বাংলাদেশী নাটক ও চলচ্চিত্রের ভক্ত অথচ চঞ্চল চৌধুরী কে চেনে না এমন মানুষ হয়তো খুঁজেই পাওয়া যাবে না। কারণ চঞ্চল চৌধুরী বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় অভিনেতা। তার অভিনয়ের মাধ্যমে সব স্তরের দর্শকের মন জয় করে নিয়েছেন তিনি।
আমাদের আজকের লেখা সেই জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী কে নিয়ে। চলুন তাহলে খুব সংক্ষেপে জেনে নেই তার সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য।
আর্টিকেলে যা থাকছেঃ
চঞ্চল চৌধুরী ১লা জুন ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলার নজিরগঞ্জ ইউনিয়নের কামারহাট গ্রামে একটি হিন্দু পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম রাধা গোবিন্দ চৌধুরী এবং মাতা নমিতা চৌধুরী।
চঞ্চল চৌধুরী তার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন কামারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। এরপর উদয়পুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক (১৯৯০) এবং রাজবাড়ি সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন (১৯৯২)।
ছেলেবেলা থেকেই তার সংগীত ও আবৃত্তিতে আগ্রহ ছিল। তাই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে ভর্তি হন (১৯৯৩) এবং পরবর্তীতে মঞ্চ নাটক ও অভিনয়ে আগ্রহ জন্মে।
চঞ্চল চৌধুরী পেশায় একাধারে একজন অভিনেতা, মডেল, প্রভাষক (তিনি কোডা-সোডা ও ইউডা কলেজের চারুকলার একজন প্রভাষক ২০০১-২০০৬) এবং একজন শিল্পী। প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে কখনো গান না শিখলেও চঞ্চল চৌধুরী খুব সুন্দর গান করেন।
তিনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন “আমি সর্বদা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের এবং ভূপেন হাজারিকার গান শুনি। তাদের গান আমার ভালো লাগে আর ভালো লাগা থেকেই গান গাওয়ার চেষ্টা করি “।
তার স্ত্রী ‘র নাম শান্তা চৌধুরী। যিনি পেশায় একজন ডাক্টার। তাদের একটি ছেলে সন্তান আছে নাম শৈশব রুদ্র শুদ্ধ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে ১৯৯৬ সালে মামুনুর রশীদ পরিচালিত নাট্যদল “আরণ্যক” এর সাথে কাজ করার মধ্য দিয়ে তার অভিনয় জীবনে প্রবেশ ঘটে।
আরণ্যক নাট্যদলের সাথে তার অভিনীত প্রথম নাটকটির নাম ছিল “কালো দৈত্য “এরপর সংক্রান্তি, রাঢ়াঙ, শত্রুগন সহ আরো অনেক নাটক করেছেন আরণ্যক নাট্যদল এর সাথ। চঞ্চল চৌধুরী টেলিভিশন নাটকে তার যাত্রা শুরু করে পরিচালক ফরিদপুর রহমানের “গ্রাস” নাটকের মাধ্যমে।
এরপর থেকে তিনি টেলিভিশন ও মঞ্চ নাটকে তাল মিলিয়ে কাজ করতে থাকেন। ২০০৪ সালে ফজলুর রহমান বাবু(অভিনেতা) চঞ্চল চৌধুরীকে গিয়াস উদ্দিন সেলিম ও মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর “তাল পাতার সেপাই” নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকের কাছে পরিচিত হয় চঞ্চল চৌধুরী। এরপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
এরপর “ভবের হাট, তিন গ্যাদা, হারকিপ্টা, নিখোঁজ সংবাদ” ইত্যাদি নাটকের মাধ্যমে দর্শকদের শুধু মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি কত বড় মানের একজন অভিনেতা।
এছাড়াও তিনি শিশুতোষ ধারাবাহিক “শিশিমপুর” এ মুকুল চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বাচ্চাদের ও পছন্দের অভিনেতা হয়ে যান। এভাবেই (১৯৯৬-২০০৫) পর্যন্ত চলছে তার মঞ্চ নাটক ও টেলিভিশন নাটকে অভিনয় জীবন।
চঞ্চল চৌধুরীর চলচ্চিত্র জীবনের শুরু হয় ২০০৬ সালে “রুপকথার গল্প” সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে যার পরিচালক ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা ও পরিচালক তৌকির আহমেদ। এরপর ২০০৯ সালে গিয়াস উদ্দিন সেলিম এর ” মনপুরা” যা তাকে নিয়ে গিয়েছে প্রশংসার সর্বোচ্চ চূড়ায়।
একজন সফল অভিনেতা হিসেবে সবার চোখে পড়েন তিনি। ২০১০ সালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ পরিচালনার ছবি “মনের মানুষ” সিনেমায় অভিনয় করেন যা তাকে ভারতের দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় করে তোলে।
মনের মানুষ সিনেমা টি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস (মনের মানুষ) অবলম্বনে লালন শাহের জীবনীর উপর নির্মিত। ২০১৩ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত “টেলিভিশন“, ২০১৬ সালে অমিতাভ রেজার পরিচালিত মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলার ” আয়নাবাজি” সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে আবারো দর্শকের মন কাড়েন চঞ্চল চৌধুরী।
২০১৮ সালে হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে ও মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পরিচালিত “দেবী” সিনেমায় অভিনয় করেন।
মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত মুক্তিপ্রাপ্ত “পিতা” সিনেমার একটি গানে তিনি কন্ঠ দেন। নাটকের পরিচালক হিসেবে ও তিনি আবির্ভুত হয়েছেন। এছাড়া উপস্থাপক হিসেবে ও তিনি তার প্রতিভা দেখিয়েছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।
২০০৯ সালে অভিনীত মনপুরা চলচ্চিত্রের জন্য ৩৪তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।এছাড়া ১১তম মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার এ সেরা অভিনেতা হিসেবে দর্শক জরিপ পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ড ও নিজের করে নিয়েছেন তিনি।
ছবিঃ সংগৃহীত
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, ইউটিউব
মন্তব্য লিখুন