে নিলেই খুশকি গায়েব।
চুলের এই সকল সমস্যা বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীন যেকোনো কারনে হতে পারে। কখনো কখনো মানানসই নয় এমন ধরনের পণ্য ব্যবহার করলে চুলের সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া বাইরের ধুলোবালির জন্যও চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয়। আবার চুলকে যত্ন না করে যদি অবহেলায় রাখা হয় তাহলেও চুলে সমস্যা দেখা দেয়।
উপরের উপাদানগুলো প্রাকৃতিক তো বটেই, বরং এতে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। শুধুমাত্র চুলের জন্য নয় , ত্বকের পরিচর্যায়ও এদের কোন তুলনা নেই। চুলের যত্ন নেয়ার জন্য বাইরের নামীদামী পণ্য ব্যবহার না করে আপনার হাতের কাছে থাকা সহজলভ্য কিছু উপাদান ব্যবহার করে দেখুন অনেক উপকার পাবেন। এতে আপনার চুলের সাথে ত্বকের সমস্যার সমাধান হবে।
মন্তব্য লিখুন