পাতালপুরী! একটু অবাক হবার মত বিষয়। ছোটবেলায় আমরা বিভিন্ন গল্প, রুপকথায় এ পাতালপুরীর কথা শুনেছি কিন্তু বাস্তব জগতে যে এর অস্তিত্ব আছে এটা আমাদের অনেকেরই অজানা। এমনই এক ক্যাটাকম্বস বা পাতালপুরী রয়েছে ফ্র্যান্সের রাজধানী প্যারিসে। যেখানে নেই কোন প্রাণের স্পন্দন।
মাটির নিচে কয়েকশত কিলোমিটার ধরে রয়েছে শুধু কঙ্কাল আর মৃত মানুষের মাথার খুলি। কিন্তু তার উপরেই রয়েছে লোকজনের কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ। অথচ তাদের পায়ের নিচে এ কঙ্কালপুরী তখন তাদের ধারণার বাইরে। চলুন আজ জেনে আসি মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা এই ভুতুড়ে ক্যাটাকম্বস বা পাতালপুরী সম্পর্কে।
পাতালপুরীর পত্তন হয় আঠারো শতকের দিকে। মহামারির কারণে তখন প্যরিসে মৃত মানুষের সৎকার এর স্থানের সংকট দেখে পৌর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন শহরের বেশ কিছু সমাধি ভূমি থেকে মানুষের দেহাবশেষ সরিয়ে নিয়ে শহর থেকে দূরে মাটির নিচে বিশাল এক প্রশস্ত স্থানে জমা করার। ১৭৮৫ থেকে ১৭৮৭ এই ২ বছর ধরো চলে এ কাজ। প্যারিসের ১৪টি উপশহরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব কঙ্কালের সমাবেশ ঘটে যার নামকরণ করা হয় ক্যাটাকম্বস বা পাতালসমাধি।
মাটির উপর থেকে ২০ মিটার অর্থাৎ ৬৬ ফুট নিচে এই বিশাল সমাধিক্ষেত্র। এখানে প্রবেশের রয়েছে প্রধানফটক। এটা হয়ত আরও অবাক করার বিষয় যে এখানে প্রবেশও করা যায়। হ্যা, ভ্রমণপিপাসু মানুষের জন্য মাত্র দেড় কি:মি পরিদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে।
এখানে মৃত মানুষের কঙ্কাল সাজানো রয়েছে। ১৮০৯ সালে এটি আংশিক উন্মুক্ত করা হয়। ৩০০ কি:মি এর বিস্তৃতি। এখানে স্তূপাকারে জড়ো করা রয়েছে ৬০ লাখ মাথার খুলি, হাড়গোড় সব। যা এই নগরীর অধিবাসী জীবিত মানুষের চেয়েও তিন গুন বেশী। ওজন করলে হবে এক লাখ টনেরও বেশী।
পর্যটকেরা দেখতে পারোন মাত্র দেড় কি:মি অর্থাৎ ৯৯ শতাংশোই থেকে যায় মানুষের জানার বাইরে। তবে যেটুকু দেখতে পারেন তাতেই রয়েছে চমক লাগার মত জিনিস।এখানে ২৪৩টি সিঁড়ি রয়েছে। গড় তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি। গরমের সময় গেলেও সাথে গরম কাপড় রাখলে মোটেও ভূল হবে না। এখানের প্রবেশমূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২৯ ইউরো আর ৪ -১৭ বছর বয়সের যারা তাদের জন্য ৫ ইউরো।
আমরা পৃথিবীতে জায়গা, জমি, টাকা পয়সা নিয়ে প্রতিনিয়ত সংঘর্ষে লিপ্ত। কিন্তু এখানে গেলে বোঝা যাবে এসবেরর মূল্য আসলে কতখানি। ধনীগরীব সবাই মিশে একাকার। নেই কারো বিন্দুমাত্র অভিযোগ। তবে ভ্রমণপিপাসু মানুষের ভ্রমণের তালিকায় থাকতে পারে প্যারিসের এই “ক্যাটাকম্বস বা পাতালপুরী“। এডভেঞ্চার হিসেবে এটা হতে পারে চমৎকার এক জায়গা।
ছবিঃ সংগৃহীত
মন্তব্য লিখুন